আমি সবুজ ।এখন কলেজ পাড়ি দিয়েছি । খুবই ভদ্র ঘরে জন্ম আমার । খুবই লাজুক প্রকৃতির ছেলে আমি। বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও অত বেশি ছিল না। জীবনে কোনদিন প্রেমও করিনি। প্রেম তো দূরের কথা কোন মেয়ের সাথে কথাও বলি নি।
কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। মনের ভেতর কেমন যেন করতে লাগলো প্রথম ভার্সিটি যাচ্ছি। নিজেকে কেমন বড় বড় মনে হচ্ছিল।
যেদিকেই তাকাই শুধু নতুন পরিবেশ নতুন মানুষ। ক্লাসে গেলাম যথারীতি ক্লাস চলল পরিচিত হলাম দুজনের সাথে। এভাবে চলতে থাকলো দিনকাল ।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে পরিবেশ কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। যেদিকে তাকাই ছেলে মেয়ে একসাথে গান করছে , গল্প করছে , ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
জানিনা আমারও কেমন যেন একা একা অনুভূতি হতে লাগলো। প্রথম দিনে একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল কিন্তু সাহস করে কিছু বলতে পারিনি।
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি ,কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা। দিন যাচ্ছে প্রথম সেমিস্টার শেষ এখন দ্বিতীয় সেমিস্টার এ উঠেছি ।
আমার অনুভূতি কেনো জানিনা আরো বেড়ে যাচ্ছিল । মনে হচ্ছিল এখন বলেই দিই ,যদি পড়ে হারিয়ে ফেলি । আমি দেখতেও খারাপ না, অপছন্দ হবার কথা নয় ।
তাই ঠিক করলাম বলেই দিব। সুন্দর একটা শার্ট এবং প্যান্ট পরলাম ।একটা ফুলও নিলাম। আজ মনের কথা বলেই দিব ঠিক করলাম। ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর পিছো নিলাম। দেখলাম একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ।
আমিও এসে দাঁড়ালাম। যখনই সে ভিতরে যাবে তখনই দেখি একদল বাচ্চা এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে অতঃপর বুঝতে পারলাম এটা একটা এতিমখানা ছিল। কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ,সে প্রায় সময়ই এখানে আসে ।
বাচ্চাদের আদর করে চকলেট দেয়, কিছুক্ষণ সময় কাটায় তারপর চলে যায়। আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন বেরিয়ে আসবে ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বেরিয়ে আসলো। আমি আর দেরি করিনি, সরাসরি হাঁটু গেড়ে ফুল দিয়ে প্রপোজ করলাম। ভেতরে ভয় হতে লাগলো। কিন্তু আমার সে ভয় কে দূর করে সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ।
বুঝলাম সেও আমাকে ভালবাসে। অতঃপর তার সাথে প্রতিদিন দেখা হতে লাগলো। একসাথে ভার্সিটি থেকে যাই, ঝাল মুড়ি খাই, পার্কে ঘুরি ।
এভাবেই চলছিল দিনকাল। ভালোই ছিলাম। কয়েক বছর কেটে গেল । হঠাৎ একদিন দেখি সে আর আসছে না। বুঝলাম না কি হয়েছে।
তার সবচেয়ে নিকট বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলাম, সে কেন ভার্সিটি আসে না । সে যা বলল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আগামীকাল তার বিয়ে। কি করবো বুঝতে পারছি না। ফোন করেও পাচ্ছিনা।
আমি এখনো বেকার, ভার্সিটিতে পড়তেছি, আমার সাথে কি আর মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হবে। কিন্তু অন্য আরেকটা ছেলের সাথে তাকে দেখব কিভাবে।
সে অন্য একটা ছেলের সাথে চলে যাবে, তা কী সহ্য করা যায়? ভাবলাম যাই হোক সরাসরি তার বাবাকে গিয়ে বলবো, যা হবে পরবর্তীতে দেখা যাবে। চলে গেলাম সরাসরি তার বাড়িতে ।
গায়ে হলুদ চলছে এমন সময় গিয়ে উঠি। চলে যাই তার বাবার কাছে। সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলি। আরে বিয়ে বন্ধ করতে বলি।
তার বাবা তো একরাশ হাসি হেসে ,আমাকে দুইটা চড় মেরে একটা ঘরে বন্দী করে রাখল যাতে বিয়েতে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করতে না পারি।
আমি ঘরের ভেতর পাগলের মত হয়ে গেছি। চিৎকার করছি, দরজা ধাক্কাচ্ছি। কিন্তু মূল ভবন থেকে দূরে হওয়ায় এবং গান-বাজনা হওয়ার কারণে আমার চিৎকার কেউ শুনতেই পাচ্ছিল না। এমন সময় কয়েকজন এসে আমাকে বেঁধে ঘরে আটকে রাখে ।
মুখে কাপড় দিয়ে দেয় যাতে চিৎকার না করতে পারি। সারারাত পড়ে থাকি ঘরের ভেতর ।বুঝতে পারছিলাম না কি করব। সকাল হয়ে গেছে বরপক্ষ এসে গেছে।
রীতিমতো খাওয়া-দাওয়া হলো, বিয়ে হলো, বরপক্ষ কনে নিয়ে চলে গেল ।আমি পড়ে রইলাম সেই বন্ধ করে । ভাবলাম সে কি আমাকে আদৌতে ভালোবাসতো ? সে কি বিয়েতে কোন প্রতিবাদ করেছিল ?
জানিনা কিছুই পড়ে রইলাম মরা লাশের মত। বর পক্ষ চলে যাবার তিনঘন্টা পর , আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। প্রচন্ড মেরেছিল ,ব্যথায় হাঁটতে পারছিলাম না।
যাওয়ার সময় হুমকিও দিয়ে দিল। খুবই হতাশার মধ্যে ছিলাম কয়েকদিন। ভাবলাম তার কি আমার জন্য মন কাঁদে নাকি সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে আমাকে ভুলেই গেছে। জীবনে প্রথম প্রেম ছিল ।
বেশিদিন টিকলো না। ঠিকানা নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম ।তার সাথে দেখা করেছিলাম। আশ্চর্য হলাম, সে এখন আমাকে আর চিনে না।
আমাকে বের করে দিল ।মনে রাগও হচ্ছিল দুঃখ হচ্ছিল । কয়েকদিন ডিপ্রেশনে থাকার পর আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না। বন্ধুরা বুঝালো একটা মেয়ের জন্য জীবন এভাবে ধ্বংস করার কোন মানেই হয় না।
আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হলো। পড়াশোনা শেষ । ভালো একটা চাকরিও হয়েছে। বাবা-মা ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দিল। মাঝেমধ্যই তার কথা মনে পড়তো ।
ভাবতাম সে কি আমার কথা ভাবে। তখনই মনে পড়ে তার সেই রূঢ় ব্যবহারের কথা। নিজেকে সংযত করতে লাগলাম আর তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম ।
এভাবে চলতে লাগলাম দুইজন দুটি আলাদা সংসার নিয়ে।
ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য । জীবনের প্রথম লেখা থাকে ভুল-ভ্রান্তি থাকেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে উৎসাহিত করবেন।
You must be logged in to post a comment.