গল্প: ছোট বলে অবহেলা করতে নেই
রাসেলর বয়স এখন ১০ বছর। তার বয়স ৯ বছর থাকা অবস্থায় তাকে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।বাড়িতে তার মা ও বোন দুজনেই প্রতিবন্ধী।
তার মা আগে সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু এক্সিডেন্ট হওয়ার পর প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।তার বাবা ঠিকমতো কাজেও যায় না।
সারাদিন দোকানে বসে আড্ডা দেয়া, নেশা করা, জুয়া খেলা, ইত্যাদি করে সময় পার করে। তার বাবা অনেক মানুষের কাছে টাকা ধার নিয়েছে। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে টাকার জন্য মানুষগুলো ঝামেলা করে।
দি টাকা না দিতে পারে তাহলে তাদের জায়গা থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। জায়গাটা দখল করে নিবে।এমন অবস্থায় তার বাবাও কিছুদিন যেতে না যেতে অন্য জায়গায় গিয়ে বিয়ে করে চলে যায়।
এলাকার মানুষ তাদের খাবার দিলে খেতে পারে। তাছাড়া খেতে পারে না। রাসেল কখনো হোটেলের খাবারের প্লেট মাজে কখনো কারো গাড়ি মুছে দেয়।
কখনো কারো ব্যাগ বহন করে দেয়। রিক্সা বা অটো পর্যন্ত মাথায় করে নিয়ে যায়।তাতেই যা টাকা পায় ওটাতে কোনো ভাবে সংসার চলে।
এই বয়সে তার স্কুলে যাবার কথা কিন্তু এখন তার সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।
রাসেল একদিন স্টেশন কুলির কাজ করতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে আগে থেকেই অনেকে জড়ো হয়েছিল। তাকে দেখে কেউ একজন ধাক্কা মেরে বলে। তোকে কে কাজ দেবে।
তুই যা এখান থেকে এই বলে তাকে সবাই তাড়িয়ে দেয়।
তারপর সে একটি হোটেলে কাজের জন্য যায়। আমাকে একটি কাজ দিন। আমি সবকিছু কাজ করে দেবো। শুধুমাত্র ১০০ টাকা দিলেই হবে।
দোকানদার বলে ১০০ টাকা এত বেশি দিতে পারব না। ৪০ টাকা দিতে পারবো। মাথা নাড়িয়ে বলে ঠিক আছে।
তারপর রাসেল প্লেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে ঝাড়ু দেওয়া। পানি আনা। কাস্টমারদের খাবার দেওয়া সব কিছু করে।
এরপর থেকে প্রতিদিন রাসেল সেখানে গিয়ে হোটেল মালিকের কাজ করে। বিনিময়ে তাকে ৪০ টাকা করে দেয়। বেঁচে যাওয়া খাবার হোটেলের মালিক তাকে দিয়ে দেয়।
হোটেল কয়েকজন মেয়ে আসে। খাওয়ার সময় এক মেয়ে টেবিলে তার টাকার ব্যাগটি বের করে।
একটু পরে মেয়েটি টাকার ব্যাগটি অন্য আর একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়।
আর হাতের ডান পাশে ফোনটি রেখে দেন। দোকানদারকে খাবার অর্ডার দিতে বললে খাবার নিয়ে যায়। রাসেল খাবার দিয়ে আবার চলে আসে।দোকানদারকে টাকা দিতে আসলে মেয়েটি টাকার ছোট ব্যাগটি খুঁজে পায় না।
মেয়েটি: আমার ব্যাগ টেবিলে রেখেছিলাম। আর এখন দেখি আমার ব্যাগ নেই।
সবাইকে বলে এই ছেলেটি আমার ব্যাগ সরিয়ে দিয়েছে। একথা বলে আর রাসেলকে শাসাতে থাকে। আমার মানিব্যাগ দে নইলে তোর খবর আছে।
রাসেল: আপা আমি আপনার ব্যাগ নেয়নি।
হোটেলে বসে থাকা কয়েকজন ছেলে বিষয়টি খেয়াল করে। তারা এগিয়ে এসে বলে ম্যাডাম আপনার ব্যাগে ভালো করে খুঁজে দেখুন। হয়তো আপনি আপনার ব্যাগে রেখেছেন।
মেয়েটি বলে ভাইয়া আমি ব্যাগে রাখিনি। আমি টেবিলের পাশে রেখেছি। এই ছেলে যখন খাবার দিয়ে গেছে।তার একটু পর থেকে ব্যাগটা আমি আর দেখিনি।
ছেলেগুলো রাসেলকে বলে: তুমি এত ছোট বয়সে এখানে কেন কাজ করো।
রাসেল: আমার বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে। বাড়িতে মা ও বোন তারা দুজনে প্রতিবন্ধী।
মেয়েটি বলে এজন্য টাকার লোভ সামলাতে পারেনি। ব্যাগ দেখেই লুকিয়ে ফেলেছে। একথা বলে মেয়েটি ও তার বান্ধবীরা রাসেলকে মারতে মারতে দোকান থেকে বের করে।
রাসেল মেয়েটির হাতে পায়ে ধরে। তাতেও কোনো লাভ হলোনা। সাথে সাথে মেয়েটি তাকে লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। আর অপর দিক থেকে একটি গাড়ি এসে রাসেলকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
গাড়িটি এত দ্রুত আসে যে সেখানে তার মৃত্যু হয়। গাড়ির ড্রাইভার নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়।
ছেলেগুলো সাথে সাথে পুলিশকে জানায়। পুলিশ সবাইকে একটা টেবিলে নিজেদের ব্যাগ রাখতে বলে।
হোটেলের ভেতরে ভালো ভাবে কিছুক্ষণ খোঁজার পর একটি শপিং ব্যাগের কাপড়ের ভিতরে মোড়ানো একটি পার্টস পায়।
মেয়েটি দেখেই বলে আমি জানতাম ঐ ছেলেটি ব্যাগ চুরি করেছে। চুরি করার পর অন্য জায়গায় লুকিয়ে ফেলেছে।
পুলিশ জোরে চেঁচিয়ে বলে, থামুন আপনি! আপনার নিজের ভূলের জন্য আজকে গরীব ছেলেটিকে নিজের প্রান দিতে হলো।
এই ব্যাগটি ঐ ছেলের ব্যাগ থেকে না আপনার নিজের শপিং ব্যাগ থেকে পাওয়া গেছে।
মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটির মুখ কালো হয়ে গেল।
আপনি লাথি না দিতেন তাহলে আজকে ছেলেটি বেঁচে থাকতো।
You must be logged in to post a comment.