কেন এই জেল জুলূম?

আলেমরা কেন এতো নির্যাতিত? তাদের কি কোন ক্ষমতা নেই উপর থেকে কিছু একটা করার? যদি খাঁটি আলিম হয়ে থাকেন তাহলে এখনো জালিমরা কেন ধ্বংস হয় না?

এরকম কিছু মন্তব্য শুনা যায় কতিতো আবালদের মুখে৷ তাদের জবাবে কিছু কথা......৷

চতুর্দিকে আজ আলেমদের উপর নির্যাতন আর নিপিড়নের ষ্ট্রীম রোলার জারী হয়েছে। বয়ে চলেছে শকুনের আনাগোনা। সর্বত্র ধ্বনীত হচ্ছে আলেমদের অবজ্ঞা আর অবমাননার গুণ গুণ আওয়াজ।

বিবেকের কাছে একি প্রশ্ন! কেন আলেমরা এতো নির্যাতন আর নিপিড়নের শিকার? শকুনের কালো আঁখিদুটি কি কেবল তাদেরকে-ই দর্শন করে বসে!

নাকি, রব্বে কা'বার বাণী ظهر الفساد في البر و الحر بما كسبت ايد الناس. (সূরা. রুম ৪১আয়াত)। তাদের-ই শানে নাযিল হয়েছে।

লোক সমুখে নিরব-নিস্তব্ধ মনে দাঁড়ালে, কর্ণ কুহরে ফিস ফিস আওয়াজ এসে ঘন্টা ধ্বনি বাজায়।

শুনা যায় আলিম সমাজ কে নিয়ে দু'চারটি কথা। যে, তাদের এক ফোটা অশ্রু ব্যথা জাবার নয়। আর নয় তো তা শকুনের অস্তিত্ব দুলিস্বাধে বিফল হবার।

বরং তা নিয়ে আসতো আকাশসম গজবের ঢেউ। তৈরী হতো নূহের কিশতী। এলহাম হতো احمل فيها من كل زوجين اثنين و اهلك.(সূরা.হুদ ৪০আয়াত)। কিন্তু.......।

এবার প্রশ্ন দাঁড়ায় তাহলে এসব কিছুর পেছনে আসল রহস্যটা কী? কেন এতো সব জুলূম আর নির্যাতন?

নব-মন্ডলে কি তাদের কোনো কতৃত্য নেই? পারেন না কোনো দরখাস্ত মঞ্জুর করাতে!আমরা বলবো এসব হলো প্রভূ কতৃক একটি পরীক্ষা।

এবং সমকালীন বিশ্বে আসমানী আইন প্রণয়নের একটি বড্ড মাধ্যম।  এগুলোর পেছনে মহা সফলতা লুকাচুরি খেলছে।

হাদীসের কিতাবাদী উদঘাটন করলে দেখা যায়। হযরত আবু সাইদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন,রাসূলে আকরাম সা.বলেছেন,

মুমিনের যে কোনো ধরনের রোগব্যাধি, অস্থিরতা, দুঃখ-বেদনা ও কষ্ট হয়,এমনকি কাঁটাও যা তাকে বিদ্ধ করে, এসবের অসিলায় আল্লাহ তা'য়ালা তার গোনাহ মাফ করে দেন।(বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) বলেন; “আলিমদের রক্ত এতো বিষাক্ত, যে তার ঘ্রাণ শুঁকে সে অসুস্থ হয়। আর যে তা পাণ করে সে মৃত্যুর কোলে ডলে পড়ে।”

তাছাড়া জুলূম আর নির্যাতরনের শিকার হওয়া ব্যক্তির বংশীয় কিংবা চারিত্রিক ব্যাপার  নয়। কোননা, 

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইরশাদ; নবীগণ অত্যাচার এবং অনাচারে জর্জরিত হয়ে স্বীয় কওমকে উদ্দেশ্য করে বলে ছিলেন; وما لنا الانتوكل علي الله وقد هدانا سبللنا ولنصبرن علي ما آذيتمونا وعلي الله فليتوكل المتوكلون. এবার যদি নবী রাসূলগণ এরকম ভাবে  অত্যাচার আর নির্যাতনে নির্যাতিত হয়েছেন, তাহলে উলামায়ে কেরামগণ  তো হলেন তাদের ওয়ারিস বা নাইবে নবী।

হাদিসের ভাষায়العلماء ورثة الانبياء وان النبياء لم يؤرثوا دينارا و لا درهما.....(সূত্রঃ মিশকাত ১ম খন্ড পৃ. ৩৪)

এমনি ভাবে সাহাবায়ে কেরামগণও ইসলামের প্রচার প্রসারে সীমাহীন কষ্ট এবং বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। হয়েছেন জুলূম নির্যাতন আর নিপিড়নের শীকার।

অকাতরে নিজেদের জান-মাল, সন্তান-সন্ততী আল্লাহর রাস্তায়  বিলিয়ে দিয়েছেন। জালিমের জুলূম থেকে হযরত উসমান,আলী, মুয়াবিয়া, হাসান,হুসাইন(রা.) সহ অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম নিঃস্বকৃতীর ধারপ্রান্তে পর্যন্ত উপনীত হতে সক্ষম হন নি।

হযরত বিলালে হাবশী রাযি. কে যখন কাফের সম্প্রদায় উত্তপ্ত বালুর উপরে বিবস্ত্র অবস্থায় চিৎ করে শুইয়ে টানতো, তখন তার পবিত্র  জবানে কেবলاحد.احدএর জিকির উচ্চারিত হতো।  হযরত সুমাইয়া রা.কে মরুভূমীতে শয়ন করিয়ে তার উভয় পায়ে দুটি উট বাধিয়ে বিপরীতমুখী করে লেলিয়ে দেয়।

এবং এভাবেই তাকে শহীদ করা হয়।(সূত্রঃ সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া) এগুলো কেবল দু একটি উদাহরণ। এছাড়াও তাদের হাজার হাজার ঈমান দীপ্তি কাহীণি ইতিহাসের পাতায় আজও চীর স্মরণীয় হয়ে আছে।

তার পরবর্তী সময়ের দিকে একটু ভ্রুক্ষেপ করলে দেখা যায়, আমাদের ইমাম,ইমামে আবু হানীফা (নূ'মান ইবনে ছাবীত র.)এর অবস্তা। তাকে জেলের মধ্যে খলীফা মনসুর খাবারে বিষ মিশ্রণ করে হত্যা করেছে।

এসব ছেড়ে দিয়ে ভারত উপমহাদেশের কথা চিন্তা করা যাক। দেখা যাক ইতিহাসের পাতা খুলে।সৃতিপটে আবারও হাজির করা যাক হৃদয় মরমি কথাগুলো।

ভারত উপমহাদেশে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কালো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বৃটিশ বেনিয়ারা তাদের আদিপত্য বিস্তার লাভ করে।তখন তারা পাক ভারতের বুকে ২০০ বৎসর তাদের কতৃত্য কাঠিয়ে ছিল।

চেয়ে ছিল এ দেশকে তাদের পূর্ণ করায়ত্তে নিয়ে যেতে। কিন্ত দেশের প্রাণের স্পন্দন উলামায়ে কেরাম তাদের এ চক্রান্তের আড়াল হয়ে দাঁড়ালেন।

নেমে গেলেন মাঠে ময়দানে। এবার বৃটিশের কালো চক্ষুদ্বয় উলামায়ে কেরামকে বেষ্টন করে ফেলে।

জারি করে অত্যাচার আর অনাচারের ষ্ট্রীম রোলার। বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিগীরি প্রজ্জলিত করে তাদের শরীর থেকে কাপড়গুলো খুলে বিবস্ত্র অবস্থায়, এমনকি কোনো কোনো স্থানে গরু মহিষের কাঁচা চামড়ায় তাদেরকে ডুকিয়ে সেখানে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

দিল্লির চাদনি-চক থেকে শুরু করে খায়বার পর্যন্ত দ্বীর্ঘ ১৬ মাইল রাস্তার উভয় পার্শের ৮০হাজার বৃক্ষের মধ্যে এমন কোনো বৃক্ষ অবশিষ্ট ছিল না যার মধ্যে উলামায়ে কেরামের ফাঁসির কাষ্ট ঝুলে নি। (সূত্রঃ স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা)

হযরত মাও. মুহাম্মদ আলী জাওহার র. লন্ডন কতৃক প্রকাশিত “লন্ডন টাইমস" থেকে মুসলমানদের রক্তের উপর আঘাত এনে তাদেরকে তিরস্কার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তিনি দিল্লির “হামদর্দ ও কমরেড" পত্রিকায় অগ্নিঝরা ভাষায় একটি বিবৃতি মুলক জবাব প্রদান করেন।

যে,লন্ডনের সেই প্রতিবেদকটি প্রাণে বাঁচা দুষ্কর হয়ে গিয়ে ছিল।পক্ষান্তরে মৌলভী সাহেবের ভাগ্যাকাশ আঁধারে চেয়ে যায়।

ঝুটে যায় “হ্যান্ড ক্যাপ”, চলে যান কারাবরণে। অবশেষে ১৯১৭সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।(সূত্রঃ আকাবীরদের জীহাদী জীবন  পৃ. ১১৬)

হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহোরি (রহ.)  ১৯১৬ সালে একদিন পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের দরস দান করছিলেন।

হঠাৎ একদল শেতাঙ্গ পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দিল্লির একটি দৈনিক পত্রিকার ভাষ্যানুযায়ী, “একদা হযরত র.কে কারাবরণ অবস্থায় ঐ লাল কুত্তাগুলি বরফ-খন্ডের  উপর শুইয়ে তার রক্ত সঞ্চালন বন্দ করে দেয়।

কিন্তু তখনও তার পবিত্র জবানে উচ্চারিত হয়েছিল, বরফের স্তুপের উপর শুইয়ে শরীর ঠান্ডা করা যেতে পারে, পারে যেতে রক্ত সঞ্চালন বন্দ করা।

কিন্তু দেহ থেকে ঈমানের উত্তাপে  কোনো পরিবর্তন আনা  যেতে পারে না।” তা ছাড়া তিনি শারওয়ানে কুরআন শরীফের দরস দান কালে হিন্দুরা তার উপর বৃষ্টির ন্যায় পাথর নিক্ষেপ করে তার সমুহ শরীর রক্তাক্ত  করে দেয়।

(সূত্রঃ আকাবীরদের জীহাদী জীবন  পৃ. ১২০) কিন্তু এসব জুলুম আর নির্যাতন তাদের কোন উপকারে আসে নি।

এমনি ভাবে কলম সৈনিক হযরত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রহ.ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখনী শক্তি ধারা মোকাবিলা করলে দ্বীর্ঘ ৮ বৎসর তাকে জালিমের কয়েদ খানায় বন্দী থাকতে হয়।

হযরত শাহ আতাউল্লাহ বুখারী রহ.ও জালিম শাহীর কবলে পড়ে সুদ্বীর্ঘ ১১বৎসর কালো গৃহে আবদ্ধ ছিলেন।

তার দেহ থেকে প্রাণ বায়ু বের করে দিতে তিন তিন বার করে খাদ্যে বিষ মিশ্রণ করে দেয়া হয়। তিন বার ফাঁসিরও রায় হয়।

(সূত্রঃ আকাবীরদের জিহাদী জীবন) শায়খুল হিন্দ হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ. যখন রেশমি রোমাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপঠে সৌদি আরবে গমন করেন,

তখন বৃটিশ বেনিয়ারা তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে মাল্টায় প্রেরণ করে দেয়। প্রতিমধ্যে হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. সন্ধান পেয়ে গেলে তাদের পিছু ধাওয়া হলেন।

পুলিশ সৈন্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ❝বেটা!আমার উস্তাদকে নিয়ে কোথায় যাচ্চিস? হয়তোবা আমার উস্তাদকে ছেড়ে দেয়, নতুবা আমাকে সঙ্গে নিয়ে চল।❞ ইতিমধ্যে জাহাজ ছেড়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে হযরত মাদানী রহ. সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে পড়েন।অবশেষে বাদ্য হয়ে বৃটিশরা তাকে সঙ্গে নিয়ে যায়।

হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেন আমার উস্তাদকে বৃটিশরা প্রত্যেহ পৃথক একটি রুমে নিয়ে যেতো এবং হযরতের কোমরে রড গরম করে শেখ দিতো, যার দাগ হযরতের শরীরে আমরন থেকে যায়।

হযরত মাওলানা মুফতি কেফায়েত উল্লাহ রহ. পর পর দুই বার জেলে গিয়েছেন।

এছাড়াও আরো অনেক আলেম উলামারা জুলুমবাজির কবলে পড়ে অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

বুকের মধ্যে কান্না-বাষ্প চেপে ধরেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন সকল বাতিল পরাশক্তির মোকাবেলায়।অবশেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তাদের নিকট হার মানতে হয়েছে।

বিজয়-মুকুট স্বাধীন মাথায় পরিহিত হয়েছে। এবার যদি বর্তমান সমাজের প্রতি একটু ভ্রুক্ষেপ করা হয়,

তাহলে হাল-যামানার উলামায়ে কেরামের উপর বয়ে যাওয়া জুলূম, নির্যাতন আর নিপিড়নগুলোও দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ফুটে উঠবে ইসলামের জন্য তাদের সতঃস্ফ্রুত ভালোবাসা। সমাধান পেয়ে যাবে উত্তাপিত প্রশ্নের। ইনশাআল্লাহ!

এসব নির্যাতন আর নিপিড়নের ফলাফল  হিসেবে একদিন এমনও হবে যে, জালিমের জুলূম থেকে রেহাই পাবে এদেশের জনগণ।শকুনের কবল থেকে বেচে যাবে আমার প্রিয় বাংলা।

স্বাধীনতার সূর্য আবারও উদিত হবে এদেশের ভাগ্যাকাশে।

শান্তির হাওয়া বয়ে যাবে আকাশে, বাসাতে। নাস্তিক মুরতাদের অস্তিত্ব দুলিস্বাধ হয়ে যাবে।

আমার দেশের জনগণ মুক্ত হাওয়ায় নির্বীক চিত্তে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে ঘুরে বেড়াবে। হতে পারে এসব জুলূম আমাদেরকেও সয়ে যেতে হবে।

আমরা এভূবন ছেড়ে যেতে পারি।তবু মনে রাখতে হবে, ❝ইসলাম যিন্দা হতা হায়, হর কারবালা কে বা'দ।❞

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles