ধরেন বৃদ্ধ বয়স হয়ে গেছে আপনার আর আপনি এখন রোগাক্রান্ত হয়ে হসপিটালের icu বেডে শুয়ে আছেন।দিন যায়,সময় যায় icu তে পড়ে আছেন।
কিন্ত আপনার শরিরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। দিন যত যাচ্ছে শরির ততই খারাপ হচ্ছে। বৃদ্ধ বয়স তাই অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।
সারা শরিরে নানান রকম যন্ত্রে আটকে আছে।হৃদপিন্ড ঠিকমত পাম্প করছেনা। সারা দেহ অবাশ হয়ে যাচ্ছে।কথা বলার মত অবস্থা এখন আর আপনার নেই।
নড়তে পারছেন না কিন্ত অনুভব করতে পারছেন এই পৃথিবী আর আপনাকে চাইনা। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকেও অক্সিজেন নিতে কষ্ট হচ্ছে।সারা শরির প্যারালাইসিস হয়ে যাচ্ছে।
আপনি অনুভব করতে পারছেন কোনো একটা অদৃশ্য শক্তি আপনাকে চেপে ধরছে। বুঝতে আর বাকি নেই জীবনের অন্তিম সময় এসে গেছে। অদৃশ্য শক্তিটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
আপনি দেখতে পারছেন কেউ একজন ভয়ংকর রূপে আপনার সামনে এগিয়ে আসছে।
ভাবছেন কে এই লোক আগে তো দেখেননি,ভয়ংকর চেহেরা।লোকটার শরির থেকে আবার বিশ্রি রকম গন্ধ বের হচ্ছে।আজও এই লোকটাকে দেখেন নি।
ভাবছেন কেনো এই লোক আমার কাছে আসছে তার সাথে তো আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া ধার,লেন-দেন নেই।যত এগিয়ে আসছে বিশ্রি গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আপনার।
বিশ্রী গন্ধে icu রুমে থাকতে পারছেন না। যত এগোচ্ছে ততই কষ্ট হচ্ছে। হৃদপিন্ডের গতি অনেক বেড়ে যাচ্ছে।কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আগে থেকেই যেনো আপনাকে চেপে ধরে আছে।
চিৎকার করতে যাচ্ছেন কিন্ত পারছেন না। পৃথিবীতে এখন আপনার অন্তিম সময় চলে এসেছে বুঝতে পারছেন।ভয়ংকর লোকটার কথাটাও শুনেছেন কোনো এক ওয়াজ তাফসির মাহফিলে।
কোনো এক হুুজুর ভয়ংকর লোকটার বর্ণনা দিয়ে ছিলো। ভয়ংকর লোকটা এবার পাশে এসে দাড়িয়ে রইলো। এখন সমস্ত অতীত মনে পড়ছে আপনার।
মনে পড়ছে যুবক বয়সে সারাক্ষণ গান-বাজনা নিয়ে পড়ে থাকতেন।যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতেন।অনেক প্রকার নেশায় আসক্ত ছিলেন।মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন।আত্মীয়,প্রতিবেশির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন।
রাজনৈতিক শক্তি দেখিয়ে অন্যায় ভাবে মানুষের ক্ষতি করেছেন।
কেউ নামাজের জন্য ডাকলে বলতেন এখন তো যুবক বয়স উপভোগ করার সময়,এখন করবো নাতো কখন উপভোগ করবো। বলতেন বুড়ো হয় তখন সব কিছু থেকে তাওবা করে নামাজ পড়বো।
আজ আপনার শরিরের শক্তি কোনো কাজে আসছেনা।ভাবছেন আপনার কোনো আমল নেই।সব তো গুন্নাহে ভরা জীবন। হঠাৎ ভয়ংকর লোকটা আপনার বুকের পাশে দাড়িয়ে।
ভয়ে পড়ে এখন আল্লাহর কাছে তাওবা করতে যাচ্ছেন কিন্ত পারছেন না।মুখ দিয়ে আল্লাহ নাম টাও উচ্চারণ করতে পারছেন না। পৃথিবীতে থাকাকালীন বলতেন মরার আগে ঠিকই তাওবা করে নিবো।
আজ আপনি আপনার অতীত সব দেখতে পারছেন।নামাজ পড়েন নি,রোজা রাখতেন না,মানুষের সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদে আসক্ত থাকতেন।
আপনার আমলনামায় শুধু গুন্নাহের বোঝা। আজ তাওবা করার সময় নেই। আজ সামান্যটুকু সময় নেই আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করার জন্য।
ভয়ংকর লোকটা আজরাইল মৃত্যুর ফেরেস্তা এতোক্ষণে বুঝলেন।আজ পালানোর কোনো পথ নেই।পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই তার হাত থেকে পালাবার।
আজরাইল এর দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলেন এমন ভয়ানক আকৃতি কাউকে আগে কখনো দেখেননি। এগিয়ে আসছে আজরাইল আপনার দিকে শরিরের ভিতর থেকে কি যেনো একটা অদৃশ্য শক্তি বের করে আনতে চাইছে।
সারা শরিরে অসহ্য যন্ত্রণা যা পৃথিবীর সমস্ত কষ্টকে হার মানাবে।এদিকে বিশ্রি গন্ধে যেনো অক্সিজেনের ঘাটতি পড়ছে।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।সারা শরির থেকে কে যেনো চামড়া তুলে নিচ্ছে।
অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। চিৎকার করতে পারছেন না।হাত পা প্যারালাইসিস।হৃদপিন্ডের গতি কমে আসছে ।হঠাৎ চোখ দিয়ে সমস্ত অতীত দেখতে পারছেন।
একস সময় শেষ আপনার,শরির থেকে অদৃশ্য শক্তিশালী আত্মা বেরিয়ে গেলো। নিথর হয়ে পড়ে রইলো ICU রুমে আপনার শরিরটা।
আপনার পাশে আপনার আত্মীয়রা বসে কাঁদছেন।তাদের আপনি দেখতে পারছেন,চিৎকার করে তাদের ডাকছেন কিন্ত তারা শুনতে পারছেনা। শুনবেই বা কেমন করে কারণ আপনি তো এখন অন্য জগতের মানুষ না বরং আত্মা।
আপনার দেহটাকে আপনি নিস্তব্ধ হয়ে দেখছেন পড়ে আছে ICU এর বেডের উপর। আপনার আত্মীয় স্বজন আপনার দেহটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার কবরের দিকে কিন্ত যেতে চাইছেন না।
কারণ আপনার পরকাল জীবন শুরু হয়ে গেছে যার কোনো শেষ নেই। আজ অগ্নিকুণ্ড আপনার বাসস্থান বুঝতে আর বাকি নেই।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো নাহ আপনি তো বেঁচে আছেন। চোখ মেলিয়ে দেখছেন আপনার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে।বুকের হার্টবিট ধড়ফড় করছে।শরিরে চিমটি কাটলেন উফ লাগছে তো।
তবুও বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনি বেঁচে আছেন। চিৎকার দিয়ে উঠলেন বাড়ির সবাই দৌড়ে আপনার রুমে চলে আসলো।
কি হয়ছে জিঙ্গেস করছে সবাই কিন্ত আপনি নিশ্চুপ হয়ে কারণ এতোক্ষণ স্বপ্ন নাকি বাস্তবে ছিলেন উপলব্ধি করতে পারছেন না। আপনি মুখে এখন আল্লাহ শব্দটা নিতে পারছেন।
দুই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আল্লাহকে স্মরণ করছেন মনে মনে।দ্রুত অযু করে দুইরাকাত নামাজ পড়ে সিজদাহতে লুটিয়ে পড়লেন।
আজ আল্লাহর সামনে কেঁদে কেঁদে নিজের গুন্নাহের কথা স্বীকার করছেন। আজ নিজের ভুল গুলো নিজে তুলে ধরছেন। কতই না উত্তম সেই মুহূর্তটা যখন নিজের ভুল গুলোর জন্য অনুতপ্ত হচ্ছেন।
হে যুবক ভাইয়েরা পরকাল জীবনটা উপলব্ধি করেন।একটু ভাবুন মৃত্যুর জগৎটা নিয়ে। আপনি কি নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
আপনার চিরস্থায়ী বাসস্থান পৃথিবী নাকি আখিরাত।একটু ভাবুন পরকাল জীবন নিয়ে,ইসলামের প্রতিটা কথা নিয়ে।দেখবেন আপনার জীবনটা ইসলাম দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ইনশাআল্লাহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনায়-
‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হলো সে সব যুবক-যুবতি; যারা তার রবের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে।’ (বুখারি)
You must be logged in to post a comment.