কেশবতী কন্যা ?

 কেশবতী কন্যা : অনেক কাল আগে এক গ্রামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে বাস করতো। তাদের কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

দুজনেরই ইচ্ছা তাদের কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে সন্তান আসবে। সে তাদের বাবা মা বলে ডাকবে। অথচ তাদের এই মনোবাসনা পূরণ হচ্ছে না।

এমনিতে তাদের সংসারে তেমন কোনো লোকজনও নেই। ছোট্ট সাজানো গোছানো ছিমছাম ও পরিপাটি তাদের বাড়ি। তাদের বাড়ির পিছনে বাস করতো এক ডাইনিবুড়ি।

তার বাড়িতে ছিল এক সবজি বাগান। এই বাগানে সারা বছর ধরে পাওয়া যেত সুন্দর সুন্দর তাজা সবজি।

বাজারের সবজি ফুরিয়ে যেত, কিন্তু ডাইনিবুড়ির বাগানের সবজি সারা বছর পাওয়া যেত। উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা বাগানের চারপাশ ।

এই দেয়াল টপকে বাগানের ভেতরে যেতে কেউ সাহস করতো না। সকলেই ডাইনিবুড়িকে ভয় পেত। কারণ, সকলেই জানতো এই বুড়ি ভয়ংকর যাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী।

একদিন মহিলা তার ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাগানের ভিতরে তাকালো। সবজিবাগানের ভিতরে দেখলো তাজা তাজা পাতায় ভরা সবজি বাগান।

গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজিই রয়েছে সেখানে। অথচ এগুলোর কোনটাই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।

বাঁধাকপির দিকে চোখ পড়তেই মহিলাটি অবাক হয়ে গেল। কি সুন্দর বাঁধাকপিগুলো। তরতাজা সবুজ আর সবুজ। দেখে যেন মনে হয় সবুজের মেলা বসেছে।

দেখেই সেগুলোকে একদম টাটকা আর সুস্বাদু মনে হচ্ছিল। এই বাঁধাকপি আমার চাই, মহিলাটি মনে মনে ভাবল ।

কিন্তু চাইলেই তো পাওয়া যাবে না। বাগানটি ডাইনিবুড়ির। তার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাঁধাকপি চুরি করে নিয়ে আসা কোনমতেই সম্ভব নয়।

এমনকি চাইতে গেলেও ডাইনিবুড়ি দেবে না। তাহলে উপায়? কীভাবে এগুলো খাওয়া যায় সেই চিন্তায় মহিলাটি অসুস্থ হতে শুরু করলো।

তার এই অবস্থা দেখে স্বামী বিচলিত হয়ে উঠলো। জিজ্ঞেস করলো, “প্রিয়তমা স্ত্রী, তোমার কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

উত্তরে স্ত্রী জানালো, “তুমি আমার জন্য কিছুই করতে পারবে না। কারণ, আমি যা চাই তা আমাদের সাধ্যের বাইরে এবং তার জন্য চেষ্টা করাও হবে বিপদজনক।” স্ত্রীর গলা করুণ শোনালো ।

তারপর সে তার স্বামীকে জানালার কাছে নিয়ে গিয়ে ডাইনিবুড়ির সবজিবাগান দেখাল। তারপর তার কাছে সমস্যার কথা বললো, “আমি নিশ্চিত যে, ডাইনিবুড়ির বাগানের অন্তত একটি বাঁধাকপি যদি খেতে না পারি তবে আমি খুব শিঘ্রই মারা যাব।"

মহিলার স্বামী মহিলাকে খুবই ভালোবাসতো। সে বললো, “আমি থাকতে তুমি এই সামান্য বাঁধাকপি না খেয়ে মারা যাবে তা হতে পারে না। আমি তোমাকে কিছু বাঁধাকপির ব্যবস্থা করে দেবই । তাতে আমাকে যে মূল্য দিতে হয়-দেব।”

পরদিনের কথা । যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, স্বামী ডাইনিবুড়ির বাগানের দেওয়ালের উপর উঠল তারপর ঢুকে গেল বাগানে ।

দুহাতে তাড়াতাড়ি বেশ কয়েকটি বাঁধাকপি তুলে নিল। তারপর যখনই সে দেওয়াল টপকাতে যাবে-তখনই পেছন থেকে ডাইনিবুড়ির চিৎকার শুনতে পেল।

“কত বড় সাহস তোর! কোন সাহসে তুই আমার বাগানে ঢুকেছিস? বাগানে ঢুকে চোরের মত আমার এমন তরতাজা বাঁধাকপি নিয়ে পালাচ্ছিস!” লোকটির দিকে ডাইনিবুড়ি এমনভাবে দাঁত খিটিমিটি করে তাকালো যা দেখে যে কারো মনে ভয় ঢুকে যেতে পারে। লোকটিও ভয় পেল, তবে তা চেহারায় প্রকাশ করলো না।

ডাইনিবুড়ি কিন্তু তখনও চিৎকার করেই চলেছে, “নিশ্চয় এর জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে। তোকে মরতে হবে।”

"দয়া কর আমাকে”-বলে লোকটি কেঁদে দিল। এটি করেছি শুধু আমার স্ত্রীর জন্য। তাকে যদি আমি অন্তত একটি বাঁধাকপি না খাওয়াতে পারি তাহলে সে সত্যি সত্যি মারা যাবে।”

তার কথা শুনে ডাইনিবুড়ি কী যেন ভাবল। তারপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো, “হুমমম, যদি তাই সত্যি হয় তাহলে সে যতখুশি বাঁধাকপি খেতে পারবে।

কিন্তু একটি শর্ত আছে আমার, তোর স্ত্রীর যেদিন সন্তান হবে- ঠিক তার পরের দিন সেই সন্তানকে আমায় দিয়ে দিতে হবে। আমি তাকে মানুষ করব ঠিক আমার মেয়ের মত করে।”

ডাইনিবুড়ির এই কথায় লোকটি সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল । কারণ, সে নিশ্চিত জানে, এতবছর ধরে যখন তাদের কোন সন্তান হয়নি- ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ডাইনিবুড়ির কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে সে তার স্ত্রীর কাছে গেল । স্ত্রী একসাথে বেশ কয়েকটি তরতাজা বাঁধাকপি পেয়ে মহাখুশি হলো। পরম তৃপ্তিতে সেদিনই কয়েকটি বাঁধাকপি খেয়ে ফেললো সে।

এরপর পেরিয়ে গেল কয়েক সপ্তাহ। মহিলাটি বুঝতে পারলো সে মা হতে চলেছে । তার মানে শিঘ্রই তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে বাচ্চা আসবে । মহিলা এবং তার স্বামী ভীষণ আনন্দিত হলো।

যথাসময়ে একটি পরীর মতো ফুটফুটে মেয়ে হলো তাদের। অসাধারণ তার গায়ের রঙ। চমৎকার তার চুল।

এতটুকু বাচ্চা অথচ তার চুল একেবারে পা পর্যন্ত। স্বামী এবং স্ত্রী যেন এতদিনে সত্যিকারের আনন্দ পেল। ডাইনিবুড়ির কথা তাদের তখন আর মনে নেই।

ডাইনিবুড়ি কিন্তু কিছুই ভোলেনি। বাচ্চা হওয়ার পরের দিন ঠিক ঠিক সে তাদের বাড়িতে এসে হাজির হলো। তারপর পলকের মধ্যে দোলনায় শোয়ানো বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে গেল।

ডাইনিবুড়িকে দেখে স্বামী এবং স্ত্রী ছুটে গেল দোলনার কাছে। কিন্তু ডাইনিবুড়ির সাথে পারবে কী করে। ছোঁ মেরে বাচ্চাটিকে নিয়ে নিমিষের মধ্যে ডাইনিবুড়ি অদৃশ্য হয়ে গেল। লোকটি এবং তার স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।

ডাইনিবুড়ি কিন্তু মেয়েটিকে নিয়ে আর সেই এলাকায় থাকলো না। তাকে নিয়ে গেল অনেকদূরের এক বনের একেবারে একটা উঁচু টাওয়ারে ।

মেয়েটিকে ভিতরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিল। সেই টাওয়ারে কোনো দরজা নেই, সিড়ি নেই, ছোট্ট একটি জানালা আছে-তাও আবার অনেক উঁচুতে। ডাইনিবুড়ি মেয়েটির নাম রাখল কেশবতী।

দিনে দিনে মা-বাবা ছাড়া ডাইনিবুড়ির কাছে কেশবতী বড় হতে শুরু করলো। সে ডাইনিবুড়িকেই তার মা মনে করতো। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার চুলও বাড়তে শুরু করলো।

যখন তার বয়স বারো বছর হলো- তখন তার চুল হয়ে গেল পঞ্চাশ হাত লম্বা। ডাইনিবুড়ি যখন বাইরে থেকে টাওয়ারে আসতে চাইতো তখন নিচ থেকে সুর করে গেয়ে উঠতো কেশবতী কেশবতী কোথায় তোমার চুল ।

ডাইনিবুড়ির কথা শোনা মাত্র কেশবতী তার লম্বা চুলের গোছা টাওয়ারের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিত। আর ডাইনিবুড়ি সেই চুলের গোছা বেয়ে টাওয়ারের উপর উঠে যেত। এভাবে কেটে গেল আরও কয়েকটি বছর। ডাইনিবুড়ি প্রতিদিন সকালে কেশবতীকে রেখে দূরে কোথাও চলে যেত ।

এই সময়টা কেশবতী একা একা এই উঁচু টাওয়ারে থাকতো। জানালার কাছে বসে সে গান গাইতো। তাকে সঙ্গ দিত বনের যত পাখ-পাখালি। ডাইনিবুড়ি আবার ফিরে আসতো সন্ধ্যার ঠিক আগে ।

একদিন এক রাজার ছেলে শিকারের পিছু নিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কেশবতী তখন জানালার কাছে বসে গান গাইছে।

এই সুরেলা গানের সুর রাজকুমারের কানে ভেসে এলো। রাজকুমার গানের সুর অনুসরণ করে টাওয়ারের কাছাকাছি চলে এলো ।

টাওয়ারের কাছে এসে বুঝলো, গানের সুর এই উঁচু টাওয়ারের ভিতর থেকে আসছে। টাওয়ারের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে খুঁজে দেখল-কিন্তু টাওয়ারে ওঠার কোন রাস্তা সে খুঁজে পেল না।

দিনের পর দিন কেটে গেল। কিন্তু রাজকুমার সুরেলা গানের সুরের উৎস খুঁজে পেল না। রাজকুমারের জিদ চেপে গেল। যেভাবেই হোক এই টাওয়ারে উঠে গানের সুরের উৎস তাকে খুঁজে বের করতেই হবে ।

প্রতিদিন টাওয়ারের নিচের একটি ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে রাজকুমার গানের সুর শোনে আর টাওয়ারে ওঠার রাস্তা খোঁজে।

একদিন ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে রাজকুমার। হঠাৎ দেখল কেউ। একজন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে টাওয়ারের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো রাজকুমার।

দেখতে পেল একটি জটপাকানো চুলের বুড়ি টাওয়ারের গোড়ায় এসে দাঁড়ালো। তারপর ওপরের দিকে তাকিয়ে সুর করে গেয়ে উঠলো-কেশবর্তী কেশবর্তী কোথায় তোমার চুল।

আর সাথে সাথে টাওয়ারের ওপর থেকে এক গোছা চুল নিচে একেবারে টাওয়ারের গোড়ার কাছে এসে পড়লো।

রাজকুমার উপরে তাকিয়ে দেখে অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে তার মাথা থেকে চুলের গোছা নিচে ফেলেছে। ডাইনিবুড়ি সেই চুলের গোছা বেয়ে উপরে উঠে গেল।

এই দৃশ্য দেখে বুদ্ধিমান রাজকুমার বুঝতে পারলো এই টাওয়ারের উপর নিশ্চয় কোন সুন্দরী মেয়ে থাকে। আর তার মাথার চুল এতোই বড়ো যে সেই চুল বেয়ে টাওয়ারের ওপর ওঠা যায়। বুদ্ধিমান রাজকুমার একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।

রাত ফুরিয়ে দিনের আলো দেখা দিল। রাজকুমার দেখলো টাওয়ার থেকে চুল বেয়ে ডাইনিবুড়ি নিচে নেমে এলো। তারপর এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বনের ভেতর দিকে চলে গেল ।

আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাজকুমার টাওয়ারের গোড়ায় এলো তারপর ঠিক ডাইনিবুড়ির মতো গলা নকল করে গেয়ে উঠলো-কেশবতী কেশবতী কোথায় তোমার চুল ।

কেশবতী মনে করলো, ডাইনিবুড়ি আবার ফিরে এসেছে। সে সাথে সাথে তার মাথার লম্বা চুল বাইরে ঝুলিয়ে দিল।

লম্বা মাথার চুল একটু পরখ করে রাজকুমার সেটা বেয়ে উপরে উঠে টাওয়ারের জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ।

ভেতরে ঢুকে দেখে এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা জানালার কাছ ঘেঁষে বসে আছে। লম্বা চুল এই কন্যার। রাজকুমার অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।

কেশবতী কখনই এটা আশা করেনি। সে জীবনে ডাইনিবুড়ি ছাড়া আর অন্য কোন মানুষ দেখেনি। তাই রাজকুমারকে দেখে প্রথমে অবাক হয়ে গেল। তারপর তার ডাগর দুচোখে ভয় ফুটে উঠলো।

রাজকুমার একটু এগিয়ে গেল, তারপর কেশবতীকে অভয় দিয়ে বললো, ভয় পেও না সুন্দরী কন্যা। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। আমি তোমার গান শুনেছি এবং একাকি তুমি যে কষ্টে আছো তাও বুঝতে পেরেছি।

রাজকুমার ভাবল, কেশবতীর মতো এত সুন্দরী মেয়ে এর আগে সে আর কোনোদিনও দেখেনি ।

কেশবর্তীও ভাবল, আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চেহারার ছেলে সে । এমন ছেলে আমি জীবনে কোনোদিনও দেখিনি।

আর এভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যেই দুজন দুজনকে পছন্দ করে ফেলল। তারপর দুজনে বিভোর হয়ে গল্প করতে শুরু করলো।

একসময় রাজকুমার কেশবতীকে জানালো, যেকোনো ভাবে হোক, এই টাওয়ার থেকে কেশবতীকে উদ্ধার করে নিজের দেশে নিয়ে যাবে। তারপর তারা দুজন বিয়ে করবে।

এদিকে ডাইনিবুড়ি প্রতিদিন সকালে বাইরে চলে যায় আর সন্ধ্যার কিছু আগে ফিরে আসে। সেদিন বাইরে যাবার সাথে সাথে ডাইনিবুড়ির মন কেমন যেন করতে লাগলো ।

বিকেলের মধ্যেই সে ফিরে এলো টাওয়ারের গোড়ায় । তারপর ডাক দিল-কেশবর্তী কেশবতী কোথায় তোমার চুল ।

কেশবতী এবং রাজকুমার দুজনেই চমকে উঠলো। কথা বলতে বলতে তাদের দুজনেরই খেয়াল নেই ডাইনিবুড়ি ফিরে আসার সময় হয়েছে। কী করবে তারা বুঝে উঠতে পারছে না।

ওদিকে ডাইনিবুড়ি নিচে থেকে আবার ডাক দিল-কেশবতী কেশবতী কোথায় তোমার চুল ।

এবার কেশবতী রাজকুমারকে একটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রেখে উপর থেকে চুল ফেলে দিল । সাথে সাথে ডাইনিবুড়ি সেই চুল বেয়ে উপরে উঠে এলো। তারপর জানতে চাইলো ডাক দেয়ার সাথে সাথে সে কেন চুল ফেলেনি ।

কেশবতী কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো। কিন্তু ডাইনিবুড়ির মনে হলো ঘরে অন্য কেউ আছে। সে তখন সারা ঘর খুঁজতে শুরু করলো।

একসময় সে রাজকুমারকে খুঁজে পেল। তাকে দেখে ডাইনিবুড়ি ভীষণ রেগে গেল। বুঝতে পারলো, কেশবতীর চুল বেয়েই রাজকুমার টাওয়ারের ওপরে আসতে পেরেছে।

চোখের পলকে ডাইনিবুড়ি ধারালো কাঁচি দিয়ে কেশবতীর লম্বা চুল কুচি কুচি করে কেটে ফেললো। তারপর রাজকুমারকে জানালার কাছে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিল।

রাজকুমারকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার সময় তার সাথে কেশবতীও জানালা দিয়ে নিচে লাফ দিল। আসলে ঐটুকু সময়ের মধ্যেই সে বুঝতে পেরেছে রাজকুমারকে ছাড়া সে বাঁচবে না ।

এদিকে ওপর থেকে দুজনেই নিচে ঝোপের ওপর পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। টাওয়ারের জানালা দিয়ে ডাইনিবুড়ি নিচের দিকে তাকালো।

কিন্তু ততক্ষণে জঙ্গলে অন্ধকার নেমেছে। তাছাড়া, ওপর থেকে নামার মতো কেশবতীর চুলও আর নেই। ওপর থেকে যে লাফ দেবে- সেই সাহসও তার নেই।

এদিকে রাজকুমারের সঙ্গী-সাথিরা এতোদিন রাজকুমারকে জঙ্গলে জঙ্গলে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। একসময় তারা রাজকুমারকে ঝোপের মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।

তারা আরও অবাক হলো ঠিক তার পাশে একটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। এরপর তারা দুজনকে ঘোড়ায় উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত তাদের রাজ্যের দিকে রওনা হলো।

রাজ্যে ফিরে আসার পর রাজহেকিমের চিকিৎসায় দুজনেই সুস্থ হয়ে উঠলো। তারপর একটি শুভদিন দেখে সেই রাজ্যের রাজা রাজকুমারের সাথে কেশবতীর বিয়ে দিয়ে দিল।

ওদিকে সেই ডাইনিবুড়ির ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা কেউ সত্যি করে বলতে পারে না। তবে ঐ জঙ্গলে ঢুকলে যেন দূর থেকে ভেসে আসে মেয়েলি গলার চিৎকার- কেশবতী কেশবতী কোথায় তোমার চুল। অনেকে সেই আওয়াজ শুনে টাওয়ারের কাছাকাছি পর্যন্ত যেতে পারে।

কিন্তু টাওয়ার দেখতে পায় না। পাবে কী করে? সেই টাওয়ার কী আর এখন দেখা যায়! এতোদিনে গভীর জঙ্গলে ঢাকা পড়ে গেছে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ