মমি: মমির নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাদা কাপড়ে মোড়ানো আজব মৃতদেহ। আজ আমরা জানবো এই মৃতদেহ গুলো কাদের, কেন এই মৃতদেহদের কে এতো যত্ন করে সংরক্ষন করা হয়েছে এবং বিখ্যাত মমি তুতেনখামেন ও তাকে ঘিরে রহস্য সম্পর্কে।
প্রাচীন মিশরের মানুষ মনে করতো ফারাওরা তাদের দেবতা স্বরুপ। তাই তাদের মৃত্যুর পর দেহগুলো অত্যন্ত যত্ন করে সংরক্ষন করা হয়েছিলো। প্রথমে তাদের দেহ লবন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হতো। তারপর হৃদপিন্ড ব্যাতিত সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নেওয়া হতো। অর্থাৎ ফুস্ফুস, মস্তিস্ক, যকৃত, বৃক্ক, অন্ত্র সবকিছু।
হৃদপিন্ড বের না করার কারন হলোঃতারা মনে করতো হৃতপিন্ডই হবে তাদের পরকালের পথপ্রদর্শক। এরপর তাদের দেহের ভেতর বিভিন্ন ভেসদ ঔষধ ঢুকিয়ে সেলাই করে তাদের দেহ ৭০ দিন পর্যন্ত এক ধরনের লবনের ভেতর ডুবিয়ে রাখা হতো। তাদের দেহের পানি শুকিয়ে গেলে ভেতরে কাঠের গুড়ো ঢুকিয়ে শরীরে তেল লাগিয়ে কয়েক পরদ লেলিন কাপড়ে মুড়িয়ে ফেলা হতো।
পরবর্তীতে তাদের দেহ একাধিক কফিনে ঢুকিয়ে রাখা হতো। কফিনের সাথে অনেক ধন-সম্পদ, সোনা-দানা, সোনার আসবাব-পত্র, থালা বাসন এমনকি দাস-দাসী হত্যা করে তাদের সাথে দিয়ে দেওয়া হতো যাতে তাদের পরকালের যাত্রা সুখের হয়।
বর্তমানে মিশরের বহু পিরামিডের পাওয়া গেছে অসংখ্য মমি। এদের ভেতর একটি মমির নাম তুতেনখামেন। সে তার জীবনে মাত্র ১৯ বছর বেচে ছিলো। ১৯২২ সালে কয়েকজন শ্রমিক মাটি খনন করার সময় খুজে পান একটি সুড়ঙ্গ। তার ভেতরে ছিলো বিশাল এক সমাধিক্ষেত্র, আর এই সমাধিক্ষেত্রেই ছিলো তুতেন খামেনের সমাধি।
প্রফেসর হাওয়ার্ড কার্টার প্রথম তুতেনখামেনের সমাধি খোলেন। তুতেনখামেনের সমাধি আটকানোর জন্য যে সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছিলো সেটার গায়ে লেখা ছিলো তুতেনখামেন। তার কবরে আঁকা ছবি থেকে বোঝা যায় সে ছিলেন একজন রাজা, শিকারি । তুতেনখামেনের স্ত্রীর নাম ছিলো সেনামুন।
তুতেন খামেনের এতো কম বয়সের মৃত্যুর কারন জানা যায়নি। তুতেন খামেনের কবর ছিলো মাটি থেকে অনেক নিচে তাই এটি কবর লুটেরাদের থেকে সুরক্ষিত ছিলো।
তুতেনখামেনের কবর গবেষনা করার সময় প্রফেসর হাওয়ার্ড কার্টারের পাখিকে একটা গোখরা সাপ খেয়ে ফেলে। এর পর থেকে খনন শ্রমিকরা বলা বলি করতে থাকে এটা নাকি ফারাও তুতেনখামেনের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর কারন। কিন্তু এমন ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি।
এর কিছুদিন পর দাড়ি কামাতে গিয়ে তার গাল কেটে ফেলেন প্রফেসর হাওয়ার্ড কার্টার এবং ইনফেকশনের কারনে তিনি মারা যান। পরবর্তীতে পত্রিকায় ফলাও করে এ খবর প্রচার করা হলে মানুষের মনে ভয় ঢুকে যায়। এর থেকেই তুতেনখামেনের কবর নিয়ে তৈরি হয় নানা জল্পনা কল্পনা।
তুতেনখামেনের প্রথম নাম ছিল কিন্তু তুতেনআতেন। ধারনা করা হয় তার বাবা ছিলো আখেনাতেন।
তুতেনখামেনের বাব আখেনাতেন এবং তার মা নেফারতিতি বহুইশ্বরবাদ পরিত্যাগ করেন এবং আতেনিজম নামে একটি একইশ্বরবাদ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। আখেনাতেনের মৃত্য্যর পর তার সমস্ত মুর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়। পরবর্তীতে তার ছেলে তুতেন খামেন আবার আগের সেই ধর্ম ফিরিয়ে আনেন। যার কারনে তুতেনখামেন নিজের নাম পরিবর্তন করেন।
এখন আসা যাক আসলেও কি তুতেন খামেনের অভিসাপের কারনে প্রফেসর মারা গেছে?
প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না। কারন সমাধিক্ষেত্রে প্রথম যে ২৬জন প্রবেশ করেছিলো তাদের ভেতরে প্রফেসর হাওয়ার্ড কার্টার ব্যাতিত সবাই স্বাভাবিক ভাবে বেচে ছিলো। আবার বর্তমানে অসংখ্য দর্শনার্থী তুতেনখামেনের মমি দেখতে আসেন ।
তাদের ওপর তো কোনো অভিশাপ দেখা যায় না। প্রাচীন ফারাওদের কবরে অভিশাপের কথা লেখার মূল কারন লুটেরা দের হাত থেকে কবরের ভেতরে থাকা মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা।
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ মনে করে ফেরাউনরা অনেক লম্বা। কিন্তু আসলে মমিদের ভেতরে সবচেয়ে লম্বা মমির উচ্চতা ৫ফুট ৯ইঞ্চি।
You must be logged in to post a comment.