ক্যান্সার প্রতিরোধে সাতটি কার্যকরী পদ্ধতি। জানা থাকলে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। চলো জেনে নেই!
ক্যান্সার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই এই সম্পর্কে অনেকেই জানেন। আজকে শুধু কয়েকটি টিপস দেব যেগুলো মেনে চললে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কার্যকরী হতে পারে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষ মারা যান। তার মধ্যে বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ২,০০,০০০ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১,৫০,০০০ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। যেহেতু ক্যান্সার সারাতে পারে এমন কোনো ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, তাই এইসব ক্যান্সার থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে হলে আমাদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে হয়তো এর ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারি।
শুধু মাত্র জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্ধেক ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব, তাই আমাদের এইসব অভ্যাস গড়ে তুললে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারব।
১.ধূমপান করবেন না।
পুরুষ এবং মহিলাদের ক্যান্সারের মৃত্যুর প্রধান কারণ ধূমপানের কারণে হয়, কিন্তু ধূমপান অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যেমন মুখ এবং গলা, কিডনি, লিভার, মূত্রাশয়, পেট, কোলন, এবং অগ্ন্যাশয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে "সিগারেটে রয়েছে কার্সিনোজেন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ " ধূমপানের ফলে মুখ ও গলা, শ্বাসনালী, মূত্রথলি, অন্ত্রের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্নক ব্যাধির সৃষ্টি হয়।
সিগারেটের এই বিষাক্ত পদার্থ শ্বাস এর মাধ্যমে গ্রহণ করলে সরাসরি ক্যান্সার হতে পারে। ধূমপান ক্যান্সারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ।"
যদি আপনি ইতিমধ্যেই ধূমপান করে থাকেন তাহলে তা ছাড়া ভালো। সারাবিশ্বে ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ যা কিনা সব ধরনের ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
২.বিশেষ করে " বয়স্করা " সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে নিজেকে সুরক্ষা করুন।
বিশেষ করে অনেক বয়স্করাই স্কিন ক্যান্সারের আক্রান্ত হন, তবে এর মাত্রা বাংলাদেশে কম। যুক্তরাষ্ট্রের
( Centers for Disease Control and prevention ) এর এক গবেষণায় দেখা যায় যে ৪.৩ মিলিয়ন বয়স্করা এ ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছেন
সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ( যেটাকে সংক্ষেপে ইংরেজিতে "ইউভি " বলে) এই রশ্মির এক্সপোজার মাত্র 15 মিনিটের মধ্যে আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, যা আপনার ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাইরে যাওয়ার সময় এই ক্ষতিকর আলো যেন কোনো ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল করে বাইরে যেতে হবে।
৩. মদ্যপান বা এর মত ক্ষতিকর ড্রিংকসগুলো পান করা থেকে বিরত থাকুন।
এখন যে কথাটি বলব এটি আপনার জন্য বোধগম্য ও হতে পারে আবার একটু বিভ্রান্তিকরও। এ বিষয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এমনকি গবেষণায়ও দেখা গেছে যে যারা রেড ওয়াইন অর্থাৎ লাল মদ কম পান করেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। এর প্রধান কারণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উদ্ভিদ যৌগ।
"রেসভেরট্রোল" একটি পদার্থ যেটি আঙ্গুর ফলে পাওয়া যায় এবং মদ বানাতে সাহায্য করে ।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে বেশির ভাগ বিদেশি মদ ওই আঙ্গুর ফল দিয়ে বানানো হয়। এই ফল এমনি খাওয়া উপকারী তা সবাই জানি, কিন্তু মদের বেলায় এটি বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই এই মদ বেশি পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে রেসভেরট্রোল আপনার কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে আবার কিছু ধরণের ক্যান্সারের দিকে পরিচালিত করতে পারে, তবে এর নির্দিষ্ট লিঙ্ক নেই।
অ্যালকোহল ব্যবহার ক্যান্সারের সাথে যুক্ত ।
বেশি অ্যালকোহল পান মাথা এবং ঘাড়, স্তন, লিভার এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
"যদি আপনি সত্যিই অ্যালকোহল থেকে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি দূর করতে চান, তাহলে আপনি অ্যালকোহল এড়িয়ে চলবেন।
৪. প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খাওয়া সীমিত করুন।
ইনটারন্যাশনাল এজেন্সি রিসার্চ ফর ক্যান্সার(IARC), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ক্যান্সার সংস্থা, যেটি 2014 সালে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস বেশি পরিমাণ খাওয়া কয়েক ধরনের ক্যান্সার ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে।
সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল প্রক্রিয়াজাত মাংসে নাইট্রেট থাকে, যাকে একটি কার্সিনোজেন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটা বিষয় খিয়াল করে দেখবে যে যেসব পশুপাখি খাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ সেগুলো কিন্তু সেগুলোতেই কিন্তু মারাত্মক রোগ জীবাণুর মাত্রা বেশি থাকে।
৫. দিনে কমপক্ষে 20 মিনিটের জন্য আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ান।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা আপনার স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। লক্ষ্য করা যায় যে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় হওয়া, স্তন, কোলন এবং মলদ্বার, এন্ডোমেট্রিয়াম, খাদ্যনালী, অগ্ন্যাশয়, লিভার এবং কিডনিসহ বেশ কয়েকটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ।
প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল অতিরিক্ত ওজন আপনার শরীরকে আরও ইস্ট্রোজেন এবং ইনসুলিন তৈরি করে তা সঞ্চালন করে, যা ক্যান্সার বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে।
তাই যথাসম্ভব শরীরটা কে এক্টিভ রাখার জন্য নিয়মিত হাটা চলা, সাইকেল চালানো, ব্যায়াম করা, শারিরীক কাজ কর্ম করা দরকার এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে।
৬. পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
যাইহোক, ক্যানসার সারাতে পারে এমন কোনো ঔষধ বা খাদ্য আছে বলে মনে করা হয় না। কিন্তু পুষ্টির একটি ভাল মিশ্রণ খেলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
▪️ ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার।
▪️ কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান, যা আপনাকে সুস্থ এবং শরীরের সঠিক ওজনে থাকতে সাহায্য করে।
▪️ বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাক সবজি, বিশেষ করে সবুজ শাক সবজি সবজি
ফাইবার সমৃদ্ধ মটরশুটি ইত্যাদি।
▪️ বিভিন্ন রঙের ফল
▪️ পুরো শস্য এবং বাদামী চাল
▪️ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল রাখুন এবং প্রক্রিয়াজাত ও অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন। প্রচুর পরিমাণে (দৈনিক ৮-১০ গ্লাস) পানি পান করুন।
লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করা জরুরি।
৭. HPV টিকা নিন।
সিডিসি অনুসারে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) প্রতি বছর প্রায় 14 মিলিয়ন মানুষকে সংক্রামিত করে । তাই এই টিকা নেওয়া ভালো, বাংলাদেশে এই টিকার ব্যবহার না থাকলে ও অন্যান্য টিকা রয়েছে যেগুলো নেওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা
ক্যান্সার এর উৎপত্তি কখনো ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন-ই ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমাতে সক্ষম । মনে রাখবেন ক্যান্সার মানে মৃত্যু নয়
• এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব
• এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য
• অধিকাংশ অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের ব্যথা উপশম করে জীবনযাপনের মানবৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব।
You must be logged in to post a comment.