সম্প্রতি সৌদিআরবে ব্যাপক সমারোহে প্রথমবারের মত পালন করা হয়েছে ভুতূড়ে উৎসব হ্যালোইন। বিভিন্ন রহস্যময় ও ভৌতিক প্রাণী, জোম্বি আর শয়তানের মুখোশ পড়ে উৎসব পালন করতে রাস্তায় নেমে এসেছে অসংখ্য মানুষ।
খোদ মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রে এধরনের উৎসব পালনে ভড়কে গেছেন সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমরা। হ্যালোইন উৎসব সৌদিআরবের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ নয়।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয় না। পাশ্চাত্য থেকে উৎপত্তি এই উৎসব প্রথমবারের মত ইসলামের প্রাণকেন্দ্র সৌদিআরবে পালিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ভাবে এটি ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
জনসাধারনের মনে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে যে হ্যালোইন আসলে কি? অনেকে এই উৎসব পালনকে কেয়ামতের আলামত বলেও মনে করছেন। টেলিভিশনের টক শো থেকে মফস্বলের চায়ের দোকানে ঝড় তোলা ভাইরাল এই বিষয়টি নিয়ে আসুন জেনে নেই আদ্যোপান্ত।
হ্যালোইন উৎসবের উৎপত্তি
"হ্যালোইন" বা "হ্যালোউইন" শব্দটির উৎপত্তি ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মূলত খ্রিস্টীয় ধর্ম থেকে হয়েছে। "হ্যালোইন" শব্দের অর্থ "শোধিত সন্ধ্যা" বা "পবিত্র সন্ধ্যা"। এই শব্দটি স্কটিশ ভাষার শব্দ "অল হ্যালোজ' ইভ" থেকে এসেছে । হ্যালোইন উৎসবের উৎপত্তি আজকালকের নয়।
এটি প্রায় দুই হাজার বছর পুরানো একটি উৎসব। দুইহাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস স্কটল্যান্ডের উচ্চভূমি এবং উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করত কেল্টিক জাতি। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নভেম্বর এর ১ তারিখ কে তারা নববর্ষ বা “সাহ উইন” উৎসব হিসেবে পালন করত।
তারা মনে করত এই দিনটি গ্রীষ্ম বা আলোকোজ্জ্বল দিনের শেষ আর শীত বা অন্ধকার দিনের শুরু। ১ নভেম্বরকে তারা নব্বর্ষ মনে করলেও অক্টোবর এর শেষ রাতটিকে তারা মনে করত সবথেকে খারাপ রাত।
যে রাতে সব ভূত, প্রেত ও অতৃপ্ত আত্মারা ফিরে আসে লোকালয়ে। তারা বিশ্বাস করত এসব অতৃপ্ত আত্মারা সাধারন মানুষকে সামনে পেলে তার ক্ষতি করতে পারে।
তাই তারা তাদের নিজেদের নানা ধরনের উদ্ভট পোশাকে ও ভূত, প্রেতের মুখোশে ঢেকে রাখত। যাতে সত্যিকারের ভূত, প্রেত ও অতৃপ্ত আত্মারা তাদের চিনতে না পারে ও ক্ষতি করতে না পারে।
তাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে অক্টোবরের শেষ রাতে মুখোশ পড়ে তারা আত্মীয়স্বজন একত্রে আগুনের পাশে বৃত্তাকার হয়ে হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচত ও মন্ত্রপাঠ করত।
কেল্টিক জাতি ছিল প্যাগান ধর্মে বিশ্বাসী। সমগ্র ইউরোপ জুড়ে প্যাগান ধর্মের প্রসার ঘটায় হ্যালোইন প্রথাও ছড়িয়ে যায়। এরপর খ্রিস্টধর্মের প্রচার ঘটলেও হ্যালোইন প্রথা থেকে যায়।
এরপর সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাসের অনেক রদবদল হলে হ্যালোইন প্রথা খ্রীস্টধর্মে পাকাপাকি ভাবে স্থান করে নেয়।
আইরিশ ও স্কটিশ অভিবাসীরা ১৯শ শতকে এই ঐতিহ্য উত্তর আমেরিকাতে নিয়ে আসে। যেহেতু আমেরিকা বর্তমান গ্লোবাল সুপার পাওয়ার তাই তার প্রভাবে হ্যালোইন সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে এর প্রভাব বলয় এর অধীন মিত্র দেশ গুলোতেও।
যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, পুয়ের্তোরিকো ইত্যাদি। এমনকি বাংলাদেশ এরও অনেক অভিজাত এলাকায় ঘটা করে পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব।
হ্যালোইন উৎসবের মূল থিম হলো, ‘হাস্যরস ও উপহাসের মাধ্যমে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখমুখি হওয়া’।
সৌদিআরবে যেভাবে পালিত হল হ্যালোইন
ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি ইসলামের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবেও এবার প্রথমবারের মত উদ্যাপিত হয়েছে হ্যালোইন উৎসব।
সপ্তাহের শেষ দুই দিন বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ২২০ একর জমির ওপর নির্মিত রিয়াদের বুলেভার্ড কমপ্লেক্সে ছিল উপচে পড়া ভিড়।ভয়ংকর পোশাক পরার শর্তে এ দুই দিন বুলেভার্ডেতে দর্শনার্থীদের বিনা মূল্যে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
ভয়ংকর সব সাজসজ্জার মাঝে ছিল ভূত প্রেতের মুখোশ, রক্তাক্ত জিন্দালাশ জোম্বি, ডাইনী, নরখাদক শয়তানের মুখোশ ইত্যাদি।সৌদি আরবে এমন উৎসব আয়োজন করায় খুশি অংশগ্রহণকারীরা। তাঁরা বলছেন, এ অনুষ্ঠান নিছকই বিনোদন।
উৎসবে উত্তর আমেরিকার পৌরাণিক প্রাণী ওয়েন্ডিগোর আদলে একটি পোশাক পরে এসেছিলেন আবদুল রহমান। এটি নিজ দেশে তাঁর প্রথম হ্যালোইন উৎসব উদ্যাপন।
আবদুল রহমান বলেন, ‘এটা দুর্দান্ত উদযাপন। এটা হারাম-হালাল কি না জানি না, তবে আমি সত্যিই আনন্দ পেয়েছি। শুধু মজা করতেই বন্ধুদের নিয়ে এটা উদযাপন করেছি, ভৌতিক কোনো কিছুতেই আমরা বিশ্বাস করি না।
সৌদির তরুন তরুনীরা আরো অনেক অবাক করা সাজে সেজেছিলেন। প্রত্যেকেই ভৌতিক সিনেমা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আতশবাজির ঝলকানি, শব্দের ঝংকার আর ভুতুড়ে সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে দুই দিনের ওই উৎসব শেষ হয়।
এদিকে দক্ষিন কোরিয়ার সিউলে এই উৎসব পালন করতে গিয়ে ঘটেছে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। সেখানে পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন দেড়শ এরও বেশি মানুষ।
এদিকে মুসলিম বিশ্বেও পড়েছে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে বাংলাদেশের একজন ইসলামি কলামিস্ট হাসিব আর রহমান বলেন, ‘জম্বি সাজের শোডাউন অনেক কিছুই পরিস্কার করে দিচ্ছে। তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে আছে এটা এখন প্রায় নিশ্চিত।
আর আমরা উদাসীন, গাফেল। তারা তাদের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে ইমাম মাহদির আগমনের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে কিন্তু আল্লাহ তায়ালাই উত্তম পরিকল্পনাকারী। এবং দাজ্জালি শক্তির পরাজয়ই অবশ্যম্ভাবী।’
সুপ্রিয় পাঠক আজ এ পর্যন্তই। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
আলহামদুলিল্লাহ্
সুন্দর এই ভুবনে সুন্দরতম জীবন হোক তোমার। পূরণ হোক প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি আশা, বেঁচে থাকো হাজার বছর।
বসন্তের আগমনে কোকিলের সুর! গ্রীষ্মের আগমনে রোদেলা দুপুর! বর্ষার আগমনে সাদা কাঁশফুল! তাই তোমায় Wish করতে মন হল ব্যাকুল… 🍭💖শুভ নববর্ষ💖🍭
চৈত্রের রাত্রি শেষে, সূর্য আসে নতুন বেসে, সেই সূর্যের রঙ্গিন আলো, মুছে দিক তোমার জীবনের সকল কালো… 🎇শুভ নববর্ষ✨
You must be logged in to post a comment.