প্রিয় নবীর সুসংবাদও সতর্কবাণী

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

সংকলকের কথা

প্রিয় নবীর সুসংবাদ ও সতর্কবাণী

সকল তারিফ তোমার, তুমি যে পাক যাত, মুহাম্মদের স্রষ্টা তুমি এ তব সিফাত।

চাঁদ সিতারা হয় না শুমার, তামাম আলম সৃষ্টি তোমার, সৃষ্টি তুমি করেছ রব

তামাম মাখলুকাত । মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ! তুমি যে আখেরী নবী, দ্বীনের পূর্ণ রবি, রহমতে আলম তুমি হে রসূল, আল-আরবী!

কামালে পূর্ণ তুমি, জামালে পূর্ণ তুমি, উউয়াতুন হাসানা যে মুস্তফা, খোশ্ লকব .... হে নবী তোমার পরে, আউলাদ সাহাবা তরে, আসমান জমিন পড়ে দরূদ ও সালাম নিতি ।

একটি কথা আমরা সব সময় বলি এবং শুনি যে, জানার নাম কামিয়াবী নয়, বরং মানার নামই কামিয়াবী। তবে জানা না থাকলে মানব কীভাবে একথাও অনস্বীকার্য।

বর্তমান সময়ে আমরা অনেক হাদীস ও আয়াত সম্পর্কে শুনি। আমাদের বিবেকে তা নাড়া দেয় এবং আমরা আমল করতে উদ্বুদ্ধ হই।

কিন্তু এক-দুইবার শোনার পর কিছু দিন মনে থাকলেও ধীরে ধীরে সেই হাদীস বা আয়াতটি আমরা ভুলে যাই এবং তা আর আমলে আসে না।

তাই মহান আল্লাহর ইছায় আমি সংকল্প করেছি এমন কিছু আয়াত ও হাদীস সংকলন করার, যেগুলো খুব সহজে মুখস্থ করে নিজে আমল করতে পারব এবং অন্যকে সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারব।

আমার এই সংকল্পের দ্বিতীয় সংকলন “প্রিয় নবীর সুসংবাদ ও সতর্কবাণী ”এর দ্বারা পাঠক উপকৃত হলেই আমার শ্রম সার্থক হবে। আমি আশা করি, বইটি আমারও জন্য হেদায়াত এবং নাজাতের উসীলা হবে।

হাদীসের অনুবাদ, ভাষার প্রয়োগ এবং বাক্যের উপস্থাপনাকে যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত এবং সহজ ও সাবলীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

তারপরও বিজ্ঞ পাঠকের দৃষ্টিতে কোনো ভুল ধরা পড়লে আমাদের অবগত করতে দোষ নেই । আল্লাহ চাহেন তো, পরবর্তী সংস্করণে শুধরে নেব।

আল্লাহ তাআলা প্রকাশক, পাঠক এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে উভয় জগতে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন।

দুআর মুহতাজ

ইকবাল হুসাইন

চরসুবুদ্ধি, রায়পুরা, নরসিংদী।

১৫টি কারণে পৃথিবীতে আযাব আসবে

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত যখন ১৫টি বিষয়ে লিপ্ত হবে, তখন তাদের উপর বিপদ-মুসীবত আরোপিত হবে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল, সে গুলো কি?

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :

১। যখন গনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে । 

১. যেমন, সরকারি সম্পদ ও বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী, যেগুলো জনগণকে দেওয়ার জন্য কিংবা দেশের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়, কিন্তু বণ্টনকারীরা সেগুলো আত্মসাৎ করে ফেলে।

করোনা পরিস্থিতে লকডাউনের কারণে যখন অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দু-মুঠো অন্নের অভাবে নিপতিত হয়,

এমন গুরুতর পরিস্থিতেও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি এবং নামধারী নেতা ত্রাণসামগ্রী চুরির প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এর কারণে অনেকে বরখাস্তও হয়। এভাবেই আমানত লুটের মালে পরিণত হয়।

২। আমানত লুটের মালে পরিণত হবে।'

৩। যাকাত জরিমানারূপে গণ্য হবে ।

৪। ধর্মবিবর্জিত শিক্ষার প্রচলন হবে (দ্বীনী শিক্ষাকে উপেক্ষা করবে এবং

জাগতিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেবে)।

৫। পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে।

৬। মানুষ তার মায়ের নাফরমানি করবে।

৭। বন্ধুর সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং পিতার সাথে দুর্ব্যবহার করবে।

৮। মসজিদে শোরগোল করা হবে।

৯। সমাজের নেতা হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক ।

১০। ক্ষতির ভয়ে কাউকে সম্মান করা হবে।

১১। মদপান ব্যাপক হবে।

১২। রেশমি বস্ত্র পরিধান করা হবে।

১৩। নর্তকী গায়িকাদের ব্যাপকতা হবে।

১৪। বাদ্যযন্ত্র ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে।

১৫। উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা তাদের পূর্বযুগের লোকদের সমালোচনা করবে।

তখন তোমরা :

১। অগ্নিবায়ু

২। ভূমিধস

৩। ভূমিকম্প

৪। চেহারা বিকৃতি

৫। পাথর বৃষ্টি এবং

৬। আরও বিভিন্ন ধরনের আযাবের অপেক্ষা করবে, যা একের পর এক আসতে থাকবে, যেমন তাসবীহের দানা ছিঁড়ে গেলে একের পর এক পতিত হয়।

চাশতের নামায সম্পর্কে ছয়টি সুসংবাদ

হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

১। যে ব্যক্তি চাশতের দুই রাকাত নফল নামায পড়ে, সে আল্লাহ তাআলার ইবাদত থেকে গাফেল বান্দাদের মধ্যে গণ্য হয় না।

২। যে চার রাকাত নফল পড়ে, তাকে ইবাদতগুজারদের মধ্যে লেখা হয়। ৩। যে ছয় রাকাত নফল পড়ে, তাকে সেই দিনের কাজকর্মে সাহায্য করা হয়

৪। যে আট রাকাত নফল পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে অনুগত বান্দাদের মধ্যে লিখে দেন।

৫। আর যে ১২ রাকাত নফল পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে প্রাসাদ তৈরি করে দেন।

৬। প্রত্যেক দিনে ও রাতে আল্লাহ তাআলা আপন বান্দাদের উপর সদকা ও ইহসান করতে থাকেন। আর আপন বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় ইহসান হলো, তাকে যিকিরের তাওফীক দেন।

ইসলামের পরিচয় ও দুটি সতর্কবাণী

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম হলো এই :

১। তুমি আল্লাহ তাআলার ইবাদত করো,

২। তার সাথে কাউকেও শরীক কোরো না,

৩। নামায কায়েম করো,

৪ । যাকাত আদায় করো,

৫। রমযানের রোযা রাখো,

৬। সামর্থ্যবান হলে হজ পালন করো,

৭ । মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দাও

৮। আর মন্দ কাজে বাধা প্রদান করো এবং

৯। নিজ পরিবারের লোকদের সালাম করো ।

যে ব্যক্তি এগুলোর মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে ত্রুটি করেছে, সে ইসলামের একটি অংশ ছেড়ে দিয়েছে। আর যে এগুলো ছেড়ে দিলো, সে ইসলাম থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিলো ।

তিনটি গুণের অধিকারীর জন্য সুসংবাদ  

হযরত জাবের রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে এই তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকবে, আল্লাহ তাআলা তার মৃত্যুকে সহজ করবেন এবং তাকে আপন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সেই গুণগুলো হলো :

১। অসহায় দুর্বলের সাথে সদ্ব্যবহার করা,

২। পিতামাতার প্রতি সদাচারণ করা এবং

৩। দাস-দাসীদের সঙ্গে (কর্মচারী ও ঘরের চাকর-বাকরদের সাথে) ভালো ব্যবহার করা।

যে সাত শ্রেণির লোক আরশের ছায়ায় স্থান পাবে-

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। সেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। 

১। ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ।

২। সেই যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে তার সময় কাটিয়েছে।

৩। সেই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে, তা থেকে বের হয়ে যতক্ষণ না ফিরে আসে।

৪। সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য পরস্পর সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয় আবার আল্লাহর জন্যই পৃথক হয় ।

৫। যেই ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর যিকির করে, আর তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করতে থাকে।

৬। সেই ব্যক্তি, যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহ্বান করে, আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।

৭। ওই ব্যক্তি, যে এমনভাবে গোপনে সদকা বা দান করে যে, বাম হাত পর্যন্ত জানতে পারে না, ডান হাত কী খরচ করেছে।

পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তির পাঁচ ধরনের পুরস্কার

 

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিন ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে যায়। প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে তারপর আগমনকারীর নাম পরে লেখে (এভাবে আগমানকারীদের ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকে) সুতরাং :

 

১। যে ব্যক্তি জুমুআর জন্য প্রথমে আগমন করে, সে একটি উট সদকা করার সওয়াব লাভ করে।

২। তারপর আগমনকারী একটি গাভী সদকা করার সওয়াব লাভ করে ।

৩। তারপর আগমানকারী একটি দুম্বা সদকা করার সওয়াব লাভ করে।

৪। তারপর আগমনকারী একটি মুরগি সদকা করার সওয়াব লাভ করে ।

৫। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকা করার সওয়াব লাভ করে । যখন ইমাম সাহেব খুতবা দেওয়ার জন্য আসেন, তখন ফেরেশতারা খাতা, যাতে আগমনকারীদের নাম লেখা হয়েছে, বন্ধ করে ফেলেন। এরপর খুতবা শোনায় মশগুল হয়ে যান।

জান্নাতী ও জাহান্নামীর পরিচয়

হযরত হারেসা ইবনে ওয়াহাব রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের জান্নাতী কারা সে-কথা বলব না? অতঃপর নিজেই বললেন, জান্নাতী হলো :

১। প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি অর্থাৎ আচার-আচরণের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিনয়ী ও নম্র হয়, কঠোর হয় না। আর লোকেরাও তাকে দুর্বল মনে করে।

(আল্লাহ তাআলার সাথে তার এমন সম্পর্ক রয়েছে যে, ) যদি সে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে শপথ করে (যে, অমুক বিষয়টি এরূপ হোক), তা হলে আল্লাহ তাআলা তার কসম (-এর সম্মান রেখে তার কথাকে) আবশ্যই পুরো করে দেবেন।

এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদের জাহান্নামী কারা বলব না? অতঃপর তিনি নিজেই বললেন, জাহান্নামী হলো :

১। প্রত্যেক সম্পদ সঞ্চয়কারী বখিল।

২। কঠোর মেজাযী।

৩। অহংকারী।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আলোচনাকালে বলেন, জাহান্নামী হলো :

১। প্রত্যেক কঠোর মেজাযী,

২। মোটাসোটা, দম্ভ ভরে হাঁটে,

৩। অহংকারী,

৪। ধনসম্পদ অধিক সঞ্চয়কারী, তদুপরি সে ধনসম্পদ (আল্লাহর পথে গরীব মিসকীন ও অসহায়দের জন্য খরচ করে না বরং) জমা করে রাখে।

আর জান্নাতী লোক হচ্ছে, যারা দুর্বল হয় অর্থাৎ যারা লোকদের সাথে বিনয়ী আচরণ করে, তাদের দাবিয়ে রাখা হয় অর্থাৎ তাদের দুর্বল মনে করে চাপের মধ্যে রাখা হয়।"

এক ব্যক্তির জন্য ছয়টি পুরস্কারের ঘোষণা

হযরত মিকদাম ইবনে মাদীকারিব রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে :

১। শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা ঝরতেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং প্রাণ বের হওয়ার প্রাক্কালে জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থানের জায়গাটি তাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া হয়।

২। কবরের আযাব থেকে তাকে নিরাপদ রাখা হয়।

৩। কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে তাকে হেফাযতে রাখা হবে।

৪। তার মাথার উপর সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। তাতে খচিত একটি ইয়াকুত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, সব থেকে উত্তম ।

৫। তার সাথে ডাগর চোখের ৭২টি হুরকে বিবাহ দেওয়া হবে ।

৬। এবং তার ৭০ জন নিকটতম আত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। 

যাদের দ্বারা জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা হবে

শুফাই (শাফী) আল-আসবাহী রহ. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি মদীনায় পৌঁছে দেখেন, এক ব্যক্তিকে ঘিরে জনতার ভিড় লেগে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তিনি কে? উপস্থিত লোকেরা বলল, ইনি হযরত আবু হুরায়রা রা.।

(শুফাই বলেন, ) আমি নিকটে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তিনি তখন লোকদের হাদীস শোনাচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে বললাম,

আমি আপনার কাছে সত্যিকারভাবে আবেদন করছি, আপনি আমাকে এমন একটি হাদীস শোনাবেন, যা আপনি সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন ।

আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি তা-ই করব। আমি তোমার নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব, যা আমি সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং আমি তা বুঝেছি ও জেনেছি।

একথা বলে আবু হুরায়রা রা. কেমন যেন তন্ময় হয়ে পড়েন। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। অতঃপর তন্ময়ভাব কেটে গেলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস শোনাব, যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঘরের মধ্যে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

তখন আমি ও তিনি ছাড়া সাথে কেউ ছিল না। পুনরায় আবু হুরায়রা আরও গভীরভাবে তন্ময় হয়ে পড়েন। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে মুখমণ্ডল মুছলেন। অতঃপর বললেন, আমি তা করব।

আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস শোনাব, যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঘরের মধ্যে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তখন আমি ও তিনি ছাড়া সাথে কেউ ছিল না।

পুনরায় আবু হুরায়রা আরও গভীরভাবে তন্ময় হয়ে পড়েন এবং বোধশূন্য হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে অনেক্ষণ ঠেস দিয়ে রাখলাম।

তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে মুখমণ্ডল মুছলেন। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য তাদের কাছে উপস্থিত হবেন।

সমস্ত উম্মতই তখন নতজানু হয়ে থাকবে। অতঃপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যাদের ডাকা হবে, তারা হলো :

১। কুরআনের হাফেয।

২। আল্লাহর পথের শহীদ।

৩। প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী ব্যক্তি।

সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কারী তথা কুরআনের হাফ্যেকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি আমার রসূলের কাছে যা পাঠিয়েছি, তা কি তোমাকে শেখায়নি?

সে বলবে, হে রব, শিখিয়েছেন।

তিনি বলবেন, তুমি যা শিখেছ, সে অনুযায়ী কী আমল করেছ?

সে বলবে, আমি রাতদিন তা তেলাওয়াত করেছি (লোকদের তেলাওয়াত করে শুনিয়েছি)।

তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা

বলছ।

আল্লাহ তাকে আরও বলবেন, বরং তুমি চেয়েছিলে, তোমাকে বড় কারী, বড় হাফেয সাহেব ডাকা হোক। আর তা তো ডাকা হয়েছে।

অতঃপর সম্পদশালী ব্যক্তিকে ডাকা হবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে প্রচুর সম্পদ দিইনি, এমনকি তোমাকে আমি কারও মুখাপেক্ষী রাখিনি?

সে বলবে, হ্যাঁ, অবশ্যই! হে আমার রব!

তিনি বলবেন, আমার দেওয়া সম্পদ থেকে তুমি কী কী নেক আমল করেছ? সে বলবে, আমি এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখেছি এবং দরিদ্রদের দান করেছি।

আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ আরও বলবেন, তুমি চেয়েছিলে, লোকমুখে তোমার দানশীল দানবীর নামের প্রচার হোক। আর তা তো হয়েছে।

অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাকে হাজির করা হবে।

আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তুমি কী কারণে শহীদ হয়েছ?

সে বলবে, আপনি আদেশ করেছিলেন আপনার রাস্তায় জিহাদ করতে।

কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে আপনার রাস্তায় আপনার সন্তুষ্টির জন্য শহীদ হয়েছি।

আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ আরও বলবেন, তুমি চেয়েছিলে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ুক, অমুক খুব সাহসী, অমুক বীর-বাহাদুর। আর তা তো বলা হয়েছে।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাঁটুতে হাত মেরে বললেন, হে আবু হুরায়রারা, কিয়ামতের দিন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্য থেকে এ তিনজন দ্বারাই প্রথমে জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে।

ওয়ালীদ অর্থাৎ আবু উসমান আল-মাদাইনি বলেন, আমাকে উকবা বলেছেন, উক্ত শুফাই (শাফী) মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে গিয়ে এ হাদীস বর্ণনা করেন, আবু উসমান আরও বলেন, আলা ইবনে হাকীম আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, সে শাফী ছিল মুয়াবিয়া রা.-এর অসিবাহক।

সে বলেছে, জনৈক ব্যক্তি মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে এসে আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তখন মুয়াবিয়া রা. বলেন, যদি তাদের সাথে এমন করা হয়,

তা হলে অন্যসব লোকের কী অবস্থা হবে? এই বলে তিনি খুব কাঁদলেন। এত কাঁদলেন যে, আমরা ধারণা করলাম, তিনি কাঁদতে কাঁদতে মারা যাবেন। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে (অর্থাৎ সে যদি এ হাদীস বর্ণনা না করত, তা হলে এমন ঘটত না)।

ইতোমধ্যে মুয়াবিয়া রা. জ্ঞান ফিরে পেলেন এবং নিজের চেহারা মুছলেন । অতঃপর বললেন, আল্লাহ ও তার রসূল সত্যই বলেছেন। এই বলে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন :

যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দিই এবং সেখানে তাদের কম দেওয়া হবে না।

এরাই তারা, আখেরাতে যাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল । 

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুযন' থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল, জুব্বুল হুযন কী?

তিনি বললেন, তা হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকা, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নাম দৈনিক একশবার আশ্রয় প্রার্থনা করে ।

জিজ্ঞেস কারা হলো, হে আল্লাহর রসূল, তাতে কারা প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, যেসব কুরআন পাঠক লোকদেখানোর জন্য কুরআন পাঠ করে। 

তিনটি দলের জন্য সুসংবাদ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সম্মুখে এমন তিন প্রকারের লোকদের উপস্থিত করা হয়েছে, যারা সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে :

১। তাদের একদল হলো শহীদ।

২। দ্বিতীয় দল হলো তারা, যারা হারাম জিনিস বর্জন করে চলে এবং কোনো অবস্থায়ই কারও কাছে হাত পাতে না ।

৩। তৃতীয় দল হলো, সে গোলাম বা চাকর, যে নিজের মাবুদের ইবাদত করে উত্তমরূপে এবং আপন মনিবের সার্বিক কল্যাণে নিরত থাকে। 

আল্লাহর ভালোবাসা যাদের জন্য অবধারিত

 সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই নিজেদের ধনসম্পদ ব্যয় করে আমার ভালোবাসা তাদের জন্য অবধারিত।

হযরত উবাদা ইবনে সামেত রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে বলেন :

১। আমার মহব্বত ওই সকল লোকের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে, যারা আমার কারণে একে অপরকে মহব্বত করে।

২। আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে গেছে ওই সকল লোকের জন্য, যারা আমার কারণে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে।

৩। আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে গেছে ওই সকল লোকের জন্য, যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করে (এবং একে অন্যের খোঁজখবর নেয়)।

৪। আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে গেছে ওই সকল লোকের জন্য, যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যের ওপর খরচ করে।

তারা নূরের মিম্বরে অবস্থান করবে। তাদের বিশেষ মর্যাদার কারণে নবীগণ ও সিদ্দীকগণ তাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন। 

হযরত উবাদা ইবনে সামেত রা.-এর অন্য বর্ণনায় আছে, আমার মহব্বত ওই সকল লোকের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে, যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যের সাথে সম্পর্ক রাখে। 

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর বর্ণনায় আছে, আমার মহব্বত ওই সকল লোকের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে, যারা আমার জন্য একে অপরের সাথে বসে। 

হযরত আমর ইবনে আবাসা রা.-এর বর্ণনায় আছে, আমার মহব্বত ওই সকল লোকের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে, যারা (আমার জন্য) একে অন্যের সাথে বন্ধুত্ব রাখে। 

চারটি কালেমার ফযিলত

হযরত আবু হুরায়রা রা. ও হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আপন কালামে চারটি কালেমা বাছাই করেছেন :

১। যে ব্যক্তি এটি একবার পাঠ করে, তার জন্য ২০টি নেকী লিখে দেওয়া হয়, তার ২০টি গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

২। যে ব্যক্তি এটি একবার পাঠ করে তার জন্যও উপরের সওয়াব লেখা হয় ।

৩| যে ব্যক্তি এটি একবার বলে, তার জন্যও ২০টি নেকী লেখা হয় এবং তার ২০টি গুনাহ মাফ করা হয়।

৪। যে ব্যক্তি এটি হৃদয়ের গভীর থেকে একবার পাঠ করে তার জন্য ৩০টি নেকী লেখা হয় এবং তার ৩০টি গুনাহ মাফ করা হয়। 

শেষ যামানার ব্যাপারে সাতটি দুঃসংবাদ

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের নিদর্শন হলো :

১। ইলম (দ্বীনী জ্ঞান) উঠে যাবে।

২। মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে।

৩। যিনা-ব্যভিচার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে।

৪। অনায়েসে অহরহ মদ পান করা হবে।

৫। নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে।

৬। পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন নারীর একজন মাত্র তত্ত্বাবধায়ক পুরুষ থাকবে। 

৭। হযরত আবু মূসা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পরে এমন এক যামানা আসবে, যখন (দ্বীনী) ইলম তুলে নেওয়া হবে এবং হারাজ বৃদ্ধি পাবে। হারাজ হলো ব্যাপক গণহত্যা। অর্থাৎ খুনাখুনি খুব বেড়ে যাবে। 

ছয়টি বিষয় সম্পর্কে সুসংবাদ

হযরত আবু হুরায়ারা রা. ও হযরত আবু সাঈদ রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

১। মুসলমানের প্রতি যেকেনো বিপদ,

২। মুসলমানের প্রতি যেকেনো রোগ

৩। মুসলমানের প্রতি যেকেনো ভাবনা-পেরেশানী,

৪। মুসলমানের প্রতি যেকেনো চিন্তা-দুঃশ্চিন্তা

৫। মুসলমানের প্রতি যেকেনো দুঃখ-কষ্ট পৌঁছে,

৬। এমনকি মুসলমানের শরীরে যে কাঁটা ফোটে,

এগুলো দ্বারা আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। 

রোগীর জন্য তিনটি সুসংবাদ

১। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পীড়িত (জ্বরাক্রান্ত) ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করো।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তা (জ্বর) আমার আগুন। দুনিয়াতে আমি তা আমার মুমিন বান্দার প্রতি পাঠাই, যাতে কিয়ামতে তা তার দোজখের আগুনের বিকল্প হয়ে যায়। 

২। হযরত জাবের রা. বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে সায়েবের নিকট পৌঁছলেন এবং বললেন, তোমার কী হলো, কাঁদছ কেন?

সে বলল, আমি জ্বরাক্রান্ত। আল্লাহ তার অমঙ্গল করুন।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে গালি দিয়ো না। কেননা, তা আদম-সন্তানের গুনাহসমূহ দূর করে দেয়, যেমনভাবে হাপর লোহার মরিচা দূর করে। 

৩। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দা রোগে আক্রান্ত হয় অথবা সফরে যায় (আর তার নিজের নিয়মিত অযীফা বা ইবাদত আদায় করতে না পারে) তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়িতে করত।

তিন ব্যক্তির ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী

হযরত আবু যর রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তারা হলো :

১। পায়ের গিরার নিচে পাজামা, জামা, লুঙ্গি ইত্যাদি কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী।

২। দান করে খোঁটা দানকারী।

৩। মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী। ২৬

রহমতের দৃষ্টি ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত যারা  

হযরত সালেম বিন আবদুল্লাহ রা. তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তারা হলো :

১। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান,

২। পুরুষের বেশধারী নারী,

৩। দাইয়ুস (যে তার স্ত্রীর বেপর্দা ও ব্যভিচারের উপর সন্তুষ্ট থাকে)।

আর আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না। তারা হলো :

৪। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান,

৫ । মদপানকারী,

৬। দান করে খোঁটাদানকারী। ২৭

জান্নাত যাদের জন্য হারাম

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তারা হলো :

১। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ।

২। মদপানকারী।

৩। দাইয়ুস (যে তার স্ত্রীর বেপর্দা ও ব্যভিচারের উপর সন্তুষ্ট থাকে)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো :

১। মদ্যপ।

২। খোঁটা দানকারী। 

দুটি ভয়াবহ দুঃসংবাদ

১। হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার সপথ, যার হাতে আমার প্রাণ!

তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। নতুবা অবিলম্বে আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা তার কাছে দুআ করলেও তোমাদের দুআ কবুল করা হবে না।”

২। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেন, হে লোকসকল, তোমরা তো নিশ্চয় এই আয়াত তেলাওয়াত করে থাকবে :

'হে ঈমানদারগণ, তোমাদের সংশোধন করা তোমাদেরই কর্তব্য। তোমরা সৎ পথে থাকলে যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।' [সূরা মায়েদা, আয়াত-১০৫]

অথচ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মানুষ কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেখেও তার দুই হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করলে অচিরেই আল্লাহ তাআলা তাদের সকলকে তার ব্যাপক আযাবে নিক্ষিপ্ত করবেন। 

তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সওয়াব

হযরত আবু বুরদা রা. তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি এমন, যাদের দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে :

১। এমন আহলে কিতাবী, যে তার নবীর উপর ঈমান এনেছে অতঃপর

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান এনেছে।

২। এমন গোলাম, যে আল্লাহর হক পুরোপুরি আদায় করেছে এবং নিজ মালিকের হকও পুরোপুরিভাবে আদায় করেছে।

৩। এমন ব্যক্তি, যার কাছে একটি দাসী রয়েছে আর সে তাকে আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে এবং ইলম শিক্ষা দিয়েছে। অতঃপর তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে নিয়েছে।

এমন লোকেরা দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করবে।

নিশ্চিত জান্নাতের সুসংবাদ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি বিষয়ে যেকোনো মুসলমান লক্ষ রাখবে, সে নিশ্চয় জান্নাতে যাবে। জেনে নাও, বিষয় দুটি অতি সহজ, কিন্তু আমলকারী কম :

১। প্রত্যেক নামাযের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ১০ বার আল্লাহু আকবার বলবে।

আবদুল্লাহ বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা হাতে গুণতে দেখেছি।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুখে এটি (পাঁচ ওয়াক্তে) একশ পঞ্চাশ, কিন্তু কিয়ামতে মিযানের পাল্লায় এক হাজার পাঁচশ।

২। আর যখন শয্যা গ্রহণ করবে, সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ (তিনটি মিলে) ১০০ বার বলবে। এটা মুখে একশ বটে; কিন্তু মিযানে এক হাজার ।

অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে কে একদিন এক রাতে দুই হাজার পাঁচশ গুনাহ করে? (অর্থাৎ কেউ এত গুনাহ করে না)

সাহাবীগণ বললেন, কেন আমরা এই দুইটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে পারব না? তিনি বললেন, পারবে না এই জন্য, আমাদের কারও নিকট তার নামায অবস্থায় শয়তান এসে বলে, ওই বিষয় স্মরণ করো, ওই বিষয় স্মরণ করো,

যাবৎ না সে নামায শেষ করে ফেরে। অতঃপর হয়তো সে তা না করেই

উঠে যায়। এমনিভাবে শয়তান তার শয্যাকালে এসে ঘুম পাড়াতে থাকবে । যাবৎ না সে (তা না করে) ঘুমিয়ে পড়ে। (আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।)

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ