বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় জেলা বান্দরবান জেলা।

বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বান্চলে অবস্থিত চট্রগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অন্চল। এটি একটি পার্বত্য অন্চল। বান্দরবান জেলার মোট আয়তন ৪৪৭৯.০২ বর্গ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ন জেলা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ি এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৮৮,৩৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুশ ২,০৩,৩৫০ জন এবং মহিলা ১,৮৪,৯৮৫ জন।

মোট পরিবার ৮০,১০২টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৭ জন। ধর্ম  বিশ্বাস অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৪৯.৩৩% মুসলিম, ৩.৬২% হিন্দু, ৩৪.৮৮% বৌদ্ধ, এবং ১২.১৭% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। সাধারনত মুসলিম ও হিন্দুরা বাংলাভাষী। 

বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রুপকথা আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্যা বানর বাস করত। আর এই বানর গুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পহারে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত।

এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরদল ছড়া পার হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটি পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ।

কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চরণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমান সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান নামে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবান নাম রদ ক্যও চি ম্রো। 

বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলা,৭টি থানা,২টি পৌরসভা, ৩৩টি ইউনিয়ন, ৯৬টি মৌজা, ১৪৮২টি গ্রাম, ও ১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। 

এই জেলার অন্যতম নদী সাংঙ্গু নদী, যা সাংপো বা শংঙ্ঘ নামে পরিচিত। এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হল, এটি বাংলাদেশের একমাত্র নদী যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মাতামুহুরী নদী এবং বাঁকখালী নদী।

দর্শনীয় স্থান 

* শৈল প্রপাত

* মেঘলা

* নীলাচল 

* চিম্বুক পাহাড় 

* নীলগিরি 

* বগালেক 

* ক্রিওক্রাডং 

* নাফাখুম জলপ্রপাত 

* জদিপাই ঝর্ণা 

* স্বর্ণ মন্দির 

* নীল দিগন্ত পযর্টন কেন্দ্র 

* রিজুক ঝর্ণা 

* চিংড়ি ঝর্ণা 

* ডিম পাহাড় 

* মারাংতং

* দামতুয়া ঝর্ণা

অন্যান্য স্থান প্রান্তিক হৃদ, জীবননগন এবং কিয়াচলং হৃদ। 

বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ সাকা হাফাং (১০৫২ মিটার)। দেশের দ্বীতীয় বৃহতম পর্বত শৃঙ্গ কেওক্রাডং (৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল রাইখিয়াং এই জেলা অবস্থিত। 

কিভাবে যাবেন:

আকাশপথ

ঢাকা থেকে বান্দরবান এর সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই। প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে পুরবী বা পূর্বাণী বাস যোগে বান্দরবান যাওয়া যায়। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একাধিক ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা চট্রগ্রাম রুটে চলে। 

সড়কপথ 

বান্দরবান যাওয়া সবচেয়ে সহজ উপায় হল বাস। ঢাকা থেকে বান্দরবান বাসে যেতে সাধারনত ৬ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে। নিজেস্ব পরিবহন ব্যবস্থা অথবা গাড়ি ভাড়া করেও বান্দরবান যাওয়া সম্ভব। এছাড়াও রাঙ্গামটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। 

বহদ্দরহাট র্টামিনাল পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে ১ ঘন্টা পরপর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৯০ টাকা। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করে প্রতি ১ ঘন্টা পরপর এই পরিবহনের বাসগুলো চট্টগ্রাম-বান্দরবান-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করে। 

এখানকার সড়কপথের সংযোগগুলো হচ্ছে চিম্বুক-রুমা, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা, আজিজনগর-গজালিয়া-লামা, খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি, আলিকদম-বাইশারী-ঘুনধুম,- এবং টিম্বুক-টস্কবতী-বারো আউলিয়া। 

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা নেই। 

নৌপথ 

এখানে কোন আন্তঃজেলা নৌ যোগাযোগ নেই।

খাওয়া দাওয়া 

বান্দরবান শহরে বেশকিছু বাঙ্গালি এবং আদিবাসী খাবারের হোটেল আছে। 

রাত্রিযাপন

বান্দরবানে থাকার জন্যে বেশকিছু হোটেল, রিসোর্ট,ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশে হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবানে থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য :

* হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

* হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরে বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 

* হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা । 

* রিভার ভিউ: শহরের সাংগু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা । 

* পর্যটন হোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি দূরে মেঘালয় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

নাম: বাধন কুন্ডু । একজন আর্টিকেল রাইটার । ১০০% ইউনিক ও কপি মুক্ত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।