পাট থেকে পরিবেশ বান্ধব টিন তৈরি করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছেন এক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী।তাঁর নাম ড.মোবারক আহমেদ খান,তিনি দেশসেরা গবেষকদের একজন।পাটের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯০ এর দশক থেকে তিনি নিরলস গবেষণা করে চলেছেন।
বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা ডাটাবেজ স্কোপাসের তথ্যানুসারে,বৈশ্বিকভাবে পাট বিষয়ক গবেষণায় তাঁকে একজন প্রধান বিজ্ঞানী বলে মনে করা হয়। তাঁর বিভিন্ন আবিস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাটের সোনালি ব্যাগ,জুটিন বা ঢেউ টিন,হেলমেট ও টাইলস।
যেভাবে তৈরি হয় জুটিনঃ
দেখতে অবিকল ঢেউ টিনের মতই।পাট বা জুট থেকে তৈরি বলে এর নাম জুটিন।এর প্রস্তুত প্রণালী অত্যন্ত সহজ।শহর কিংবা গ্রামে বাড়ির আঙিনা বা উঠানে নারী কিংবা পুরুষ যে কেউ সহজেই জুটিন তৈরি করতে পারবেন।জুটিন বানাতে প্রথমে একটি ঢেউটিনের ওপর পলিথিন বা মোম অথবা তেলের প্রলেপ দিতে হয়।
এর উপর ঢেউ টিনের সমান মাপের পাটের চট বিছিয়ে তার উপর পলিমারের মিশ্রণ লেপে দেয়া হয়।পলিমারের মিশ্রণের ওপর আরেকটি চট বিছিয়ে তার ওপর আবারও পলিমারের মিশ্রণ লেপে দিতে হয়। পলিমার মিশ্রিত ওই চটটির ওপরে আরেকটি ঢেউ টিন চাপ দিয়ে রাখতে হয়।
২০ মিনিট পর ঢেউ টিন ও পলিথিন সরিয়ে ফেললে পাওয়া যাবে জুটিন।তবে তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে চার পাঁচ মিনিটের মধ্যেও এটি করা সম্ভব।
গুণগত মানঃ
পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পাট তাপ কুপরিবাহী হওয়ায় জুটিন দিয়ে নির্মিত ঘর গ্রীষ্মকালে শীতল থাকে।শীতকালে টিনের সঙ্গে জলীয় বাষ্প তরলীভূত হয়ে জলকণায় রূপ নেয়,কিন্তু জুটিনে তেমনটা হয় না।
কেন জুটিন গুরুত্বপূর্ণ ঃ
পাট থেকে তৈরি জুটিন পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই বলেই এত আলোচনা সর্বত্র। ড.মোবারক আহমেদের মতে,জুটিন ১০০ বছর অনায়াসে রোদ,বৃষ্টি, ঝড়ের মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারে।টিনের প্রধান উপকরণ লেড ও জিঙ্কের যোগান পুরোটাই আমদানি নির্ভর।
অর্থ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করেই এই আবিষ্কারের প্রতি ঝুঁকে ছিলেন বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান। কারণ জুটিনের ব্যবহার বাড়লে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।
বর্তমানে আমরা যেসব টিন দেখতে পাই এগুলো কিছু দিন পরই মরিচা ধরে যায়,ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং এতে পরিবেশ নানা রকম হুমকির সম্মুখীন হয়।কিন্তু জুটিনের ব্যবহার বাড়লে এ সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
পাটের জট ও বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রণই মাত্র ২০ মিনিটে তৈরি করতে সক্ষম হবে এই জুটিন।যদি বাণিজ্যিক ভাবে জুটিন উৎপাদন করা হয় তবে জুটিন তৈরির সময় আরও কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
এতে প্রয়োজন হবে না কোনো বিশেষ কারিগরি, গ্যাস,বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো জ্বালানী। এ জুটিন অন্যান্য ঢেউ টিনের থেকে মজবুত।
মোবারক আহমেদ খান বলেন,জুটিন নির্মাণে কোনো ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় না।জড় না জলোচ্ছ্বাসে ঢেউ টিনের আঘাতে মানুষ ও পশু আঘাতপ্রাপ্ত হয়,সেই দিক বিবেচনায় জুটিন কম বিপজ্জনক। তিনি বলেন, জুটিন তৈরিতে ৩৩-৪০ ভাগ পাট ব্যবহার করা হয়।ঢেউটিনের চেয়ে জুটিন মজবুত, দৃঢ়,তাপ বিকিরণ বিরোধী।
পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরেক পরীক্ষার ভিত্তিতে মোবারক আহমেদ খান বলেন, জুটিন ৫০ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত টেকসই হবে।তিনি জানান,বাজারে প্রচলিত ঢেউ টিন গুলোর প্রতি বর্গ ফুটের দাম ৪৫ থেকে ৮০ টাকা।একই স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা সম্পন্ন জুটিন তৈরি করা যায় প্রতি বর্গ ফুট ৩০-৩৫ টাকায়।
জুটিনের সম্ভাবনাঃ
উদ্ভাবনের পর এ ধরণের পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহারে আগ্রহ বেড়েছে। দেশেই উদ্ভাবিত এসব পণ্যের প্রসার ঘটাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ। তারা বলছে নেপাল,শ্রীলঙ্কা বা ইউরোপের বাজারে রপ্তানির বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।এছাড়া দেশে পাটজাত নতুন এই পণ্যে বিনিয়োগে সহযাত্রী হচ্ছে সুইডিশ কোম্পানি জুটবর্গ।তারা জানায়, সুইডেনে এ জাতীয় পণ্য পরিবেশ বান্ধব উৎপাদনে পাঁচ বছর ধরে গবেষণা চলছে।যা সফলতার পথে।
সর্বোপরি,এই জুটিন যদি ব্যবহার করা হয়, তবে একদিকে বাংলাদেশ যেমন অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে,তেমনি বিশ্বে দূষণের পরিমাণও কমে যাবে।
বন্ধুরা ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর যদি কোন মতামত বা পরামর্শ থাকে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ
You must be logged in to post a comment.