এক ছিল চালাক কৃষক। সে একদিন হাটে পাট বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়ি আসতেছে।
একটা চোর তাকে ফলো করেছে। আগেকার দিনে তো পাটের ছিল অনেক দাম। তখন পাট ছিল অর্থকরি ফসল।
তো চোর যখন দেখেছে কৃষক পাট বিক্রয় করে অনেক টাকা পুঁটলিতে বেঁধে বাড়ি ফিরছে। চোরের সেই টাকার প্রতি লোভ হয়ে গেল। সে কি করল, কৃষকের পিছু নিল।
কৃষক আগে আগে যায়, চোর কৃষকের পিছু পিছু যায়। কৃষক যেদিকে যায় চোর অনেক দূর পিছে থেকে তা খেয়াল করে সেদিকেই যায়। কিন্তু, চোর যে পিছু নিয়েছে কৃষক তা বুঝতে পারে না। কিভাবে বুঝবে, হাট থেকে তো শত শত মানুষ একই রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।
কৃষক যখন বাড়ি পৌঁছল তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। আবছা অন্ধকারে চোরটি গিয়ে কৃষকের ঘরের পেছনে বসে রইল। জনমানবহীন নির্জন জায়গায় কৃষকের বাড়ি। তাই চোর বেটায় নির্ভয়ে বসে রইল ওৎ পেতে।
ওদিকে কৃষক ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি পৌঁছলে কৃষাণি এসে তাকে হাত মুখ ধোয়ার পানি দিল। কৃষক হাত মুখ ধুয়ে ক্ষুধার্ত পেটে ঘরে ঢুকে দেখে তার বউ ভাত বেড়ে রেডি করে রেখেছে। কৃষক স্বাচ্ছন্দে খেতে বসল।
কৃষক কৃষাণি দুজনেই খাবার খাচ্ছে। খাবারের ফাঁকে কৃষাণি কৃষককে জিজ্ঞাসা করল, কত টাকার পাট বেচলা?
কৃষক জবাব দিলো, পাঁচ হাজার ট্যাকা।
তৎকালীন পাঁচ হাজার টাকার অনেক দাম ছিল।
ওদিকে ঘরের পেছন থেকে চোর বেটায় কান খাঁড়া করে কৃষক কৃষাণীর কথা বার্তা শুনতেছে। পাঁচ হাজার টাকার কথা শুনে চোর তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে।
মনে মনে ভাবতেছে, এই পাঁচ হাজার টাকা চুরি করে নিতে পারলে ছয় মাস বসে খেতে পারবো। ওদিকে কৃষক কৃষাণি কি বলাবলি করে তা শোনার জন্য চোর বেটায় আবার নড়েচড়ে বসল।
এদিকে কৃষকের বউ কৃষককে বলেছে, টাকা গুলা কই?
কৃষক বলছে, আছে।
কৃষাণি বলে, কই আছে। কই রাখছ?
কৃষক বলে, রাখছি, ভালো জায়গায় রাখছি।
কৃষাণি বলে, ভালো কোন জায়গায় রাখছ? আমার কাছে কওন যাইবো না।
এতগুলান টাকা। সামলাইয়া রাহন লাগবো না। চারদিকে চোর চোট্টায় ভইরা গেছে।
কৃষক বলে, আরে বউ। সামলাইয়া রাখছি। অইডা নিয়া তোমার চিন্তা করতে অইবো না।
কৃষাণি বলে, ও আমার কাছে কওন যাইবো না, ট্যাকা কই রাখছো। আমি তো তোমার কিছুই না।
কৃষক দেখছে, তার স্ত্রী তো নাছোড় বান্দা। তাকে না বললেই নয়। তাই সে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, টাকা রাখছি কারের উপর। (কার মানে ঘরের সিলিং)।
বলা বাহুল্য, কৃষকের ঘরের কোন কারই ছিল না।
কৃষকের কথা শুনে ঘরের পিছে বসা
চোরের আর তর সইছে না। কখন রাত গভীর হয়, কখন কৃষক কৃষাণি ঘুমিয়ে পড়ে চোর বেটায় বসে বসে সেই ক্ষণ গুনছে।
অবশেষে যখন কৃষক কৃষাণি খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা শেষ করল তখন দুজনের চোখেই
ঘুম। তারা দুজনেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ পরে যখন কৃষকের ঘুমের মাঝে নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেল চোর বেটায় তখন আস্তে আস্তে তার ব্যাগের ভিতর থাকা সরঞ্জাম বের করে কৃষকের ঘরের বেড়ার নিচের মাটি কুপিয়ে সরাতে লাগল।
যখন রাত গভীর হল, কৃষক কৃষাণি গভীর ঘুমে অচেতন তখন চোর বেটায় বেড়ার নিচের সেই নালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করল।
চোর প্রথমে অন্ধকার ঘরের ভেতর বেড়ার সাথে লাগানো একটা খুঁটি আবিষ্কার করল। তারপর সেই খুঁটি বেয়ে সে উপরে উঠতে লাগল।
খুঁটির ওপর উঠে অন্ধকারে হাতড়ে যখনই সে সিলিং এর উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়েছে অমনি সে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেছে।
যেই মাটিতে পড়ে গেছে সেই সাথে ধপাস করে যে আওয়াজ হয়েছে সেই আওয়াজে কৃষক কৃষাণীর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
কৃষকের বালিশের নিচে থাকা ছোট্ট একটি টর্চ লাইট জেলে মেঝের উপর একটি লোক দেখে কৃষকের বুঝতে বাকি রইলো না ঘরে চোর ঢুকেছে। তৎখনাত কৃষক চোর টিকে ধরতে উদ্ধত হল। কিন্তু তার আগেই চোর বেটায় দড়জা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে দিল ভো দৌড়।
কৃষকও ছুটল তার পিছু পিছু। তার পিছে ছুটল কৃষাণি। ছুটতে ছুটতে কৃষকের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশে বাড়ির কিছু লোকজনও বের হয়ে আসলো।
চোর ছুটছে। তার পিছে কৃষক ছুটছে। তার পিছে কৃষাণি সহ প্রতিবেশী লোকজনও দৌড়াচ্ছে।
এভাবে দৌড়াচ্ছে চোর বেটার অন্ধকার রাতে পেছন ফিরে তাকানোর সময় নাই।
কিন্তু এই অন্ধকারে কোথায় কি আছে চোর বেটার তা জানা নাই। তবে এলাকাবাসীর কাছে সবই তো পরিচিত।
দৌড়াতে দৌড়াতে যখন চোর একটি স্রোতস্বিনী গভীর নদীর কিনারে গিয়ে পৌঁছেছে। তখন কৃষক পেছন থেকে ডেকে ডেকে বলছে, এই শুনছিস। আর সামনে এগোস না। সামনে বিশাল নদী। সামনে গেলে নদীতে পড়ে মরে যাবি।
আর সামনে থেকে চোর দৌড়াচ্ছে আর বলছে, উম্! তোমার কারেরই ঠিক নাই আবার নদী।
এই কথা বলে যেই সে আরেক পা সামনে ফেলছে অমনি সে ধপাস করে নদীতে পড়ে গেছে।
সেই যে নদীতে পড়েছিল, তারপর নদীর পানির স্রোতে কোথায় ভেসে গেছে কেউ তা বলতে পারে নি।
You must be logged in to post a comment.