জীবনের গল্প

একটি ছেলে নাম তার রাফি।সে গ্রামে বাস করত। তাদের ছিল অনেক বড় ফ্যামিলি।সে পড়াশোনা করত গ্রামের একটি বিদ্যালয়। সে পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি কাজও করতো।

সে ছিল অত্যন্ত নর্ম ভদ্র এবং বুদ্ধিমান একটি ছেলে। সে কৃষি কাজ করে নিজের পড়ালেখা খরচ চালাত এবং ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করতো।

গ্রামের লেখাপড়া শেষ হলে সে শহরে আসলো লেখাপড়ার জন্য। সে যেহেতু গ্রামের ছেলে সে প্রথমে ঢাকায় এসে কি করবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারতো না।শুরু হলো তার জীবন যুদ্ধ।

সে যেহেতু গ্রামের ছেলে তার ফ্যামিলির সামর্থ্য ছিল না তাকে শহরে পড়ানোর। তার লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল।

সে এইচ এস সি করার জন্য ঢাকার একটি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে পরীক্ষা দিল কিন্তু সে চান্স পেল না। তার অনেক ইচ্ছা ছিল ঢাকার শহরে পড়াশোনা করার জন্য।

সে হতাশ হয়ে পড়ল কিন্তু নিজের মনোবল হারালো না। সে তখন ভাবতে লাগলো আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়বো।

আবার ভাবতে লাগলো আমি এত টাকা কোথায় পাব। তখন সে ভাবতে লাগলো আমি কি আর পড়াশোনা করতে পারব না। তখন সে ভাবলো আমাকে কিছু একটা করতে হবে।

তখন সে কয়েকজন বাচ্চাকে পড়ানো শুরু করল। এবং  তখন সে কাজের সন্ধান করতে লাগলো। তখন সে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি  বার্গারের দোকানে কাজের সন্ধান পেল।

সে মন স্থির করল আমি এই কাজ করব। তখন সে সেখানে কাজ শুরু করল। মাস শেষে কাজের টাকা দিয়ে এবং ফ্যামিলি র কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে সে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল।

সে এভাবে শুরু করল তার লেখাপড়া ।তারপর সে লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজও করতো। সেটার কাজের টাকা দিয়ে লেখাপড়া চালাতে লাগলো। 

এমন ও দিন যেত তাকে না খেয়ে দিন কাটাতে হতো ।অনেক কষ্টে তার দিন যেত । সে অনেক  রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করত তার ঘুম ও ঠিকমতো হতো না।

ঠিকমতো ঘুম ও খাওয়া দাওয়া না করার জন্য তার শরীর অনেক খারাপ হয়ে গেল। এভাবে পার হতে লাগলো তার লেখাপড়া।

এভাবে সে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করল। সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেল। এবার সে বিবিএ করার জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল ।

সে বিবিএ পড়ার খরচ যোগার করার জন্য অন্য একটি চাকরি খোঁজার চেষ্টা করল। তারপর সে অনেক চেষ্টার পর একটি কোম্পানিতে চাকরি পেল।

সে বিবিএ তে ভর্তি হল। চাকরির যে টাকা পেত তার লেখাপড়া পেছনে খরচ হয়ে যেত। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে লাগলো। এভাবেই তার দিন অতিবাহিত হতে লাগলো।

এমনও দিন যেত তাকে পানি খেয়ে দিন কাটাতে হতো ।তার এত কষ্টের কথা তার ফ্যামিলি র কাউকে বলত না। তার মা বাবা শুনলে অনেক কষ্ট পাবে এই কথা ভেবে।

সে অনেক সময় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেক কান্নাকাটি করতো। কিন্তু তাও সে হাল ছাড়েনি। সে চেষ্টা করতে লাগল লেখাপড়া করার জন্য ।

সে লেখাপড়ার পিছনে সারাদিনে সময় দিতে পারত না। দিনশেষে কাজ করে এসে সে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়তো।

তার কাজ যেহেতু ছিল মার্কেটিং তাই তাকে পায়ে হেঁটে অনেক জায়গায় কাজ করতে যেতে হতো। এজন্য তার অনেক কষ্ট হয়ে যেত। সে কাজ করে এসে ঘুমাই পড়তো ।

এবং শেষ রাতে উঠে পড়াশোনা করতে লাগলো এভাবে তার দিন চলতে লাগলো । এভাবে সে ভালো রেজাল্ট করে বিবিএ কমপ্লিট করল সে বিবিএ তে ফার্স্ট ক্লাস পেল সে অনেক খুশি হল তার মা-বাবাকে বলল আমি ভালো রেজাল্ট করছি তার বাবা-মা অনেক খুশি হলো।

সে এবার চেষ্টা করল অন্য একটি ভালো চাকরির জন্য ।সে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরির জন্য এপ্লাই করতে লাগলো। সে  ব্যাংকে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিল এবং সে অবশেষে সিটি ব্যাংকে মার্কেটিং প্লেস  চাকরি  পেয়ে গেল।

সে অনেক খুশি হলো। তারপর সে এমবিএ করার জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলো । স প্রতিমাসে তার মা-বাবাকে টাকা পাঠাতো এবং বাকি টাকা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত।

সে চাকরির পাশাপাশি এমবিএ শেষ করল। তারপর সে আরো ভালো পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো ।

তার এত কষ্ট এবং চেষ্টা ব্যর্থ হলো না সে এমবিএ রেজাল্ট দিয়ে অন্য ব্যাংকে চাকরির জন্য এপ্লাই করতে লাগলো। এভাবে সে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে লাগলো।

তার অনেক চেষ্টার পর সে পূবালী ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি পেল তার মা-বাবা ফ্যামিলির সবাই শুনে অনেক খুশি হল ।তার কষ্টের দিন শেষ হলো।

এখন সে জীবনে সফলতা অর্জন করেছে। তার মা-বাবার কষ্টের দিন শেষ হয়েছে ।জীবনে কষ্ট করলে কখনো ব্যর্থ হয় না ।তার ধৈর্য এবং কষ্টের ফল অবশেষে সে পেয়েছে।

এখন রাফি একজন ব্যাংকের অফিসার । কিন্তু রাফি তার কষ্টের দিনের কথা ভুলে যায়নি এখন সে অনেক স্টুডেন্টকে সাহায্য করে লেখাপড়া জন্য।

      পরিশ্রমই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।

তারপর রাফি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে গেল। সেখানে গিয়ে সে মা-বাবা ভাই বোন সবার সাথে অনেক আনন্দে ঈদ উদযাপন করল। ঈদের পরের দিন রাফি তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেল। বন্ধুদের সাথে সে অনেক আনন্দ ও মজা করলো।

বন্ধুর বাসা থেকে বাড়িতে আসার সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে ছিল। এমন সময় সে দেখল একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে।

খেয়াল করল মেয়েটি কেমন যেন অস্থিরতা বোধ করছে ।মেয়েটি খেয়াল করল ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।মেয়েটির দেখে রাফি অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল।

রাফি মেয়েটিকে অনেক পছন্দ হলো। সে ভাবতে লাগলো আমি মেয়েটির সাথে কথা বলবো। কিন্তু সে সাহস  পাচ্ছিল না।

সে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে এবং মেয়েটি তার দিকে তাকাচ্ছে। এক সময় রাফি মনে সাহস আনল সে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল।

বলল আপু আপনি কি কোন প্রবলেম এ পড়ছেন ।আমি কি আপনাকে কোন ভাবে সাহায্য করতে পারি ।আপনাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। মেয়েটি বলল তাই। আসলে আমি খুব সমস্যার পরছি আমি আমার বাসায় যাব কিন্তু গাড়ি পাচ্ছিনা।

রাকি বলল আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি। তখন মেয়েটি বলল হ্যাঁ বলেন কি বলতে চান। রাফি বলল আপনি কি করেন। মেয়েটি বলল আমি লেখাপড়া করি।

রাফি বলল আপনার নাম কি মেয়েটি বলল আমার নাম সীমা। রাফি বলল আপনি কোন ক্লাসে পড়েন মেয়েটি বলল আমি এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি। সীমার অনেক ভালো লাগছিল রাফির সাথে কথা বলে ।

এমন সময় সীমার বাড়ি যাওয়ার গাড়ি চলে আসে। তখন রাফিকে বলে আমার বাড়ি যাওয়ার গাড়ি এসে গেছে। আমি এখন আসি সীমার সাথে কথা বলতে বলতে রাফি সীমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

সীমা চলে যাওয়া রাফি যেন মেনে নিতে পারছে না। সীমা গাড়িতে উঠে গেল রাফি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

এমন সময় তার মাথায় আসে আমি যদি কোন ভাবে সীমার নাম্বারটা নিতে পারতাম কিন্তু কিভাবে  সীমা কে বলব।

তখন রাফি র মাথায় বুদ্ধি আসে আমার নাম্বারটা সীমাকে দিয়ে দিই। কিন্তু রাফির কাছে কোন কাগজ ছিল না তার কাছে একটি কলম ছিল ।

কাগজ না থাকায় সে ভাবতে থাকে আমি নাম্বারটা কিসে লিখে দিব ।তখন সে তার হাতে তার বাড়ি যাবার  টিকিটটা দেখতে পায়।

তখন সে টিকিটের উপরে নিজের নাম্বারটা লিখে ।এদিকে সীমার গাড়ি ছেড়ে দেয় ।তখন রাফি দৌড়াতে দৌড়াতে সীমার গাড়ির কাছে যায়।

এবং সীমার কাছে নাম্বারটা দিয়ে বলে এটা আমার নাম্বার। তুমি বাসায় গিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে প্লিজ জানিও তুমি ভালোভাবে পৌছাইছো কিনা।

সীমা রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। রাফি সীমার দিকে তাকিয়ে থাকে এরপর রাফি ও সীমা দুজনে তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়।

রাফি বাড়ি গিয়ে সীমার কথা ভাবতে থাকে। এবং সীমার ফোনের অপেক্ষায় থাকে।সিমা বাড়ি গিয়ে রাফির কথা মনে পড়ে। তখন সে ভাবতে থাকে আমি রাফিকে ফোন দিব কিনা।

ভাবতে ভাবতে সে রাফিকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে কি বলবে বুঝতে পারে না। সীমা ফোন দিয়ে চুপ করে থাকে।

রাফি অচেনা নাম্বার দেখে বুঝতে পারে এটা সীমার নাম্বার। তখন রাফি বলে আপনি কি সীমা বলছেন।   তখন সীমা বলে আপনি কিভাবে বুঝলেন।  তখন রাফি বলে বুঝাতে পারবো না।

তখন সীমা বলে আমি বাসায় ভালোভাবে পৌঁছে গেছি এই বলে ফোনটা কেটে দেয়। পরের দিন রাফি সীমাকে ফোন দেয় ।তখন সীমা ফোনটা রিসিভ করে সালাম দেয়।

রাফি বলে সালামের উত্তর দিয়ে বলে আপনি কেমন আছেন। সিমা বলে ভালো আছি আপনি কেমন আছেন।

রাফি বলে আমিও ভালো আছি। তারপর রাফি বলে আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি।সিমা বলে আমার অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না।

তখন রাফি বলে আমরা কি বন্ধু হতে পারি না। তখন সীমা  বলে হ্যাঁ হতে পারি । তারপর দুজনের কথাবার্তা শুরু হয়। 

তারা অনেকক্ষণ কথা বলে। এভাবে তাদের প্রতিদিন কথা চলতে থাকে। কথা বলতে বলতে এক সময় রাফি সীমাকে অনেক ভালবেসে ফেলে।

রাফি ভাবে আমি সীমাকে প্রপোজ করবো।কিন্তু রাফি সাহস পাচ্ছিল না। কারণ সে ভাবছিল আমি সীমাকে প্রপোজ করলে  যদি আমাকে ইগনোর করে ।আমার সাথে সম্পর্ক না করতে চায়। যদি আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলে ।

একদিন রাতে মন স্থির করে আজ  আমি সীমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলব ।তখন সে সীমাকে ফোন দেয়। সীমা কে বলে আজ আমি তোমাকে একটা কথা বলব।

সীমা বলে কি  বলেন। রাফি বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। সীমা  কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। সীমা বলে দেখো আমি গরিব ঘরের মেয়ে আর তুমি ভালো চাকরি কর তোমার ফ্যামিলি আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে না । রাফি বলে দেখো একদিন আমি অনেক কষ্ট করেছি ।

এখন আমি যে পজিশনে এসেছি সেটা আমার অনেক কষ্টের ফল। দুনিয়াতে আমি যা পেয়েছি সবকিছু আল্লাহর দান। আমার ফ্যামিলি কি করবে সেটা আমার উপরে ছেড়ে দাও।

তুমি আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা। সীমা বলে আমাকে তুমি সময় দাও। আমি পরে জানাবো । রাফি সীমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকে। সীমা রাফি কে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

তারপর  দুই ফ্যামিলি র সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়ে যায়।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles