ঢাকার লালবাগের বিয়াজউদ্দিন রোডেই বিখ্যাত লালবাগ কেল্লার অবস্থান।জনপ্রতি 10 টাকা মূল্যের টিকেট কেটে আমরা সাতজন লালবাগ কেল্লার ভেতরে প্রবেশ করলাম।বর্গাকৃতির সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা লালবাগ কেল্লার প্রথমেই নজরে আসে বিশাল তোরণ বা ফটক।
লালবাগ কেল্লায় মোট তিনটি ফটক আছে,যার দুটি বর্তমানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই বাগান ঘেরা পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দেয়।
সোজা একটু ভেতরে গেলেই সামনে পড়ে শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধিসৌধ। 1687-88 খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময় পরীবিবি মৃত্যুবরণ করেন।তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শায়েস্তা খান ব্যয়বহুল এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন।
অপূর্ব নয়নাভিরাম এ ইমারত। মার্বেলপাথর,কষ্টিপাথর ও বিভিন্ন রকমের ফুল,পাতা,সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলঙ্কৃত করা হয়েছে।কক্ষগুলোর ছাদ গম্বুজ পদ্ধতিতে কষ্টিপাথরের তৈরি।
মূল সমাধিসৌধের কেন্দীয় কক্ষের উপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাতা আচ্ছাদিত।এছাড়া নাম-না-জানা আরও দুটি সমাধি এবং কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উঁচু,সুরঙ্গপথ এবং কেল্লার দক্ষিণে-পশ্চিম দুর্গপ্রাচীরের নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর একটি করে পলকাটা তোপমঞ্চ রয়েছে।
কেল্লার পূর্বে প্রান্তে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটি চারদিকে ঘাট বাঁধানো সিঁড়ির মতো এবং বর্গাকৃতির।পেছনে রয়েছে সৈনিকদের ব্যারাক যা বর্তমানে আনসার ক্যাম্প।
অন্যান্য দর্শনীয় জিনিসের মধ্যে রয়েছে লালবাগ কেল্লা মসজিদ। এটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আযম বাংলার সুবেদার থাকাকালীন নির্মাণ করেছিলেন।
মসজিদটি আয়তাকার নির্মিত তিন গম্বুজবিশিষ্ট।এ মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ।
শায়েস্তা খানের বাসভবনের পাশে একটি কামান বা তোপ রাখা আছে যা সেই সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো।
লালবাগ কেল্লায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জিনিসটি আছে তা হলো সুবেদার শায়েস্তা খানের বাসভবন ও দরবার হল।
তাছাড়া এখানে নির্দশন হিসেবে রয়েছে তৎকালীন ও তৎপূর্ব মানচিত্র,চীনা তৈজসপত্র,গামলা,পারস্যে তৈরি থালা-বাসন,ট্রে, সুরাবিহা ও শিলা পাথর।
17/18 শতকের বর্শামূল, বর্শাফলক,লোহার জালের বর্ম,ছোরা ও খাপ,তীর ও বর্শা,বর্ম,গুপ্তি,তীর ও বর্শা নিরোধক লোহার জালের পাত্র,ঢল,তরবারি,দস্তানা, পারকাশন লক বন্দুক ও রাইফেল,হাতকুঠার, শিরস্ত্রাণ,বক্ষবর্ম,তীল ধুনক,ফ্লিন্ট লক পিস্তল, ফ্লিন্ট লক কামান, পারকাশন লক পিস্তল, সৈনিকদের পোশাক,রাজার পোশাক এবং সিসার গুল এখানে সংরক্ষিত আছে।
দর্শনাথীদের জন্য রয়েছে 17 শতকের পারস্যের তৈরি তিনটি কার্পেট, ঝাড়বাতি,ল্যাম্প, জায়নামাজ এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলের একটি মসজিদ ও বাগান তৈরির বিবরণ লিপিবদ্ধ শিলালিপি।
ফারসি ভাষায় লিখিত শিলালিপিটি 1099 হিজরি ও 1689-90 খ্রিষ্টাব্দের।এছাড়াও এ স্থানে রয়েছে দুরদানার প্রতিকৃতি,সিংহাসনে বসা জনৈক রাজার প্রতিকৃতি, শাহজাদা আযম শাহের প্রতিকৃতি,সিংহাসনে বসা সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতিকৃতি,আসফ শাহ বাহাদুরের প্রতিকৃত,
মধুমতি অঙ্কিত একটি চিএ,উটের নাচ,বন্যজন্ত, যুবরাজ ও রাজ তনয়ার অশ্ব চালনা,বৃক্ষ ছায়ায় চিন্তামগ্ন খাজা হাফিজ সিরাজ,অমাত্যদের আঘাতে রক্তারক্ত দুটি মানুষকে অবলোকনের চিত্র।
আজ এই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন খোদা হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.