আমরা সবাই আল্লাহর গোলাম

এক  মনিব 'দুইজন  চাকর অর্থাৎ গোলাম ( এ যুগের দাস) নিয়োগ দিলেন চুক্তি ভিত্তিক  নির্দিষ্ট নীতিমালার সমন্বয়ে। নীতিমালা মানা না মানাতে রাখলেন সাজা ও পুরস্কারের বিধান।  এটা তার নিজস্ব আইন।  গোলামদ্বয় তার গোলামী শুরু করলো।

দ্বিতীয় জন প্রথম  তিন মাস কাজের পাশাপাশি তৈল মর্দনে সময় দিল বেশি।বিনিময়ে মাইনের পাশাপাশি বকশিস পেল প্রচুর।

প্রথম জন তার নির্ধারিত কাজ যথাযথ করে গেল তৈল মর্দন ছাড়াই কিন্তু ঐ সময়ে সে তার স্রষ্টার ইবাদাত ত্যাগ করেনি। 

পরের তিন মাস 

২য়জন কাজের পাশাপাশি কুমতলবে মনিবকে প্ররোচনা দিতে শুরু করলো এবং ১ম  গোলামকে তাড়িয়ে সে প্রথম স্থানে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকলো। 

প্রথম জন তার নির্ধারিত কাজ ঠিকঠাক করার পাশাপাশি তার স্রষ্টার ইবাদাতও যথাযথ করে যেতে থাকলো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতো দরজা বন্ধ করে আর তাতে দ্বিতীয় জনের ভিতর অন্য কিছুর সন্দেহ আসতে লাগলো।

পরের তিন মাস

দ্বিতীয়জন আরো লোভী ও হিংসুক হয়ে প্রথম জনকে সরিয়ে দিতে মনিবকে প্রথজনের বিরোদ্ধে  বিভিন্ন প্রকার কল্পকাহিনী বানিয়ে উস্কানী দিয়ে যেতে থাকলো

আর মনিব তাতে কুপোকাত হয়ে গেল এবং প্রথজনকে বিভিন্ন ভাবে পরিক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলো।

প্রথমজন তার নির্ধারিত কাজ যথাযথ করার পাশাপাশি তার স্রষ্টার ইবাদাত চালিয়ে যেতে থাকলো গভীর মনযোগে।

পরের তিনমাস

মনিব পরিক্ষার জন্য সময় বদল করে দুইজনের কাজ বদল করে দুই জনের অবস্থান বদল করে দিলো আর এই কারনে প্রথম জনের কাজের বেলায় কোন সমস্যা না হলেও ইবাদতের বেলায় দেখা দিলো বিভ্রাট।দ্বিতীয় গোলাম খুশী হয়ে মনিবকে তৈল মর্দনে স্বর্গে তুলে আর মর্ত্যে নামায়। 

মনিব কড়া হুকুম জারি করলো, 

 তলবের সাথে সাথে হাজি হওয়া চাই।

যথাযথ কাজ আদায় হওয়া চাই।

মনিবের তুষ্টিতে ঘাটতি হলে সাজা। 

তিনমাস সময় আরম্ভ হলো।

প্রথম গোলাম লাফাই লাফাই নেচে খুশীতে কাজ করার পাশাপাশি মনিবের অতিরিক্ত খাতির যত্ন শুরু করে দিলো। তলবের সাথে সাথেই হাজির।

এদিকে দ্বিতীয় গোলাম অনেক কষ্টে সময় ও কাজের সাথে তাল মিলিয়ে মনিব ও স্রষ্টার কাজ করে যেতে থাকলেও বিপত্তি ঘটতে থাকলো। মনিব এক এক করে তার উপর অসন্তুষ্ট হতে থাকলো।

একদিন সে দরজা বন্ধ করে নামাজে দন্ডায়মান। সহসা মনিব ডাকলেন কিন্তু তার সাড়া দিতে দেরি হলো বলে মনিব বেজায় ক্রুধ ঝাড়লেন এবং কারন জানতে চাইলেন কিন্তু সে কিছু বললো না। তিনি তাকে সাবধান করে দিলেন।

ওই দিন সে স্বপ্নে দেখলো, একজন লোক খুব সুন্দর একটা পথে তাকে ডাকছেন এবং তিনি তাকে বলছেন ' আসার সময় ঘর পরিস্কার করে মনিবকে সালাম দিয়ে আসার জন্য।

সে গভীর চিন্তায় পড়ে গেল।

বারোতম মাসে একরাতে এশার নামাজের সময় মনিব বাহির হতে  এসে ঘরে ঢুকবেন। যদিও এত তাড়াতাড়ি তার ফেরার কথা না। সবে গোলাম দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সেজদায়। মনিব ডাকলেন।

সাড়া নেই।

আবার ডাকলেন 

সাড়া নেই

আবার ডাকলেন

কিন্তু সাড়া নেই 

কিন্তু গোলাম ভিতরে দরজার পাশেই নামাজে দন্ডায়মান থাকায় তার দরজা খুলতে দেরী হলো। নামাজ শেষ করেই তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতেই মনিব গোলামকে রমান্ডে নিলেন।

গোলাম অতঃপর সব ঘটনা খুলে বললে মনিব আরো রাগান্বিত হয়ে তার কাজে ফাঁকি দিয়ে নামাজ পড়ার জন্যই তাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বলে গোলামের উপর সাজা আরোপ করলেন---

প্রতিদিনের থাকার খরচ

খাওয়ার খরচ

পানির খরচ 

যাবতীয় খরচ সহ হিসেব করে তার বেতন কাটা গেল উপরন্তু তার কাজে অবহেলার জন্য জরিমানা করা হলো। 

গোলাম চুপ হয়ে তার স্বপ্নের কথা মনে করে সে মনিবের উদ্দেশ্যে বললো -

হুজুর, এখন আমি আপনাকে বলছি শুনুন।

আপনি আমার মনিব আর আমি আপনার গোলাম।আপনার ডাকে যথাসময়ে দরজা না খুলার কারনে আপনি আমাকে সাজা দিচ্ছেন কিন্তু আপনার আমার মালিক স্রষ্টা আমাদের প্রতিদিন পাচবার ডাকেন।

প্রতিদিন মালিকের দেয়া  অক্সিজেন নিই

প্রতিদিন মালিকের দেয়া পানি, খাবার হতে শুরু করে যাবতীয় সব কিছু ভোগ করি। পাচবার ডাকে একবার সাড়া না দিলেও আমাদের অক্সিজেন বন্ধ হয়না,খাবার বন্ধ হয়না, পানি আকাশ হতে ঝরা বন্ধ হয়না আর আমি সেই মালিকের ডাকেই সাড়া দিয়ে নামাজে ছিলাম।

আমি এক্ষুনই বিদায় নিচ্ছি।মহান আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন। আমি আপনার চাকরি করি কিন্তু আমার মালিকের গোলামী করা আমার ইবাদাত,ফরজ। 

এই বলে সে বিদায় নিলো। মনিব তাতে অপমানিত হয়ে সে চলে যাওয়ার সময় যেমনি তাকে ধরে আঘাত করার জন্য হাত তুলেছে অমনি তার হাত কথা শুনলো না। মনিবের হাত চিন চিন করতে লাগলো।

বুকে ব্যথা অনুভব করতেই সে  ধপ করে বসে পড়লো। গোলাম চলে যাওয়ার পর মনিবের স্ত্রী তাকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিলো। সে ঘুমিয়ে গেলে স্বপ্নে দেখলো,  তার গোলাম তাকে বলছে------

আল্লাহ আপনার মনিব আর আপনি আল্লাহর গোলাম।আপনি আল্লাহর হতে প্রাপ্ত নিয়ামতের কর আদায় করুন। আপনার ডাকে সাড়া না দেয়ায় আমার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আল্লাহর ডাকে সাড়া না দেয়ায় আপনার কি অবস্থা হতে পারে।

মনিব সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গার পর অপর গোলামকে ডাকলেন,দেখলে সে অনেক মূল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়ে গেছে। তাকে ভয় পায়নি একটুও।তিনি ভাবতে লাগলেন স্বপ্নের কথা।

আর এভাবেই আমাদেরও ভাবা উচিত।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles