জুম চাষ কাকে বলে? ঝুম চাষ পদ্ধতি

সহজ কথায় যখন, পাহাড়ের মধ্যে থাকা ঢালু জমির সকল জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে ফেলার পর ৪ থেকে ৫ বছর চাষাবাদ করা হয়।

এবং যখন সেই জমির উর্বরতা কমে আসে, তখন পুনরায় আবার অন্যত্র এমন ঢালু জমিতে চাষাবাদ করা হয়। তখন তাকে বলা হয়, জুম চাষ বা ঝুম চাষ। 

পাহাড়ী অঞ্চল এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত একটি কৃষি পদ্ধতির নাম হলো, জুম চাষ। আবার আমরা অনেকেই এই জুম চাষ কে “ঝুম চাষ” বলে থাকি।

তো এই জুম চাষ হলো এক ধরনের স্থানান্তর কৃষি পদ্ধতি। আর জুম চাষ করার জন্য পাহাড়ী অঞ্চল এর মধ্যে যেসব ঢালু জমি রয়েছে। সেই জমি গুলো কে জুম চাষ করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। 

জুম চাষ কি?

জুম চাষ কে এক কথায় স্থানান্তর কৃষি পদ্ধতি বলা যেতে পারে। কারণ, পাহাড়ের গা ঘেঁষে যে সকল ঢালু জমি রয়েছে। প্রথমত সেই জমির মধ্যে থাকা সকল জঙ্গল গুলো কেটে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এবং পরবর্তী সময়ে সেই জমির মধ্যে চাষ করা হয়। কিন্তুু চাষাবাদের পরে যদি সেই জমির উর্বরতা কমতে শুরু করে। তখন পুনরায় আবার অন্য কোথাও এই ধরনের কৃষি জমি তৈরি করা হয়। 

আর যে সকল মানুষ পাহাড়ে বসবাস করে। তারা মূলত এই কৃষিজ পদ্ধতি অনুসরন করে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে থাকে। আর আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে পার্বত্য অঞ্চল আছে।

সেখানে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের জীবিকা নির্বাহ করার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো, জুম চাষ। 

ঝুম চাষ কি?

জুম চাষ কি সেটি জানার পরে, এখন অনেকের মনে একটি প্রশ্ন জাগবে। সেটি হলো, ঝুম চাষ কি। তো এই ঝুম চাষ বলতে আলাদা কিছুই নেই। বরং আমরা যাকে জুম চাষ বলি।

সেই জুম চাষ কে স্থানীয় লোকজন ঝুম চাষ বলে থাকে। আর আমাদের বাংলাদেশে জুম চাষকে ঝুম চাষ বলা হলেও।  ইন্ডিয়া তে এই জুম চাষ কে আবার পোড়ু, পোনম, বীরা নামেও বিশেষভাবে পরিচিত। 

জুম চাষ কোথায় দেখা যায়? 

অনেক আগে থেকে এখন পর্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চল গুলোতে জুম চাষ করা হয়। যেমন, আপনি যদি আমাদের বাংলাদেশ এর দিকে লক্ষ্য করেন।

তাহলে দেখতে পারবেন যে, মিজোরাম, আসাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ড এর মধ্যে বিপুল পরিমানে জুম চাষ করা হয়।

এর পাশাপাশি আপনি যদি ভারতের দিকে লক্ষ্য করেন। তাহলে দেখতে পারবেন যে, ভারতের উত্তর আঞ্চল এবং পূর্ব অঞ্চলে ব্যাপক পরিমানে জুম চাষ করা হয়। 

বাংলাদেশের কোথায় জুম চাষ করা হয়?

জুম চাষ করার দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল গুলো এগিয়ে আছে। যেমন, আপনি যদি আমাদের বাংলাদেশ এর বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটির দিকে তাকালেই দেখতে পারবেন।

উক্ত অঞ্চল গুলোতে ব্যাপক পরিমানে জুম চাষ করা হয়। 

এবং এই তিনটি অঞ্চলের মোট আয়তনের সংখ্যা ১৩,২৯৫ বর্গ কি:মি: হলেও। সেই আয়তনের প্রায় ৫ হাজার ৪৮০ বর্গ কি:মি: আয়তন জুড়ে জুম চাষ করা হয়ে থাকে। আর সময় এর সাথে সাথে পাহাড়ী মানুষ এর মধ্যে জুম চাষের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

জুম চাষের ক্ষতিকর প্রভাব কি?

আমরা এতক্ষন ধরে যে জুম চাষ সম্পর্কে জানলাম। সেই জুম চাষের মাধ্যমে পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করলেও।

এই ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিজ পদ্ধতির ব্যাপক পরিমান ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আর যদি ক্রমাগত ভাবে এই ধরনের জুম চাষ পদ্ধতি চলমান থাকে। তাহলে একটা সময় পাহাড়ী অঞ্চলের পরিবেশগত পরিস্থিতি একবারে হুমকির মুখে পড়ে যাবে। 

এর প্রধান কারণ হলো, যখন জুম চাষ করার জন্য কোন পাহাড়ী ঢালু জমি নির্বাচন করা হয়। তখন সেই জমির উপর থাকা সকল জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরফলে উক্ত ঢালু জমিতে যেসকল গাছাপালা থাকে। সেগুলো নির্বিচারে নষ্ট করা হয়। সেইসাথে উক্ত স্থানে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপকারী কিট পতঙ্গ গুলো মরে যায়। 

আর আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, এই কৃষিজ পদ্ধতির জন্য কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

তো আশা করি, আপনি বুঝতে পারছেন যে, জুম চাষের ফলে কি কি ক্ষতি হতে পারে। এবং বনাঞ্চল ধ্বংস করার কারণে পরিবেশের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। 

জুম চাষকে সরকার নিরুৎসাহিত করার কারণ কি?

সত্যি বলতে আমাদের বাংলাদেশ সরকার সর্বদাই জুম চাষ করার প্রতি নিরুৎসাহিত করে থাকে। কেননা, জুম চাষ এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশগত সমস্যা হয়।

অপরদিকে জুম চাষ করার কারণে আর্থিক দিক থেকেও অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। 

তাই বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত এই জুম চাষ পদ্ধতির বিকল্প চাষ পদ্ধতি খোজার চেষ্টা করছে। কিন্তুু আজ পর্যন্ত তেমন কোন বিকল্প কৃষি পদ্ধতির উদ্ভব না হওয়ার কারনে।

বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষেরা কোন প্রকার বাধা ছাড়াই এখনও অনায়াসে জুম চাষ করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সরকারের উচিত কৃষকদের জুম চাষে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি জুম চাষের বিকল্প পদ্ধতি বের করার দরকার। 

জুম চাষের বিকল্প পদ্ধতি কোনটি?

তো আমাদের দেশের মধ্যে যেসকল মানুষ জুম চাষ করছেন। তারা চাইলে জুম চাষের বিকল্প পদ্ধতি গুলো অনুসরন করতে পারবেন।

সেজন্য জুম চাষের জন্য যে সকল ঢালু জমি নির্ধারন করা হবে। সেই জমি গুলোতে এখন রাবার চাষ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনায়ন করা যেতে পারে। 

তবে এই জুম চাষ এর বিকল্প চাষাবাদ পদ্ধতি কতটুকু কার্যকর হবে। তা মূলত আমাদের দেশের সরকার ও পাহাড়ে বসবাস করা উপজাতীদের উপর নির্ভর করবে। 

FAQ - ঝুম চাষ / জুম চাষ

Q: পাহাড়ী অঞ্চলে কি কি চাষ করা হয়?

A: তো যেসকল পাহাড়ী অঞ্চল রয়েছে সেগুলোতে অনেক কিছু চাষাবাদ করা সম্ভব। যেমন, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বেগুন, আদা, হলুদ, আলু, তুলা ইত্যাদি চাষ করা সম্ভব। 

Q: পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষের জীবিকা কি?

A: পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ এর প্রধান জীবিকা হলো চা চাষ করা। আর এই চা উৎপাদন হলো পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করা মানুষের মূল অর্থনৈতিক আয়ের উৎস। তবে এটি ছাড়াও পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করা মানুষেরা কৃষিকাজ করার মাধ্যমেও তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। 

Q: জুম ঘর কি?

A: এখন পর্যন্ত জুম ঘর কি সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, জুম চাষ করার সময় ফসল দেখভাল করার জন্য যে সকল ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়। সেগুলো কে বলা হয়, জুম ঘর। 

Q: জুম বলতে কি বোঝায়?

A: পাহাড়ী অঞ্চলে যেখানে পাহাড়ের গা ঘেঁষে যেসকল ঢালু জমি আছে। সেই জমির মধ্যে থাকা সকল গাছপালা জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে ফেলার পর, সেখানে কৃষিকাজ করা হয়। তাকেই বলা হয়, জুম চাষ। 

জুম চাষ নিয়ে আমাদের কিছুকথা 

তো আপনারা যারা জুম চাষ কি বা ঝুম চাষ বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আশা করি, তারা আজকের আর্টিকেল থেকে সেই বিষয় গুলো পরিস্কার ভাবে বুঝতে পেরেছেন।

আর আমরা সর্বদা এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। 

যদি আপনি সেই অজানা বিষয় গুলো খুব সহজ ভাষায় জানতে চান। তাহলে আমাদের সাথে থাকার চেস্টা করবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

জীবনে ঝুঁকি নাও।জিতলে নেতৃত্ব দিবে।আর হারলে,পরবর্তী কাউকে পথ দেখিয়ে দিবে।