জ্ঞান ফিরতেই দেখি সবাই আমাদের পাশে ভির করে আছে..
দিনটা ছিলো শুক্রবার। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সাথে কেউ নেই একাই যেতে হবে।আমার আবার এত দূর জার্নি পছন্দ না। কিন্তু কি করার জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে যেতে তো হবেই।
ওইদিন রাস্তায় তেমন যানজট ছিলো না তাই যথা সময়ের আগেই পৌঁছে গেলাম।
ফেনী পৌঁছানোর পর একটা রেস্তোরাঁয় খেয়ে ছাগলনাইয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
বাড়িতে গিয়ে দেখি খালারাও উপস্থিত আছেন মা তো আছেই সাথে আছে আমার কাজিন আরিয়ান, সামিয়া,সাদিয়া। বাড়ির পুকুরে গোসল করে খাওয়া শেষ করে জমি নিয়ে মিটিংয়ে বসলাম ঝামেলা শেষ করে সন্ধার আগে একটা শান্তির ঘুম দিয়ে উঠলাম।
আমি আবার চা খাওয়ার ঝোক বেশি।
চা ছাড়া আমার চলে না কিন্তু মা আর খালারা কাজে ব্যস্ত তাই নিজেরাই চা বানিয়ে খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলাম।বেশ ভালোই কাটছিলো সময়। পরক্ষণে আরিয়ান কানের
কাছে ফিসফিস করে বললো,
" বন্ধুর বাইক আছে ঘুরতে যাবি?"
আমি ধীর গলায় বললাম " এখন "
" হুম, চল না মজা হবে আর বাসায় বলবো বন্ধুর বাসায় দাওয়াত আছে ওখানেই থাকব।রাতে যত ইচ্ছা তত ঘুরতে পারব "
আমিও ভাবলাম এত পড়া লেখা আর ব্যস্ততার মধ্যে কেননা একটু চিল মারা যাক!!
আমি বললাম " ঠিকাছে ওকে আসতে বল "
আরিয়ান বলল " বাসার দিকটা একটু সামলে নিস "
" ঠিকাছে " আমার কথা শুনে সে বন্ধুকে কল দিতে চলে গেল আমিও আম্মুকে রাজি করাতে গেলাম...
আম্মুকে বললাম " আজকে আমাকে আর আরিয়ান কে রাতের খাবার খাওয়ানোর আবদার করেছেন আরিয়ানের বন্ধুর মা। তুমি একটু খালামনি ( আরিয়ানের আম্মুকে) বলো "
আম্মু প্রথমে রাজি না হলেও পরে যেতে দিলেন।
আমিও খুশি হয়ে ফিটফাট হয়ে পারফিউম - টারফিউম দেয়ে রেডি হলাম। মানি ব্যাগে টাকা নিচ্ছি এমন সময় আরিয়ানের বন্ধু বাইক নিয়ে এসে হর্ন দিতে শুরু করলো আমরাও দেরি না করে বেড়িয়ে গেলাম।
বেড় হওয়ার পর সে তার বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।ছেলেটার নাম 'নুমান'।বেশ ভদ্র ছেলে আমাকে দেখেই সালাম দিল। সালামের উত্তর দিয়েই আমরা রাত উপভোগ করতে বেড়িয়ে গেলাম।
ছেলেটা অনেক জায়গায় নিয়ে গেল।চাঁদের আলোয় পুরো গ্রাম অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছিলো। হঠাৎ করেই বাইক চালানোর ভূত আমার ঘাড়ে চাপলো। তবে আমি বাইক চালাতে পারতাম ন। আমি ছেলেটাকে বললাম বাইক চালানো দেখিয়ে দিতে।
নুমান বললো," জ্বি ভাই অবশ্যই " নুমানের ব্যবহার দেখে রিতীমতো অবাক হচ্ছিলাম। সে বাইক নিয়ে খুব সুন্দর একটা ব্রীজের উপর নিয়ে গেলো। হয়তো জোছনার আলো কিংবা অন্য কোনো কারণে ব্রীজটাকে অন্যরকম লাগছিলো।কেমন যেনো অবাস্তব লাগছিলো।
ব্রীজটা আমি প্রথম দেখেছিলাম নামটাও জানি না। ব্রীজটার উপরে উঠেই নুমান বাইকের ক্লাস, গিয়ার এসব টুকিটাকি জিনিস বুঝিয়ে দিলো।যেহেতু আমি সাইকেল চালানোতে খুব পারদর্শী তাই বাইক চালানো শিখতে বেশি সময় লাগেনি।
বাইক মোটামুটি ভালোই কন্ট্রোল করতপ পারছিলাম। আমি আবদার করলাম বাইক চালিয়ে আমি নিয়ে যাবো। যদিও ওরা খুব ভয় পাচ্ছিলো তবুও জোড় করে বাইকে তুললাম। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম ১২:৪৮ বাজে।
বাসায় যাওয়ার তাড়া নেই তবুও ভরপেট খাওয়ার পর ঘুরতে ইচ্ছা করছেনা। এই ঝিম ধরা পরিবেশে ঘুমও আসছে। আসল ঘটনা এখন শুরু হলো...... ঘুম ঘুম চোখে বাইক স্টার্ট দিয়ে ব্রীজ ক্রস করছি। ব্রীজ পেরোবার পর দেখলাম একই ব্রীজে আবার উঠেছি। একটু চমকালাম। কারণ আসার সময় আর কোনো ব্রীজ ছিলো না!
একটাই ব্রীজ বারবার কেনে ক্রস করছি!! মনের ভুল ভেবে এগুলাম কিন্তু আকস্মিকভাবে সেই ব্রীজে আবার আসলাম! নুমান আর আরিয়ান ও বিষয়টা টের পেল দুজনেই " এসব কি হচ্ছে " বলে চেঁচিয়ে উঠল।বুঝলাম আমার মনের ভুল না আসলেই আমরা বিপদে পড়েছি!
নুমান বললো " ভাই হেঁচকা টান দিয়ে নিয়ে যান "
যখনই টান দিতে যাব তখনই বাইক অফ হয়ে গেল। চাবি দিয়ে পেট্রোল ট্যাংক খুলে দেখি ট্যাংক একদম খালি! "আশ্চর্য ১ ঘন্টা আগেই পেট্রোল দিয়ে ফিল করেছি " নুমানের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম।
আসলেইতো এত তাড়াতাড়ি পেট্রোল শেষ হলো কিভাবে!!
আরিয়ান ভাবছে আমি রাস্তা ভুল করেছি কিন্তু রাস্তা ভুল করে এই ব্রীজে উঠার কোনো উপায় নেই এসব নিয়ে মুটোমুটি তর্ক বেধে গেল আমাদের মাঝে। হঠাৎ খুব মিষ্টি একটা আতরের গন্ধ নাকে আসলো।
কি রকম মোহিত করা সুঘ্রাণ!
পিছন ফিরে দেখলাম একটা লোক আসছে। সাধারণ পথচারী ভেবে আমরা পাত্তা দিলাম না। কিন্তু লোকটা আমাদের কাছেই আসছিলো।।পড়নে একটা কালো আলখেল্লা। স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চতাটা একটু বেশিই। এতো বড় আলখেল্লা পড়েছে যে পায়ের পাতাও দেখা যাচ্ছে না।
লোকটি কাছে এসে বললো, " ভাই সামনে একটা জানাযা
হচ্ছে অংশগ্রহণ করলে ভালো হতো। "
আমরা খুব অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম।
এতো রাতে জানাজা!
আমি একপ্রকার অজুহাত দিয়ে বললাম, " আসলে বাইকের তেল শেষ।একটু সাইড করে পার্ক করবো বাইকটা। কিন্তু ধাক্কা দেওয়ার শক্তি নেই "
লোকটি বললো, " কই দেখি "
লোকটাকে দেখানোর জন্য নোমান বাইক স্টার্ট দিলো আর আশ্চর্যজনক হলেও বাইক সাথে সাথে বাইক স্টার্ট হয়ে গেলো।
বাইক ঝাকিয়ে দেখলো ট্যাংক পেট্রোলে ভর্তি।
কিছু বোঝে ওঠার আগেই লোকটি বললো," চলেন না ভাই "
নোমান ইশারায় নিষেধ করলেও আরিয়ান আর আমি রাজি হয়ে গেলাম। সে আবার বললো," না ভাই আমরা যাই বাসায় যেতে দেরি হচ্ছে।"
আমি বাঁধা দিয়ে বললাম থাক ন। একজনের জানাজা পড়েই যাই। লোকটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে আঙুল উঁচু করে সামনের বাড়িটা দেখিয়ে দিলো।
যেতে যেতে নোমান বললো," ভাই এত রাতে জানাজা। বিষয়টা অদ্ভুত না?"
আসলেইতো এতো রাতে কখনইতো জানাজা হয় না। ভাবতে ভাবতে পোঁছে গেলাম বাড়িতে। সুবিধা ভালো ঠেকছিলো না।তাই বাইক নিয়ে ফেরত যাচ্ছিলাম তখন লোকটা এসে বললো, " কি হলো? কোথায় যাচ্ছেন?"
আমরা নিতান্তই অবাক হয়ে গেলাম। বাইক দিয়ে আসতে আনুমানিক ৯/১০ মিনিট লেগেছে কিন্তু লোকটা এতো তাড়াতাড়ি হেঁটে আসলো কিভাবে! যাইহোক বাধ্য ছেলের মতো ভয় ভয় ঢুকলাম বাড়ির ভিতর।
গিয়ে দেখি ৪০/৪৫ জন পুরুষ বাড়িতে সবাই খুব কম করে হলে ৭ ফিট হবে।। সবারই সাদা আলখেল্লা পড়নে।।এবং অদ্ভুতভাবে তাদের সবার উচ্চতা,গড়ন,চেহারা,পোষাক দেখে একই লাগছিলে।
যেন কোন এক মানুষের ৪০/৪৫ টা কার্বণ কপি।আমরা বুঝতে পারলাম এগুলো ভালো কিছু নয়। কিন্তু আমরা বুঝতে একটু দেরি করে ফেললাম। পালাবার কোনো পথ নেই!! ভয়ে হাত পা হিম হতে শুরু করলো।আরিয়ান বললো, "দোয়া দূরুদ পড়।
এখন আল্লাহর হাতে সব।" আমি মনে মনে দোয়া পড়া শুরু করবো তখনই লোকটা বললো, "জানাজা শুরু হবে।আমরা লাশটি সামনের কবরস্থানে নিয়ে যাবো।"
ওনারা লাশের খাটিয়া ধরছেন না আমি মনে মনে অসম্মতি জানালেও মাথা নেড়ে তাদের সম্মতি জানালাম।
তারা বললো সামনপ দুইজন আর পিছনে দুইজন ধরতে।আমি আর আরিয়ান সামনের দিকে এবং নোমান আর ওই লোকটি পেছনে ধরলো। নোমানের পাশে থাকা লোকটি মনে মনে দোয়া পড়তে বললো।আমি দোয়া পড়ছিলাম না।
কিন্তু পেছন থেকে একটা কর্কশ কন্ঠে বললো, " দোয়া কেন পড়ছিস না?" সে আমার মনের কথা বুঝলো কিভাবে? আমি প্রচন্ড রকমের ভয় পেলাম।
আমি বললাম," জ্বি পড়ছি" বুঝতে পারলাম খারাপ কিছুর খপ্পরে পড়ে গেছি আমরা!
হঠাৎ শুনলাম সবাই মৃদু কন্ঠে সূরাকে উল্টে পড়া শুরু করলো।
আশ্চর্য ওরা উল্টা দোয়া কেন পড়ছে! আমরা আয়তুল কুরশি পড়া শুরু করলম।হঠাৎ গা হিম হয়ে উঠলো। খাটিয়া থেকে লাশটি উঠে বসলো এবং সেও জোড়ে জোড়ে উল্টো সূরা পড়া শুরু করলো।
ভেবেই নিলাম এটা আমাদের শেষ রাত। তখনই পেছন থেকে একটা লোক কাধে হাত রেখে বললো," কি ভাই ভয় পাচ্ছেন?"
তার হাত যেন হাত নয় বরফের খন্ড ছিলো।।আমি পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পেলাম না।চোখ দুটো ভীষণ ঝাপসা লাগছিলো। বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো!
জ্ঞান হারাতে ইচ্ছে করছে যাতে এসব না দেখতে না হয়!! শেষমেশ খাটিয়া ছেড়ে বসে পড়লাম।চোখ বন্ধ করে ফেললাম......
এর পর চোখ খুলতেই দেখলাম সবাই আমাদের কাছে ভির করে দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়ান আর নোমানও একপাশে পড়ে আছে বাইকটাও একটু দূরে পড়ে আছে।
তাদের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত লোকজন। জ্ঞান ফিরতেই আরিয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো," আমাকে কেউ বাসায় নিয়ে যাও " আশেপাশের সবাই হাজারটা প্রশ্ন করছে।কি হয়েছে,আমরা কি করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি..
আমরা পাত্তা না দিয়ে বাসায় চলে এলাম। কাউকেই কিছু বুঝতে দিলাম না..
You must be logged in to post a comment.