আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আশা করি ভালো আছেন বন্ধুরা। আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে হাজির হলাম।
আজকে আমি আপনাদেরকে ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলবো।
জ্ঞানশক্তি ও তারুণ্য শক্তি এই দুই শক্তির সমন্বয় করে ছাত্র সমাজ দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আজকের ছাত্ররাই জাতির সম্ভাবনাময় প্রজন্ম
জাতির স্বপ্নময় ভবিষ্যতের কান্ডারী। সততা, নিষ্ঠা, সাহস ও ত্যাগী মনোভাব এর সঙ্গে জ্ঞানের আলো থাকলে দেশের উন্নতি এবং জাতির নতুন অভ্যুদয় ঘটাতে পারে ছাত্র সমাজ।
আমরা নিশ্চয়ই জানি যে মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ছাত্র জীবন।
এ সময় আমরা নিজেদেরকে যেভাবে গড়ে তুলব ভবিষ্যতে বা সারা জীবন আমরা সেই রকমই ফল পাব।
বই খাতার ভাষায় ছাত্র জীবনকে বলা হয় প্রস্তুতির জীবন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয় এই ছাত্র জীবনেই।
বৃহত্তর জীবনের পটভূমিতে ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক।
মানুষ সারা জীবনে কিছু না কিছু শেখে। এ থেকেই বলা যায় যে, মানুষের সম্পূর্ণ জীবনটাই ছাত্র জীবন।
কিন্তু আসলে আমরা ছাত্র জীবন বলতে বুঝিস স্কুল ও কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনকে।
জীবন গঠনের জন্য মানুষকে একটি বিশেষ সময় আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের এই সময়টুকুই মানুষের ছাত্র জীবন।
আমরা নিশ্চয়ই একটি কথা শুনেছি যে, ছাত্রনং অধ্যয়নং তপ: এই কথাটির মানে হচ্ছে ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হচ্ছে অধ্যয়ন। ছাত্র জীবনে আমাদের এবং আপনাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত অধ্যায়ন এবং জ্ঞান অর্জন।
যদিও আপনি এখন বলতে পারেন যে জ্ঞান অর্জন করে কি লাভ। এই জ্ঞান তো আমাকে চাকরি দিবে না। তাহলে শুনুন, জ্ঞান অর্জন করুন।
চাকরি নয়। বড় বড় এবং বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে দেখতে পাবেন যে তারা বেশির ভাগই বারবার ব্যর্থ হয়ে নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলেছে যে তারা নিজেরা চাকরির জন্য বসে না থেকে অন্যকে চাকরি করার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তাই জ্ঞান অর্জন করুন। জ্ঞান আপনাকে চাকরি দিতে না পারলেও আপনাকে এমন অবস্থানে পৌঁছাবে যে আপনি অন্যদেরকে চাকরি দিতে পারবেন।
ছাত্র জীবনের কঠোর প্রদুষ্পমতা তপস্যার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যতের দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার গুরুদায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হবে। সে গুরুদায়িত্ব বহন করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
কেনার জন্য আত্মনিয়োগী একজন ছাত্রের প্রধান কর্তব্য। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আরো অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয় আর এভাবে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে তাকে মানব চরিত্রের নানা বিচ্ছদ গুণাবলী ও অর্জন করতে হয়।
এই গুণাবলী গুলো হচ্ছে: চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা, অধ্যাবসায়, খেলাধুলা ও ব্যায়াম, সহ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।
১. চরিত্র গঠন
চরিত্র হচ্ছে মানব জীবনের মুকুটস্বরূপ । ছাত্র জীবনে এবং ছাত্রদের একটি প্রধান কাজ হল চরিত্র গঠন।
তাই এ সময় প্রত্যেক ছাত্রেরই সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, সহযোগিতা, পরোপকার, উদারতা, ধৈর্য, সংযম ও দেশপ্রেম আয়ত্ত করতে হবে।
সব রকম অসদগুন ও বদ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা একজন ছাত্রের অন্যতম কর্তব্য।
২. নিয়মানুবর্তিতা
শৃঙ্খলা ছাড়া মানব জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে না। এই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা ছাত্র জীবনে অর্জন করতে হয়।
এগুন অর্জনের ওপর তার ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করে। কোন ব্যক্তি বা ছাত্রই যদি যেকোনো কাজে নিয়ম মেনে না করে তাহলে সে সেই কাজে সফল হতে পারবে না। এজন্য নিয়মানুবর্তিতা একটি মহৎ গুণ।
৩. সময়ানুবর্তিতা
সময়নিষ্ঠা একটি বড় গুণ। যে মানুষ সময়ের মূল্য দিতে জানে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
তাই ছাত্র জীবন থেকে সময় নিষ্ঠার অভ্যাস করতে হবে এবং সময়ের মূল্য দিতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই একটি প্রবাদ বাক্য শুনেছি যে, সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না।এ জন্য সময়কে মূল্য দিতে হবে।
৪. অধ্যাবসায়
ছাত্রদের অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমী হতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রমে না হলে কোন কিছুতেই তারা সফল হতে পারবে না।
একটি প্রবাদ বাক্য আছে যে, কোন জায়গায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষ না হওয়ার অজুহাত থাকতেই পারে। কিন্তু, সেই জায়গায় সবচেয়ে পরিশ্রমী মানুষটি না হওয়ার কোন অজুহাত থাকতে পারে না।
দেখা যায় অনেক মেধাবী ছাত্র অলসতার কারণে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে বাধ্য হয়।
আবার অনেক কম মেধার ছাত্র শুধু অধ্যাবসায় ও পরিশ্রম দ্বারা আশাতীত সাফল্য অর্জন করে চমক সৃষ্টি করে। তাই ছাত্র জীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. খেলাধুলা ও ব্যায়াম
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কথাটি তো আমরা সকলেই শুনে থাকবো। আর সুস্থ শরীরে বাস করে সুস্থ মন। এই কথাটিও আমরা সকলেই শুনেছি।
শরীর সুস্থ না থাকলে নিয়মিত লেখাপড়া হয় না। তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ছাত্রদের নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা খুব জরুরী।
৬. সহ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। এর ফলে ছাত্রদের জ্ঞান বৃদ্ধি হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গান, নাচ ও অভিনয় ইত্যাদিতেও তাকে অংশ নিতে হবে।
ছাত্র জীবনে দায়িত্বের দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে নিজেকে যজ্ঞ করে তোলা এবং অপরটি হচ্ছে দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
নিজেকে যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই কল্যাণ হয়। ছাত্ররা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ও শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
তাই জাতীয় উন্নয়নের সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অতীতে জাতির সংকটকালে ছাত্র সমাজে অগ্রবর্তী চিন্তার পথিকৃত হয়ে এগিয়ে এসেছে।
মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণ ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতেও যাতে সংকটে ও সমস্যায় ঝাপিয়ে পড়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার কাজে ছাত্র সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
সত্যের ছাত্রকে মাতা পিতার প্রতি শ্রদ্ধ, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করতে হবে।
সহপাঠ এটা সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং শিক্ষক গুরুজনদের সম্মান করতে হবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সভার সঙ্গে প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
অবশেষে বলা যায় যে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গঠিত হয় ছাত্র জীবনে। আবার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ছাত্রদের উপর।
তাই ছাত্র জীবনের কর্তব্য দায়িত্ব ঠিকভাবে উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে পালন করা প্রতিটি ছাত্রীর উচিত। এতে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও উন্নতি সাধন হয়।
You must be logged in to post a comment.