আমরা সবাই কমবেশি অবগত হয়েছি- আজ হিরো আলমের কাছ থেকে এই মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়েছে যে, হিরো আলম আর রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত করতে পারবেন না। গানের বাজারে হঠাৎ পুলিশ বাহিনীর আমদানি খুব একটা সুখকর হয়েছে বলে মনে হয় না।
যারা হিরো আলমের পেছনে লেগেছে বা সংগীতের জাত গেছে বলে বলে রব তুলেছে, তাদের প্রতি আমার সন্দেহ জাগে। রবীদার কথা তাদের মর্মে প্রবেশ করেনি;ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার।
হিরো আলমকে নিয়ে যাদের মাথা ব্যাথা তারা কারা?
আমার উত্তর:
(১)যারা রবীন্দ্র/নজরুল সংগীত গেয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করতে পারেনি। মানে, জনপ্রিয়তা নেই।
(২) যাদের গানে বা এ্যালবামে যুগোপযোগী যন্ত্রানুষঙ্গের আয়োজন নেই।
(৩) যাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে বা নজরুলকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস নেই।
(৪) যাদের মিউজিক্যাল ফেসবুকে পেজে ফলোয়ার কম।
(৫) যাদের ইউটুবে গান নেই বা গানের সংখ্যা নগন্য অথবা লোকপ্রিয়তা পায়নি।
(৬) যারা নিজেদেরকে রবীন্দ্রনাথের একমাত্র রক্ষাকর্তা মনে করে।
(৭) যারা মনে করে হিরো আলম বুঝি পুরো রবীন্দ্রনাথকে গিলে খেলো অর্থাৎ হিরো আলম গান করলে আর কেউ শ্রদ্ধেয় হেমন্ত, সুমন, কণিকা, বন্যা, মিতাদের গান শুনবে না।
(৮) যারা নিজেরা কিছু করার সাহস রাখে না।
(৯) যারা দুর্বলের উপর চড়াও হয়ে আনন্দ পায়।
(১০) যারা স্বভাবতই হিংসাপরায়ণ।
(১১) যারা রবীন্দ্রনাথের বা নজরুলের গান তর্জমা করে নিজেদের উচ্চ শ্রেণির মনে করে।
(১২) যারা সাধারণত লোকসংগীত, ব্যান্ড, রক ইত্যাদি সংগীতকে ছোট করে দেখে। অমূল্যায়ন করতে চায়।
(১৩) যারা দীর্ঘদিন গান করেও হিরো আলমের একবছরের ইনকামের সমান ইনকাম করতে পারেনি।
ব্যাখ্যা ১: যারা কমবেশি গান শোনে তারা গানের সুরে মোহিত হয়ে হিরো আলমের গান শোনে না। অধিকাংশই হিরো আলমের কর্মকান্ড জোক্স বা কৌতুক হিসেবেই দেখে। হাসাহাসি করে, আনন্দ নেয়। বিকৃতভাবে গান উপস্থাপনে হিরো আলমই প্রথম নয়। সার্চ করা হোক আর কারা সঠিক সুরে, সঠিক তালে, সঠিক ভাবে গান করে উঠতে পারেনি। সাজা নিশ্চিত করুন তাদেরও।
ব্যাখ্যা ২: বাংলাদেশে কতজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আছেন যারা রবীন্দ্রনাথের যেমন চাওয়া ছিলো তেমন করে গান করেন! যারা রবীন্দ্রনাথকে জানেন এটা তাদের বিচার্য বিষয়। যদি গ্রহনযোগ্য সেন্সরবোর্ড থাকতো তাহলে অনেকেরই নাকের চোখের পানি এক হয়ে যেতো
ব্যাখ্যা ৩: শুধুমাত্র রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পঞ্চকবি পরবর্তী আধুনিক গান , লোকসংগীত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করলে ক্ষতি নেই এমনটাই হয়তো মনে করেন সুশীল সমাজ। এখানে অবশ্যই এই গানগুলিকে খাটো করে দেখা হয়েছে যা আদালতে/ কোর্টে দ্বারস্থ রবীন্দ্রপ্রেমীদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দেয় ।
ব্যাখ্যা ৪: যারা ভালো গান করতে জানেন তারা নিয়মিত ইউটুবে যুগোপযোগী কন্টেন্ট কেন দেন না? যে পরিশীলিত কন্টেন্ট আমাদের কিশোর যুবকদের শিক্ষার সাথে বিনোদন দিতে সক্ষম হবে। হিরো আলমের গান বন্ধ না করে তাকে গান শেখানোর প্রস্তাব বা উদ্দ্যোগ নিয়েছেন কতজন?
শেষ কথা:
হিরো আলমকে নিয়ে মাতামাতি করাও হিরো আলমের এক ধরনের প্রাপ্তি। হিরো আলমের গান বন্ধ তাই বলে রবীন্দ্রসংগীতে অসুরের বিনাশ হয়েছে এমন ধারণা পোষণ করা ঠিক হবে না। হিরো আলমের এই মুচলেকার নিউজ দিয়েও অনেক ইউটুবার ডলার কামাবে।
হিরো আলমকে নিয়ে হয়তো শতাধিক ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। যারা জাত নষ্টের ভয়ে হিরো আলমকে নিয়ে এতোকিছু করলেন তারা বাংলাদেশের সংগীতে কি অবদান রাখে সেটা দেখার বিষয়। হিরো আলমের গান করায় নিষেধাজ্ঞা অর্থাৎ আপনার দ্বায়িত্ব আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।
You must be logged in to post a comment.