সিভি এবং রেজিউমি দুটি মৌলিকভাবে বেশি ব্যবহৃত ডকুমেন্ট, তবে এদের উদ্দেশ্য এবং আবেগ বিভিন্ন। অনেকেই দুটো ব্যাপারকে এক করে ফেলি আমরা। আমি নিজেরও এ দুটোর ব্যাপারে বেশি কিছু জানা ছিলোনা।
নানান ব্লগে আর অনলাইনে চোখ বুলিয়ে মোটামুটি তফাৎ গুলো জানতে পেরেছি। সেগুলোই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
সিভি হলো একটি ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র, যা আপনার শিক্ষাগত এবং পেশাদার ইতিহাস, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার উদ্দেশ্য, উদ্দীপনা, এবং ক্যারিয়ারের লক্ষ্য প্রদর্শন করতে পারেন।
অন্যদিকে, রেজিউমি হলো একটি সংক্ষেপক ভাষায় তৈরি করা ডকুমেন্ট, যা আপনার যাত্রা, কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা, এবং দক্ষতা প্রদর্শন করে এবং চাকুরির অনুভূতির জন্য একটি সুজোগ এনে দেয়।
সিভি বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত, সহজ ভাষায় লেখা হয়, যেখানে রেজিউমি সংক্ষেপক বা সংক্ষেপিত এবং অধিক সূক্ষ্মভাবে লেখা হয়। সিভি আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রদান করে, যেখানে রেজিউমি সংক্ষেপে আপনার ক্ষমতা এবং যোগ্যতা প্রদর্শন করে।
সিভি ও রেজিউমির মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হলো একটি সিভি আপনার ব্যক্তিগত সারাংশ দেয় এবং রেজিউমি আপনার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করে।
একটি সিভি লিখতে অনেকটাই সময় নেয়, কারণ এটি আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাদার ইতিহাস, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে বিসৃত তথ্য অবশ্যই সংজ্ঞানে নিতে হয়।
এটি লিখতে সাধারনত একটি ভিত্তি অথবা ফরম্যাট অনুসরণ করা হতে পারে, তাতে আপনি আপনার তথ্য কেমনভাবে বিন্যাস করতে চান তা দেখাতে পারে। তাছাড়া, কিছু পয়েন্ট মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:
১। প্রথম অংশ (প্রস্তাবনা): নাম, যোগাযোগের তথ্য, এবং আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রদান।
২। শিক্ষা: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অধ্যয়নের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।
৩। কর্মস্থল এবং অভিজ্ঞতা: আপনি কোথায় কাজ করেছেন, কোনও পূর্বসূত্র, এবং আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তথ্য।
৪।কাজের দক্ষতা এবং উপাধি: আপনার দক্ষতা, কৌশল, এবং উপাধি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
৫। ক্যারিয়ার লক্ষ্য: আপনি কোথায় যেতে চান এবং আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য কি।
সিভি লেখার সময়ে মনে রাখতে হয় যে, এটি একটি নম্বরের মোড়ক নয়, তবে আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাদার পরিচয়ের একটি পুর্নাংগ ছবি তৈরি করতে সাহায্য করতে হয়।
এবার আসুন নজর দেয়া যাক রেজিউমি লেখার নিয়মগুলি সম্পর্কেঃ
একটি রেজিউমি লেখার সময় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যেন এটি সহজে পঠনীয় হয় এবং প্রতিস্থানে প্রস্তুত থাকে। এর মধ্যে থাকছে-
১। সংক্ষেপ: রেজিউমি সংক্ষেপে হতে হবে, সর্বপ্রথমে এটি পড়ার সময়ে পঠনকারী কর্তৃক যেনো দ্রুত বোঝা যায়।
২। ব্যক্তিগত তথ্য: আপনার নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, এবং আপনার একটি সংক্ষেপক বৈষিষ্ট্য যোগ করতে হবে।
৩। উদ্দীপনা বা অবজেকটিভ: এটি আপনার চাকরির লক্ষ্য এবং আপনি কেমন ভাবে কোম্পানির জন্য যোগদান করতে আগ্রহী তা দেখাতে হয়।
৪। শিক্ষা: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং প্রাপ্ত ডিগ্রী বা উপাধিসমূহ উল্লেখ করুন, যাতে সহজে বোঝা যায় ।
৫। কর্মস্থল এবং অভিজ্ঞতা : আপনি আগে কোথায় কোথা কাজ করেছেন এবং কি কি কাজ করেছেন তা এখানে বর্ণনা করুন, সাথে কোনও পূর্বসূত্র সহ।
৬। দক্ষত: আপনার দক্ষতা এবং কৌশল এখানে প্রদর্শন করুন, এটি আপনার উপাধির সাথে মিলিয়ে লিখা যেতে পারে।
৭। প্রকল্প এবং সাফল্য: কাজের কোনও প্রকল্প, বা আপনার সাথে যোগাযোগ করার সাফল্য যদি থাকে তা উল্লেখ করুন।
৮। পেশাদার সদস্যতা : আপনি যদি কোনও কাজের বা সংগঠনের পেশাদার সদস্য হন, তা এখানে উল্লেখ করতে পারেন।
৯। ভাষার দক্ষতা: আপনি কোন কোন ভাষা বলতে, পড়তে ও লিখতে পারেন তা লিখুন এবংীসব ভাষাতে আপনার দক্ষতা উল্লেখ করুন।
১০। রেফারেন্স: আপনার প্রোফেশনান বা পরিচিত ব্যক্তিদের মাঝে এক বা একাধিক কাউকে রেফারেন্স হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন, তাদের অনুমতি কিংবা জ্ঞাতসারে। সাথে যোগাযোগের পূর্নাংগ তথ্য উল্লেখ করুন।
এই ধাপগুলি মনে রাখলে আপনাকে একটি আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী রেজিউমি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
আশা করছি ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ে কিছুটা হলেও ধারনা পাওয়া গিয়েছে কিভাবে সিভি ও রেজিউমি প্রস্তুত করতে হয় ও এদের প্রয়োগের ক্ষেত্রসমুহের ব্যাপারে।
আরো ভালো ভাবে বুঝতে বা শিখতে চাইলে ইনটারনেটে প্রচুর ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন সবাই।
শুভকামনা রইলো সবার উত্তরোত্তর প্রফেশনাল সফলতার জন্য।
You must be logged in to post a comment.