একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা কে গতিশীল করার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো, নিকাশ ঘর। যেখানে কোন একটি দেশের সকল ব্যাংকিং লেনদেন গুলোর নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
আর বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ এর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটা দেশেই নিকাশ ঘর ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে।
নিকাশ ঘর কি? | What is Clearing House
সহজ কথায় নিকাশ ঘর হলো এমন একটি স্থান বা কেন্দ্র। যেখানে নির্দিষ্ট কোন একটি দেশের আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন গুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।
আর আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে প্রায় ১৬ টি জেলা শহর এর মধ্যে এই নিকাশ ঘর ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
যেখানে আমাদের দেশের মধ্যে যে সকল ব্যাংকিং ব্যাবস্থাপনার আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন গুলো কে নিষ্পত্তি করা হয়।
নিকাশ ঘর কাকে বলে?
What is Clearing House: আমরা বাংলাতে যে ব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তিকারী ব্যবস্থাপনা কে নিকাশ ঘর বলি।
তার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলে, Clearing House. যাকে আমাদের ভাষায় “নিষ্পত্তি স্থল” বলা হয়ে থাকে।
আর আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে মোট যতগুলো নিকাশ ঘর এর ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তার সব গুলো কে বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় ব্যাংক এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
নিকাশ ঘর এর গুরুত্ব কতটুকু?
সত্যি বলতে নিকাশ ঘর এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, যখন কোন একটি দেশ তার অর্থনৈতিক অবকাঠামো কে আরো বেশি মজবুত ও গতিশীল করতে চাইবে।
তখন অবশ্যই সেই দেশকে নিকাশ ঘর ব্যবস্থাপনার প্রচলন করতে হবে। কারণ, নিকাশ ঘর এর ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
এছাড়াও এমন আরো অনেক কারণ আছে। যার জন্য বর্তমান বিশ্বে প্রায় অধিকাংশ দেশের মধ্যে এই নিকাশ ঘর ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়েছে। যেমন,
- নিকাশ ঘর এর কারণে একটি দেশের মধ্যে থাকা ব্যাংকিং লেনদেন গুলো খুব সহজে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
- এর ফলে এখন খুব সহজেই চেক বা অন্যান্য দলিল এর সাহায্য। একটি ব্যাংক এর অর্থ অন্য একটি ব্যাংক এর মাধ্যমে লেনদেন করা যায়।
- কোন একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা কে গতিশীল করার জন্য নিকাশ ঘর এর অবদান অতুলনীয়।
- নিকাশ ঘর এর মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যতো বেশি গতিশীল হবে। সেই দেশের অর্থনীতি ততো বেশি মজবুত হবে।
- ব্যাংকিং লেনদেন এর থাকা ঝুঁকির পরিমান কমিয়ে আনার জন্য নিকাশ ঘর এর অবদান উল্লেখযোগ্য।
- একটি দেশের মধ্যে থাকা সকল ব্যাংকিং লেনদেন গুলো নিকাশ ঘর এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
তো কোন একটি দেশের জন্য এই নিকাশ ঘর এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। তা উপরে খুব সহজ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর বলা বাহুল্য যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা দৃঢ় করার জন্য নিকাশ ঘর এর ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
নিকাশ ঘরের জনক কে?
যে ব্যাক্তি নিকাশ ঘর এর জনক, সেই ব্যাক্তির নাম হলো, আরভিল। মূলত তিনি হলেন সেই ব্যাক্তি, যিনি সর্বপ্রথম এর নিকাশ ঘরের সূচনা করেছিলেন।
আর এই নিকাশ ঘরের প্রথম সূচনা হয়েছিলো, ১৬৩৫ সালে। তবে ১৬৩৫ সালে এই নিকাশ ঘর এর প্রচলন শুরু হলেও। ১৭৭০ সাল পর্যন্ত শুধু ইংল্যান্ড এর মধ্যে এই নিকাশ ঘর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালু ছিলো।
আর যে ব্যাংক এর মাধ্যমে নিকাশ ঘর ব্যাবস্থাপনার উদ্ভব হয়েছিলো। সেটি হলো ইংল্যান্ড এর একটি ব্যাংক।
এবং সেই ব্যাংক এর নাম হলো, “The Banker’s Clearing House”. তবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৬ টি জেলা শহরের মধ্যে এই নিকাশ ঘর ব্যবস্থাপনার প্রচলন আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিকাশ ঘর বলা হয় কেন?
আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে যে সকল ব্যাংক আছে। সেই সকল ব্যাংক এর মধ্যে যে সকল চেক বা দলিল এর মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। তার সবগুলো লেনদেন নিকাশ ঘর এর মধ্যে গিয়ে নিষ্পত্তি হয়।
আর বাংলাদেশ এর মধ্যে থাকা সকল আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন গুলো কেন্দ্রিয় ব্যাংক এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। সেজন্য আমাদের বাংলাদেশ এর কেন্দ্রিয় ব্যাংক কে নিকাশ ঘর বলা হয়ে থাকে।
নিকাশ ঘরের বৈশিষ্ট্য
নিকাশ ঘর কি অথবা নিকাশ ঘর বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তবে এগুলোর পাশাপাশি আপনাকে নিকাশ ঘরের বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আর নিকাশ ঘর এর বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- নিকাশ ঘর একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে অনেক বেশি গতিশীল করতে পারে।
- আর ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে গতিশীল করার ফলে একটি দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়।
- আন্তঃব্যাংকিং সকল লেনদেন গুলো কে নিষ্পত্তি করে থাকে।
- এক ব্যাংক থেকে অন্য একটি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
তো নিকাশ ঘরের বৈশিষ্ট্য গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি, সেই বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে আপনি পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।
প্রশ্ন উত্তর পর্বঃ নিকাশ ঘর
প্রশ্নঃবর্তমানে বাংলাদেশে কয়টি নিকাশ ঘর ব্যবস্থা চালু আছে?
উত্তরঃ বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে মোট ১৬ টি নিকাশ ঘর ব্যবস্থা চালু আছে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের নিকাশ ঘর কোনটি?
উত্তরঃ আমাদের বাংলাদেশে মোট ১৬ টি নিকাশ ঘর আছে। তবে যদি কোন কারনে নির্দিষ্ট কোন স্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক এর কোন শাখা না থাকে।
তাহলে আমাদের দেশের সোনালী ব্যাংক নিকাশ ঘর এর দায়িত্ব পালন করে থাকে।
প্রশ্নঃ নিকাশ ঘরের কাজ কি?
উত্তরঃ নিকাশ ঘর এর মূল কাজ হলো, একটি দেশের আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন গুলোকে নিষ্পত্তি করা।
প্রশ্নঃ স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর কি?
উত্তরঃ স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর হলো বিশেষ এক ধরনের কম্পিউটার নির্ভর এক প্রকার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।
যেখানে আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে। সেই ব্যাংক গুলো বা দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোর লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয়।
নিকাশ ঘর নিয়ে আমাদের শেষকথা
তো আপনারা যারা নিকাশ ঘর কাকে বলে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আশা করি, তারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে উক্ত বিষয়ে পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।
তো এরপরও যদি আপনার নিকাশ ঘর সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে। তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
You must be logged in to post a comment.