এক) পূর্বের দিন আসরের নামাজ আদায় করে বের হয়েছি পড়াতে যাব বলে৷ কিন্ত হঠাৎ এক অচেনা নাম্বারে কল এসে ঢুকলো হাতের বাটন ফোনে ৷
কে দিল ফোন? রিসিভ করে বুঝতে পারলাম ওপাশ থেকে আমার সঙ্গে বড় ভাইয়্যা কথা বলছেন ৷ ক্রন্দরোলের ধ্বনি শুনা যাচ্ছিল ৷
ভাইয়্যা কোন কিছু বলার পূর্বেই ওপাশ থেকে মাইকের আওয়াজ আসলো৷ ঘোষণা পড়ল; “ইন্না-লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলে৷ চমকে উঠলাম আমি৷ কে মারা গিয়েছেন? অশ্রু শিক্ত নয়নে, ভাঙা গলায় জবাব আসলো চাচি আর নেই৷ আহ!
সেই দিনটির কথা আজও মনে পড়ে৷ যখনই স্মরণ হয় তখনই আমি অজোরে কাঁদি৷ একা একাই কাঁদি৷ এখন কে আর বলবো?
বাবা, যখন আমি মারা যাব তখন আমার কবর পাশে দাড়িয়ে একটু তেলাওয়াত করবে৷ আল্লাহ তোমাকে একজন বড় আলিম হিসাবে কবুল করুক৷
যাই হোক, ফোন কেটে চলে গেলাম বাড়ি৷ পরদিন সকাল দশ ঘটিকায় শাহী ঈদগাহ মাঠে হাজির করা হলো লাশ৷ জানা আদায় করে সমাধিস্থ করা হলো মোকাম বাড়ির মাঠে ৷
দুই)
চাচি আর নেই। তিনি নাকি রব্বে কা'বার ডাকে সাড়া দিয়ে এ নশ্বর পৃথিবীকে লাথি মেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।
বাড়িতে আর আমাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অবকাশ নেই। ভাগ্যাকাশ নাকি আষাঢ়ের কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।
চলে আসবেন এক বোন, শুরু হবে গুনগুন। নেই কোনো শেষ, এটাই অবশেষ। দীর্ঘকাল পেরিয়ে এই পখর গুনছিলাম,
ভেবেছিলাম এমনটাই। লাশ কাঁদে, বুকে কান্না-বাষ্প চেপে ধরে মন্থর গতিতে আগ বাড়ছিলাম। সৃতিগুলি ছন্দের তালে চোখের সামনে এসে ভিড় জমিয়েছে সারি সারি।
জানাযা পরোক্ষনেই লাশ কবরস্থানে সমাধিস্থ করে ফিরে এলাম বাড়ী। কান্নার বিরহে বয়ে গেছে পথ-ঘাট, ঘর-বাড়ী।
শোকাহত হাওয়ায় সকলের মনোরাজ্য ভরে টইটম্বুর। সবাই আজ বিভেদহীন, ভাই-ভাই। হরেক প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সকলেই আজ একাকার।
শোকের আঘাতে জখমি হয়ে কারো মুখ থেকে কোন লফয উচ্চারিত হচ্ছে না।বোধহয়, কে যেনো মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে৷ শরিরে একটু ক্লান্তি বোধ করলে বালিশে মাথা রেখে দেই।
সুযোগ বুঝে ঘুমের হাতছানি নাড়া দেয়। ফাঁকি দিয়ে আমায় নিয়ে চলে দুর-বহুদূর।
তিন)
ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা, দিনের রবি নিবু নিবু অবস্থায় উপনীত। কবে যেনো তিনিও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ফেলবেন।
এহেন এক মূহুর্তে মায়াবী কন্ঠে এক মধুর ডাকের গুঞ্জন কর্ণ কুহরে করাঘাত করে। চলে যায় ঘুম, আর খুলে গেলো আঁখি।
এতো মধুর ডাকটি কার কণ্ঠনালি থেকে বের হলো? প্রিয় পাঠক, এর সমাধানের জন্য একটু উয়েট করুন। ধর্য ধারণ করে আগবাড়তে দিন।
পেয়ে যাবেন তার উত্তর। আচ্ছা! না হয় বলেই ফেলি। হয়তোবা, বিলম্বিত হলে আবার অনেকেই রাগ করে বসতে পারেন। তিনি আর কে হতে পারেন? এইতো মা-জননী ছাড়া অন্য কেহ নয়।
সালাতুল মাগরিব আাদায়ের জন্য ছুটে চলি মাসজিদ পানে। দেখা হলো বন্ধু মাসুদের সাথে। নামাজ পরে কিছু হালপুর্সির পর কুশল বিনিময় করে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেহমান হলাম “ছাত্র হুজাইফা আহমদ ওয়াফির” গৃহে। তিনি নাকি আমায় পেয়ে যারপরনাই খুশ। ফুফাতো ভাইের সঙ্গে খেলা-ধুলায় মত্ত।
যখনই আমাকে দেখেন, অমনি ছুটে আসেন আমার দিকে। মেতে উঠেন গল্প-গুজবে। সেই সঙ্গে কিছু ইলমী আলোচনাও হয়ে গেলো।
ইতি পূর্বে তার সঙ্গে দেখা হলে বাড়িতে যাবার জন্য অনেক পিড়াপিড়ি করেন তিনি। তার সঙ্গে কৃত ওয়াদা রক্ষার্তে আজকের এই আগমন।
মুয়াজ্জিন সাহেবের “হাইয়্যা আ'লাস সালাহ”র ধ্বনীতে চলে যাই ইশার নামাজে। আবারও বন্ধু মাসুদের সঙ্গে দেখা। এবার তিনি নাছোড় বান্দা।
যেতেই হবে তার গৃহে। অবশেষে আমি বাদ্য। মেহমান খানায় জমে উঠলো চার সদস্যের এক আড্ডার ভিড়। বন্ধু মাসুদ, আমি ও অন্য দু'জন। মাঝে মধ্যে বাহির থেকেও কিছু আওয়াজ আসছিলো।
সব মিলিয়ে খুব উল্লাসেতেই সময় কাটছিল। যেমন নাকি, ইতিপূর্বে কখনো আমার উপর কোন মসিবত আসে নি।
যাই হোক, অবশেষে ফিরলাম বাড়ি। এদিকে মা জননি অপেক্ষার প্রহর গুনছেন৷ কবে আসবে আমার সুনার পুতুল? রাত হয়ে গেল ১১:১০ মিনিট, তবু তার কোন খুজ নেই ৷
এদিক ওদিক ছুটাছিটি করছেন৷ হঠাৎ আমার আগমন৷ অভিমানের চোখে থাকালেন আমার দিকে, মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন; প্রাণ প্রিয় বাবা আমার, কুথায় চিলি তুমি?
তোমার অপেক্ষায় চোখে তন্দ্রা আসে না মোর৷ কবে জানি এক লুকমা খাবার গ্রহণ করচিলে আর তো তোমার কোন খোজ-ই নাই৷ আচ্ছা!
আসো, খেয়ে নাও কিছু৷ আলতো করে আমি জবাব দিলাম; না, মা৷ আমার খাবারের প্রতি মোটেই ইচ্ছে নেই৷ বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম, এই সেই অনেক কিছু খেয়ে ফেলেছি।
এবার আর রুচি নেই৷ কিন্ত মাকে কি আর কোন কিছু দিয়ে বুঝ দেওয়া যায়? অবশেষে খেতেই হলো আমাকে৷ রান্না ঘরে খাবারের টেবিলে বসে মা ছেলে দুজনই খানা খেলাম ৷
বিছানাটি আগ থেকেই রেডি করে রাখা৷ খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেলাম বিছানায়৷ এভাবেই কেটে যায় পুরো দিন ৷.
You must be logged in to post a comment.