মুমিনদের আত্মগঠন ও আমলের সেরা মাস হলো রমজান মাস।

মাহে রমজান মুসলিমদের জন্য অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদতের সুযোগ দেয়, যেমন সাহরি ও ইফতার করা, তারাবিহ নামাজ পড়া, ইতিকাফ করা এবং লইলাতুল কদর রাতে ইবাদত করা।

এছাড়াও রমজান মাসে সাধারণত দান এবং খেয়াল রাখা সম্পর্কিত একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

এই মাসে মুসলিম উম্মাহ পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাড়াতে পারেন এবং একসাথে আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক নির্ভয়তা এবং বিশ্বাস উন্নয়ন করতে পারেন।

আসলে প্রতি বছরের এই পবিত্র মাস রমজান নামক মাস হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে মুসলিম উম্মাহ হাজ যাত্রা করে কাবা মসজিদে হাজ করে পবিত্র ইবাদত করে।

আল-হিজরা মাসে প্রতিদিনে মুসলিম উম্মাহ সেহরি করে উঠে সুন্নাহ নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর পথে আলোকিত জীবন বিত্তিক সম্মান করে।

এছাড়াও মুসলিম উম্মাহ এই মাসে সুন্নত নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর অনুসারে আমল করে নিজের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়ন করে।

রমজান মাস একটি শান্তি এবং মহান সময়, যেটি মুসলিম উম্মাহ কে তাদের ঈমান, সংস্কৃতি এবং সামাজিক প্রগতির উন্নয়নে সহায়তা করে।

আল্লাহ তা’আলা রোজার ফরজতা ও এর লক্ষ্য সম্পর্কে সুরা আল-বাকারাহে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। সূরা আল-বাকারাহে আয়াত নং. ১৮৩ থেকে ১৮৫ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে রোজার ফরজতা এবং এর লক্ষ্য।

আয়াত নং. ১৮৩ এ আল্লাহ তা’আলা বলেন, "হে ঈমানদারগণ! তোমদের ওপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।

" এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের দায়িত্ব দিয়েছেন যে রোজা পালন করা একটি ফরজ এবং এটি পূর্ববর্তী উম্মতের উপর ফরজ ছিল। আল্লাহ তা’আলা একটি পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য রোজার পালন জরুরী ধর্ম।

রমজান মাসের মাহাত্ম্য :  রমজান মাস ইসলামে একটি পবিত্র ও মহান মাস যা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং ইবাদতের সাথে সাথে মানুষকে তাদের ধর্ম ও মুসলিম সংস্কৃতি পরিচয় করানোর সুযোগ প্রদান করে।

এই মাসে মুসলিমরা রোজা রাখতে পারেন যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দ্বারা তাদের আত্মশুদ্ধি হয়। এছাড়াও এই মাসে সকল ক্ষুদ্র বড় ইবাদত ও দানের পূর্বে প্রেরিত হওয়া উত্তম।

এছাড়াও এই মাসে মুসলিমরা একত্রিত হয়ে তাদের সমাজ এবং সম্প্রদায়ের ভাইচারা বৃদ্ধি করে নেয়।

আপনি সঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন যে রমজান মাসে নবী-রাসূল হয়েছেন প্রেরণা করেন এবং এই মাস ইসলামিক জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

আপনি সঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন যে রমজান মাসে কোরআন এবং অন্যান্য আসমানী কিতাব নাজিল হয়।

রমজান মাস ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবীগণের ওপর আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়ার মাস নয়। এই মাসে না কেবল কোরআন, বরং অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহও নাজিল করা হয়েছে, যেমন তাওরাত, ইনজিল, জ়বুর এবং সহিহ হাদিস সংকলন হাদিসের বুখারি।

আরও উল্লেখযোগ্য যে, লাইলাতুল কদর হলো একটি অত্যন্ত পবিত্র রাত, যা ইসলামিক ক্যালেন্ডারের রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে হয়।

এই রাতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের পরম কারুণ দেখিয়ে দেন এবং মুসলমানদের পূর্ণ ক্ষমার দরজা খোলে দেন। আরবিতে কদর বলতে অনেক মূল্যবান বা মহিমান্বিত বস্তু বোঝা হয়।

এই মাসে বিশেষভাবে মুসলমানদের ফরজ রোজা রাখা হয়, যা ইসলামের পাঁচটি প্রধান ফরয এর মধ্যে একটি

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালামের উপর সহিফা নাজিল হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা মুসলিমদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি হিসাবে থাকে।

এছাড়া রমজানে তারেক বিন জিয়াদ কর্তৃক স্পেনের বিজয়, হযরত সুমাইয়া নির্মমভাবে শহীদ হওয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মরণ রমজান মাসকে আরও মহিমান্বিত করে।

সাথে সাথে রমজান মাস একটি পৌরাণিক আবহের মধ্যে পরিণত হয়, যা মুসলিমদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রমজান ও বিজ্ঞান: রোযা রাখা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। রোজা একটি উপবাস যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে।

রোজা রাখার সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শরীরের জরুরি পুষ্টি পাওয়া যায় এবং কোলের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কম হয়ে যায়।

প্রয়োজনে, রোজা রাখার সময়ে দোষের ঝুঁকি হতে পারে। স্বাস্থ্যকর রোজা রাখার জন্য, সুন্দর ও পুষ্টিকর খাবার নিয়ে রোজা শুরু করা উচিত। আরোপড়ুন

তবে, যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয় বা নিয়মিত ঔষধ নেয় তবে সে রোজা রাখতে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সে সমস্ত রোগের জন্য হালকা খাবার নিয়ে রোজা রাখতে পারেন।

রমজানের তাৎপর্য :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: রোজাদারের নিন্দ্রা ইবাদতের সমতল্য, তার চুপ থাকা তাসবিহ পাঠের সমতল্য,সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়।

এই হাদিস শরীফ বক্তব্য করে যে, রমজান মাস একটি সুযোগ যাতে মুসলিম বান্দারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বেশি নৈকট্য অর্জন করতে পারেন।

রমজান মাসে রোজার পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা সমস্ত মুসলিম উপলব্ধি করতে হবে। এই হাদিস শরীফ একটি প্রশংসনীয় প্রতিক্রিয়া দেয় যে রমজান মাসে রোজা পালন করা একটি মানুষ জীবনের সম্পূর্ণ সময়কে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হতে পারে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

যে ব্যক্তি শবেকদরের রাতে ঈমান ও একিন সহকারে ইবাদত করে তারও সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(বুখারী ও মুসলিম)

রোজা একটি বিশেষ পবিত্র আমল যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি নিশ্চিত পাশবিকতা এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান দেওয়া যায়।

রোজা মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, রোজা মানুষকে সহনশীলতা এবং দয়ার প্রতি সচেতন করে।

রোজা পালন করার মাধ্যমে মানুষ স্বয়ংক্রিয় ভাবে তাঁর নিজের লোকজন ও সমাজের সম্পর্ক ও দায়িত্ব প্রত্যাবর্তন করতে শিখে।

১. রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস : রমজান মাস হল মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস। আমরা প্রতি বছর এই মাসে আল্লাহর রহমত এবং করুণার কথা মনে রাখি।

কুরআন মহান একটি বই, যা মানবজন জীবনের সমস্ত দিক নিয়ে আলোকপাঠ করে এবং মানবজাতির জীবনের সমস্যাগুলির সমাধান দেয়।

সকল মুসলিমদের জন্য প্রতি বছর রমজানে কুরআন তেলাওয়াত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। আমরা যদি সম্ভব হতে পারি তবে রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

এটি আমাদের ধর্ম এবং মানবিক দায়িত্বের একটি অংশ। আমরা সবসময় আল্লাহর রহমত এবং করুণার কথা মনে রাখি

২. এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় : ইসলামী ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান এর মহত্ত্ব এবং সে মাসে মুসলিমদের জন্য কি উপহার আছে তা বর্ণনা করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে রমজান মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত হয় এবং জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয়।

এছাড়া শয়তানদের শৃংখলিত করা হয়।( সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৮০০)

এই হাদিস আমাদের জন্য একটি উদ্বেগসূচক বাণী এবং এটি রমজান মাসের পবিত্রতা এবং দুআর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমাদের উপদেশ দেয়।

আমরা রমজান মাসে কুরআন পড়ে এবং অধিক দোয়া ও দুআ করে আল্লাহর দরবারে তাকিদ করি।

৩.রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদরের ন্যায় বরকতময় রজনী : আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট করেছেন যে লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

এই রাত্রি ফেরেশতাগণ এবং রূহ পৃথিবীতে নাম নিয়ে আসে এবং আল্লাহর ইচ্ছা মতো প্রত্যেক কাজে লাগে।

লাইলাতুল ক্বদর হল মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত মুবারক একটি রাত্রি, যা রমজান মাসের শেষ দশদিনের মধ্যে হয়।

এটি সম্ভবত পরম শক্তি আল্লাহর সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহপূর্ণ রাত্রি হিসাবে পরিচিত। মুসলিমরা এই রাত্রিতে ইবাদত করে আল্লাহর কাছে নিরন্তর দোয়া করেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।

৪. রমজান মাস দো’আ কবুলের মাস : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,রমযানের প্রতিদিন এবং প্রতিরাতে অনেকগুলো বান্দা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পান এবং তাদের প্রত্যেক এর দোয়াও কবুল হয়।

রমযানে বান্দারা অধিক ইবাদত করে এবং আল্লাহর পথে বেশি প্রচুর চেষ্টা করে। এছাড়াও, রমযানের মাস হলো এমন একটি সময় যখন মুসলিম সমাজের সবাই আল্লাহর পথে বেশি চেষ্টা করে এবং মানবিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করে।

৫. রোজার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজেই প্রদান করবেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন যে, "মানুষের সমস্ত কাজ তার জন্য হল, কিন্তু রোজা আমার জন্য হল। আর রোজার পুরস্কার আমি নিজেই দেব।"

এই হাদিস মুসলিম জীবনে রোযার গুরুত্ব এবং রোযা পালন করা প্রশংসিত করে। এর মাধ্যমে মুসলমানদের উপহার দেয়া হয়েছে একটি বেশ উচ্চমানের পুরস্কার, যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরণ পান এবং তার দরবারে আকর্ষণ পান।

এছাড়াও এই হাদিস দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে আমলের পূর্বে মনে রাখতে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পেতে হবে।

এটি মুসলিমদের সৎ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তুলে ধরে যে তারা প্রতিদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি আমল করে যা তাদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে।

৬. রোযা রাখা গোনাহের সমান এবং ক্ষমালাভের কারণ : এই হাদিসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখে, তার সকল পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে রমজান মাস ঈমান এবং সাওয়াবের আশা দিয়ে রোজা রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আর রোজা রাখার ফলে আমরা আল্লাহর কাছে মনোনীত হই এবং আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৯১০)

এছাড়া, রমজান মাস একটি পবিত্র মাস এবং এই মাসে যে কোন সুন্নত আমল করা বেশি ফলদায়ক হয়। তাই রমজান মাসে রোজা রাখার সাথে সাথে পবিত্রতা এবং ভক্তিমূলক আমল করা বেশি জরুরি।

৭. রোজা হচ্ছে জান্নাত লাভের পথ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে রাইয়ান বলা হয় ।

কিয়ামতের দিন  এই দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারগন প্রবেশ করতে পারবে এবং অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না ।

রোজাদারগন প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে ফলে আর কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৭৯৭)

এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা রয়েছে আর কেউ যে এই দরজার বাইরে থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

এছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রোযাদারদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে জান্নাতে প্রবেশের জন্য।

৮. সিয়াম রোজাদারদের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে ।

৯. সিয়াম জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢাল ।

১০. রমজান মাসের রোযা রাখা  বছরের দশ মাস রোযা রাখার সমান।

রমজান মাসে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনাবলি ঘটেছে যা ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রমজান মাসে হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনে ঘটে যে কিছু ঘটনাবলি উল্লেখযোগ্য এবং স্মরণীয় তা হলোঃ

  • নবুওয়তের প্রথম বছরে রমজান মাসে হেরা গুহায় পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হয়।
  • নবুওয়তের ষষ্ঠ বছর রমজান মাসে হজরত উমর (রা.) এবং হজরত হামজা (রা.) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন
  • নবুওয়তের দশম বছর রমজান মাসে রাসূল (সা:)-এর চাচা আবু তালিব এবং হযরত খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন।
  • দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানুল মুবারকে ইসলামের প্রথম জিহাদ ঐতিহাসিক ‘গাজওয়ায়ে বদর’ সংঘটিত হয়

পঞ্চম হিজরির রমজান মাসে খন্দকের যুদ্ধ হয়।

* ছয়তম হিজরির ১০ রমজান জুমার দিনে মক্কা বিজয় হয়।

* সাততম হিজরির ১৬ রমজান কিয়ামত পর্যন্ত সুদকে হারাম করা হয়।

*নবম হিজরির রমজান মাসে তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

* এগারো হিজরির রমজান মাসে ফাতিমা (রা:) ইন্তেকাল করেন।

* আটান্ন হিজরির রমজান মাসে আয়শা ইন্তেকাল করেন।

তাকওয়া: সিয়াম একটি প্রধান ইবাদত হলেও ইসলামে অন্যান্য ইবাদত সমূহের মধ্যে সিয়ামই  গুরুত্বপূর্ণ যা অন্তরে বেশি তাকওয়া সৃষ্টি করে ইসলামে ইবাদত না করলে মানুষ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করতে পারবে না।

এছাড়াও জাকাত, নামাজ, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো যে মানুষকে সম্পূর্ণ লেনদেন দরকার তা প্রমাণ করে।

জাকাত দিয়ে মানুষ দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত হয় এবং নামাজ পড়ে মানুষ নিজের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারেন।

হজ্জ পূর্ণ করে মানুষ আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ক আরো উন্নয়ন করে এবং মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টি পান করতে সাহায্য করে।

তাই ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো সমস্ত মুসলিম জনগণের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে পরিগণিত হয়ে থাকে।

মুসলিম" শব্দটি আরবি ভাষা থেকে উত্পন্ন হয়েছে এবং এর অর্থ হলো "আল্লাহর কাছে সমর্পিত ব্যক্তি"। এই শব্দটি প্রথম প্রযোগ করেছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।

ইব্রাহিম (আঃ) আরবি ভাষায় "আল্লাহর বন্দু" বোঝাতে থাকেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

"আমি ইব্রাহিমকে বাস্তবভাবে একজন মুসলিম হিসেবে স্থাপন করেছি। "আল্লাহতা'আলা আমাদের সকলের উপর তাঁর দয়ার নেতা এবং সৃষ্টিকর্তা।

তিনি আমাদের সকলের জন্য উপকারপ্রদ এবং সমস্যা নিবারণ করতে সক্ষম। ইসলাম আমাদের জীবনের একটি অসংখ্য বিষয় শিখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়।

আমাদের প্রতিটি পরিস্থিতিতে ইসলাম বিষয়ক শিক্ষা প্রয়োজন হয়। সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে মানুষ সঠিক দিকে চলে যায় এবং সমাজ ও বিশ্বের পরিবর্তনে অবদান রাখে।

ইসলামে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হল মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং ধর্মীয় মর্যাদা উন্নয়ন করা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষ জীবনের প্রশ্নসমূহ এবং সমস্যাসমূহ সমাধান করতে পারে।

তাছাড়া, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে নিকটতম হতে পারে এবং তাঁর সৃষ্টিকৃত জীবনের প্রতি

রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে পরিগণিত হয়। এই দিনগুলোতে মুসলিম আল্লাহর নিকট একান্ত হয়ে বিনোদন বা যাত্রা থেকে দূরে থাকেন।

এই আমলটি আল্লাহর নিকটে যাচাই করার জন্য বেশি দিন থাকা প্রয়োজন না, কিন্তু মুসলিমরা এটি রমজান মাসে পালন করে তাদের ঈমান স্থায়িত্ব ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

প্রফেত মুহাম্মাদ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফে থাকতেন, যা ইসলামিক ঐতিহ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসাবে পরিচিত।

তিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, এই দশ দিনে আল্লাহর নিকট একান্ত থাকা একটি মানুষ জীবনের উপযুক্ত সময়, যার মাধ্যমে মানুষ তাদের আত্মবিশ্বাস ও ঈমান উন্নয়ন করতে পারে।

রমজান মাসে আমাদের করনীয় বিষয় কী?

*সঠিক পদ্ধতিতে রোজা পালন করা।

*বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা।

*সদকা করা।

*বেশী বেশী যিকির করা।

*দোয়া করা।

*লাইলাতুল কদরের রাতে অনেক বেশি ইবাদত করা ।

শরীয়তে রমজান মাসে গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা একটি বিশেষ নির্দেশনা। রোযাদারদের উচিত হল এই নির্দেশনাকে পালন করা এবং রমজান মাসে কোন পাপের কাজ করা থেকে বিরত থাকা।

উদাহরণস্বরূপ, রমজান মাসে সকালে আল্লাহর সূর্যোদয়ের আগে উঠে নামাজ পড়া প্রশংসনীয় কাজ। এর সাথে সাথে রোযা শুরু হলে খাদ্য ও পানীয় নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

তাই রোযা রেখে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা বর্জ্য। আর এছাড়াও রমজান মাসে অশ্লীল কথা বলা, ঝগড়া করা, শোরগোল করা, অপরকে দুঃখ দেওয়া ইত্যাদি সকল কাজ পরিত্যাগ করা উচিত।

একটি মুসলিমের জীবনের একটি অসাধারণ মুহুর্ত। এটি একটি পবিত্র মাস যা মুসলিমদের সংগে আল্লাহর সাথে আরও নিকট করে আনে এবং উন্নয়নে একটি সুযোগ প্রদান করে।

রমজানে আল্লাহ পাক আমাদের  সম্পর্কে আরও নিকট করেন এবং সম্পূর্ণ শুদ্ধতার সাথে পূণ্য অর্জনের সুযোগ দেন।

রমজানে মুসলিমদের প্রতিদিনের জীবন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং পূর্ববর্তী জীবন থেকে সংগৃহীত দোষগুলি ক্ষমা করা হয়।

এছাড়াও, রমজান একটি দীর্ঘ মাস যা মুসলিমদের জীবনের একটি মানবিক প্রতিবিম্ব। এটি আমাদেরকে অনুশীলন করে যে কিভাবে সহনশীলতা এবং দায়িত্বের সাথে জীবনযাপন করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল আমল কবুল করুন এবং আমাদেরকে আরো উত্তম আমল করার তাওফিক দান করুন।

আল্লাহ প্রতি মুসলিমের কথা শুনতে পারেন এবং আপনি যদি একজন সত্যিকারের মুসলিম হন, তবে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই আপনাকে উত্তম আমল করার জন্য তাওফিক দিবেন।

তবে আমাদের প্রতিটি আমল কে নিশ্চিত করতে হবে যে তা ইসলামিক নীতি এবং শরিয়ত অনুযায়ী করা হয়েছে এবং তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য হল।

আল্লাহ আমাদের সকলকে ইমান দান করুন এবং উত্তম আমল করতে সহায়তা করুন। আমীন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles