শেষ চিঠি। গল্পটা সবার ভালো লাগবে।

মায়া,
কেমন আছো তুমি। মনে হয় তুমি তোমার সাজানো জগত নিয়ে অনেক ভালোই আছো। নতুন সংসার নতুন জীবন নতুন আরেকটা গল্প এগুলো নিয়ে তুমি অনেক ভালোই আছো।

তুমি অবাক হচ্ছো এই ভেবে ২০২২ সালে এসে কেউ কি চিঠি লিখে যেখানে আধুনিকতার ছোয়া সব যায়গায়। হুম আমি তোমাকে কল বা মেসেস দিয়ে কথাগুলো বলতে পারতাম।

কিন্তু যানো চিঠি কেনো লিখলাম? কারন কলে বা মেসেজে যদি কথাগুলো বলতাম তা একটা সময় অনেক মেসস এর ভিতরে হারিয়ে যেতো। 

কিন্তু এ কাগজ কলমের লেখা চিঠিটা হারাবে তুমি যদি না ছিড়ে ফেলো। যাই হোক তমাকে চিঠিটা অনেক ভেবে চিন্তে লিখলাম। আর মজার কথা কি যানো যখন তুমি এ চিঠিটা পড়বে তখন আর আমি তোমাদের মাঝে নেই।

কারন চিঠিটা তোমার কাছে যাবার আগে আমি চলে যাবো না ফেরা দেশে। সত্যি বলতে কি তুমি চলে যাবার পড় আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি। না এখানে তোমার কোন দোষ নেই দোষটা আমার।

কারন আমি মানতে পারিনি তুমি অন্য কারো হবে। তুমি অবাক হচ্ছো তাই না? কারন তোমাকে তুই না বলে তুমি বলছি। আর এমন করে কেনোই বা বলছি। 

মায়া ছোট বেলা থেকে একসথে বড় হয়েছি তুমি ছিলে আমার বেস্ট ফেন্ড। একটা মূহুত্ব তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পাড়তাম না। তুম আমার জীবনে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলে আমি নিজেও যানিনা।

যখন আমরা স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে উঠলাম আমাদের আর কে পায়। মনে পড়ে সেই সব দিনের কথা? সারাদিন এক সাথে ঘুড়াঘুড়ী।

তোমার ফুচকা,ঝালমুড়ী খাওয়া আর ঝাল খাবার পড় তোমার পাগলামি। আসক্রিরিম না আনা পযন্ত তুমি চিৎকার করতে থাকতে।

কি পড়ে হাসি পাচ্ছে তাই না। আমারো লিখতে গিয়ে কখন যে নিজের অজান্তে হাসি চলে এসেছে বলতে পারবো না।

তোমার সব পাগলামই ছিলো আমার আনোন্দের কারন। সবচে ভালো লাগতো যখনেই বৃষ্টি হতো তুমি ভিজতে। তখন রাগ হতো ভাবতাম এতো বকা খাবার পড়ও যে কেনো মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজে? কারন তোমার ঠান্ডার সমস্যা ছিলো।

তাই যতোবার তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে ততোবারেই তোমার জ্বর আসতো। আমার খুব রাগ হতো। মাঝে মাঝে আমিও তোমার সাথে এ নিয়ে ঝগড়া করতাম। 

তখন তুমি বলতে তুই ভিজিস না তুই কি করে বুঝবি বৃষ্টিতে ভেজার কি মজা। ঠিক কথাই বলতে আমি ভিজতাম না তাই জানতেই পাড়নি বৃষ্টিতে ভিজার মজা কতো টুকু। 

কিন্তু তুম কি যানো এখন আমি বৃষ্টি হলেই ভিজি। কারন বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা যখন আমার শরিরকে স্পর্শ করে মনে হয় তুমি ছুয়ে গেছো।

এবার তুমি লেখাটা পড়ে নিশ্চই একটু অবাক হচ্ছো। ভাবছো আমি পাগল হয়ে গেলাম না কি। হুম আসলেই আমি পাগল হয়ে গেছি। কারন তুমি সব সময় আমাকে তোমার খুব ভালো বন্ধু মনে করে এসেছো।

বন্ধুর বাইরে অন্য কিছু ভাবো নি।  কিন্তু আমি যে কখন মনের অজান্তে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানিনা। কিন্তু বলতে সাহস পেতাম না।

যদি তুমি না করে দেও।  যদি তুমি বন্ধুত্বটা নষ্ট করে দেও। কারন আমি তোমাকে হারাতে চাই নি। কিন্তু এটাও ভুলে গেছিলাম যে একদিন তুমি চলে যাবে অন্য কারো হয়ে।

বার বার তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম যে তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো না। কিন্তু বলতে পারিনি।

এটা আমার দোষ। কারন আমি এক তরফা ভাবে তোমাকে ভালোবেসে গিয়েছি।তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। যখন তুমি আমার হাতটা ধরে হাতটে মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে শুখি মানুষের মাঝে আমি একজন।

যখন তুমি আমার কাধে মাথা রেখে নদী দেখতে আর গুন গুন করে গান করতে তোমর চুল থেকে ভেসে আসা গন্ধটা আমাকে পাগল করে দিতো। মনে হতো তুমি যেনো এভাবেই থাকো সারাজীবন।

কিন্তু বাস্তবাতা অনকে নিষ্ঠুর। সত্য অনেক কষ্টের। যা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে।প্রথম যখন আন্টি বললো তোমার জন্য ভালো একটা ছেলে দেখেছে।

ছেলে ডক্টর আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।  মূহুর্তে মধ্যে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়ে একাকার হয়ে গেলো।

প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো দম নিতে। আমি চুপ করে আছি দেখে আন্টি বললো কিরে কিছু বলছিস না কেনো চুপ করে আছিস কেনো?

তখন নিজেকে কোনরকম সামলে কষ্টাকে চাপা দিয়ে  হেসে বললাম অনেক ভালো হয়েছে পাগলীটাকে বিদায় দেওয়া গেলো অবশেষে। 

কিন্তু যানো আমি মানতে পারছিলাম না কিছু। মনে হচ্ছিলো চিৎকারে করে আন্টিকে বলি। আন্টি আমি আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি।

ওকে ছাড়া আমি বাচতে পাড়বো না। আমার ভালোবাসাটা আমাকে দিয়ে দেন। কিন্তু বলতে পারিনি। কারন এটা হবার নয়। 

তার পড় তোমাকে যতোবার দেখেছি কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যেতো। কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেইনি। কারন ভালোবাসি তোমাকে। আমার ভালোবাসার মাঝে নেই কোন স্বথ, লোভ চাওয়া।

আমি তোমাকে এতোটাই ভালোবাসি যে আমি চাই আমার ভালোবাসর মানুষটা ভালো থাকুক। 
তাই আমি নিজেকে সেদিনের পড় থেকে গুটিয়ে নিলাম। 

কবর দিলাম আমার ভালোবাসাকে। বন্ধুত্বের কাছে আমার ভালোবাসা হেরে গেলো। 

সময়গুলো কেমন করে চলে গেলো নিজেও বলতে পাড়লাম না। তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।তুমিও রাজি হয়ে গেলে। 

আর দেখতে দেখতে তোমার বিয়ের দিন চলে এলো।

হুম তোমার বিয়ের দিনটা আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। কারন এ দিনে আমি হারাতে যাচ্ছি আমার ভালোবাসাকে।

মায়া তুমি যখন সুন্দর করে সেজে বিয়ের আসনে গিয়ে বসলে আমি অপলোক চোখে দেখছিলাম তোমাকে। মনে হচ্ছিলো কোন একটা পড়ী আমার সামনে বসে আছে।অনেক বার তোমাকে সাজতে দেখেছি কিন্তু সেদিন তোমাকে সত্যিই অন্যরকম লাগছিলো।

তোমার পাশে বসা মানুষটাকে আমি মানকে পারছিলাম না।

মনে হচ্ছিলো সবার সামনে গিয়ে তোমার হাত ধরে তোমাকে বলি মায় আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তুমি শুধু আমার। 

তুমি অন্য কারো হতে পারো না। তোমার প্রতি শুধু আমারেই অধিকার। অন্য কারো না।কিন্তু বলতে পারিনি। কারন আমার ভালোবাসা হেরে গেছে তোমার বন্ধুত্বের কারনে।

তাই নিবাক হয়ে শুধু দেখতে লাগলাম আস্তে আস্তে করে তুমি চলে যাচ্ছো আমার জীবন থেকে অনেক দূরে। 
তাইতো তোমাকে যখন বিদায় দিলো আমি সে সময় থাকতে পাড়লাম না। 

তুমি যানো সেদিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিলো তুমি যখন যাচ্ছিলে।  আমি কোন দিন বৃষ্টিতে ভিজিনি। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। আর ছাদ থেকে তোমার চলে যাওয়া দেখছিলাম।

তুমি আমাকে অনেক খুজেছিলে তাই না? কিন্তু বলো কি করে তোমার সামনে আসি। কারন আমি যে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না।

তুমি চলে যাবার পড় সারা রাত আমি ছাদেই ছিলাম তোমার প্রিয় দোলনায় বসে ছিলাম। অনেক কেঁদেছি যানো। 
তার পড় থেকে আমি যেনো একটা জীবন্ত লাশ হয়ে গেলাম। তুমি অনেক বার বাসায় কল করেছো কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলিনি।

কি বলবো আর কি করে বলবো বল? আমার বাক শক্তি তো মৃত হয়ে গেছে। শুনেছি মার কাছে তুমি নাকি অনেক রাগ করেছো। এটাই স্বাভাবিক। কারন হুট করে তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। 

কারন তুমি চলে যাবার পড় আমি কথা দিয়েছি নিজেকে আর কোন দিন তোমার সাথে কথা বলবো না। আর কোন দিন তোমার সামনে দাড়াবো না।

এখানে তোমার কোন দোষ নেই দোষটা আমার। অনেক দিন হয়ে গেলো তুমি চলে গেছো।

কিন্তু এক মূহুর্তের জন্যও আমি ভাবতে পারছিনা তুমি নেই। প্রচন্দ কষ্ট আমাকে দিন দিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি যানো নানা ভাবে নিজেকে সান্তনা দিয়েছি।

কিন্তু আমি হেরে গেলাম।  আমি আর মানতে পারছি না তুমি নেই। কোনটা স্বাভাবিক মেনে নেওয়াটা না মানতে পারছিনা। তাই আজ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। 

আর কোন দিন তোমার সাথে আমার দেখা হবে না।কোনদিন তোমার সাথে আমার কথা হবে না।
তুমি চাইলেও আর আমাকে দেখতে পারবে না কথা বলতে পারবে না।

আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো বন্ধু। কারন আমি যানিনা তোমার বন্ধুত্বের কতোটুকু সন্মান করেতে পেরেছি।
যানো লোখাগুলো লেখার পড় নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।

মনের মাঝে যে কষ্টটা ছিলো কেমন যেনো নেই নেই লাগছে।  কারন এখন আমি আমার মনের কথা বলে দিতে পেরেছি।

মায়া আমি চলে যাচ্ছি যাবার আগে খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে দেখতে, খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতটা ধরতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। 

দোয়া করি তুমি সব সময় ভালো থেকো।  আর লেখাটা পড়াড় পড় একবারের জন্যেও নিজেকে অপরাধী ভাববে না।

কারন এখানে তোমার  কোন ভুল নেই। 

মায়া I love u so much.
ভালো থেকো বন্ধু, ইতী তোমার হতোভাগা বন্ধু।

কবরের পাশে দাড়িয়ে মেয়েটা চিঠিটা পড়া শেষ করলো। কি করবে বুঝতে পারলো না। কারন মেয়েটা তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার বেস্ট ফ্রেন্ডেকে হারিয়েছে চীর জীবনের জন্য।

আকাশে মেঘ ডাকছে।  বৃষ্টি পড়তে শুরু করছে।  মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজছে চোখে জল।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles