ছোট একটি মাছের ছানার গল্প

এক যে ছিল ঘন সবুজ পানাপুকুর। লাল মাটির সড়কের পাশে। তাল সুপুরি বনের ধারে। পুকুর আলো করে ফুটে থাকে লাল শাপলা। আরো আছে নীল পদ্ম।

উত্তর দক্ষিণের এলোমেলো বাতাস বইলে পুকুরে ওঠে খুদে খুদে ঢেউ। সোনালি রোদে ঝিকমিক করে পুকুর। তাল সুপুরির বন থেকে কিচিমিচি করে পাখিরা উড়ে যায় পানাপুকুরের ওপর দিয়ে।

আকাশের বুকে ভেসে যাওয়া নীল মেঘের সাথে উড়ো পাখিদের ছায়া পড়ে পুকুরে পুকুরে কখনও রোদের ঝিলিক। কখনও মেঘের ছায়া।

আলো ছায়ার মাঝে পুকুরটাকে কেমন মায়াবী লাগে। ভিজে মেঘের দুপুরে ঐ পুকুরটাকে আবার অন্য রকম দেখায়। আশেপাশে ঝাকড় মাকড় অনেক রকম গাছ। ঝোপেঝাড়ে ঝিলিমিলি ডানা মেলে রঙিন প্রজাপতিরা শুধু ওড়ে।

সেই পুকুরের পানি টলটলে। কাকের চোখের মতো পরিষ্কার। পুকুরের পাশে লকলকিয়ে উঠে গেছে দীঘল লতার এক গাছ। ডগায় দোলে টকটকে লাল ফুল। কখনও পুকুরে টুবুস টুবুস করে পড়ে লাল ফুল।

পানাপুকুরটা তার পাড়ের গাছগাছালির ঘন সবুজ ছায়াটিকে বুকে জমিয়ে রাখতে চাইত। লতানো গাছের ছায়ার নিচে ঝাঁঝিদাম আর টোপাপানা জমে থিকথিকে হয়ে আছে।

কেউ যেন সেখানটায় সবুজ মখমলের জাজিম বিছিয়ে দিয়েছে। তার নিচে বুড়বুড়ি কাটে সরপুঁটি, তিতপুঁটি, নানদিনা, খলসে, বজুরি আর বাতাসি মাছের ঝাঁক।

অন্য মাছেরাও আসে। শ্যাওলা সবুজ লতার বুনোটের ভেতর দিয়ে তিরতিরিয়ে ভেসে যায় রুপোলি মাছের দল । সবুজ পাতার ফাঁক গলে চিলচিলে রোদ নেমেছে পানাপুকুরে।

এই সোনালি রোদের ঝিলিকে মাছগুলোর শরীরের আঁশ জরির মতো চকচক করে।রাতের বেলায় বড় মাছেরা কখনও কপাত কপাত করে ঘা মারে। সেই শব্দ শোনে কলমিদামের জলময়ুরের ছানা।

তারা ইতিউতি তাকিয়ে থাকে পুকুরের দিকে। বুঝি মাছগুলোর সাথে ভাব জমাতে চায়। পুকুর ভরা নানা জাতের মাছ। কাছের পাখি, দূরের পাখিরা আসে এখানে।

ঝোপের পাখি, ডালের পাখি আসে। জলজ লতাপাতার ডালে বসে দোল খায় ছোট পাখিরা। দেখে দূরের বিলের দিকে উড়ে চলেছে বুনোহাঁসের দল। ফিনফিনে ডানা মেলে ফড়িঙ এসে বসে দীঘল ডগার ওপর।

ভগা থিরথির করে কাঁপে। পুকুরে ভেসে থাকা হিজল গাছের গুঁড়িতে বসে রোদ পোহায় কাছিম ছানা। ঝোপের ভেতরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা কানিবক লম্বা ঠোঁট দিয়ে খপ করে পুঁটি মাছ ধরে।

পুকুরের জলজ লতাপাতার নিচে মাছেদের বিশাল রাজ্যি। ফুটুস করে ব্যান্ডের দল লাফিয়ে গেলে মাছেরা ছুটোছুটি করে।

পানিপোকারা তিরতির করে ভেসে যায় মাছেদের গা ঘেঁষে। একটা মস্ত মাছকে হাঁ করে ছুটে আসতে দেখে পাখনা নেড়ে পালায় ছোট সোনালি মাছ।

ঝাঁক বেঁধে উঠে আসছে সোনালি, রুপোলি মাছের দল। পানিফলের কাটাঝোপের ভেতর দিয়ে তরতরিয়ে ভেসে চলেছে। মাছের ঝাঁকে তখন বিশেষ দিন।

রুপোলি রেণুর উৎসব। পুকুরের সবখানে ছড়িয়ে গেছে এই খবর। পানাপুকুরের মাছের দেশে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সবাই অপেক্ষা করে থাকে এই উৎসবমুখর দিনটির জন্য।

কী যে খুশি হয়ে ওঠে তখন মাছেরা। এই রেণুর উৎসবে তাদের বাড়বাড়ন্ত হয়। রেগুগুলো হলো মাছের ডিম। পুকুরের মাছেরা এ সময় ডিম ছেড়ে থাকে।

ঝাঁঝি দামের ডগার নিচে, শাপলা শালুকের পাতার ধারে, পানিফলের কাটার খাঁজে ঝুলে রয়েছে ডিমের সারি। ডিমের থলি। ফিনফিনে পাতার পর্দা দিয়ে তৈরি।

ঝিনুকপুরী থেকে আসবে রাজা কালিবাউশ মাছ। পানাপুকুরের নিচে মাছের রাজ্যে খুব ধুমধামের সাথে পালিত হয় রুপোলি রেণুর উৎসব।

ঝাঁকে ঝাঁকে মাছেরা এসে ডিম ছেড়ে গেছে। হালকা আলোতে সেই ডিমগুলো কেমন চিকচিক করে। বাউশটা কেমন মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে ওই রুপোলি মালার দিকে। এর ভেতরে রয়েছে পুকুরের মাছের ছানাপোনাগুলো।

যারা একদিন বড় হবে। মাছের রাজ্য গমগম করবে। বাউশ মাছের পিঠে চকচকে আঁশ। ওরা যখন সাঁতরে চলে তখন ঝিকমিক করে ওঠে পানি।

ডিমের মালা যখন ছড়িয়ে যাবে তখন উৎসবের শুরু। মাছের রাজ্যে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ। শাপলা পাতার ওপর দিয়ে তিরতির করে হেঁটে যায় জলপিপিরা।

তারাও জানে এই উৎসবের কথা । টলটলে পানিতে মাছেরা ঝিলিক মেরে ওঠে। আদ্যিকালের বাউশ মাছ হাসিমুখে বলে, ডিম ফুটে পোনা হবে। অনেক অনেক পোনা।

রেণু থেকে ছানা হবে। কত কত ছানা। খলবল করবে মাছের দল। আমাদের ঝাঁক অনেক অনেক বড় হবে। তখন সমস্ত পুকুর জুড়ে তুলব রুপোলি আলোর ঢেউ।

এ কথা শুনে খুদে মাছগুলো তখন বাউশকে ঘিরে নাচতে থাকে। গান ধরে সরপুঁটি— তাইরে নাইরে যাইরে শ্যাওলা ছেড়ে বাইরে কপাত করে পোকা ধরে মজা করে খাইরে।

পানাপুকুরের ছোট, বড়, মাঝারি, চিকন, মোটা, লম্বা, গোলগাল, সরু সকল মাছের মনেই তখন প্রচুর আনন্দ। আর তাই দেখে বাউশ ও সুর তোলে- মাছের দেশে আজকে দেখি ভীষণ কলরব সবুজ বরণ পানার নিচে জড়ো হলো সব।

আমরা জানি রুপোলি ওই রেণুর মালা থেকে নতুন দিনের অযুত পোনা আসবে ছুটে ডেকে এই পোনারা তুলবে ঠিকই রুপোলি এক ঢেউ এমন খুশির খবর শুনে নাচবে দেখো কেউ ।

কত রঙের মাছের ডিম। হালকা হলুদ, লালচে হলুদ। নীলচে ডিম, কালচে ডিম লালচে ধূসর। বেশিরভাগ ডিম হয় ফিকে হলুদ বরণের। কোনো কোনো মাছ আবার ডিম ফোটায় পেটের ভেতর।

ভিম ছাড়ে। টলটলে পানিতে ভেসে ভেসে ডিমগুলো ক্রমে পুষ্ট হয়। শেষে একদিন সেসব ডিম ফুটে পোনা বের হয়।কোনো মাছের ডিম বের হয় লম্বা লম্বা সুতোর মতো করে।

কোনো মাছ সোজা পানির ভেতর ডিম ছেড়ে দেয়। কোনো মাছ ডিম ছাড়ে পাথরের তলা ঘেঁষে। নয়তো ভেসে থাকা আগাছার নিচে। কোনো মাছ ডিম ছাড়ে নলের মতো লম্বা থলেতে করে।

এক জাতের ঝিনুকের ভেতরে ছেড়ে দেয় থলে। পানাপুকুরের জলজ গাছগাছালির মধ্যে আবার বাসা বানায় কোনো কোনো মাছ।

এক জাতের মাছ লালার মতো আঠালো জিনিস ছাড়ে পানির গাছগাছালির মধ্যে। ভুড়ভূড়ি কাটে। বুদবুদ ছাড়ে। বুদবুদগুলো পানির ওপরে এসে আঠার গায়ে লেগে থাকে।

এটাই হলো গিয়ে মাছের বাসা। এক জাতের মাছ তাদের ডিম ফোটায় বাতাস করে। পুকুরের নিচে কোনো গাছের পাতা বা পাথরের ওপর সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখে ডিম। এরপর বাতাস করতে থাকে পাখনা নেড়ে। এভাবেই একদিন ডিম ফোটে।

তিলাপিয়া মাছ মুখের ভেতরে রেখে ডিম ফোটায়। এদিকে মাছের ডিমের আবার মেলা শত্রু। পুকুরের পানিতে ওই শত্রুরা চারপাশে কিলবিল করছে। ওঁৎ পেতে থাকে। পোকামাকড়গুলো ছুটোছুটি করে। পানিতে ডিম পাড়া মাত্রই কপাত করে খেয়ে ফেলে।

মাছের রেণু-ডিম তখন সোজা পোকার পেটে। তাই তো অনেক মাছ ঝিনুকের ভেতরে ডিম পাড়ে নিরাপদ রাখার জন্য শামুকের খালি খোলাতে ডিম পাড়ে পানাপুকুরের সবচাইতে চঞ্চল ছোট রুপোলি মাছটি হলো টাপুস । এক তুমুল বিষ্টির দিনে তার জন্ম। সেদিন অঝোর ধারায় বিষ্টি পড়ছিল।

বিষ্টির ফোটা যেন পানাপুকুরে খই ফোটাচ্ছে। এমনি সময়ে ঝাঁঝিদামের ভেতরে জন্ম নিলো টাপুস। অল্পদিনেই তরতরিয়ে বড় হয়।

পানাপুকুরের বাসিন্দা অন্য মাছেরা তাকে খুব ভালোবাসে। লাল চান্দার বাচ্চাদের শরীর লাল হলুদে রাঙানো। টাপুস তাদের সাথে ছুটোছুটি করে।

বিষতারা মাছের পিঠ পাখনা কাটার মাঝে বসানো। শরীরের নিচ দিকটা রুপোলি। ওপরটা সবুজাভ রুপোলি । বিষতারাকে দেখেই টাপুস দেয় ছুট। এক ছুটে গিয়ে হাজির হয় কুচোকাচা চিংড়িদের মাঝে ।

চিংড়িগুলো টাপুসকে দেখে লিকলিকে দাঁড়াগুলো নেড়ে নাচানাচি করতে থাকে।চিংড়ি নাচে ধেইকা ধাকুর ধিন আজকে টাপুস সোনার জন্মদিন।

বোয়াল আসে চোয়াল নেড়ে নেড়ে টাপুসমণি যায় না ওদের ছেড়ে। কাজলি মাছের ঝাঁক এসেছে অই টাপুস বলে, ওদের সাথেই রই।টাপুস হঠাৎ দেখে কলমি ডগায় পা ঝুলিয়ে তার দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে রয়েছে কোলাব্যাঙ ভুটলু।

টাপুসকে দেখতে পেয়ে ফিক করে হেসে ফেলে। টাপুস ভালো জানে, এ হচ্ছে তাদের ভীষণ উপকারী এক বন্ধু। তাদের ডিম পোনার শত্রু পোকামাকড়দের খেয়ে ফেলে।

ব্যাঙদেরও কিন্তু আবার শত্রুর অভাব নেই। পুকুরের দক্ষিণপাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বকগুলো সুযোগ পেলেই খপাখপ ব্যাঙদের ধরে খায়।

ওদের একবার বাগে পেলেই হলো আর কি। এ কারণেই ভুট পানির নিচে কলমিদামের ঝোপে থিকথিকে কাদাতে লুকিয়ে থাকতে পারে।

টাপুস ভুটলুকে একটা ভয়ঙ্কর খবর দেয়। ক'দিন ধরে এই পানাপুকুরে এসে হানা দিচ্ছে দু' পেয়ে ব্যাঙ ধরার দল। তাদের সাথে ঝোলা।

সাথে ব্যাঙ ধরার কাঠিফাঁদ। ওই ফাঁদ পানিতে ফেলে ব্যাঙ ধরে। ব্যাঙ ধরার কারণ হচ্ছে তার তুলতুলে নরম ঠ্যাঙ। ওই ঠ্যাঙ কেটে ফেলে কচ করে।

তারপর নোনাপানিতে ভিজিয়ে রাখে। এই ঠ্যাঙের নাকি খুব কদর। অনেক দেশের মানুষের কাছে উপাদেয় খাবার।

ভিন দেশের মানুষেরা খায় মজা করে। ব্যাঙের ঠ্যাঙ রফতানি হয়ে চলে যায় ভিন দেশে। টাপুস-এর কাছে এসব ভয়ঙ্কর খবর শুনে ভুটল গেল দারুণ ঘাবড়ে ।

এ কী সর্বনেশে কথা। শুনলেই তো শরীর কেমন থরথরিয়ে কাঁপে। ভুটলু এবার বুঝতে পারে কেন ব্যাঙরাজ্যের সদস্যরা দিন দিন কমছে।

আগের মতো তাদের আর বেশি দেখা যায় না। টাপুস দেখল, ভুটলু কেমন মিইয়ে গেছে। আহা, বেচারা। টাপুস তাকে রেণু উৎসবের কথা বলে।

তখন পানির ওপরে ফটাস করে শব্দ হয়। ধুকপুকিয়ে ওঠে ভুটলুর বুক। দু' পেয়েরা কাঠিফাদ নামাচ্ছে নাকি? রেণু উৎসবের খবরে পুকুরজুড়ে আনন্দের ঢেউ বইতে থাকে।

ফলি মাছ বলে, আহারে! কী যে সব দিন ছিল। তখন রেণু উৎসবের সময় হতো হুলুস্থুল কাণ্ড কারখানা।

দিন নেই, রাত নেই শুধু আনন্দ । তখন মাছেদের রাজ্যে শান্তি ছিল। রুপোলি ঝিলিক তুলে এলো চিতল। কালচে বাদামি পিঠ ধনুকের মতো বাঁকা।

কী চকচকে শরীর। বুঝলে তোমরা, রেণু উৎসবে আমি এবার নাচব। এই নাচ আবার শিখেছি পানিমাকড়ের কাছ থেকে। কলমি ডগা দীঘল ঝাকড় তার ভেতরে পানিমাকড়।

মাকড় লাফায় তুরুক ভুপ ভয়ে সবার মুখটি চুপ। দারুণ নাচে পানিমাকড় ডিম নাড়িয়ে বলে হা কর। ওই মাকড়ের বাসায় যাই তবে ডিমের খোঁজটি পাই ঝাঁঝি দামের লতার বিনুনি গলিয়ে আসে জয়া মাছ।

এরা শ্যাওলা খেয়ে থাকে জয়া মাছের চোখে কুতূহল ।

কেমন হবে এবারের উৎসব।খোকসা বলে- ডাগর ডুগুর কালা মাগুর বাজায় ঢোল পিপলা শোল। বাড়ির বাইর হচ্ছে আইড় হেসেই কুটি তিতনাপুঁটি।

টাপুস ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন মাছপাড়ায়। সবাইকে জড়ো হতে হবে রেণু উৎসবে। জলজ পোকামাকড়দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

এরা শুধু রেনুপোনা খেয়ে ফেলতে চায় ঝাঁঝিলতা টাপুসকে বলে, তুমি অমন অস্থির হয়ে কেন ছুটোছুটি করছ? মাকড়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ওরা সবাই জোট বেঁধেছে। আমাদের রেণু খেয়ে খেয়ে শেষ করে দেবে।

আমাদের আর জন্মাতে দেবে না ঝাঁঝিলতা হেসে বলে, অত সোজা না। আমরা কি আর তোমাদের সাথে নেই। যেই না আসবে মাকড় অমনি তাকে আটকে ফেলব লতার জালে।

তখন কোথায় পালাবে সে? আর এভাবেই দুষ্টুদের শাস্তি দিতে হবে। ঝাঁঝিলতার কথা শুনে টগবগিয়ে ওঠে টাপুস। তাই তো।

তাদের এই ভয়ানক বিপদের সময় মেলা বন্ধু পাওয়া গেছে মাছেরা খুশি মনে ডিমের মালার সারি ঘিরে যখন নাচ্ছিল, তখন পুকুর পাড়ে দাঁড়ানো শামুকটি দেখল সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য।

দূরে লাল ধুলোর ঝড় উঠেছে। সামনের এবরো-খেবরো পথ দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে ছুটে আসছে এক দানবমুখো ট্রাক। কাছেই একটা ইট ভাটা তৈরি হয়েছে।

সারাক্ষণ তার চিমনি দিয়ে গলগল করে কালো ধোঁয়া বের হয়। ভাটার ভেতরে সারাক্ষণ আগুণ জ্বলে ধিকিধিকি। আশেপাশের গাছগাছালি কেটে ফেলে লাকড়ি বানিয়ে ইট ভাটির মস্ত চুলোতে পোড়ানো হচ্ছে।

সবুজ জায়গাটা দিন দিন কেমন রুপু রুপু হয়ে উঠছে। শামুক ভয় পেয়ে নলখাগড়ার বনে লুকিয়ে দেখতে লাগল দু' পেয়ে মানুষদের আজগুবি সব কাণ্ড কারখানা।

ট্রাক থেকে ঝুপ ঝুপ করে নামে কতগুলো মানুষ। তারা পানাপুকুরের কাছে এসে লোহা-লক্কড়ের কী সব যন্ত্রপাতি বের করে পুকুর থেকে মাটি তোলা শুরু করল।

এই দেখে জলপিপিটা ভীষণ ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল বেতঝোপের ভেতরে। ওই পুকুরের মাছেরা তখন ভয় পেয়ে গেল।

দেখল তাদের মাথার ওপরে পানি তোলপাড় করে একটা কালো দত্যি বিশাল হাঁ করে নেমে আসছে দুমড়ে মুচড়ে গেল ঝাঁঝিদামের নিচের সবুজ রাজ্য।

রুপোলি রেণুর মালার সারি গেল তছনছ হয়ে। ধারালো একটা ইস্পাতের ফলা এসে রেগুগুলো চেঁছে ফেলে মাটি কাটা শুরু করল। খুবলে খুবলে তুলছে পুকুরের কাজল মাটি।

গড়গড় শব্দ করে মাটির চাবড়া উঠে যেতে থাকে। দত্যিটা বুঝি রাগে গজাচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে বাউশ, হায় হায় একি হলো, আমাদের সব যে শেষ হয়ে গেল। ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়ে এলোপাথারি ছুটোছুটি করছে মাছেরা।

তাদের স্বপ্নের রুপোলি দেশটি এখন কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। পানাপুকুরের পাশের বেতঝোপের ছায়াহিম অন্ধকার থেকে ভয়ার্ত জলপিপি আর ডাহুকের ছানাগুলো দেখল, আরও কয়েকটা দানবমুখো ট্রাক লাল ধুলো উড়িয়ে ছুটে আসছে ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles