টাকার অপচয় করলে যা হয়?

রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতু।সাজুর জন্য অপেক্ষা করছে। একসাথে দুজন মিলে ঘোরাঘুরি করবে।তাদের সম্পর্ক অনেক দিনের।দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে।

প্রায় প্রায়ই দামি রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে সময় কাটায় তারা।দুজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।সাজু রাস্তার মোড়ে আসার সাথে সাথে মিতু বললো,আজ কোথায় যাওয়া যায় বলোতো?সাজু বলল,তুমিই বলো।

মিতু বললো, চলো প্লাজা থেকে ঘুরে আসি।সাজু বলল,প্রায় প্রায় ই তো আমরা প্লাজা আর শপিং মল এ ঘুরে বেড়াই। চলো না আজ আমরা পার্কে গিয়ে একটু বসি।দুইজন মিলে একটা সুন্দর সময় কাটাই,গল্প করি।

শপিং মল আর দোকানে এত ভিড় যে তোমাকে যে একটু ভালোবাসার নজরে দেখব তার ও উপায় থাকেনা।চারিদিকে মানুষজন আর ভেপসা গরম।তখন মিতু একটু অভিমানের স্বরে বলে উঠলো, ও আমাকে শপিং করে দিবেনা বলে এতো ঢং করছো তাইনা?আমি ওইসব ছলচাতুরি বুঝিনা মনে করেছো?

আসলে সত্যি বলতে আজ অনলাইনে অনেক সুন্দর কালেকশন দেখেছি।তাই যেতে চাচ্ছি।আর জানো পাশের বাসার মেয়েটা অলরেডী সেটা কিনেও ফেলেছে।আর আমি এখনও দেখতেই পারলাম না।

মিতুর এই বিষয়গুলো সাজুর খারাপ লাগে।কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা সে।কারণ সে মিতুকে কষ্ট দিতে চায়না।মিতুকে সে অনেক ভালোবাসে।তাই মিতুর কথামতো দুজন রিক্সা নিয়ে শপিং মলের দিকে রওনা হলো।

শপিং মলে ঢুকে মিতু একের পর এক জিনিষ দেখতে লাগলো।সে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে সাজুর দিকে তার কোনো নজরই নেই।

বেশ কয়েক সেট কাপড় আর কসমেটিক পছন্দ হলো মিতুর।নিজের টাকা গুলো শেষ করার পাশাপাশি সাজুকেও বেশ কয়েক হাজার টাকা খোয়াতে হলো।মিতু তো মহাখুশি।

সাজু মিতুর কেনা কাপড় কার কসমেটিকস্ দেখে বলল,মিতু ,তুমি তো কিছুদিন আগেই কাপড় আর কসমেটিক কিনেছো।তাহলে আজ আবার কিনলে যে?

মিতু তখন বলল,আরে ওগুলো তো পুরাতন হয়ে গেছে,আর চলেনা।আর বেশ কিছু টাকাও আমি জমিয়েছিলাম।কি করবো এত টাকা দিয়ে?তখন সাজু বলল,দেখো মিতু এভাবে টাকার অপচয় করা ঠিক না।সাজুর কথাটা মিতু হেসেই উড়িয়ে দিল।

আজ মিতুর জন্মদিন।তাই মিতু ঠিক করেছে বড় রেস্টুরেন্ট এ খেতে যাবে।এদিকে সাজু মিতুর জন্য কেক আর গিফট কিনেছে।মিতু সাজুর উপহারে খুবই খুশি হয় এবং সাজুকে বলে, চলনা আমার বার্থডে টা আজ বড় একটা রেস্টুরেন্ট এ সেলেব্রেট করি।

শুনেছি ওখানে নাকি দারুন কফি বানায়। চলোনা আজ ট্রাই করি প্লিজ।সাজু বলল,আচ্ছা চলো।মিতু কফি অর্ডার করলো।সাজু দেখলো এক কাপ কফির দাম ৪০০ টাকা।

এটা দেখে সাজু বলল,আচ্ছা মিতু আমরা তো বাহিরের সাধারণ দোকান থেকেও কফি খেতে পারতাম।একটা কফির জন্য এতো টাকা খরচ করাটা কি ঠিক বলো?

ঠিক তখনই মিতুর ফোন বেজে উঠলো।ফোনের ওপাশের কথা শুনে মিতু খুব ঘাবড়ে গেলো আর কাদতে শুরু করলো।সাজু তখন বলল,কি হয়েছে তুমি কাদঁছো কেনো?

মিতু কান্নার স্বরে বলতে লাগলো,মা এক্সিডেন্ট করেছে।খুব গুরুতর অবস্থা।অপারেশন করতে এক লাখ টাকা লাগবে।কিন্তু আমার কাছে তো কোনো টাকাই নেই ।

আমি সব কেনাকাটায় খরচ করে ফেলেছি।তখন সাজু বলল,দেখেছো মিতু।তুমি বলেছিলে তোমার টাকার কোন দরকার নেই। তাই তুমি দু হাতে টাকা খরচ করেছো। এখন তোমার মায়ের বিপদে তুমি কোন সাহায্য করতে পারছ না।

মানুষের জীবনে কখন বিপদ আপদ আসে তা তো আর বলা যায় না। তাই আমাদের সব সময় মিতব্যয়ী হওয়া উচিত এবং টাকার অপচয় থেকে দূরে থাকা উচিত।

যাতে আমরা আমাদের বিপদের সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। আর আমরা তো মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ।আমাদেরকে তো আরো বেশি মিতব্যয়ী হওয়া উচিত।

আর আরেকটা কথা মনে রেখো অন্যের সাথে দ্রব্যাদির প্রতিযোগিতা না করে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা উচিত।তাহলেই আমরা জীবনে এগিয়ে যাবো।

যাই হোক তুমি এখন কান্না করো না,আমার কাছে বেশ কিছু টাকা আছে। জমিয়ে রেখেছিলাম। সেটা দিয়ে আমি তোমার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারব।

তুমি দুশ্চিন্তা করোনা।সাজুর কথা শুনে মিতু তার ভুল বুঝতে পারে এবং সাজুর কাছে ক্ষমা চায়।সেইসাথে তাকে ধন্যবাদ ও জানায়।এর পর থেকে মিতু আর কখনই টাকার অপচয় করেনি।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

মানুষ তার মনের ভাব ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে।তেমনি লেখালেখির ভাষা হলো মানুষের মনো বিদ্রোহ এবং ভালোবাসা এবং আবেগের সংমিশ্রণ।আমি হাসনা হেনা জেরিন।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা,রীতিনীতি এবং আমার শখকে লেখালেখির মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই মানব সমাজের মাঝে।ধন্যবাদ সবাইকে।