বর্তমান সময় আমরা অনেকেই আছি যারা হজমে নানা রকম সমস্যা অনুভব করে থাকি। এখন এই সমস্যাটি কমবেশি অনেকেরই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আপনি যদি বেশ কিছু উপায় অনুসরণ করে চলেন তাহলে, খুব সহজেই আপনি আপনার হজম শক্তি বাড়াতে পারবেন। আমরা আজকে আমাদের আর্টিকেলে হজম শক্তি বাড়ানোর সেরা প্রাকৃতিক উপায় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারণে আমাদের নানা রকম সমস্যায় ভুগতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো আমাদের শরীরে প্রকট আকার ধারণ করে আমাদেরকে যথেষ্ট অসুস্থ করে দেয়। আমরা আমাদের সুস্থ শরীর ব্যবস্থাকে হারিয়ে ফেলি হজম শক্তি কমে যাওয়ার ফলে।
সাধারণত একেক জনের হজমশক্তি একেক রকম হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ লোক রয়েছে যাদের হজম শক্তি অনেক কম। একই রকম খাবার খেয়ে একজনের স্বাস্থ্য ভালো হয়, অন্যদিকে আরেক জনের স্বাস্থ্যে কোনরকম পরিবর্তন আসে না।
হজম শক্তি কম থাকলে আমাদের নানারকম সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে::
-
গ্যাস্ট্রিক।
-
বমি বমি ভাব।
-
ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
-
বুক জ্বালা।
-
বুক ব্যথা ও পেট ব্যথা।
-
পেটে অস্বস্তি বোধ করা।
-
পেটে যে কোন প্রকার আলসার হওয়া।
-
বদহজম সহ আরো নানা কিছু।
সাধারণত এই সমস্যাগুলো যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন আমাদের জীবনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা গুলো মূলে রয়েছে অনিয়মিত অগোছালো জীবন ধারণ এবং খাদ্যভ্যাস।আর যাদের হজম শক্তি কম হয়ে থাকে তাদের হজম শক্তি বাড়ানোর বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। এসব উপায় অবলম্বন করলে আপনি আপনার হজম শক্তি কে যথেষ্ট ভাবে বৃদ্ধি করতে পারবেন।
তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক হজম শক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো সম্পর্কে। নিচে এসব উপায় আলোচনা করা হলো।
সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
আপনার হজম শক্তি যদি কম হয়ে থাকে তাহলে আপনি সুষম খাদ্যের উপর গুরুত্ব দিন। সাধারণত আমাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি হজম শক্তি বাড়ানোর খাদ্য গুলোর উপর নজর দেন তাহলে সুষম খাদ্য গুলো উপরে উঠে আসবে।
আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য বেশ উপকারী খাবার হবে বিভিন্ন প্রকার সুষম খাবার। সুষম খাবার পাকস্থলীর হজম শক্তি বৃদ্ধি করে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া কে সচল রাখতে সাহায্য করে।
প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
হজম শক্তি বাড়ানোর একটি অত্যন্ত সহজ উপায় হচ্ছে আঁশযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া। এই আর যুক্ত খাবারের যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলো আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে দ্রুত কাজ করে।সাধারণত আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম, বাদাম, শাকসবজি, গোটা শস্য, এবং গমের ভুসি সহ আরো নানা কিছু। আশঁ যুক্ত খাবার দেহের পানি শোষণে এক বিশেষ সহায়তা করে থাকে আপনাকে যা, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতে পারে।
আপনি যদি হজমজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই আশঁ যুক্ত খাবার খাওয়ার আপনার জন্য উপকারী। আর তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করে গড়ে তুলতে পারেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে তুলুন:
আপনি যদি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে দ্রুত কাজ করে থাকবে।আমাদের সুস্থ থাকার জন্য সাধারণত প্রতিদিন কমপক্ষে ১.৫ লিটার থেকে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। তাছাড়া আপনার দেহে যদি পানিস্বল্পতার থাকে তাহলে হজম জনিত সমস্যা সহ কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকবে।
পানির অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন শরীর বৃত্তীয় কাজের বিঘ্ন ঘটে থাকে। আপনার হজম শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে পানি পান করার পাশাপাশি বেশ কিছু তরল খাবার গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন রকম ফল পানি জাতীয় হয়ে থাকে আপনি সেইসব গ্রহণ করতে পারেন। এতে আপনার হজম সমস্যা দূর হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
আপনি যদি হজমজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং আপনার হজম শক্তি যদি কম হয় তাহলে আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।নিয়মিত অনুশীলন শরীরচর্চা হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য এক বিশেষ উপায়ে হয়ে থাকে। শরীরচর্চা করলে আমাদের অন্যান্য উপকার হওয়ার মত হজম শক্তি বৃদ্ধি সেরা উপায় হয়ে থাকে।
আপনি যদি খাবার খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করেন তাহলে, আপনার শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়া গুলো সচল হয়ে যাবে, যা খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করবে।আপনার যদি দীর্ঘস্থায়ী হজমজনিত সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে থাকে তাহলে আপনি ৩০ মিনিট করে ৩১ দিন হাঁটার একটি অভ্যাস গড়ে তুলুন।
তাছাড়া নিয়মিত হাটার মাধ্যমে পেটের বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে। সাধারণত শরীরচর্চা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
আপনার দেহের চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন:
সাধারণত খাবার আমাদের সবাইকেই খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়। আপনি যখন ক্ষুধা অনুভব করে থাকবেন, আপনি তখনই খাবার গ্রহণ করে থাকুন। তবে আপনার পেট ভরে গেলে খাওয়া বন্ধ করুন। এটি করলে আপনার হজমজনিত সমস্যা দূর হবে।
আমাদের পেটে যখন অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকে পেটে খাবারের পূর্ণতা বেশি থাকলে পেটের মধ্যে গ্যাস জমা হয় হলে পেট ফুলে যায় ও বদহজমের মতো সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে দেখা যায়। সাধারনত কম খাওয়া এবং প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি কমে যায়। আর তাই খাবার সহজে হজম এর জন্য আপনার যতটুকু প্রয়োজন আপনি ততটুকুই খাবার খান।
একটি নির্দিষ্ট সময় সূচি মেনে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
আপনার হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সূচি মেনে খাবার গ্রহণ করা আপনার হজম গত সমস্যার জন্য বিশেষ উপকার সাধন করবে।প্রতিদিন একই ধরনের সময়ে সকাল, দুপুর, রাতে তিন বেলা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
বিশেষ করে একদিন এক সময়ে আরেকদিন আরেক সময় এরকম খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন হজম গত সমস্যা তৈরি করে দেবে।আর নিয়মিত সময়সূচী মেনে খাবার গ্রহণের ফলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকবে এবং হজমশক্তিও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
খারাপ খাদ্যাভাস ত্যাগ করার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
আমাদের বেশকিছু খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের হজম শক্তি কমে যেতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে হজম শক্তি কমে যাওয়ার খারাপ খাদ্যভাস এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধূমপান অত্যাধিক পরিমাণ অ্যালকোহল পানের মত অভ্যাস গুলো।সাধারণত ধূমপানের ফলে পেটের আলসার, আলসারেটিভ, কোলাইটিস, ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।আপনার যদি হজম গত সমস্যা থাকে তাহলে আপনি এসব গ্রহণ করা অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্যাগ করুন।
নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখার মাধ্যমে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা:
মানসিক চাপ আমাদের হজম শক্তি কে বিশেষভাবে দুর্বল করে দিয়ে থাকে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির আমাদের মনের ওপর অনেকটাই বিশেষ প্রভাব ফেলে।
আমাদের যদি মানসিক চাপ থাকে তাহলে আমাদের ঘুমের সমস্যা সহ আরো নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে:
বদহজম সহ আরো নানা হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে উপরে আলোচিত এর প্রাকৃতিক উপায় গুলো মেনে চলুন। এতে আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। এবং এসব শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
আপনার কমে যাওয়া হজম শক্তিকে দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে উপরে আলোচিত উপায় গুলো বেশ কাজ করে থাকবে। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে এই সমস্যাটিকে সমাধান করতে চান তাহলে আমাদের আলোচিত উপায়গুলোকে আপনি অনুসরণ করতে পারেন।
হজম জনিত সমস্যাটি একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে থাকে। যা আপনার সুস্থ শরীকে দ্রুত অসুস্থ করে দেয়। আর এই সমস্যা গুলো যদি আপনারা অবহেলা করে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে এসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। আর যদি আপনি এর প্রাকৃতিক উপায় গুলোকে মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার এই সমস্যা না হওয়ার আশাই করা যায়।
আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে দয়া করে অবশ্যই যেকোনো সাইটে একবার শেয়ার করবেন। আপনার করা একটি শেয়ার আমাদেরকে আরো ভালো আর্টিকেল লিখতে উৎসাহ প্রদান করবে।
You must be logged in to post a comment.