প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে।বর্তমানে অনলাইন পড়াশোনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনলাইন পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই।মহামারীতে সবকিছু থমকে গেলেও সময় কিন্তু থমকে নেই।সে তার নিজস্ব গতিতে বয়েই চলেছে।সময়ের সাথে তাল মেলাতে শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া হয়েছে অনলাইন পড়াশোনা কার্যক্রম। যাতে তারা সময়ের সাথে সাথে পিছিয়ে না পড়ে, তাদের পড়াশোনা আটকে না থাকে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষকরা ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা নিচ্ছেন।এতে শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনার চর্চার মধ্যে থাকতে পারছে।
বাচ্চাদের হৈচৈ,দুষ্টুমি,খেলাধূলায় মুখরিত থাকত স্কুল প্রাঙ্গন।টিফিন পিরিয়ডে সবাই মিলে টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া,ছুটির পর স্কুলের গেটে ঝালমুড়ি মামা,আইসক্রিম মামাকে ঘিরে ভীড় এগুলোই স্কুলের চিরাচরিত রূপ।কিন্তু কোভিড -১৯ এর কারণে পাল্টে গিয়েছে সব কিছু।
স্কুল,কলেজ এখন আর কোলাহলে পরিপূর্ণ নেই।লকডাউন,ছুটি এসবের কারণে যেন নিরব হয়ে আছে স্কুল প্রাঙ্গণ। স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই,পরীক্ষার ঠিক নেই এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে।তারা বেশিরভাগই মোবাইল ফোনের গেমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।ফলে পড়াশোনায় আর মন নেই।
শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা দেখে সরকার উদ্যোগ নেয় অনলাইন ক্লাস নেওয়ার। এতে তারা ঘরে বসেই যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়া ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেল শ্রেণিভিত্তিক ক্লাস কার্যক্রম বিভিন্ন শিক্ষকদের সাহায্যে পরিচালনা করে নিয়মিত প্রচার করছে।
মন্জুরুল ইমাম অভি ৩য় শ্রেণির একজন ছাত্র।সে জানায়,সে স্কুলে যেতে ভালোবাসে।বন্ধুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে। মহামারির এই পরিস্থিতির আগে সে প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারতো। কিন্তু এখন আর পারছেনা। স্কুলে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই তাই তার পড়তেও অতোটা ভালো লাগেনা।সে এখন বেশিরভাগ সময় কাঁটায় টিভি দেখে এবং গেইম খেলে। তবে সে স্কুলে না গিয়েও ঘরে বসেই অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে এই বিষয়টা তাকে বেশ আনন্দ দেয়।
ফেরদৌস মল্লিক ৭ম শ্রেণির একজন ছাত্র। সে জানায়, স্কুলকে সে অনেক মিস করে। স্কুলে পড়াশোনা, টিফিনে বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে টিফিন খাওয়া,আড্ডা দেওয়া,বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এগুলো কিছুই আর হচ্ছেনা। তবে অনলাইনে ক্লাস করে সে তার পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে এতে সে যথেষ্টই আনন্দিত।
মোঃআমিরুল হক একজন শিক্ষক। তিনি জানান,আগে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত থাকতো স্কুলের চারপাশ।কিন্তু তা এখন আর নেই।মহামারীর ভয়াবহতা সবকিছুকে গ্রাস করে রেখেছে।শিক্ষার্থীদের সাথে পড়াশোনার যে আত্মিক সম্পর্ক তা কোনোভাবেই ক্ষুন্ন হতে দেওয়া যাবেনা।তাদেরকে অবশ্যই যতোটা সম্ভব পড়াশোনার ভিতরে রাখতে হবে। যাতে তারা স্কুলে যেতে না পারলেও পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে অনলাইন পড়াশোনা। অনলাইনে ক্লাস,পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখা সম্ভব।
বর্তমানে অনলাইন পড়াশোনা শিশুদের জন্যও আনন্দময় হয়ে উঠছে। কারণ এখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন ডিজিটাল চিত্র,ভিডিও দেখিয়ে ক্লাস নিতে পারছে।
সর্বপরি, আমাদের এটাই কাম্য যে পৃথিবী যেন আবার আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। বাচ্চারা আবার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যেতে পারে।তাঁদের চঞ্চল পদধ্বনিতে আবার যেন প্রাণ ফিরে পায় স্কুলের প্রাঙ্গণ।
You must be logged in to post a comment.