বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র পরিবারে ফুটফুটে এক কন্যা শিশুর জন্ম হয়. তার বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রি আর মা মানুষের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন. কন্যা সন্তানটি ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে।
সকল মা-বাবাই চায় তাদের সন্তান জীবনে উন্নতি করুক. নিজেরা কোনোদিন স্কুলের বারান্দায় না গেলেও অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে সেই মা-বাবা তাদের সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যায়।
কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই চঞ্চল কিশোরীর পড়াশোনায় কোন মনোযোগ ছিল না. তবুও এভাবেই দিন যায় রাত পোহায়. অতঃপর একদিন কন্যা দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
কিন্তু যার পড়াশোনায় কোন মনোযোগ নেই তার পক্ষে কি এসএসসি পাস করা সম্ভব? ঠিক তাই হলো...পরপর দুবার মেয়েটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে স্কুলের গন্ডিতেই পড়ে থাকে।
এদিকে পাড়া-প্রতিবেশি ও তার নিন্দা শুরু করেছে.গাঁয়ের সবাই তাকে এক নামেই চিনতো আর তা হলো "ফেলটু." সে যাই হোক তার মা-বাবার ও ধৈর্যের সীমা বাঁধ ভেঙেছে.লোকমুখে নিজের কন্যার অপারগতা শুনতে শুনতে বাবা ক্লান্ত. বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না লজ্জায়।
তবুও বাবা হাল ছাড়লেন না. মেয়েটিকে একটা শেষ সুযোগ দিলেন এবং বললেন এবার যদি সে পাশ করতে না পারে তাহলে বাবার আত্মহত্যা করবেন অথবা মেয়েটিকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে. মেয়েটিও তার বাবার শর্তে রাজি হলো।
কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তাঁর ঘোর অবহেলার কারণে দুর্ভাগ্যবশত সে এবারও অকৃতকার্য হলো অর্থাৎ পূর্বের ফলাফল এর পুনরাবৃত্তি ঘটলো. শর্তানুযায়ী মেয়েটি গৃহত্যাগ করলো,রওনা দিলো রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে, কিছুটা অভিমান করেই।
একটি মেয়ের পক্ষে অচেনা জায়গায় একা থাকা নিরাপদ নয়. তবুও মনের বল বজায় রেখে একটা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেয় কিন্তু হতভাগ্য মেয়েটি অবর্ণনাতীত নির্যাতনের শিকার হয়. অতঃপর একটা লোক মেয়েটির জীবনে ফেরেশতা হয়ে আসে. তিন একটা হোটেলের মালিক, ভীষণ দয়ালু।
মেয়েটির দুঃখ কষ্টের কথা শুনে তিনি মেয়েটিকে আশ্রয়দান করেন এবং মেয়েটিকে তার হোটেলে ওয়েটার হিসেবে চাকরি দেন. মালিকের প্রস্তাবে রাজি হয় মেয়েটি. সারাদিন হোটেলে কাজ করে রাতে না ঘুমিয়ে কি পড়াশোনা করতো।
তৃতীয়বারের মতো সে আবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলো এবং অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে মেয়েটি এবার কৃতকার্য হয়েছে. এভাবেই তার দিন অতিবাহিত হতে থাকে. মেয়েটি কলেজে ভর্তি হয়।
কৃতিত্বের সাথে কলেজের গণ্ডি পার করে. ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইনে স্ক্রল করার সময় সে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পায়. তারপর আবেদন করে এবং নির্ধারিত দিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে 80 জন নির্বাচিত হয়,তার মধ্যে এটি ছিল তৃতীয় স্থানে. দ্বিতীয় পর্যায়ে 80 জনের মধ্য থেকে অনেক কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় মাত্র তিনজন।
আর সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ওই দুর্ভাগা মেয়েটিই প্রথম স্থান অধিকারী হয় এবং বৈমানিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে.সরকারি চাকরি প্রাপ্ত মানুষ চাকরিতে যোগদান করার পূর্বে তাদের বাড়ির ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়, প্রার্থীর দেওয়া সমস্ত তথ্যের যাচাই করনের জন্য।
এরই মাঝে কেটেছে পাঁচ বছর. হঠাৎ একদিন গ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশের কিছু সদস্য তথ্য যাচাই করতে যায়।
গ্রামের সহজ সরল মন-মানসিকতার লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখে ভীত হয়ে যায় এবং তাদের মনে কৌতুহল এর উদ্রেক হয় কেন গ্রামে পুলিশ এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা সেই মেয়েটির সম্পর্কে খোঁজ করছিল যে মেয়েটি দীর্ঘ পাঁচ বছর পূর্বে গ্রাম ত্যাগ করেছে পুলিশ তার মা-বাবার সাথে দেখা করতে চায়।
প্রথমে সবাই ভেবে নিল মেয়েটি হয়তো কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে অর্থাৎ মারা গিয়েছে অথবা হয়তো কোনো অপকর্ম করেছে তাই পুলিশ তাকে খুঁজছে।
কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবার মনের ভুল ভেঙে দিল মেয়েটির বৈমানিক হওয়ার খবর জানাজানি হয়ে গেল. এরপর কেটে গেল আরো তিন বছর।
কঠোর পরিশ্রম করে মেয়েটি তার জীবনের সফলতা দেখতে পায়. লেফটেন্যান্ট পদবী সহ যুদ্ধ বিমানের পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হয়।
দীর্ঘ আট বছর পর গ্রামে পদার্পণ করলো সেই কন্যা.সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, তবে শোকের নয় আনন্দের.পাছে লোকে কি বলে সেসবে কর্ণপাত না করে মেয়েটি জিরো থেকে হিরো হয়ে গেলো, দেশের গর্ব,দেশের রত্ন হয়ে উঠলো।
এভাবেই প্রতিটি মেয়েকে সমাজসৃষ্ট সকল সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হবে.তবেই দেশের কল্যাণ,জাতির কল্যাণ কেননা নারীরা পিছিয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
তাইতো কবির ভাষায়, "বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর." আর এভাবেই জীবনে ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হবে নারীদের।
You must be logged in to post a comment.