দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি?

দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি ২য় পর্ব, তাসমিয়া অমি, দুপুরে ভালো বৃষ্টি হয়েছে ।এখনও তার রেশ যায় নি ।আকাশ ভীষণ ভাবে মুখ ভার করে আছে ।এখন খুব বেশি হলে বেজেছে পাঁচটা ।

শ্রাবণ মাস বেলা এখনও ভালোই আছে ,অবশ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে তা বোঝা যাচ্ছে না।যে কোনো সময় আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

গারুম গুড়ুম শব্দ মেঘের থেকে আসছে এক টানা।থেকে থেকে দমকা হাওয়া গাছ পালা উল্টে পাল্টে দৌড় দিয়ে চলে যাচ্ছে,মিনিট দশেক পর চুপচাপ আবার সেই হাওয়া।

জহির পা চালালো। তার এমনিই দেরি হয়ে গেছে ।রাকিব বলেছে চারটার আগে আগে আসতে , সে বের ও হয়েছে ঠিক সময়ে,তার তো কোনো কাজ কর্ম নেই আদৌ ।

হাট তে হাট তে অর্ধেক রাস্তা চলে ও এসেছিল,এমন সময় মেঘ ,বৃষ্টি এক সাথে শুরু হল।তার বাসস্থান থেকে রাকিব দের বাসা হাটা পথে ঘণ্টা দুই লেগে যায়।আর হাটা ছাড়া তার আর কোন উপায় ও নেই ঢাকার শহর তার কাছে পুরোটাই হেঁটে বেড়ানোর জায়গা।

।জহির হচ্ছে সেই শ্রেণীর বেকার যার কাছে এখন পাঁচ টাকার একটি নোট আছে ,কারণ ওটাকে চালানো যাচ্ছে না।নোটের দুই কোনায় আড়াআড়ি করে কাটা ,হালকা পোড়া ভাব ও আছে এই নোটে দেশ ভোরে যাচ্ছে ।

তার মতো গরীবের কাছেই যে কত এলো। বাসে চড়লেই কন্ডাক্টর শালা দিয়ে যাবে,আর কিছুতেই স্বীকার করবে না খুচরা সে দিয়েছে।আগের দিন হলে জহির মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দিত ।

কিন্তু এখন তার মনের অবস্থা খুবই খারাপ।গত চার মাস সে প্রায় মরে মরে বেঁচে আছে ।কিছুই আর আগের মত নেই ।

জহির আরো দ্রুত পা চালায়।রাকিব তাকে ফোন দিয়েছিল অনেক বার।সে করো ফোন ধরে না ,চার মাস।তেমন কেউ দেয় ও না।সে অবশ্য একজনের ফোনের জন্য অপেক্ষা করেছিল।

বেশির ভাগ সময় ফোন বন্ধ থাকে,অল্প সময় খুলে সেই একজনের জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে,এটা একধরনের খেলা।অভিমানের খেলা, কাউকে কষ্ট দাও,তাকে আরো কষ্ট দাও,অথবা এতে সে কষ্ট পাক না পাক ,নিজে ষোলো আনা কষ্ট পাও ।এই নিজে কষ্ট পাওয়া টুকু আসল, অন্য মানুষটাকে কষ্ট দেয়াটা আসল না,সেটা সুদ ।

এখন আসলের চেয়ে যেহেতু সুদের পোড়া বেশি ,সুতরাং সুদের পেছনে ছোটো। যার পেছনে ছুটবে সেকি সেই অন্য মানুষ? সে কি তার স্ত্রী না! অথবা স্ত্রী না।

কোনো কাগজে তিন বার সই করা বিয়ে না,কিন্তু দশ বছরের পরিচয় আর পরিণয়! না ,পরিণয় হয়নি ।হলে তারা এমন করতে পারতো না একজন অন্তত ব্যাতিক্রম আচরণ করত ।

জহির অবশ্য কিছুর পেছনে ছোটেনি।চার মাস ধরে সে একাই আছে । আগেও যে রকম একা ছিল।

দুই এক ফোঁটা বৃষ্টি এসে গায়ে পড়লো ,এমন সময় সে রকিবদের বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো ।ছোট্ট লোহার গেট,তার বুক পর্যন্ত । উপর দিয়ে হাত দিয়ে ভেতরের দিকটা খুলে ঢুকলো।আকাশের মেঘ আরো ঘন হয়ে এল।

এতটুকু আলো নেই যেনো। এমনই এদের বাড়িতে ঝোপ ঝাড় ছোট বড় অজস্র গাছে ভরা। আম,বকুল এর বেশ অনেক গুলো গাছ ঝাঁকড়া হয়ে দাড়িয়ে এখানে ওখানে।জায়গাও বেশি না।

জহির দরজায় টোকা দিতেই হালকা করে খুলে গেলো । রাকিব দের বাড়িতে মানুষ বলতে তিন জন ।রাকিব ,ওর মা,আর কাজের মহিলা,কামালের মা।রাকিবের বাবা বিদেশ থেকে বহু বছর ।এক দের বছরে আসেন ।

জহির রকিবকে দুই বছর প্রাইভেট পড়িয়েছিল।সেই থেকে পরিচয় ।তারপর বহু বছর পার হয়ে গেছে।রাকিবের অনার্স শেষ । সেও এখন চাকরি খুজছে। জহির আর চাকরি খুঁজছে না।সে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।এখন টিউশন করে না ।এখন সে আর পারছে না ।জীবনের প্রতি বিরক্ত।

দরজা ঠেলে খুলে ভেতরে ঢুকলো।ভেতরে পাতলা অন্ধকার।দরজার পাশের জুতোর রেকের পায়ের কাছে সেন্ডেল খুলে ভেতরে এগোলো।রাকিব কাল সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বলেছে,তার সাথে খুব দরকার ,খুব । সে যেনো অবশ্যই আসে।

কি দরকার,কি বৃত্তান্ত কিছুই জানে না।তার মতো অকাট অপদার্থ মানুষ কে ওর কি দরকার? খুব দরকার! চার মাস আগের ঘটনা এমন কেউ সম্ভবত নেই যে তার পরিচিত অথচ ঘটনা জানে না।

ড্রয়িং রুমের অন্য পাশের রাকিবের ঘরের দরজা অল্প খোলা ,সেই ঘর থেকেই যা একটু আলো আসছে।সে এগিয়ে গিয়ে ওই দরজা ঠেলে দিতেই , যেনো আচমকা বজ্রপাত হল।কাছাকাছি কোথাও ,নাকি তার বুকের ভেতর! 

দরজা খোলার সামান্য আওয়াজে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পায়েল।ঘরে আর কেউ নেই।শুধু পায়েল। বড় ঘর , পালঙ্কের মত খাট ,খাটের চার দিকে স্ট্যান্ড লাগানো ,পায়ের কাছের একটি স্ট্যান্ড ধরে পায়েল দাড়িয়ে ।

পায়েল ! চার মাস পর দেখা ।জহির চোখ নামিয়ে নিল।এক পলক। হ্যা,এক পলক ই যথেষ্ট। গাঢ় নীল শাড়ি, ছোট্ট টিপ ভ্রু দুটোর মাঝখানে।ঢেউ খেলানো চুল গুলো খোলা ।লম্বা ,ফর্সা শরীরে যেনো এক জীবন্ত ঝর্না ।

জহির চোখ নামিয়ে নিয়েছে । সে তাকাচ্ছে না। কেনো ? ঘৃণায়? 

পায়েল ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিল । মানুষটার চেহারা এক সময় ভালো ছিল ।এখন তার কিছু নেই।মাত্র দুইটা শার্ট ছিল,চার মাস আগে একটা ছিঁড়ে ছিল,এখন কি এই একটায়?

সেই প্যান্ট টায় পরা।মুখে এলোমেলো দাড়ি গালে গালে অবিন্যস্ত হয়ে বড়ো হয়েছে। চুল ছোট করে ছাটা।গায়ের রং আরো কালো হয়েছে ।আরো লম্বা হয়েছে কি? বেখাপ্পা হয়ে দাড়িয়ে আছে।

চৌদ্দ বছর বয়সের একটি মেয়ে কি এই ছেলেকে দেখেই মুগ্ধ হতো রোজ! সেই শামলা, কোকড়া চুলের লম্বা ছেলেটা কোথায়? সেই নামকরা মেধাবী ছাত্রটি হারিয়ে ,নিঃসঙ্গ বেকার যুবক দাড়িয়ে ।

পায়েল দেখলো জহিরের মুখ,চোয়াল শক্ত হচ্ছে।সে কয়েক পা এগিয়ে এসে হাত ধরলো,

আমি রাকিবকে বলেছিলাম তোমাকে বলতে।

পায়েল হাত ধরে টেনে ওকে ভেতরে আসতে বললো,

তোমার সাথে অনেক কথা আছে ।প্লিজ,ভেতরে এসো ।ওরা কেউ নেই ।রাকিবের এক চাচাতো বোনের বিয়ে ,আজ রাতে ফিরবে না ।

জহির এবার সরাসরি তাকালো পায়েলের চোখের দিকে।ঠাণ্ডা চোখ।পায়েল এই দৃষ্টির সাথে পরিচিত ।সে একে বারে বুকের কাছে এসে গেলো,

আমায় ক্ষমা করো ।

জহির চোখ সরিয়ে নিয়েছে ।পায়েল জড়িয়ে ধরলো দু হাতে।বললো,

তাকাচ্ছ না কেনো? অন্যায় করেছি তায়?আচছা তাকিও না,তাকাতে হবে ।আমি অবশ্যই শাস্তির যোগ্য এখন বলো ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেনো? আমি কত জায়গায় খুঁজেছি তোমায় ? কতো বার...

পায়েলের গলা বুজে এলো ।হা ।সে অন্যায় করেছে।বার বার অন্যায় করেছে।প্রত্যেকবার ক্ষমা পাবে এমন আশা করা ঠিক না ,তবু সে ক্ষমা চেয়েছে,ক্ষমা পেয়েছে এবারও পাবে জানে ।যদিও এবারের অপরাধ বেশ গুরুতর।

পায়েল ছয় মাস আগে এক সকালে জহিরের বড়ো ভাইয়ের বাসায় আসে,জহিরের থাকার জায়গার ঠিক নেই ।বড়ো তিন ভাইয়ের বাড়িতে মাঝে মাঝে থাকে ,কয়েকটি মেসে মাঝে মাঝে থাকে,কয়েক জন ছাত্রের বাসায় ও থাকে।পায়েলের কপাল ভালো সেদিন ও ছিল।

বাসার দরজায় নক করতেই এক জন মহিলা দরজা খুলে দিলেন , জহিরের বড়ো ভাবি।

আস্তে করে বললেন,

ভেতরে এসে বসো।জহির আছে।

জহিরের আত্মীয় স্বজন মুটামুটি সবাই তাকে চেনেন।জহির শুধু একটা চাকরি পেলেই হয় ,তারপর তাদের বিয়ে ।আর জহির চাকরি পেলে হয়।ঢাকা ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে আজ ছয় বছর।পায়েলের সাথে দেখা হয় যখন জহির অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র! 

পায়েলের বাড়ির কেউ ঘুণাক্ষরেও জানে না।ছোট বোনের কাছে কিছুই গোপন থাকে না ।তার ক্ষেত্রে তাও না।মিথিলা ও জানে না। জহির তার চির অন্তরালের ,গোপন প্রেমিক ।

জহির বাইরে এসে দেখলো ,সোফায় বসে পায়েল।বললো,

বাইরে চলো,কথা আছে ।

দুই জনে বাইরে এলো। সাড়ে সাতটা বাজে মোটে।জহির বললো,

কি হয়েছে তোমার? 

কিছু না। পায়েল কে ফ্যাকাশে লাগছে।সাদা রঙের থ্রি পিসএ ,আরো মন মরা ।খুব ক্লান্ত ও যেনো বহু রাত জাগা।চোখের নিচে কালি।সে আবার বললো,

কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো?

আমার আর ভালো লাগে না।

কি ভালো লাগে না? কি হয়েছে?

পায়েল আরো এগিয়ে এলো, সাধারণত সে রাস্তা ঘাটে এত কাছাকাছি আসে না।আজ কিছু ওলট পালট হয়েছে ।বললো,

একটা কথা বলছি ,শুনবে?

কি কথা?

বিয়ে করে ফেলি চল।

বলো কি পাগলের মত।

জহির আশেপাশে তাকাল রিকশা খুঁজতে হবে। পায়েলের মাথার ঠিক নেই।বললো,

রাতে ঘুম হয়নি? 

আমি সুস্থ ই আছি।আমার কথার গুরুত্ব দাও।প্লিজ।

তোমার কথার কি গুরুত্ব দেব? তুমি কি বলছো জানো?

কি ভুল বলেছি? আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি আমাকে ভালোবাস। আমরা বিয়ে করতে চাই । ব্যাস।

আমি এখনও চাকরি করি না ।পাচ্ছি না ।সবাই চাকরি পায় না ।তুমি দেখছো তো ট্রাই করছি ।

তোমাকে চাকরি পেতে হবে না ।টিউশন দিয়েই চলবে ।

ছাই চলবে ... পায়েল ... কেনো অবুঝ হচ্ছ? গোপনে বিয়ে করব ? তাহলে আগেই তো করতে পারতাম ।অন্তত পাঁচ বছর আগে তো করতেই পারতাম।

না পারতাম না ।

কেনো?

কারণ পাঁচ বছর আগে আমিতো চাকরি করতাম না ।

মানে? বুঝলাম না কিছুই ... তুমি কি চাকরি পেয়েছ? 

অ্যাপোইন্টমেন্ট লেটার পরশু পেয়েছি।

এই কথা এখন বলছো? 

জহির হটাৎ খুব খুশি হয়ে গেলো। পায়েলের গাল টিপে দিয়ে বলল,

আগে বলবে না? হুম? এত ভালো খবর! উফ!

খুব ভালো খবর বুঝি?

যারা চাকরি পাচ্ছে না তাদের জন্য এটা কি খবর তা কি তুমি বুঝবে খুকি ?

হুম । ঠিক ।

পায়েলের গাল আর একবার স্পর্শ করে।বললো,

কি চাকরি? 

ব্যাংকে।

ব্যাংকে! তোমার তো ...

হুম ,ব্যাংকের চাকরি পছন্দ না। বিসিএস দিয়ে আমলার চাকরিও পছন্দ না । কিন্তু তুমি চাইলেই তবে চাকরিটা নেবো ।

মানে কি ... আমি চাইলে আবার কি? আমি অবশ্যই চাই।এটা করতে থাকো।তার মধ্যে দেখো কলেজ বা ভার্সিটিতে ট্রাই করে ।এখন কেউ লেকচারার হতে চায় ! তোমাকেই শুধু দেখি।

আমার টিচিং প্রফেশন ভালো লাগে।শান্তি শান্তি ,লেখাপড়া নিয়ে থাকা । কিন্তু তুমি যদি আজ বিয়ে করতে রাজি হও তবেই ।

তবেই!

তবেই ব্যাংকের এটা নেবো।নইলে না।

পায়েল, তুমি বলতে চাও, আমি বেকার থেকে বাচ্চা সামলাবো আর তুমি বাইরে বাইরে চাকরি করবে?

বাচ্চা সামলানো কি খুব অসম্মানের কাজ ? যারা বাইরে চাকরি করবে তারাই সম্মান পাবে এমন কোনো বিষয় আছে নাকি ? আশ্চর্য,তুমি দশ বছরের মধ্যে একটা চাকরী জোগাড় করতে পেরেছ? তোমার সম্মানের কি হবে?

জহিরের এবার অবাক হবার পালা।পায়েল এসব কি বলছে! কখনো সে এমন কিছু তো বলে না। দশ বছর ধরে সে মোটেই চাকরি খুঁছে বেড়াচ্ছে না।তাছাড়া সে চাইলে অনেকের প্রেফারেন্স নিয়ে একটা চাকরি নিতেই পারতো ।

নেয় নি।এসব কথা কি পায়েলের অজানা?সে কি বলবে ওকে? সত্যি ভাষা নেই। পায়েল তার সাথে ঝগড়া করছে ! কটু কথা বলছে ? জহির চুপ করে রইলো ।পায়েল আবার বললো,

দেখ, আমি ... আমি ... আমি কি করে বোঝাই ... আমাদের বিয়ে হওয়াটা দরকার ...আপাতত বিয়েটা হোক ... তারপর ছোট একটা বাসা খুঁজে উঠে পড়ব ... এই চাকরিটা নি,আর তুমি খুঁজতে থাকো... 

আর তোমার বাবা ? বাড়ির অন্যরা ? তুমি বাড়ির বড়ো মেয়ে ।

সেটা নিয়ে আমি ভাবছি না । আমি বড়ো মেয়ে আমার ওপর অনেক দায়িত্ব ।আমি জানি । তার মানে এই না যে আমার নিজের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।

তোমার চাওয়া পাওয়া এমন হটাৎ করেই দেখা দিল কেনো ? চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্টের এই লেটার ?

একদম তায়।আমি তোমার সাথে জীবন কাটাতে চাই।আমি কখনো নিজের সিদ্ধান্তে কিছু করিনি।কোনো দিন না।আজ আমাকে করতেই হবে ।

শুধু তোমার সিদ্ধান্ত ?আর আমার ?

তোমার !

পায়েল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।এমন হতবাক সে আর কখনো হয়নি। জহির যেনো সেই দৃষ্টির সামনে খুব অসহায় হয়ে গেলো।এক কালে যত গৌরব ই থাকুক ,আজ সে শূন্য হস্ত।

পায়েলের মত সহজ, সুন্দরী, শিক্ষিতা একটি মেয়ে কে সে পেতে পারে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।সেখানে তাকে প্রত্যাখ্যান করা! 

সে বলল, 

আমার সিদ্ধান্ত হলো ...

তুমি আমাকে কি শুধু প্রেমিকা হিসেবে দেখো?

মানে!

আমি তোমাকে শুধু একজন প্রেমিক হিসেবে দেখি না,তুমি আমার সঙ্গী,শুনতে ঠাট্টার মত শোনাচ্ছে? হুম ,

তুমি আমার জীবনের প্রথম সেই মানুষ ,প্রথম সেই উন্মাদনা, কৈশোর থেকে তোমার জন্য আমার সবকিছু ।আমার মন ,শরীর প্রতিটি দিন শুধু তোমার জন্য তৈরি হয়েছে।তোমার হয় নি? 

কি বলবে সে ? এই আবেদনের পর আর কি বলবে ? অনেকক্ষণ তারা দাড়িয়ে আছে,এলাকার লোক অফিসে যেতে শুরু করেছে,দোকান পাট খুলছে মোড়ের, বাসাগুলোর থেকে প্রতিবেশীরা নিত্যদিনের কাজে বের হচ্ছে ।

জহির একটা রিকশা নিয়ে উঠে এলো ,পায়েল বসলো পাশে।একটি কথাও না বলে সোজা কাজী অফিসে , জহিরের দুই বন্ধু আগে থেকে সেখানে বসে , শরীফ,আজমল ।জহির খানিকটা বিরক্ত হলেও এক গাদা ভালোলাগা তাকে গ্রাস করছে।

বিয়ে হয়ে গেল।কাগজ পত্র রইলো জহিরের কাছে। সন্ধে পর্যন্ত তারা আজমলদের বাড়ির ছাদে বসে ছিল। আজমোলদের বাড়ির সবই ভাড়া দেয়া,পনেরো তলা পর্যন্ত । ছাদে আজমল থাকে এক রুমে,আর কেউ আসে না।সেইদিন আর বিকেলের রোদ অল্প মেঘ এদিক ওদিক, হাওয়ার সঙ্গে ভালো ঠাণ্ডা । তীরের মত বিধছে।

।জহিরের এক হাত কোলের ওপরে রেখে তার কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে ছিল পায়েল ।এত কাছাকাছি তারা বসে না । পায়েল ছোঁয়াছুঁয়ি খুব বাঁচিয়ে রেখে চলত ।রিকশাতে পর্যন্ত সরে সরে বসত ।কখনো হাত ধরা জড়িয়ে ধরা বা চুমু অসম্ভব ।

আজ সব অন্যরকম ।সকালে উঠে শেভ করার সময় কি সে জানতো ,আজ তার ভালোবাসার মেয়েটির সাথে তার বিয়ে ? জহির ঝুঁকে ওর চুলের গন্ধ নিল।

আইস ক্রিম এর মত গন্ধ , পায়েলের চোখ, নিটোল গাল ,ভেজা ঠোঁট , হাওয়াতে বেসামাল চূর্ণ চুলের দল তাকে যেনো চুম্বকের মত আকর্ষণ করে।পায়েল বললো,

কি ? 

কিছু না ।

তাকিয়ে কি ভাবছো? 

বলবো না । তোমাকে জড়িয়ে ধরবো? 

না ।

কেনো? 

বলবো না । আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরি?

না ।

কেনো? 

আমিও বলবো না ! 

দুজনই হেসে উঠলো। জহির তার সভাব মত পায়েলের গাল টিপে দিল।জীবন তো সুন্দর হওয়ার কথা ছিল ।তাদের একটা ছোট বাসা নিয়ে ছোট্ট সংসার হওয়ার কথা ছিল!

কিন্তু জীবন পূর্ব পরিকল্পনা মতো চলে না । সে চলে নিজস্ব নিয়মে।এরপর পরই কিছু ঘটনা ঘটে যায়।যা দুই প্রান্তে নিয়ে যায় ওদের।

২য় পর্ব সমাপ্ত ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles