স্মার্টফোন আজকালকার বাচ্ছার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়

স্মার্টফোন আজকালকার বাচ্ছাদের কাছে সত্যিই বন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছে নাকি পারেনি, এটা বহুল বিতর্কিত একটি বিষয়। আজকালকার বেশীরভাগ বাবা মায়েরাই তাঁদের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

তাদের সদা ব্যস্ত কর্মচঞ্চল জীবনে তাদের কাছে নিজের বাচ্ছাদের জন্য সময় একেবারে নেই বললেই চলে। বাচ্ছাদের সঙ্গে সময় কাটানো,তাদের সঙ্গে একটু খেলাধুলা করে তাদের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদেরকেও একটু আনন্দ দেওয়া, এইসব আজকালকার বেশীরভাগ কর্মব্যস্ত বাবা মায়েদেরই কল্পনার বাইরে।

অবশ্য শুধুমাত্র কর্মব্যস্ত মা বাবার কথাই বা বলছি কেন, যে সমস্ত বাচ্ছাদের মায়েরা ঘরে থাকেন, তাঁরাও কি সময় দিতে পারেন নিজের বাচ্ছাকে?ঘরের বিস্তর কাজকর্ম সামলে আর সেই এনার্জি থাকে কি?

এরকম ছবি তো প্রায়শই দেখা যায় ঘরে ঘরে, বাচ্ছা একা আছে ঘরে, মা ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত , আর বাবা তো সেই কখন বেরিয়ে গেছেন অফিসে।

অতএব মায়েদের কাছে একটাই রাস্তা খোলা আছে। স্মার্ট ফোন হাতে ধরিয়ে বাচ্ছাকে নিজের সামনে বসিয়ে রাখা আর নিজের কাজকর্ম সেরে ফেলা।

একটা ছোট শিশু শুরু থেকেই এইভাবে বড় হতে থাকলে, একটা সময়ের পর তার তো স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তিটাই স্বাভাবিক তাই নয় কি? 

আচ্ছা মনে করে দেখুন তো আমাদের শিশুবেলাটা। আমরাও তো নিশ্চয়ই একদিনেই এত বড় হয়ে যাইনি। আমাদের মা-বাবারাও আমাদের শিশুকাল থেকেই বড় করে তুলেছিলেন।

মনে পড়ছে না তাই তো? আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমরা এই বয়সে ঘরের দাদু, ঠাকুমা, পিসি, কাকা, দাদা, দিদিদের সঙ্গেই থাকতাম।

আমার মনে আছে, মা তখন পাড়ার একটি স্কুলেই শিক্ষকতার কাজ করতেন।স্কুলে বেরোবার আগে দাদু, ঠাকুমা,কাকা,পিসিদের কাছেই মা ছেড়ে রেখে নির্ভাবনায় স্কুলে চলে যেতেন। আমাকে স্নান করানো থেকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো সবই বাড়ির আপনজনরা করে দিতেন।

কিন্তু এখন তো সেই যুগ আর নেই। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির বাড় বাড়ন্তে একান্নবর্তী পরিবার লুপ্তপ্রায়। অতএব মা, বাবার কাছেও বাচ্ছাকে ব্যস্ত রাখার স্মার্টফোনই তাই একটা সহজ উপায়।

বাচ্ছাও খুশি আর মা, বাবাও খুশি। বাচ্ছা নিজেই ইউ টিউব সার্চ করে বিভিন্ন ভিডিও দেখছে। সেটা তার আদৌ দেখবার যোগ্য কিনা সেটাই তো আমরা মা, বাবারা সবসময় জানি না।

ফলস্বরূপ বাচ্ছা অনেকসময়েই লোকসমক্ষে এমন কিছু কথা বলে মা, বাবাকে অন্যদের সামনে অপ্রস্তুতে ফেলে দেয়, যে কথা বা বিষয় হয়তো তার বাড়িতে কস্মিনকালেও আলোচনা করা হয়নি তার সামনে। 

জানি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার নামই হয়তো আধুনিকতা। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর। করোনা আবহের পর আজকাল বেশিরভাগ বাচ্ছারাই অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত।

সেদিকেও বাবা, মায়ের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। ক্লাসের পর বাচ্ছারা স্মার্টফোনে কি করছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ প্রয়োজন। বাড়ির বয়স্ক মানুষদের ছত্রছায়ায় থাকা বাচ্ছারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্য বান।

কিন্তু লক্ষ্য করে দেখা গেছে, আজকের বাবা, মায়েরা সে ব্যাপারেও যথেষ্ট নিরাপত্তাহীনতায় এই ভেবে ভোগেন যে, পুরাতন চিন্তাধারার দাদু, ঠাকুমা বা দিদার সংস্পর্শে থাকলে তাদের বাচ্ছাদের চিন্তাভাবনাও হয়তো সেকেলে হয়ে যাবে।

আধুনিক যুগের ইঁদুর দৌড়ে তাদের বাচ্ছারা পিছিয়ে পড়বে দাদু, ঠাকুমার কাছে রূপকথার গল্প শুনে শুনে। তার থেকে বরং এই স্মার্টফোনই ভালো বাচ্ছার মানসিকতাকে আধুনিক করে তোলার জন্য তথাপি তাকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখার জন্য। 

সঠিক মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

Writer and blogger