জীবনে এমন এক সময় আসে, তখন মনে হয় আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। আমি পুরোপুরি ব্যার্থ। একসাথের বন্ধুবান্ধব অনেক ভালো পজিশনে চলে গেছে।
কিন্তু আমি আজও ভালো কিছু করতে পারলাম না। এমন চিন্তা একসময় আপনার আমার মনে আসতেই পারে এবং নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে পারে।
জীবনের ব্যার্থতা খুবই খারাপ জিনিস। জীবন টাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। জীবনে মনে হয় আর বুঝি আলোর দেখা পাবো না। জীবনে গোধূলির আঁধারের ঘনছায়া যেন ঘিরে আছে ঊষার দেখা নেই।
চারপাশের প্রতিবেশি গুলোও কেনো যেনো অচেনা এক অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে। জীবনের হতাশা তখন আরো বেড়ে যায়।
একটা সময় মনে হয় এই সমাজেই আর থাকবো না অনেক দূরে চলে যাবো। যেখানে কোন প্রতিবেশি ব্যার্থতার গ্লানি শোনাবে না। যেখানে থাকবে না, কোনো হতাশা।
এমন ব্যার্থতার গল্প হয়তো সবার জীবনেই কম বেশি রয়েছে।
ব্যার্থতা ছাড়া মানুষ নেই। আজকে যে সফল হয়েছে সেই লোকটাও একসময় ব্যার্থতার সাগরে ডুবে ছিলো।
আমি আজকে এমন কিছু লোকের উদাহরণ দিবো যারা ব্যার্থতাকে বৃদ্ধাআঙুলী দেখিয়ে সফলার দ্বার প্রান্তে পৌছেছে।
আমি খুব কাছ থেকে এক বড় ভাইকে দেখেছি যিনি হতাশাকে পিছনে ফেলে, ব্যার্থতাকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখিয়ে সফল হয়েছে।
আজকে আমি আপনাদের তার জীবনের সফল হওয়ার গল্প শোনাবো।
ভাইটির নাম ছিল আবির (ছন্দ নাম)। একটা সময় স্কুলের স্যারদের বুকনি খেতো পড়া না পাওয়ার জন্য।
শুধু কি স্কুলের স্যারদের বকুনি খেতো, স্কুল শেষে বাসায় এসে বাবা -মার বকুনি তো আছেই। আবির ভাই একটা সময় ঠিক করে এভাবে আর কতো! এবার টাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলো। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলো। এলাকায় সবাই তো অবাক এই ছেলের এতটা পরিবর্তন এসেছে।
একটা সময় পড়াশোনা না পারার জন্য কত না, মার বকুনি খেতো। আজ সেই ছেলেটি এত ভালো রেজাল্ট করেছে।
এত ভালো রেজাল্ট করার পরেও যেনো মুখে হাসি নেই আবিরের। সামনে এডমিশন ভার্সিটিতে চান্স না পেলে ভালো রেজাল্টের কোন মূল্যই থাকবে না।
এজন্য এডমিশন কোচিং করতে ঢাকায় যায় আবির। সবকিছু ভালোই চলছিল। হঠাৎ আবিরের চোখ পড়লো এক চাকরির পত্রিকার দিকে।
আবির কিছু চিন্তা না করেই আবেদন করে। কিছু দিন পরে পরিক্ষাও হয় চাকরির। আবির চাকরির পরিক্ষায় টিকে। বাড়িতে বাবা মাকে ফোন করে বললে বাবা মা আরো বেশি খুশি হয়।
তখন আবিরে এডমিশনের চিন্তা বাদ দিয়ে চাকরির পিছনে ছুটে।
চাকরির ভাইভাও অনেক ভালো দেয় আবির কিন্তু ফাইনালি আবিরের জয়েন লেটার আছে না।
আবির তখন আবার হতাশায় ডুবে যায়। এদিকে এডমিশন, চাকরি টাও হলো না। আবির ঠিক করলো এডমিশন টা ভালো করে দিবে চান্স তাকে পেতেই হবে।
কিন্তু ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিলো আবিরের ডেঙ্গু জ্বরে শরীর শেষ হয়ে যায়। সে ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়।
বাবা মা তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। সেই বছর আর এডমিশন দেওয়া হয়নি আবিরের।
একটা বছর পেছনে পড়ে যায় আবির অসুস্থতার জন্য।
আবির ঠিক করে পরের বছর আবার এডমিশন দিবে। আবিরের চেষ্টায় পরের বছর আবির একসাথে ৩ টা ভার্সিটিতে চান্স পায়।
নিজের পছন্দের ভার্সিটিতেই ভর্তি হয় আবির।
ভার্সিটিতে ভর্তির পর থেকেই শুরু হয় আবিরের বিসিএস প্রস্তুতি। কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করে আবির। Facebook, এন্ড্রয়িড ফোন, use করা বন্ধ করে দিয়ে শুধুই পড়াশোনা করতো আবির।
এমনি ভার্সিটি থেকে যখন বাড়িতে আসতো কেউ জানতোই না আবির এসেছে বাড়িতে। বাড়িতে এসেও সে শুধু বই নিয়ে থাকতো।
মাঝ খানে অর্নাস শেষে একটা ব্যাংকে অফিসার সাধারণ পদে চাকরি হয়ে যায় আবিরের। কিন্তু আবির বিসিএস এর কথা ভেবে জয়েন করে নি। হঠাৎ একদিন ৪০তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি দেয়। আবির আবেদন করে।
৪০তম বিসিএস ছিলো আবিরের ১ম বিসিএস। আবির ১ম বিসিএস ৪০তম তেই ক্যাডার পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়।
৪০ তম বিসিএস এ জয়েন ও করে আবির।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরে আবির আবার ফোন ব্যবহার করা শুরু করে। Facebook এ এখন ১/২ দিন পর পরেই পিক আপলোড দেয়।
চেষ্টা করুন সফলতা একটা সময় আসবেই ইনশাআল্লাহ।
রেল স্টেশনে টিকেট কাউন্টারে দাড়ানো শেষ ব্যাক্তিটাও একসময় কাউন্টারের সামনে এসে যায়।
You must be logged in to post a comment.