দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি- ১ম পর্ব
তাসমিয়া অমি, মিথিলার হতে দুটো চিঠি।দুটো বড় বড় পৃষ্ঠায় অল্প কয়েকটা লাইনের চিঠি।খুব পরিচিত হাতের লেখা ।শুভর এই ডায়েরিটা মিথিলার দেয়া না? হুঁ।মনে পড়েছে ।
প্রথম চিঠিটা এমন,
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না ,আমার জীবনের হতাশা,ব্যর্থতা,অতৃপ্তি ,আমাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে ...
দ্বিতীয় চিঠি আবার এমন,
আমার মৃত্যুর জন্য যদি কেউ একজন দায়ী থাকে তবে তা শুধু তুমি,তুমি আমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছো, বাধ্য করলে এই সিদ্ধান্ত নিতে...
মিথিলা চিঠি দুটো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে ,দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটা অক্ষরের প্রতিটা টা টান যেনো বোঝার চেষ্টা করছে, হ্যান্ড রাইটটিং এক্সপার্ট দের মত তার কিছু যন্ত্র পাতি হলে কাজ সহজ হতো ।
কিন্তু ইন্সপেক্টর মাহফুজ তা পারলো না সে বিরক্ত বোধ করছে না বিস্ময় বোধ করছে,এই মেয়ে তার হবু স্বামীর মৃতদেহ এখনও দেখেনি দেখতে চেয়েছ চিঠি দুটো...
মিস. চৌধুরী?
মিথিলা চমকে তাকায় যেনো খানিকটা,মিস চৌধুরী বলা কেন? ইন্সপেক্টর মাহফুজ তার অচেনা মানুষ নয়।তাmর বাবার জুনিয়র অফিসার।অবশ্য কখনো কথা হয়নি,বাড়িতে আসতেন গেটের ভেতরে ঢুকতেন না ।
অল্প বয়স চব্বিশ পঁচিশ হবে ।পুলিশি ধরনের গোঁফ রাখার চেষ্টা,চেহারায় অর্ধ সুদর্শন ।মুখটা এমন গম্ভীর করে তাকে ডাকলেন যে আচমকা হাসি এসে গেলো , মিস চৌধুরী! দারুন বলেছ!
মিথিলাকে হাসতে দেখে অফিসার ও অবাক হলো।প্রেমিকের মৃতদেহ খুব দূরে নেই , সাত আট হাত দুরত্ব খাটের।,তার হাতের চিঠি এখনও হতে ,অথচ মিথিলা হাসছে...
এমন সময় মিথিলা বলল,
বলুন ,অফিসার।অসম্ভব শক্ত গলা ।
মাহফুজ একটু গলায় শব্দ করে বললো,
চিঠিতে কি লেখা আছে দেখলেন ত ,এখন আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন ,আত্মহত্যা তো। পরে কোনো আইন ইনভেস্টিগেশন হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।
আমাকে অ্যারেস্ট করতে চান?করুন।
মিথিলা সরাসরি প্রশ্ন করলো।মাহফুজ এবার নার্ভাস
ফিল করছে । মুহিবদ্দিন চৌধুরী নামকরা দারোগা।বিভিন্ন কারণে সে নাম করা,একজন পুলিশ যে সমস্ত কারণে নামকরা হতে পারে সবের কারণে।
দূর থেকে ওনার এই মেয়েকে সে বহুবার দেখেছে , একটু গোয়ার মনে হয়েছে বারবার । অসম্ভব সুন্দরী ,পড়াশোনায় ও ভালো এই মেয়েটি র প্রশংসা মুহিবুদ্দিন স্যার অনেক বেশি করেন।
তবে বড় মেয়েটি এমন না,তাকে দেখে কোনো অকারণ সংকোচ আসে না।সহজ সৌন্দর্য, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা তাকে ভাইবোন দের বড়ো হবার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে ।কয়েক বার কোথাও হয়েছে ওর সাথে।বেশ ভালো মানুষ মনে হয়।
কিন্তু এ যেনো অন্যরকম,খুব অহংকারী আর কি যেনো একটা আছে চেহারাতে ...
মাহফুজ বলল,
দেখুন ব্যাপারটা ঘোলাটে ।
কোন ব্যাপারটা ঘোলাটে? শুভর আত্মহত্যার ব্যাপারটা ?আর এই দুটো চিঠি?
আমাদের তো ঘোলাটে লাগছে। এখন...
দেখুন, শুভর আমি ছাড়া অন্য কোনো প্রেমিকা ছিল না,ওর যেমন কোনো এক্স গার্ল ফ্রন্ডএর ইতিহাস নেই ,আমারও তেমন কোনো ইতিহাস নেই ।সুতরাং এই তুমি দায়ী বলতে যে তুমি তা আমি ছাড়া আর কে?আমাদের বিয়ে সেই ছোট বেলা থেকে ঠিক।
আমারা কেউ আপনার দোষ দিচ্ছি না,কিন্তু ।
কেনো দিচ্ছেন না ।আমার বাবা মূহিবুদ্দিন চৌধুরী তাই?
আবার ধাক্কা খায়ার মত অবস্থা,এই মেয়ের এত ঔদ্ধত্য কিসের?তার ইচ্ছে করছে বিশাল একটা ধমক দেয়।কিন্তু সেই উপায় নেই ।মিথিলা ভুল বলেনি একটুও ,সত্যি তার বাবা, মূহিবুদ্দিন চৌধুরীর জন্য অনেক কিছু করা যাবে না ।সে আস্তে করে বলল,
আপনার কি মনে হয় কেনো আত্মহত্যা করতে পারে?
একজন কনস্টেবল সব কথা ডায়েরিতে লিখছে,তাকে ইশারায় অনেক কথা বাদ দিতে বলছে মাহফুজ ।এসব লিপিবদ্ধ করে লাভ নেই ।
আমি হতেই পারি।
আচ্ছা আপনাদের শেষ কবে কথা হয়?
পরশু ।
কি কথা হয়?
মিথিলা জ্বলন্ত চোখে তাকিয়েছে,বললো,
আমার সাথে ওর খুব ঝগড়া হয়েছে পরশু সন্ধায়,এক পর্যায়ে ওকে একটা থাপ্পর মারি, ঔ মারে,তারপর ওকে অনেক বার ফোন দিয়েছি ধরেনি,আমাকে অনেক বড় ফোন করেছিল ধরিনি।
মাহফুজ কি বলবে বুঝতে পারলো না ।বিষয়টা আর আগানোর দরকার নেই।থাক ।
সে বলল,আপনি যেতে পারেন ।আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই।
মিথিলা উঠে গেলো।দরজায় দাড়ানোর পর একবার ফিরে তাকালো বিছানার দিকে।কথা হচ্ছিল শুভর পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসে।মাহফুজ ভেবেছিল ,বিছানার দিকে এগিয়ে যাবে ,মিথিলা সে দিকে গেলো না।
সে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো ! একবার ফিরে তাকালো না।সে কি এরকম মৃত্যুতে অপমানিত বোধ করছে?হয়তো।
মিথিলা বাইরে এলো ।দোতলায় লোক নেই। সিড়ি র মুখে দাড়িয়ে আছে দুইজন কনস্টেবল, আর শুভর বাবা। রিটায়ার্ড কর্নেল সাইদুর রহমান।
এগিয়ে এসে হাত ধরলেন।
মা,তুমি ঠিক আছো তো,কোনো অজে বাজে প্রশ্ন কি করেছে ?
সায়দুর সাহেব খুবই ভালো মানুষ।তাদের সবাইকে অনেক স্নেহ করেন ছোট থেকে।ভদ্রলোক পুরোপুরি নিঃসঙ্গ। তিন ছেলের বড়ো দুই জন অস্ট্রেলিয়া স্ত্রী সহ,তাদের সন্তানরাও,আর এই এক ছেলে,শুভ।শুভ!
শুভ আর বেঁচে নেই।সন্তানের মৃত্যুর জন্য তার কোনো দুঃখ কষ্ট বোধ চোখে পড়ছে না।হয়তো তিনি আত্মহত্যার সাথে আগে থেকে পরিচিত,তায়।শুভর মা ও তো...
হয়তো এই মানুষ টা অনেক দিন পরে কাদবেন। সেও কি তায় করবে?
নিচে মানুষের কোনো সংখ্যা নেই।এরা কখন এসে পড়েছে।সে যখন এসেছিল তখন এরা কি ছিল ,তার কিছু মনে পড়ছে না। বেশির ভাগ মানুষ ই পরস্পরে সাথে খুশি খুশি মুখে গল্প করছে।
অনেক দিন পর দেখা হলো এমন অবস্থা।কাজের লোকের উপর দায়িত্ব পড়েছে গলা ছেড়ে কাদার,এই দায়িত্ব তাদের কে দিল।এই কাজের ছেলেটা বিশেষ করে এসেছে গত সোমাবারে,সেদিন মিথিলা এসেছিল নতুন ছেলেটিকে কর্নেল সাহেব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন,
বললেন,
শোনো ছেলে , ও কি যেনো তোমার নাম?
যে,শরীফ,বাড়ি জামালপুর,আব্বা কৃষিকাজ করেন,তেনার নাম
স্টপ স্টপ তোমাকে এতো কথা কে বলতে বলেছে, জাস্ট নাম বলতে বলেছি ।নাম বলো ।বাবার নাম ,দাদার নাম, পরদাদার নাম তো জিগ্গেস করি নাই।আমাদের হাতে সময় কম
মিথিলার ধারণা কর্নেল সাহেবের মাথা বেশ এলোমেলো।এবং তার হাতে সময়ের কোনো অভাব নেই।বরং সময় কাটানোই সমস্যা।সে হেসে বললো,
ওর নাম শরীফ, আংকেল ,বেচারা এমনিতেই ভয় পাচ্ছে।
বাচ্চা ছেলে ।
মোটেই বাচ্চা ছেলে না।দেখতে এমন দেখাচ্ছে।জিগ্গেস কর আর ও কত বাড়িতে কাজ করেছে তার ঠিক নেই।
কি না কি করেছে চাকরি নট করে দিয়েছে ।
যে না ছার,এই পরথম ঢাহায় আইসি। আগে...
আবার বেশি কথা?তুমি কত তম বার ঢাকায় এসেছ এটা কোনো গুরুত্তপূর্ণ তথ্য না, তুমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট না,তুমি একবার আসলে যা ,একশোবার আসলে ও তা,না আসলেও তায়।
আঙ্কেল,আপনি কি রেগে যাচ্ছেন?
মোটেই আমি হাউস মেডের উপর রাগিনা।আমি অত্যন্ত ভদ্রলোক,
ভদ্রলোকের নমুনা পাওয়া যাচ্ছে না বাবা,
শুভ হেসে ড্রয়িং রুমে ঢুকলো,বললো,
বেচারা নির্ঘাত ভাবছে,এই লোক প্রথম দিনই এমন বকছেন ,এর পর তো মারবেন,মেরে হয়তো ছাদ থেকে ফেলে দেবেন ।হাহা ।পত্রিকার নিউজ হয়ে যাবে।
মিথিলা বললো,বেশি কথা বলা কি তোমাদের জেনেটিক প্রবলেম নাকি?সবাই এক রকম ।
মিতু,তুমি কতক্ষন?
এককাপ চা খেতে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণ ।
আচ্ছা তাহলে চলো বাইরে যায়।
সাইদুর সাহেব বললেন,
বাইরে যেতে হবে না,তোমরা এখানেই বস না ,আমি এখন বাগানের কিছু কাজ করবো,এই ছেলে শরীফ অথবা শফিক তুমি চা বানিয়ে ওদের দাও।
যে চা বানান পারি না,ছার
কি চা বানাতে জানো না!! আরে দুই কাপ পানি গরম হলে এক চামচ চা এর দানা সেই ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে দেবে,এবং গ্যাস সাথে সাথে বন্ধ করে...
শুভ ছিল প্লিজ,আংকেল আপনি ওকে প্লিজ চা বানানো সেখান পরের দিন,চা খাবো, সিওর।
ওইদিন না বেরোলে অতটা জ্যঝগড়া হতো না। সে কি অত রাগ করতে পারতো? নাকি শুভ অত রাগ করতে পারতো বাসায় থাকলে?
আর এসব জেনে লাভ নেই।সেই তাদের শেষ দেখা,মৃত শুভকে সে দেখতে চায় না,তার হিসেব মিলছে না,শুভ কি এত নিষ্ঠুর হতে পারে!তার থেকেও বেশি নিষ্টুর...
বাগানটা খুব বড় না।খুব গোছানো না।এখানেও অনেক মানুষ।বাগানের এক পাশে তার বাবা মা দাড়িয়ে ।অনেক বন্ধু বান্ধব এসেগেছে।মিথিলা এক নজর কেয়াকে খুঁজলো ,না সে আসে নি।
শুভকে কেয়া দেখতে পারতো না,কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড এর বয় ফ্রেন্ড কে দেখতে পারে না।কেনো যেনো কোনো কারণ ছাড়াই এরা একে অন্যকে দেখতে পারে না।
সে কোণের দিকে এগিয়ে গেলো ।তার মা রুনার দিকে এগিয়ে গেলো।রুনার গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে একটা মাইনর স্ট্রোক হয়েছে ।তার শরীর ভালো না,তাকে এখানে আনা কেনো।
মিথিলা বাবার দিকে তাকালো,শেভ করেনি,মানুষটা খুব ফিট ফাট থাকে ,যত খারাপ পরিস্থিতিই হোক।তাকে খানিকটা বিরক্ত মনে হচ্ছে।এই বয়সের ছেলে কেন,কি কারণে , কোন হতাশায় পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়।মাঝখান থেকে তার মেয়েটার জীবন নিয়ে অশান্তি।
মুহিবুদ্দীন কর্নেল কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
তোমার ছেলেরা আসতে আসতে তো দেরি হবে।
সৌরভ, শাফী ওরা আসতে পারছে না।বলে দিয়েছে । মাগরিব বাদ জনাজা। ভাবি আপনি অসুস্থ মানুষ...
রুনা বললেন,
আমি শুভ বাবাকে একবার দেখবো।আমি কখনো আমার মেয়েদের থেকে ,ছেলের থেকে ওকে আলাদা করে দেখিনি দেখা সম্ভব ছিল না ।জামাই হিসেবে ও ওকে ভালোবেসেছি ।
রুনার গলা কেপে উঠল।মিথিলা মাকে জড়িয়ে ধরলো।এই সময় পায়েলকে তার খুব দরকার হয়।পায়েল আপু আসেনি,তাইতো ,তাদের ছোট ভাই রাগিব , সেও আসেনি।রাগিব তো শুভর খুব ভক্ত টাইপ।শুভ ভাই বলতে পাগল সে কেনো এলো না!
মুহিবুদ্দীন বললেন,
তোমার ছেলেকে বলেছিলাম ডিফেন্সে চলে যেতে, কথা শোনেনি,এই ভার্সিটিতে পড়ে কবে চাকরি বাকরি হবে ঠিক ছিল? তার উপর মাস্টার্স টা কমপ্লিট করে নি। এক বছর ধরে ঘরে বসে কি করছিল? মানুষ কাজের মধ্যে না থাকলে ত হতাশা আসবেই।
মিথিলার খুব রাগ হচ্ছে তার বাবার উপর ,বাবা কোনো দিন জামাই হিসেবে শুভকে পছন্দ করেন নি ।একই বয়সী ছেলেমেয়ে দের বিয়ে তিনি পছন্দ করেন না ।
শুভ তার বছর তিনেকের বড়ো কিন্তু তিনি সেটাকে গুরুত্ব দিতেন না ।আজ সে মরে যাওয়ার দিন ও তার এমন সমালোচনা করতে হবে।যেখানে সে নিজে দাড়িয়ে ।
সে বলল, বাবা থাক না, ও বেচেঁ নেই,শুধু শুধূ আর সমালোচনা করে কিছু লাভ তো হচ্ছে না।
মূহিবুদ্দিন কি বুঝলেন তিনিই জানেন।সেখান থেকে সরে গেলেন।
রুনা নিঃশব্দে কাদছেন।হা সত্যি ই ডিফেন্সের কথা মিথিলা অনেক বার বলেছে ওকে বহু বার ,শোনেনি।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার পর যদি কেউ ছবি একটা চায় তাকে কি বলার থাকে?
কয়েক আগেই সে বলেছিল,
তুমি ডিফেন্সের কথাটা একটু ভাব।
কেনো?
কি আশ্চর্য ,এই আঁকা বাঁকা আঁকা আঁকি দিয়ে কি হবে?
যা হওয়ার তায় হবে,সেদিনও পঞ্চাশ হাজার টাকার ছবি বিক্রি হলো।
চার মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকার ছবি! পার মন্থ কত পড়ছে? দিনমজুরের বেতন এর থেকে বেশী হয়,শুভ।
তুমি কি বলো এসব! একজন শিল্পীর সাথে! একজন দিনমজুর...
বাস্তব বাদি কথা কেনো তোমার পছন্দ হবে? হবে না,আমি জানি তো,তোমাকে উৎসাহ দিতে পারবো না,কিছুতেই,মানুষের জীবনে কিছু হওয়ার আগ্রহ যদি ভেতর থেকে না আসে তাহলে অন্য কেউ বললে কি?
আমি অনেক বর্ক আর্টিস্ট হব ।
তুমি পাবলো আবেদীন হইয়ো।
শুভ এবার হেসে বলে,
এত রাগ কেনো,সোনামনি! হ্যা? হলাম আমি পাবলো পিকাসো+ জয়নুল আবেদীন,তোমার ই গর্ব হবে ফ্যামিলি পিক আঁকবো আমি,পেন্সিল দিয়ে আমাদের।তুমি আমি আর চার টা বাচ্চা।
কুত্তার কামড় খাইনি আমি,চারটা বাচ্চা, ইডিয়ট।
সমস্যা নেই, সারোগাসি ট্রাই করব ।
তোমাকে এক লাথি দিয়ে রিকশা থেকে ফেলে দিবো আমি...
হাহা,হাহা, হাহা,আচছা দাও।
দিবই।
দাও তাও ভালো ,ডিফেন্সের কথা আর বলো না ।কোথায় রাঙামাটি,বান্দরবানের গাছের ডালে ঝুলে দোল খেতে হবে ঠিক নেই
যারা আর্মি অফিসার তারা সব গাছের ডালে দোল খাচ্ছে?
অবশ্যই,তাছাড়া মাটির নিচে ফিচে ও ঢুকে থাকা লাগে?
এগুলোই তো অ্যাডভেঞ্চার।
ধুর ধুর, অ্যাডভেঞ্চার শব্দটা শুধু সিনামার জন্য প্রযোজ্য।ওয়েব সিরিজও চলে...
শাট আপ,প্লিজ,যত বাজে কথা।
আরো কারণ আছে,তোমাকে ছেড়ে থাকতে হবে। এমন বুড়িগঙ্গার তীরে রিকশা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরাঘুরি। কথায় কথায় ঝগড়া,এসব...
যত দুনিয়ার ফালতু কথা কোথায় পাও? কিছুদিন দূরে থাকলে এমনিতেই অ্যাট্রাকশন বাড়ে।
আমার তো অ্যাট্রাকশন কম নেই, জানু।
এইবার চর দিবো ,কিন্তু ।হাত ছাড়।
ছাড়বো না,এমনিতে ও সামনের মাসে আমাদের বিয়ে।
এক্সকিউজ মি কাদের বিয়ে?!
নট এক্সকিউজ,আমাদের বিয়ে।
তোমাকে আমি বিয়ে করেছি না ,অত পাগল না আমি ,বেকার এবং অচল একটা ছেলে তুমি ।
বেকার আমি মোটেই না,নিজের সব কাজ নিজে করি,কাল রাতে চা পর্যন্ত নিজে বানিয়ে খেয়েছি,আর অচল! সোনামনি তুমি। কি সচল অবস্থায় দেখতে চাও?
এখন সত্যি চর দিবো,সত্যি...
শুভ দুই হাতে মিথিলার দুই হাত চেপে ধরেছে।ওই দিন ওরা রিকশাতে বসেই ভিজেছিল,বৃষ্টিতে হুক নামায়নি। শুভর খুব ঠাণ্ডা লেগেছিল।
এই দিন গুলো হারিয়ে গেলো ,জীবন থেকে...
কেয়া এসেছে,মিথিলার পাশে দাড়িয়ে বললো,ব্যাপারটা মেলাতে পারছি না,ওকে কখনো আত্মহত্যা প্রবন মনে হয়নি।তোর হতো?
হিসেব তো মিথিলাও মেলাতে পারছে না।প্রথম চিঠিটা তার লেখা , " কেউ দায়ী নয়", তাছাড়া বিষের যে শিশি সে রেখে এসেছিল তা ওখানে নেই অন্য শিশি ওখানে।ওই পরের নোট টায় বা কে লিখলো?
" আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তুমি" এই কথাটা কে লিখলো? একটা চিঠি বেডসাইড টেবিল এ একটা ওর পকেটে পাওয়া গেছে।আর কে আছে যে ওর হ্যান্ড রাইটিং পারতো ,মিথিলা ছাড়া?
হিসেব মিলছে না,দুই বছর সে এই পরিকল্পনা করেছে সে কোনো ফাক রাখেনি।কোনো ভুল করে নি।কিন্তু কেউ একজন আছে ।যে সব কিছু জেনেছে।তাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে ।
মিথিলা পেছন ফিরে শুভর বন্ধু বান্ধবির দিকে তাকালো,আকাশ তার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ জ্বলছে ঘৃণায়।কেনো এমন মনে হচ্ছে? তবে আকাশ?
১ম পর্ব সমাপ্ত।
You must be logged in to post a comment.