সংশোধিত মানুষ? একজন মানুষের জীবন পরিবর্তনের গল্প

এইতো কিছু দিন আগের কথা, আমাদের গ্রামে একজন ডক্টর এসেছিল। নাম তার >>>মার্ক স্টিম।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

সে ছিলেন একজন ইউরোপিয়ন, খুব ভালো মানের ডক্টর তিনি। বয়স কেবল ২৪ বছর । তিনি আসার পরে ভেবেছিলাম এবার ভালো করে চোখের চিকিৎসা করাবো।

তিনি আসার তিন দিন পরে চিকিৎসার জন্য তার কাছে গেলাম। আমার বয়স কেবল ১৬, কিন্তু বয়সে কি আসে যায়, গড়ে উঠলো তার সাথে আমার বন্ধুত্ব। কিছু দিনের মধ্যেই সে আমার প্রাণ প্রিয় বড় ভাই হয়ে গেলো, আর আমি হলাম তার ছোট ভাই।

 দুজন যেন একে অপরের সহোদর ভাই। আসলে ভ্রাতৃত্ব কোনো দেশ মানে না, মানে না কোনো আকৃতি।

একদিন ভাইয়ার কাছে প্রশ্ন করলাম, " আচ্ছা ভাইয়া আপনার শৈশবকাল কেমন ছিল ? " তার পরেই মনে পড়লো, ভাইয়া তে ইংরেজ, সে বাংলা জানবে কেমন করে?  

কিন্তু ভাবতে ভাবতেই  সে উত্তর দিল, " খুব কষ্টের "।

তার বাংলা বলা দেখে আমিতো অবাক।

তার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, " আপনি বাংলা জানেন ? "

 ভাইয়া: জানি। কেনো?  

আমি : কিভাবে জানেন?  

ভাইয়া: তাহমিদ তোমাকে একটা রহস্য বলবো  শুনবে

            নাকি ?

আমি : জ্বি। অবশ্যই। মনে খুব কৌতুহল নিয়ে বললাম

            বলেন।

ভাইয়া : আমি আসলে জন্ম সুত্রে বাংলাদেশের     

            নাগরিক।কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আজ

            ইউরোপিয়ন। কিছু করার নেই,  বাস্তবতা বড়ই

            কঠিন।

কথা বলতে বলতে তার  পেশেন্ট এসে ডাকা-ডাকি শুরু করে দিল। বুঝে নিলাম আজকের মতো কথা এখানেই শেষ। চলে এলাম বাড়ি, কিন্তু মনে তখনও কৌতূহল ছিল। আপন মনে ভাবতে লাগলাম কি সেই বাস্তবতা, কিন্তু কিছুতেই তা আন্দাজ করতে পারলাম না। 

যাই হোক, পরের দিন আবার গেলাম তার কাছে।  ভাইয়ার কাছে সব কিছু জানতে চাইলাম। সে বলল, শোনার আগে রুমালটা কাছে নাও কারণ চোখে পানি আসতে পারে। আমি অবাক হয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলাম।

ভাইয়া:- আমার জন্ম আসলে রংপুরে।  জন্মের ১৩ দিন আগেই বাবা মারা যান, কখোনো তাকে দেখি নাই। জন্মের কিছুক্ষণ পরে মাও মারা যান। তারপর থেকেই মামার বাসায় থাকতাম।

মামা খুব ধনী, কিন্তু টাকা থাকলেও  তার ছিলনা মায়া, ছিলনা মমতা। আমার আজও মনে পড়েনা ঠিক কবে মামার বাসা থেকে পেট ভরে খাবার খেয়েছি।

মামি খুব ভালো মানুষ ছিলেন।ছোট থেকে তাকেই মা বলে ডেকেছি। 

মামার অত্যাচারে চলে গেলাম বাড়ি থেকে । আসলাম রংপুর মেইন টাউনে। কাজ করতে  লাগলাম গাড়ি মোছার। একেকটা গাড়ির জন্য ২৫ টাকা পেতাম। কিন্তু পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর। এক পুলিশের গাড়ি মোছার পর টাকা চাওয়ায় সে দিল আমার নামে কেস। দিল চুরির কেস।

তারপর ২ মাস পালিয়ে বেড়ালাম। শেষ পর্যন্ত জাহাজের খালাসি হয়ে চলে গেলাম ইউরোপ।

আর আজ মার্ক স্টিম। আমার আসল নাম রহমত উল্লাহ্।

গল্পটা শোনার পর আমার মুখে আর কথা ফুটলো না।

আমার মতে তিনি আসলেই একজন সংশোধিত মানুষ।

কেনো না তিনি তার অতীত জীবনের   দুঃখকে সংশোধন  করে অর্জন  করেছেন  সুখ নামক পেশা। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ