শুরু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ইবাদতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসকে ঘিরে আমাদের অনেক অনেক পরিকল্পনা থাকে।
আমার প্রিয় শিক্ষিকা খাদিজা বলতেন, চোখ বন্ধ করো, মাথা ওপরে তুলো, কল্পনা করো যে অনেকগুলো ফানুস উড়ে যাচ্ছে মাথার খুব কাছ দিয়ে।
চাইলেই সেগুলো ধরতে পারো, আবার ইচ্ছা করলে অল্প কিছু। মনে না ধরলে একটাও না। এবার চোখ খুলো।
শুনো এইযে ফানুসগুলো, এগুলো মনে করো একেকটা সুযোগ। মানে ইবাদতের সুযোগ। আর এই সুযোগগুলো বেশি বেশি পাবে রমজান মাসে।
এখন চাইলে সব সুযোগ নিতে পারো, চাইলে কিছু নিতে পারো আর চাইলে একটাও না। সিয়াম সাধনার মাস আসলেই যেন আমি এমন শত শত ফানুস দেখি। আর দেখি সেগুলো কিভাবে উড়ে চলে যাচ্ছে, অথচ ধরতে পারি না।
প্রত্যেকটা মুসলিমের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। পবিত্র মাহে রমজানের এই সময়কে বলা হয়, প্রত্যেক মুমিন নর নারীদের জন্য আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের এক অনন্য সময়।
মাহে রমজান মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য এক অনন্য চির বিপ্লবের সেরা মাস। দীর্ঘ ১১টি মাস অতিক্রম করে প্রতি বছর এ পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর কাছে হাজির হয় অজস্র অফুরন্ত রহমত ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে।
মুসলিম মিল্লাতের জন্য রহমতস্বরূপ এ মাসটি আত্মগঠন, নৈতিক উন্নতি, চারিত্রিক দৃঢ়তা, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সমাজ গঠন এবং সামাজিক সাম্যের নিশ্চয়তা বিধানের এক অনন্য সুযোগ।
রমজান মাস সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের মাস।
বছরজুড়ে, পবিত্র মাহে রমজান মাসের এই ৩০ দিন প্রত্যেকটা মুসলিমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। কারণ এই মাসে রয়েছে, পবিত্র লাইলাতুল কদর এবং এই কদরের রাতেই পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে।
তাই রমজান মাসকে বলা হয়েছে, সর্বশ্রেষ্ঠ একটি মাস আর পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত, সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত।
কোরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, লাইলাতুল কদরের রাত হলো হাজার হাজার রাতের চেয়ে উত্তম একটি রাত। এই রাতে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ গমন করেন।
মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই রাতেই, প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়, যা প্রিয় নবীজি মহান আল্লাহর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, এই পবিত্র মাসের একটি ফরজ ইবাদত, অন্যান্য মাসের তুলনায় ৭০ টি ফরজ ইবাদতের সমান। এই মাসে শেষের ১০ দিন পবিত্র লাইলাতুল কদর তালাশ এর জন্য, ইতেকাফ করা হয়।
রমজান মাস পালনে, প্রতিটা মমিন বান্দার হৃদয়ে অনন্য এক অনুভূতির জাগ্রত হয়। একে অপরের জন্য ত্যাগ, স্যাক্রিফাইস ইত্যাদির শিক্ষা দেয় পবিত্র এই মাহে রমজান।
সেহরি গ্রহণ করে একজন মুসলিম ব্যক্তি, সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থাকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়।
রমজান মাস শুধু ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে না। এতে বৈজ্ঞানিক এবং মানুষের সুস্বাস্থ্যের বিষয়বস্তু জড়িত।
এমনকি, অনেক ডাক্তাররা ও পবিত্র রমজান মাসের এই উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন।
শুধু মুসলিম জাতি নয়, বিভিন্ন ধর্মলম্বীদের কাছে রমজান মাস গুরুত্ব পেয়েছে। মহান আল্লাহ এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন। রমজান মাস আমাদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গুরুত্ব বহন করে।
তাহলে, চলুন আমরা সবাই এই রমজান মাসটিকে অতি পবিত্র তার সাথে পালন করার চেষ্টা করি। সকল প্রকার পাপ কর্ম মিথ্যা, গীবত, প্রতারণা ইত্যাদি হতে বিরত থাকি।
You must be logged in to post a comment.