আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে পড়ার রিভিশন দেওয়ার কিছু কার্যকর কৌশল বলবো।
একটা বেশ পরিচিত উদাহরণ দিয়ে এই লেখাটা শুরু করছি। বাসায় ফেলে রাখা বেশ পুরনো ধাতব বিশেষত লোহার যন্ত্রপাতি কিংবা তৈজসপত্রের ওপর লালচে মরিচা পড়তে আমরা প্রায় সবাই দেখেছি।
আমাদের মস্তিষ্কের তো কতশত তথ্যই জমা হয়ে প্রতিদিন। দিনশেষে কতগুলো ঠিকঠাক মনে রাখতে পারি আমরা? বলছি, বলছি আর পড়ছি।
এই পড়া ভোলার চক্করে পড়ে শেষ পর্যন্ত কয়টা নতুন শব্দ সেগুলোর অর্থ মনে থাকে আমাদের?? এবার একটা ঘটনা কল্পনা করা যাক।
আবির এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষা এসে গেছে। বহু কষ্টে একবারের মত কোনমতে পুরো সিলেবাস শেষ করেছে সে। আর বাকি মোটে অল্প কিছু সময়।
এরই মধ্যে আবির আবিষ্কার করল পদার্থবিজ্ঞানের উচ্চতর গণিতের বেশিরভাগ সূত্র আর রসায়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া সে এরই মাঝে ভুলে বসে আছে। এবার কি হবে?
উপরের আবির চরিত্র আর পুরো ঘটনাটা কাল্পনিক হলো এই আবিরের মত অবস্থা পরীক্ষার কিছুদিন আগে আমাদের অধিকাংশ এর কম-বেশি হয়ে থাকে। কারণটা বলি এবার।
আবিরের মত আমরা অনেকেই পড়া শেষ করে রেখে দিই। রিভিশন দেয়া হয় না বলে আমাদের শরীরে থেকে মুছে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তাই প্রায় সময় দেখা যায় আমরা পড়া ভুলে যাওয়া অর্থাৎ মনে রাখতে না পারার মতো সমস্যার সম্মুখীন হই।
রিভিশন দেয়াটাকেও কিন্তু একটা শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে আমাদের রিভিশন দেওয়াটা হয়ে উঠবে আরও বেশি কার্যকরী আর পরীক্ষার আগে পড়া ভুলে যাওয়ার মত সমস্যাগুলো ও আর আমাদের সাথে ঘটবে না।
তো আর কথা না বাড়িয়ে চলো জেনে নেওয়া যাক রিভীষণ দেওয়ার বেশ কিছু কৌশল।
১. রিভিশন সিটে আর নোট খাতায় মিলবে স্বস্তি:
পড়ার সময় সাথে রেখো রিভিশন শিট। পড়ার সময় আমরা এমন অনেক কিছু তথ্যই পড়ে যায় যেগুলো তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কিংবা সেসব তথ্য মনে রাখার ও তেমন প্রয়োজন নেই। রিভিশন শিট তোমাকে সাহায্য করবে এই প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য আলাদা করতে।
কিন্তু , কিভাবে? পড়ার সময় যে তথ্যগুলো মনে রাখা জরুরি, পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে ভুলে যাওয়া সম্ভাবনা প্রবল সেই তথ্যগুলোকে আলাদা করে তুলে রেখো একটি রিভিশন শিটে, যাতে করে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে পুরো বই রিভিশন দেওয়ার দরকার না পড়ে।
এক রিভিশন শিট দেখে ফেললে পুরো টপিক আয়ত্তে চলে আসে। এটা রিলেশন দিতে প্রয়োজন সময় গায়ে অনেকটা কমবে এবং রিভিশনের গতি ও বাড়বে।
রিভিশন শীট এর পাশাপাশি বিষয়ে ভিত্তিক পৃথক তৈরি করা যেতে পারে এবং এতে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে স্বল্প সময়ে প্রস্তুতি নেওয়াটা আরো সহজ তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
২. পরীক্ষার খাতায় জ্ঞানের চেয়ে জরুরি পারফরমেন্স:
পরীক্ষাগুলার প্রায় সময় দেখা যায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলো থেকে কিছু প্রশ্ন দিয়ে দেওয়া হয় এছাড়াও এমন কিছু বিশেষ টপিক থাকে যেগুলো থেকে কোন না কোন প্রশ্ন পরীক্ষায় চলেই আসে।
বিশেষ কিছু গ্রাফ এবং চার্টের মত বিষয়ই বস্তু পরীক্ষার প্রশ্ন একেবারে নিয়ম করে দেওয়া হয়। এ ধরনের টপিকগুলো বেশ ভালো করে জানতে হবে এবং পরীক্ষার আগে রিভিশন দেওয়ার সময়ও টপিকগুলোকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
একটা কথা মাথায় রাখা জরুরী। পরীক্ষার সময় তোমাকে কিন্তু তোমার বিস্তৃত মেধার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হবে না,
তোমার খাতাতে তুমি ঠিক যতটুকু জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হবে সেটার উপর ভিত্তি করে হবে তোমার মেধার মূল্যায়ন।
৩. ব্যবহার করো ফ্ল্যাশ কার্ড:
ভোকাবুলারি আর সূত্র হলো এমন এক একটা জিনিস যেগুলো আমরা যতখানি সমস্যা নিয়ে পড়ি বা শিখি ঠিক তার দ্বিগুণ গতিতে ভুলে যাই। এই সূত্র আর নতুন নতুন শব্দার্থগুলো মনে রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারো ফ্ল্যাশ কার্ড।
ছোট ছোট এই কার্ডগুলোই লিখে রাখো সূত্র আর শব্দার্থ। আর সব সময় কার্ডগুলো নিজের সাথে রাখো যাতে করে যখন তখন রিভিশন দিতে পারো।
৪.চিহ্নিত করে রাখো কেবল প্রয়োজনীয় অংশটুকুই:
বই দাগাতে জানাও একটা শিল্প। ওই রাঙাতে গিয়ে আমাদের কারো কারো বইয়ের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনে তথ্য খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা নিচে দাগ পড়ে না এমন একটা লাইন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
পুরো বইয়ের পৃষ্ঠার রঙ তাই বদলে যায়। সবগুলো লাইনে যদি দাগিয়ে ফেলো তাহলে পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন দিবে কি করে।
তাই বোইদা গিয়ে পড়ার সময় কেবল প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দাগ দিয়ে হাইলাইট করে রেখো এবং এতে রিভিশন দিতে সুবিধা হবে।
৫. অনুশীলনে ঝালাই হোক দক্ষতা:
পড়া হলো এবং রিভিশনও দেওয়া হলো। এবার পালা কতটা শেখা হলো সেটা যাচাইয়ের। মডেল টেস্ট আর কুইজ দেবার মাধ্যমে যাচাই করো তোমার প্রস্তুতি ঠিক কতটা হয়েছে।
এর চাইতেও বেশি উপকৃত হবে যদি পরীক্ষার আগে মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারো। কারণ মডেল টেস্টগুলোতে আসল পরীক্ষার সময়কার অনুভূতিটা উপলব্ধি করা যায় আর এতে করে পরীক্ষার সময়ের ভয়টাও কেটে যাবে অনেক অংশে।
৬. কমন পড়ে গেলে নিশ্চিত লিখবেই এমন কিছু টপিক রিভিশন দাও বারবার:
রিভিশন দেওয়ার সময় এমন প্রশ্নের উত্তর গুলো বারবার দেখার চেষ্টা করো যে প্রশ্নগুলোর কোনটা পরীক্ষায় চলে এলে তুমি লিখবেই লিখবে।
ধরা যাক বাংলার জন্য বেশ কিছু কবিতার উক্তি ভালো করে শিখিয়ে রেখে যেতে পারো যাতে করে ওই কবিতা থেকে প্রশ্ন করা হলে সেগুলো কাজে লাগানো যায়।
কথায় বলে গাইতে গাইতে গায়েন। ঠিক তেমনি বারবার রেভিসন দেওয়ার অভ্যাস কোন টপিকের উপর তোমার দক্ষতা বাড়িয়ে দেবে বহু অংশে।
এই কৌশল গুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে গড়ে তোলো রিভিশন দেওয়ার অভ্যাস আর তাহলে পরীক্ষার সময় পড়া ভুলে যাওয়ার মত বিড়ম্বনয় পড়ার সম্ভাবনা আর থাকবে না।
Valo
You must be logged in to post a comment.