একটি চমৎকার ভ্রমণ কাহিনী ও অজানা সব তথ্য

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। আমরা সকলেই ভ্রমণ প্রিয়। এই সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশ ভ্রমণ করার জায়গার অভাব নেই। অনেক অসাধারণ সুন্দর জায়গা রয়েছে ভ্রমণ করার মত। আজকে আমি আপনাদের সাথে এরকমই একটি সুন্দর ও চমৎকার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি অনেক অজানা বিষয়গুলো জানবেন। এবং আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার কাছে অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় ঢুকা যাক।

সময়টা ছিল তখন শীত আসার পূর্ব মুহূর্ত। অল্প অল্প শীত পড়ছে। কিছু কিছু শীত আর কিছু কিছু গরম মিলেই তখনকার পরিবেশ। তখন ছিলাম সিলেট শহরে কোন এক প্রশিক্ষণে। হঠাৎ একদিন চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ঘুরতে যাবো। কিন্তু কোথায় যাবো? জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। হঠাৎ একজন বলে উঠল, তাহলে চলুন আজ আমরা জলপ্রপাত থেকে  ঘুরে আসি।  কিন্তু কোন জলপ্রপাত? একজন বলে উঠলেন "হামহাম জলপ্রপাত" কিন্তু এখানে তো আগে আর কেউ যায়নি। কিভাবে চিনবো বা কিভাবে যাবো। অনেকের মনে অনেক রকম আশঙ্কা অনেক রকম চিন্তা চেতনা জেগে উঠলো। 

সবকিছু ছাপিয়ে একদিন ভোর বেলায় আমরা চারজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম হামহাম জলপ্রপাত দেখার উদ্দেশ্যে। সাথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও কিছু চা বাগান সহ আরো কয়েক জায়গায় ঘুরে আসার মনস্থ করলাম। কিন্তু সময় হাতে কম। মাত্র একদিন। তাই একদিনে এত জায়গা ভালো করে ঘুরে আসা সম্ভব না। তবু বেরিয়ে পড়লাম। সিলেট শহর থেকে চলে গেলাম শ্রীমঙ্গলে। তারপর সেখান থেকে চারজন মিলে একটি সিএনজি ভাড়া করে নিলাম সাড়া দিনের জন্য। গাড়িটি শ্রীমঙ্গল থেকে সকাল ১০ টার দিকে রওনা হলো। মৌলভীবাজার, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হয়ে তারপর আমরা চলতে লাগলাম হামহাম জলপ্রপাতের দিকে। এর মাঝখানে দুদিকে সারিসারি চা বাগানের মনোরম দৃশ্য। গাড়িটি হনহন করে চলছিল আর আমরা দু দিকে তাকিয়ে মন ভরে দেখছিলাম। মাঠের পর মাঠ চা বাগান মাঝে মাঝে উঁচু উঁচু ছোট ছোট পাহাড়। কি নজরকাড়া দৃশ্য। আবার কিছুদুর যাওয়ার পর দুদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। বনের মাঝখান দিয়ে রাস্তায় চলতে অসম্ভব ভালো লাগছিলো। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ, দুদিকে বানরের ঘুরাঘুরি আর বাঘ দেখার একটা আকাঙ্ক্ষা মনের ভিতরে নিয়ে এগিয়ে চলছিলাম আমরা চারজন,,,

এক জায়গায় নিয়ে গাড়ি আমাদের নামিয়ে দিল। গাড়ি থেকে নেমে এক দোকানে দুপুরে খাবারের জন্য অর্ডার দিয়ে গেলাম আমরা চারজনের। তারপর সেখান থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা পায়ে হেঁটে চারটি পাহাড় অতিক্রম করে পৌঁছাতে হয় হামহাম জলপ্রপাতে। খুবি কষ্ট এবং ভয়ংকর ব্যাপার ছিলো। তবে কষ্ট যা ই হোক না কেনো, আমরা আজ জলপ্রপাত দেখেই যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।

তখন সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায় এক'টা। সহযোগীতার জন্য সাথে করে ১ টা লাঠি নিয়ে হাঁটতে লাগলাম আমরা চারজন একসাথে এক তালে। পাহাড়ের পর পাহাড় রাস্তার পর রাস্তা বনের পর বন। অলিগলি আর বন্ধুর গিরিপথ অতিক্রম করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে ছোট ছোট খাল আর    ঝর্ণার পানি বয়ে চলছে।

 একটানা চলতে লাগলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা। তারপর পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে হামহাম জলপ্রপাতে। যেতে যেতেই হাপিয়ে গেলাম আমরা চারজন। সেখানে গিয়ে দেখি, অনেকেই ঝর্ণার পানি দিয়ে গোসল করে নিজেদের গা শীতল করে নিচ্ছে। 

তবে আমরা এক কেউ গোসল না করে পাহাড়ের উপরে উঠে সেখান থেকে ভারতের সীমানা দেখে আসলাম। প্রায় এক থেকে দেড়শ মিটার উপরে উঠলাম জীবনের প্রথম। জীবনটা যেন হাতের মুঠোয় ছিল। যে কোন সময় পা ফস্কে যাওয়ার চরম ভয় ভীতি নিজেকে আঁকড়ে ধরে ছিল। তারপরও চরম এক অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। নিচে নেমে আসলাম কিছু সময় আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে তারপর রওনা দিলাম ফেরার পথে। 

সময় তখন দুইটা বেজে ৫০ মিনিট। আবার সেই এক টানা প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটতে হল। হাঁটতে হাঁটতে সকলের পা দুটো যেন ফুলে গিয়েছে। এবার হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম। চা পাতার ভর্তা, ডাল আরও হরেক রকমের খাবার দিয়ে। সময় তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে। মাঝপথে মাধবপুর চা বাগান ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অল্প একটু ঘুরাঘুরি করে তারপর ফিরে এলাম আবার সেই শ্রীমঙ্গলের স্টেশনে। এখানে আসতে আসতে মাগরিবের আজান পড়ে গেল। সেখানে এসে কিছু চা-পাতি সহ আরো কিছু কিনাকাটা করে নিলাম। তারপর সমাপ্ত হল আমাদের একটি সফল ভ্রমণ। যেখানে দেখা হলো অনেক অদেখা। জানা হলো অনেক অজানা। 

আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে আবারও কোন আর্টিকেলে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

নামঃ- ইয়াসিন আরাফাত পিতাঃ- মোজাফফর হোসেন থানা, কালীগঞ্জ। জেলা, গাজীপুর। আমি একজন ছাত্র। ফোনঃ- 01842690077