অসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বুক চিরে অবস্থান করেছে দার্জিলিং (Darjeeling)। শৈল শহরের রানী নামে পরিচিত দার্জিলিং। দার্জিলিং তার ভূ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা এবং দার্জিলিং রেলওয়ে জন্য বিখ্যাত। ব্রিটিশ রাজ্যর সময় হতে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে দার্জিলিং। বিশেষ করে এটি যখন ব্রিটিশদের রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। পূর্বের দার্জিলিং ছিল প্রাচীন গোর্খা রাজধানী। পরে সিকিমের মহারাজা ব্রিটিশদের দার্জিলিং উপহার করেন।
স্থানটিতে তার অনাবিল ভূ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নাতিশীতোষ্ণ মনোরম জলবায়ুর কারণে ভারতের দর্শনীয় স্থান হিসাবে গড়ে উঠেছে। ছুটির গন্তব্য হয়ে আসছে জনপ্রিয় এই স্থানটি। শুধু ভারত নয় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও ছুটি আছে অনেক পর্যটক। পর্যটন ছাড়াও দার্জিলিং ব্রিটিশ শৈলী যুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর জন্য জনপ্রিয়। যা শুধু ভারত নয় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্শন করে।
অবস্থান
পাহাড়ের উপর অবস্থিত সবুজ স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা এই শহরটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে ৬৩ কিলোমিটার দূরে বিদ্যমান। প্রিয় শহরটি ভারতের নিম্ন হিমালয়ের শৈল শ্রেণীতে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭১০০ উচ্চতায় অবস্থান
দার্জিলিং এর স্থানীয় মানুষ
এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ আদি-অন্ত হতেই মিশুক প্রকৃতির। খুব সহজেই পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সাথে উনারা খাপ খাইয়ে নিতে পারে।স্থানীয় মানুষেরা গরুর মাংস এবং মসুর ডাল দিয়ে খেতে বেশি পছন্দ করে।
তাছাড়া তাদের জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে গানড্রাক (গজানো সরিষার পাতা), মম ( সবজি এবং মাংস দিয়ে পিঠার ন্যায় এক ধরনের খাবার), চেং (স্থানীয় বিয়ার ), থুবকা (মাংস এবং নুডুলস দিয়ে তৈরি এক ধরনের ঘন স্যুপ) অন্যতম।
দার্জিলিং যাওয়ার উপায়
দার্জিলিং একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হয় পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ এর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। সড়কপথ, রেলপথ ,আকাশপথ যেকোনো অবস্থায় এখানে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
১.ভিসা
দার্জিলিং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে ভারতীয় দূতাবাস হতে "by road category" তে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভিসা নিতে হবে।
-
২.রেলওয়ে দিয়ে
দার্জিলিংয়ের রেলপথে যাওয়ার নিকটবর্তী স্থান হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ির রেলওয়ে স্টেশন। এটি দার্জিলিং হতে 44 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্টেশন হতে দার্জিলিং সড়ক পথে গেলে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। ভারত জুড়ে অবস্থিত সমস্যা ট্রেনগলো এই স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ভারত হতে কলকাতা ও দিল্লি থেকে এই স্টেশনে পৌঁছানোর একটি ট্রেনের তালিকা:
৩.কলকাতা থেকে (from Kolkata)
- কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস/১৫৬৫৭
- সরাইঘাট এক্সপ্রেস/১২৩৪৫
- উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস/ ১৩১৪৭
- কামরূপ এক্সপ্রেস/১৫১৭৭
- তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস/১৩১৪১
- হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দি এক্সপ্রেস/১২০৪১
- কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস/১৩২৫১
- দার্জিলিং মেল এক্সপ্রেস/৩৪৩১৯
- পদাতিক এক্সপ্রেস/১০২২৩
৪.দিল্লি থেকে (from Delhi)
- সিকিম মহানন্দা এক্সপ্রেস/১৩১৪৫
- নিউ দিল্লি - নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস/১৪২৬৫
- পূর্বোত্তর সম্পর্ক -ক্রান্তি এক্সপ্রেস/১৩২৪৫
- ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস/১২৬৭৩
- নর্থইস্ট এক্সপ্রেস/১৪৬২৮
৫.সড়ক পথে
দার্জিলিং এর প্রতিবেশী শহরগুলোর সাথে বাস দিয়ে ভালো ভাবে সংযুক্ত। শিলিগুড়ি থেকে রিজার্ভ জিপে প্রায় ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট সময় লাগে। সহজ উপায়ে যাওয়ার অন্য পথ সমূহ শিলিগুড়ি,কা্র্শিয়াং,গ্যাংটক,কালিম্প্যং ইত্যাদি।
৬.আকাশ পথে বা বিমান পথে
শিলিগুড়ি কাছাকাছি বাগদগরা হল দার্জিলিং এর নিকটবর্তী বিমানবন্দর। যা দার্জিলিং থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।এই বিমানবন্দর দিল্লি, কলকাতা এবং গুয়াহাটি সাথে নিয়মিত সংযুক্ত।
বাংলাদেশ থেকে গেলে বিমানে করে দার্জিলিং যেতে চাইলে আপনাকে প্রথম ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে জেট এয়ার, এয়ার ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ বিমান ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বিমানে করে পাড়ি দিতে হবে কলকাতায়। যার খরচ পড়বে প্রতিজনের প্রায় ১১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা।
হোটেল বুকিং
থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী রুচিসম্মত বিভিন্ন থাকার হোটেল এখানে রয়েছে। আর পর্যটকেরা এসব হোটেল স্বল্পমূল্যে নিতে পারেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী। এখানে আধুনিক সুবিধা সহ ( ওয়াইফাই, পানির সুব্যবস্থা)রুম বেঁধে ১০০০-১৫০০ মধ্যে পাওয়া যায়। থাকার হোটেল গুলোর মধ্যে বেলভিউ, সাগরিকা, সোনার বাংলা মহাকাল ইত্যাদি হোটেলগুলো জনপ্রিয়।
দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থান সমূহ:
দার্জিলিং এর আশেপাশে পর্যটন করার মত অনেক স্থানে রয়েছে। মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল---
১.টাইগার হিল (Tiger Hill):
দার্জিলিং ভ্রমণের দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ যেখানে আপনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10,000 উপরে ফুট উঁচুতে অবস্থিত হিমালয়ের বরফ দিয়ে দেখতে পাবেন সূর্যোদয়ের ঝিকিমিকি হাসি। যা দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র 11 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
২.রেলওয়ে স্টেশন ঘুম (Railway station):
রেলওয়ে স্টেশন ঘুম হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি পথ বেয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য 3 মিটার এবং উচ্চতা শিলিগুড়িতে 328 ফুড অর্ডার নিয়ে 740 5 ফুট।
৩.কাঞ্চনজঙ্ঘা (kanchanjunga)
দার্জিলিং শহর পেরিয়ে খুব কাছে আর একটি শহর যার নাম হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ।যেখানে থেকে দেখা যায় প্রায় 8 হাজার তিনশত প্রচুর ফুট উঁচু বরফে ঢেকে যাওয়া হিমালয় পর্বতমালা। অপূর্ব এই দেশে আপনি চাইলে প্যারাগ্লাইডিং করতে পারেন।
৪.মিরিক লেক (merik lake):
দার্জিলিংয়ের একেবারে পাশে খুব ছোট একটি শহরের নাম মেরে। এই শহরটি বরফে আচ্ছাদিত পাহাড় ও লেকের এর সমন্বয়ে ঘেরা।
৫.পশুপতি মার্কেট (Pashupati Market):
পশুপতি মার্কেট নেপালে অবস্থিত। আপনি চাইলে দার্জিলিং থেকে জিপে করে সহজে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে।
৬.টয় ট্রেন (Toy Train):
জনপ্রতি ৫৫০ রুপি করে আপনি বিখ্যাত ট্রয় ট্রেন এ করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো দার্জিলিংকে নবরূপে। দার্জিলিং এর সম্পূর্ণ ভূ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন খুব সহজেই টয় ট্রেনের ভ্রমণ করে।
৭.ঘুম মনাস্তেরি (Ghum Monastery)
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত প্রার্থনার স্থান ঘুম মনাস্তেরি। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের ভিড় হয় এটি দেখতে।
৮.বাতাসিয়া লুপ (batasiya lup)
ছবির মতো সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাতাসিয়া লুপ যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত এর উপর থেকে নিচ ক্রমশ ঢালু।
৯.দার্জিলিং চিড়িয়াখানা (Darjeeling zoo) :
এখানে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বিলুপ্তপ্রায় পাহাড় এবার স্নো নিউপার্ড খ্যাত দার্জিলিং চিড়িয়াখানা যার নাম পদ্মা যায়ি নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক।
১০.হিমালায়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (Himalaya mountaineering institute):
সেখানে আছে পাহাড়ের উপর অবস্থিত অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র যা হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত।
১১.এভারেস্ট বিজয়ী তানজিং রক স্মৃতিস্তম্ভ (Everest won tanzing rock)
এখানে রয়েছে পৃথিবীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তামিলরকের স্মৃতিস্তম্ভ। যার সম্পূর্ণ উপর থেকে ক্রমশ ঢালু।
১২.কেবল কারের ভ্রমণ (cable car):
দর্শনার্থীদের বিনোদন প্রয়াস আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সেখানে আছে ক্যাবলকারে 16 কিলোমিটার পর্যন্ত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ এর সুবিধা।
১৩.হ্যেপি ভেলি টি গার্ডেন (happy valley tea garden)
দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং পুরনো চা বাগান এই হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন। চাকরির জন্য বিখ্যাত এই বাগানের দর্শনার্থীদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলছে।
১৪.দার্জিলিং গোর্খাল্যান্ড স্টেডিয়াম (Darjeeling gorkhaland stadium):
প্রায় ৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত গোর্খাল্যান্ড স্টেডিয়াম।তিব্বতিয়ান সেলফ হেল্প সেন্টারদার্জিলিঙে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত কেন্দ্রটি এন্ড সেলফ হেল্প সেন্টার?
১৫.দার্জিলিং মিউজিয়াম (Darjeeling museum):
দার্জিলিংয়ের আছে বিশাল বড় একটি মিউজিয়াম যেখানে প্রাচীনকালে নেপালি জাতির স্বাক্ষর বহন করা হয়েছি
১৬.জাপানিজ টেম্পল (Japanese Temple):
পৃথিবী বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার জাপানিজ টেম্পল দার্জিলিংয়ের অবস্থিত যা দেখতে প্রতিদিনের লেগে থাকে হাজারো পর্যটকের ভিড়।
১৭.আভা আর্ট গ্যালারি (Abha art gallery):
দার্জিলিঙে আছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কাউন্সিল হাউস লালকুঠির অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন খেতা আর্ট গ্যালারি নামে পরিচিত।
১৮.দিরদাহাম টেম্পল (DirdhamTemple):
পর্যটকদের অন্যতম আরেক আকর্ষণ শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির দিরদাহাম এই দার্জিলিং এ অবস্থিত ।
১৯.রক গার্ডেন ও গঙ্গা মাইয়া পার্ক (Rock garden and Ganga Maiya Park):
সেখানে তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য পাথর কেটে ও কারুকার্য মন্ডিত রক গার্ডেন ও গঙ্গা মাইয়া পাক।
২০.ভিক্টোরিয়া ফলস সুসভ্য জাতির সংস্কৃতি: দার্জিলিং অবস্থিত পানির অবিরাম ঝর্ণাধারা ভিক্টোরিয়া ফলস ও সভ্য জাতির সংস্কৃতি নামে খ্যাত।
২১.সেন্ট পলস স্কুল ( Paul's School):
ইতিহাসখ্যাত প্রায় দুইশত বছর পুরনো স্কুল সেন্ট পলস স্বচক্ষে দেখার জন্য এখানে পর্যটকদের জমে থাকে সব সময়।
যাওয়ার সময়
সারদার সব সময় ভ্রমণ করা যায় তবে একটি নির্দিষ্ট সময় আছে তখন ভ্রমণ করলে বেশি ভালো হয়। এই নির্দিষ্ট সময় কি হচ্ছে শরৎকাল ও বসন্তকাল । তাই দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় শরৎকাল ও বসন্তকাল। শরৎকাল ইংরেজি সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং অন্যদিকে বসন্তকাল মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিরাজ করে। এই সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়।
(জে আইডটি আর্নিং প্রোগ্রামের কনটেন্ট লেখার জন্য পড়ুন লেখক গাইড)
বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা উপায় দার্জিলিং যেতে পারে। ১ সড়ক পথ,২ আকাশপথ
এই দুইটি উপায় অবলম্বন করে বাংলাদেশ দর্শনার্থীরা দার্জিলিং ভ্রমণ করতে পারে। নিম্নে বিবরণ দেওয়া হলো --
বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে দার্জিলিং
বিমানে করে দার্জিলিং যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে জেড এয়ার ,এয়ার ইন্ডিয়া ,বাংলাদেশ বিমান রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বিমান করে নতে হবে কলকাতায়। কলকাতা পর্যন্ত যেতে প্রতিজনের খরচ পড়বে প্রায় ১১০০০ টাকা ।
কলকাতায় পৌঁছলে সেখান থেকে বাস, ট্রেন অথবা বা বিমান করে যেতে হবে শিলিগুড়ি শহরে। শিলিগুড়ি থেকে জিপ গাড়ির মাধ্যমে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে আপনি পৌঁছে যাবেন কাঙ্খিত দার্জিলিং শহরে।
বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে দার্জিলিং যাত্রা
সড়ক পথে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনাকে প্রথমে রাত ৬-৮ বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার ঢাকা গাবতলী থেকে নন এসি বাস হানিফ অথবা এস আর ও এসি বাস মানিক এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এস আর পরিবহন করে যেতে হবে বুড়িমারী বর্ডার পর্যন্ত। 10 থেকে 12 ঘন্টার জার্নি পথে নন এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা করে নিবি। আর আপনি যদি এসি বাসে যান তাহলে একজন প্রতি ভাড়া নেবে ৮৫০-৯০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে প্রত্যেকের জন্য খাবারের কিছু ব্যবস্থা করা থাকে। যেখানে আপনারা পাবেন (যেমন ১টি মিষ্টি, ১ টি ডিম 2 পিস রুটি করে)
তবে বলে রাখা ভালো যে, শ্যামলী বাসের ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা। কেননা তারা ঢাকা থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি পর্যন্ত টিকটিক করে থাকবে। তাই আপনি খুব সহজেই সরাসরি শিলিগুড়ি যেতে পারবেন।
বুড়িমারী বর্ডার এলাকায় পৌঁছলে আপনাকে দার্জিলিং যাওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে। তবে চাইলে আপনি সেই বুড়িমারীর ঐতিহ্যবাহী হোটেলে সামান্য কিছু নাস্তা সেরে নিতে পারেন।
ইমিগ্রেশন শেষ করে বর্ডার হয়ে আপনি চ্যাংড়াবান্ধা পৌঁছে শিলিগুড়ি উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। আপনার যদি সদস্য সংখ্যা বেশি হয় তাহলে আপনি একটি জীব ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি জিপ গাড়ি ভাড়া নিবে প্রায় ২০০ রুপি। অথবা জনপ্রতি শেয়ার জিপ গাড়ি ভাড়া ২০০ রুপি করে যেতে পারবেন সেখানে। প্রস্তুতির সময় লাগবে প্রায় দুই (২) ঘণ্টা। অথবা আপনি ইচ্ছে করলে বাসে করে যেতে পারেন। তার জন্য চ্যাংড়াবান্ধা বাইপাস থেকে মাত্র ৮০ রুপি জনপ্রতি খরচ করে যেতে পারেন শিলিগুড়িতে।
শিলিগুড়ির দার্জিলিং স্ট্যান্ড থেকে শেয়ার জিপি জনপ্রতি ভাড়া নিবে ২০০ রুপি। একটি জিপে সাধারনত দশ(১০) জনের মত মানুষ বুঝতে পারে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা।
দার্জিলিং এর বিভিন্ন মানের হোটেল
আগেই বলছি এখানে বিভিন্ন মানের চাহিদা অনুযায়ী এবং রুচিসম্মত হোটেল পাওয়া যায়। এখানকার কিছু হোটেলের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো ---
দার্জিলিং এর বাজেট হোটেল (Budget hotel of Darjeeling)
১.এড্রিস গেস্ট হাউস, ডক্টর জাকির হোসেন রড, দার্জিলিং ।(Adiress Guest House)
২.ডেকেলিং হোটেল,৫১, (Dhekeling Hotel, 51 ) গান্ধী রোড, দার্জিলিং ৫৪১২
৩. হোটেল ল টাওয়ার ভিউ, টিভি টাওয়ার, ডাক্তার জাকির নায়েকের রোড,(Hotel law Tower view, TV Tower)
৪. নিশি কুরা লজ, লিজেন রোড (nishikori lodge, legend road)
দার্জিলিংয়ের শীর্ষ মানের হোটেল (Top Hotel of Darjeeling):
১.মেফেয়ার দার্জিলিং, গর্ভনর হাউজ ৭৩৪১০১. (Mayfair Darjeeling,Governor House )এর বিপরীত পাশে।
২. উইন্ডামেয়ার হোটেল, অবজারভেটরি হিল, (windhamayar hotel, observatory hill)চোরাস্তা ,দার্জিলিং ৭৩৪১০১
মাঝারি মানের হোটেল
১.হোটেল সেভেনটিন সেভেন, এইচ .ডি .লামা রোড, দার্জিলিং।(Hotel 777, ) দার্জিলিং।
২. ওল্ড বেলভিউ হেরিটেজ হোটেল,(old BEL view heritage Hotel) নেহেরু রোড।
দার্জিলিং এ কেনাকাটা কোথায় করবেন
দার্জিলিং শহরের লা ভেন বেশকিছু দোকান রয়েছে।১০০ থেকে ১৫০ রূপী মধ্যে পেয়ে যাবেন আকর্ষণীয় অনেক কিছু। এসব দোকান সমূহের মধ্যে আপনি পাবেন, বস্ত্র দোকান, জুতার দোকান আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য। আপনি ইচ্ছে করলে এখান থেকে কিছু শীতের কাপড় যেমন লেজার, জ্যাকেট ,টুপি, মজা, সুয়েটার, প্যান্ট, মাফলাট ইত্যাদি কিনতে পারবেন। এছাড়া আপনি নেপালিদের তৈরি করা নেপালি লাল, শাড়ি, সু, আপনার প্রিয় একজন মানুষের জন্য গিফট হিসাবে কিনতে পারেন।
টাইগার হিলের বেশকিছু লোকাল শপথেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে সুভিনিয়ার ও কিনতে পারবেন। এছাড়া আপনি চা পাতা করায় করার জন্য কোন স্থানীয় লোকাল থেকে নাকি কিনে ভালো কোন টি স্টেপ থেকে কেনা সবচেয়ে উত্তম। তাহলে ভালো চা পাতা ও পাবেন বিভিন্ন গ্রেড এর চা পাতা দেখতে পাবেন। এবং এখানে দামও কম চা পাতা র মান উন্নত। আপনার সাথে ২০০০ রুপি থাকলে আপনাদের জন্য যথেষ্ট হবে পরেও অনেক কিছু কেনাকাটা করার।
সতর্কবার্তা ও ভ্রমণ এর কিছু টিপস
ভ্রমণের সময় সাথে করে অবশ্যই পাসপোর্ট ভিসা পাঁচ কপি ফটোকপি নিয়ে রাখবেন। বিভিন্ন সময় সেগুলো কাজে লাগতে পারে কিংবা প্রয়োজন হতে পারে। তার জন্য সাথে রাখাই উত্তম।
টিপস সমূহ
১. দার্জিলিংয়ের কন কিছু কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্থানীয় দোকান থেকে ভালো কোন শপিংমল থেকে করায় করায় ভালো। এতে প্রতারণার শিকার থেকে এড়ানো যায় । জিনিস ও ভালো পাওয়া যায় এবং সস্তা দামেও থাকে।
২. বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণ না করাই ভালো কারণ তখন পাহাড় ধসের ঘটনা বেশি ঘটে।
৩. অবশ্যই বাংলাদেশী মুদ্রা টাকা বিনিময় করে রুপিতে পরিবর্তন করে নিবেন।
৪. দার্জিলিংয়ে একটু বেশি ভিড় থাকে তাই হোটেল অগ্রিম বুক করে নিন। এতে করে পরবর্তীতে তেমন একটা চাপে পড়তে হয় না ।
৫. হোটেল বুক করার আগে জেনে নিন, হোটেলে গরম পানির এবং আধুনিক সুবিধার এর সুব্যবস্থা রয়েছে কিনা। নিশ্চিত হয়ে তারপরে বুক করুন।
৬. দার্জিলিং এর রক গার্ডেন থেকে রেস্টুরেন্ট কত দূরে তাই এখানে ঘুরতে গেলে খাবার সাথে করে নিয়ে যাবেন।
৭. হিমালয় পাহাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নোংরা করবেন না. এছাড়া কোন প্রাণী অযথা ক্ষতি করবেন না।
দার্জিলিং ট্যুর প্লান
কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণ করার জন্য কিছু দার্জিলিং ট্যুর প্লান,আইডিয়া---
১. প্রথম দিন ঢাকা থেকে বুড়িমারী উদ্দেশ্যে যে কোন একটি বাস করে বুড়িমারী রওনা দেওয়া
২. বুড়িমারী পৌঁছার পর সেখানে হালকা সামান্য নাস্তা সেরে নেন। তারপর সেখান থেকে জিপ গাড়ি করে কিংবা বাসে করে শিলিগুড়ি রওনা দেন। শিলিগুড়ি পৌঁছার পর একটি হোটেল বুকিং করেন।
৩. তারপরে উপরে উল্লেখ করা পর্যটন স্থানগুলো আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ঘুরে আসুন।
৪. শেষ দিন যে পথ দিয়ে গিয়েছিলেন একই পথ দিয়ে ফিরে আসুন।
ভ্রমণের তাৎপর্য
শুধু দার্জিলিং ভ্রমণ নয় প্রতিটি ভ্রমণ অনেক উপকারী বয়ে আনে। আমাদের শরীর ভ্রমণ পিয়াসী। আদিম যুগ থেকে ভ্রমণ এর আবির্ভাব এবং আজ পর্যন্ত প্রচলিত। মানুষ যখন কোন কিছুতেই একঘরে হয়ে ওঠে, ক্লান্ত হয়ে ওঠে তখন ভ্রমণ করার জন্য রওনা দেয়। ভ্রমণে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে। নিজেকে উৎফুল্ল সুন্দর আকর্ষিত হিসেবে গড়ে উঠতে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি বাইরের জগত নাচেনা পর্যন্ত, নিজেকে (মনকে) চিনতে কখনো পারবেন না।
আমাদের জীবনে ভ্রমণের তাৎপর্য বলে শেষ করার মতন নয়। ভ্রমণ আমাদের শরীর তথা মন উভয়কে বিশেষ ভাবে প্রবাহিত করতে সক্ষম। ভ্রমণ এর ফলে একদিকে আমাদের মন যেমন ক্লান্তি ও গ্লানি দূর করে সতেজ হয়ে উঠে, অন্যদিকে আমাদের শরীরও সকল জড়তা কাঠাটিয়ে সতেজতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ।
এমনকি বিভিন্ন রোগ মুক্তির ক্ষেত্রে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। সে কারণেই প্রাচীন যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকেরা বহু রোগ থেকে সরিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পূর্বে ভ্রমণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ভ্রমণ মানুষকে চিন্তাশীল ও সৃজনশীল হতে সাহায্য করে। শেখাই জীবনের প্রতিকূল অবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে।
প্রাচীনকালে রাজার রাজ্য চালনার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হলে মৃগয়ায় যেতেন।এই মৃগয়ায শিকার অপেক্ষা ভ্রমণের গুরুত্ব বেশি থাকতো। এছাড়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর হিজরত ভ্রমণ ও জীবনে ছিল। মক্কা হিজরত করা একটি ভ্রমণ। শুধু তাই নয় ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ গুরুত্বপূর্ণ হজ অর্থ ভ্রমণ এবং ওমরাহ অর্থ ভ্রমণ। এখান থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছ প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে সুস্থ-সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম।
দার্জিলিং শীত প্রধান হয় সেখানে গেলে অবশ্যই সাথে করে শীতের কাপড় নিয়ে যেতে হবে। নিজেকে সেভ রাখার জন্য।
পরিশেষে আপনাদের কাছে অনুরোধ এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভ্রমণের জন্য এতোটুকু উপকার হয় তাহলে পোস্টটি শেয়ার করে আপনার অন্যান্য বন্ধুদেরকে জানাই দেন। আর আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ফেসবুকে এড হোন।
লিংকের মাধ্যমে আপনি অন্য কোন স্থান ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে লেখার অনুরোধ করতে পারেন ফেসবুক অথবা ইনস্টাগ্রাম এর মাধ্যমে।
ফেসবুক পেজ লিংক: https://www.facebook.com/mahafuznewtipsofficial/
বি:দ্র: আমরা যেখানেই ভ্রমণ করি না কেন আর যেখানে যাই না কেন এটি আমাদের পরিবেশ। তাই কোথাও ভ্রমন করার সময় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে একটি নিদিষ্ট স্থানে ফেলুন এবং পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখুন নিজে সুরক্ষিত থাকুন।
ভ্রমণ সম্পর্কিত নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন যেন সবার আগে আপনি কন্টেন্ট পেয়ে যান।
আর সর্বশেষে বলা যায় অবশ্যই আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করতে ভুলবেন না । নিশ্চয়ই শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিবেন আশা করি।
সকলে ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.