এক্সরে কি? এক্সরে করতে কত টাকা লাগে?

ভিলহেল্ম কনরাডে র‌্যোন্টগেন নামক একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ১৮৯৫ সালে সর্বপ্রথম এক্সরে আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

যার মাধ্যমে শুধুমাত্র ফটোগ্রাফ এর সাহায্য একটি শরীরের মধ্যে থাকা হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, শরীরের অভ্যন্তরে থাকা কোন ক্ষত কিংবা অবাঞ্চিত বস্তুর উপস্থিতি কে শনাক্ত করা সম্ভব। 

এক্সরে কাকে বলে? 

সহজ কথায় বলতে গেলে, এক্সরে হলো এক ধরনের বিশেষ তাড়িত চৌম্বক বিকিরন। যে বিকিরন আমাদের চোখে কখনই দৃশ্যমান হবেনা।

আর এক্সরে থেকে নির্গত হওয়া চৌম্বক বিকিরন এর ক্ষমতা অনেক বেশি। কেননা, এক্সরে এর মধ্যে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে। তা মূলত আলোর চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র। 

আর এই এক্সরে এর সর্বপ্রথম সূচনা হয়েছিলো ১৮৯৫ সালে। যে এক্সরে মেশিন এর সাহায্য এক ধরনের আলোকচিত্র এর মাধ্যমে মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীন হাড় বা শরীরে থাকা অবাঞ্চিত বস্তু গুলো কে শনাক্ত করা যায়। 

এক্সরে কত প্রকার ও কি কি?

আমরা এক্সরে কাকে বলে তা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম। কিন্তুু আপনি কি জানেন, এক্সরে কত প্রকার ও কি কি? - যদি আপনি না জানেন, তাহলে জেনে রাখুন এক্সরে মূলত ২ প্রকারের হয়। আর সেই ২ প্রকার এক্সরে গুলো হলোঃ 

  1. কোমল রঞ্জন রশ্মি এক্সরে,
  2. কঠিন রঞ্জন রশ্মি এক্সরে,

তো এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই ২ প্রকারের এক্সরে এর পার্থক্য কি। আর যদি আপনার মনে এই ধরনের প্রশ্ন জেগে থাকে। তাহলে শুনে নিন…….

সহজ ভাষায় যে সকল এক্সরে এর মধ্যে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয়। তাকে বলা হয়, কোমল রঞ্জন রশ্মি এক্সরে। এবং যে সকল এক্সরে এর মধ্যে অনেক বেশি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয়।

তাকে বলে, কঠিন রঞ্জন রশ্মি এক্সরে। মূলত, এই দুই ধরনের এক্সরে এর মূল পার্থক্য হলো, বিভব পার্থক্য। 

এক্স রশ্মি কাকে বলে?

এক্সরে কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, এগুলো জানার পাশাপাশি। আপনাকে আরো একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।

সেটি হলো, এক্স রশ্মি কাকে বলে। তো এই এক্স রশ্মি হলো, উচ্চ ভেদন ক্ষমতা যুক্ত এক ধরনের চুম্বকীয় তরঙ্গ। যা মূলত কোন ইলেকট্রন এর উচ্চ গতির কারনে। যখন সেটি কোন কঠিন বস্তুর উপর পড়ে। তখন সেটি উৎপন্ন হয়। 

আর যখন ইলেকট্রন তার উচ্চ গতির ফলে যখন কোন কঠিন বস্তুর উপর পড়ে। তখন সেখান থেকে উৎপাদিত হওয়া উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ কে বলা হয়, এক্স রশ্মি। 

এক্সরে কিভাবে কাজ করে?

আমরা সবাই জানি যে, মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্নয় করার জন্য এক্সরে ব্যবহার করা হয়। যেমন, আপনার যদি ফুসফুসে সমস্যা থাকে। তাহলে আপনি এক্সরে এর মাধ্যমে তা শনাক্ত করতে পারবেন।

এছাড়াও নিউমোনিয়া, যক্ষা, কিডনি তে পাথর এর মতো রোগ গুলোকে এক্সরে এর মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। 

এছাড়াও মানুষের শরীরে থাকা ক্যান্সার এর কোষ গুলো কে মেরে ফেলাও সম্ভব হয়েছে এই এক্সরে এর কারনে।

তবে আমরা যেমন খুব সহজে এক্সরে করে রোগ নির্ণয় করতে পারি। আদতে এতো সহজে একটি এক্সরে কাজ করতে পারেনা।

বরং সবার প্রথমে একটি এক্সরে মেশিন কে কোন পরমানুকে প্রচুর পরিমান হিট করা হয়। যেন উক্ত পরমানু কে উত্তপ্ত করার মাধ্যমে ইলেকট্রন নির্গত করা হয়। 

এরপর উক্ত ইলেকট্রন গুলোর মধ্যে অনেক বেশি পরিমানে বেগ প্রদান করা হয়। যেন, সেই ইলেকট্রন গুলো খুব উচ্চ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

আর যখন সেই ইলেকট্রন গুলো অতি দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোন ধাতুর সাথে আঘাত পায়। তখন উক্ত আঘাত থেকে এক্সরে রশ্মি নির্গত হয়। আর এভাবে এক্সরে মেশিন কাজ করে থাকে। 

এক্সরে করলে কি কি ক্ষতি হয়?

দেখুন, আমি শুরু থেকে একটা কথা বারবার বলেছি। সেটি হলো, এক্সরে মানুষের রোগ নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

কিন্তুু আপনি কি জানেন, এই এক্সরে করার কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? - হয়তবা আমরা অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা।

তাহলে শুনুন, আমরা সবাই জানি যে, এক্সরে হলো এক ধরনের ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। আর যখন এই রেডিয়েশন কে ব্যবহার করে মানুষের শরীরের রোগ নির্ণয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।

তখন সেই মানুষের শরীরের মধ্যে ডিএনএ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

এছাড়াও যে ব্যাক্তির শরীরে একাধিক বার এক্সরে করা হবে। সেই ব্যক্তির ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ, আপনি এমন অনেক মানুষকে খুজে পাবেন।

যাদের এক্সরে করার কারনে, থাইরয়েড ক্যান্সার, ব্রেষ্ট ক্যান্সার ও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। 

যদিওবা অনেক সময় আমাদের এক্সরে করার দরকার পড়ে। তবে চেস্টা করবেন যেন একজন ব্যক্তির অধিকবার এক্সরে করা না হয়। কারন, অতিরিক্ত এক্সরে একজন ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। 

এক্সরে এর ব্যবহার গুলো কি কি?

এমন অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলোর জন্য এক্সরে ব্যবহার করা হয়। আর এক্সরে এর ব্যবহার গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,

  1. কিডনির মধ্যে থাকা পাথর শনাক্ত করার জন্য,
  2. নিউমোনিয়া রোগীর পরীক্ষা,
  3. শরীরের মধ্যে যক্ষা শনাক্তকরন,
  4. ভেঙ্গে যাওয়া হাড় পরীক্ষার জন্য,
  5. হাড়ের মধ্যে থাকা ফাটল শনাক্ত করার জন্য,
  6. কিডনি বা পিত্তথলির মধ্যে থাকা পাথর শনাক্ত করতে,
  7. দাঁতের গোড়ার মধ্যে থাকা ঘাঁ পরীক্ষা,

তো সচারচর যে কাজে এক্সরে ব্যবহার করা হয়। সেই কাজের তালিকা টি উপরে উল্লেখ করা হলো। কিন্তুু এর বাইরেও বিভিন্ন রোগের উপর নির্ভর করে এক্সরে ব্যবহার করা হয়। 

বুকের এক্সরে কেন করা হয়?

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন। যারা আসলে জানতে চায় যে, বুকের এক্সরে কেন করা হয়। তো বুকের এক্সরে করার বিভিন্ন কিছু কারন রয়েছে।

যেমন, আপনার যদি ফুসফুস এর রোগ নির্ণয় করতে চান। তাহলে আপনার বুকে এক্সরে করা হবে। এছাড়াও আপনার হৃদপিন্ড এর সমস্যা হলে বুকে এক্সরে করার প্রয়োজন পড়বে।

তো বুকের এক্সরে করার মূল কারণ গুলো হলো,

  1. ফুসফুস এর রোগ নির্ণয়,
  2. হৃদপিন্ডে রোগ শনাক্তকরন,
  3. বুকের হাড়ের সমস্যা হলে,
  4. শ্বাসনালীর পরীক্ষার জন্য,

মূলত একজন ব্যক্তির কখন কখন এক্সরে করার প্রয়োজন হবে। তা উপরে ষ্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর বাইরেও আরো অনেক কারণে বুকের এক্সরে করার প্রয়োজন হয়। ]

X ray করতে কত টাকা লাগে? | এক্সরে করার খরচ 

যখন আমরা এক্সরে করতে চাই, তখন আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে। সেটি হলো, এক্সরে করার খরচ কত টাকা। তো নিচে X ray করতে কত টাকা লাগে। তা সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হলো। যেমন,

আপনি যদি অ্যানালগ এক্সরে করেন। তাহলে আপনার মোট ৪০০ টাকা খরচ হবে। কিন্তুু আপনি যদি ডিজিটাল এক্সরে করেন। তাহলে আপনাকে মোট ৬০০ টাকা খরচ করতে হবে।  

কিন্তুু আপনি যদি কোন বে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে এক্সরে করেন। তাহলে আপনাকে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে। 

কারন, বে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গুলো তে এক্সরে করতে প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ব্যায় করতে হবে। আর কিছু কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগের উপর ভিত্তি করে ৫/৬ হাজার টাকাও লাগতে পারে। 

সেজন্য অবশ্যই আপনি কোন সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে আপনার এক্সরে করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার এক্সরে করার খরচ তুলনামূলক কম হবে। 

বুকের এক্সরে করতে কত টাকা লাগে?

দেখুন, বুকের এক্সরে করতে কত টাকা লাগবে। সেটা নির্ভর করবে আপনার রোগের উপর। কেননা, সাধারন বুকের এক্সরে করতে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগতে পারে।

কিন্তুু আপনার রোগ যদি গুরুতর হয়। তাহলে আপনার এক্সরে করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। 

পায়ের X ray করতে কত টাকা লাগে?

পায়ের X ray করতে কত টাকা লাগে সেটা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা, এক্সরে করার খরচ নির্ভর করে রোগের উপর।

তবে সাধারন ভাবে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে এক্সরে করতে ৪০০-৮০০ টাকা খরচ হতে পারে। আবার দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন রোগের এক্সরে করার জন্য ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করার দরকার হয়। 

এক্সরে ও সাধারন আলোর পার্থক্য কি?

তো যখন এক্সরে করা হয়, তখন এক ধরনের আলোক রশ্মি উৎপন্ন হয়। আর সেই সময় আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এক্সরে ও সাধারন আলোর পার্থক্য কি।

তাহলে শুনুন, এক্সরে থেকে যে রশ্মি বের হয়। তা মূলত অনেক অসচ্ছ বস্তুুকে ভেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

কিন্তুু সাধারন আলোর অসচ্ছ বস্তুকে ভেদ করার মতো শক্তি নেই। মূলত এটিই হলো, এক্সরে ও সাধারন আলোর পার্থক্য।

এক্সরে করার নিয়ম গুলো জানুন

যেহুতু আপনি এক্সরে কি ও এক্সরে করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে জানতে এসেছেন। সেহুতু অবশ্যেই আপনাকে এক্সরে করার নিয়ম গুলো জানতে হবে।

আর নিচে এক্সরে করার নিয়ম গুলো কে তুলে ধরা হলো। যেমন,

  1. সবার আগে আপনি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিন। 
  2. তারপর ডক্টরের প্রেসস্ক্রিপশন অনুযায়ী এক্সরে করবেন। 
  3. আপনি অবশ্যই পড়নে ঢিলেঢালা পোশাক পড়বেন।
  4. শরীরে মেটাল জাতীয় কিছু রাখবেন না। যেমন, চাবি, সোনা রুপার অলংকার ইত্যাদি। 
  5. অবশ্যই এক্সরে রিপোর্ট সহো করবেন।

তো যখন আপনার এক্সরে করা হবে। তখন আপনি উপরের এক্সরে করার নিয়ম গুলো মেনে চলবেন। তবে যদি আপনার এক্সরে করার সময় অস্বস্তি বোধ হয়। তাহলে আপনি সেখানে থাকা ডক্টরদের সেটা জানিয়ে দিবেন। 

এক্সরে করার সময় সাবধানতা

যখন একজন ব্যক্তির এক্সরে করা হবে। তখন সেই ব্যক্তিকে বেশ কিছু বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। আর সেই বিষয় গুলো হলো, 

  1. আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডক্টর এর পরামর্শ অনুযায়ী এক্সরে করতে হবে। 
  2. যদি আপনার আগে থেকে শরীরে এলার্জি থাকে। তাহলে আপনার শরীর এর চামড়ার রং লাল হতে পারে।
  3. একজন ব্যক্তির একদিনে অধিক এক্সরে করা থেকে বিরত থাকবেন। 
  4. কম বয়সী বাচ্চার জন্য অবশ্যই কম পরিমানে ফিল্ম দেয়ার চেস্টা করবেন। 
  5. যদি কোন প্রেগন্যান্ট মহিলার এক্সরে করেন। তাহলে অবশ্যই ডক্টর এর পরামর্শ নিবেন। 
  6. সার্জারি করার ফলে আপনার শরীরে মেটাল থাকলে। তা অবশ্যই আগে তাদের জানিয়ে দিবেন। 
  7. এক্সরে সম্পন্ন হওয়ার পর ফিল্মে ও এক্সরে আইডি ভালোভাবে চেক করে নিবেন। 
  8. উক্ত প্রতিষ্ঠানে এক্সরে করার জন্য আলাদা কোন গাইডলাইন আছে কিনা। তা এক্সরে করার পূর্বে জেনে নিবেন। 

তো এক্সরে করার পূর্বে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা উপরে উল্লেখ করা হলো। আপনি অবশ্যই এই এক্সরে করার নিয়ম গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

জীবনে ঝুঁকি নাও।জিতলে নেতৃত্ব দিবে।আর হারলে,পরবর্তী কাউকে পথ দেখিয়ে দিবে।