আমার প্রথম যৌবনে যখন বন্ধুদের সাথে পাখি শিকারের যেতাম, তখন একবার এক কাণ্ড ঘটেছিল। আমরা সাধারণত পাখি শিকারের জন্য ঘন বনবাদাড় বেছে নিতাম। প্রথমদিকে আমার কোন বন্দুক ছিল না। তাই দু'একদিন কোনো বন্ধু শিকারে যেতে না পারলে তার বন্দুকটি ধার নিতাম। বাবাকে কত করে বলেছিলাম একটা বন্দুক কিনে দিতে কিন্তু বাবা বলতেন পাখি মারা ভালো নয়।
বাবার অতসব কথা কিন্তু আমার মাথায় ঢুকতো না। দিনরাত শুধু এই জপ করতে লাগলাম, "আমার একটা বন্দুক চাই চাই!" অবশেষে অনেক কষ্ট করে কিছুটা টাকা জমিয়ে আর মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে একদিন সত্যি সত্যি একটা বন্দুক কিনে ফেললাম। পরদিন সকালে সবাই মিলে গ্রামের উত্তর দিকের ঘন জঙ্গলটার দিকে শিকারে বের হলাম। জঙ্গলের ভিতর ঢুকে যে যার মতো বন্দুক হাতে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম।
আমি সামনে এগোতে লাগলাম। মাঝে মধ্যে খেয়াল করলাম ছোট ছোট গুল্মলতারা আমার পা জড়িয়ে ধরছে। তাদেরকে উপেক্ষা করে, ছাড়িয়ে আবার ছুটতে লাগলাম পাখি শিকারের নেশায়। বনপথে চলার সময় বট, অশ্বত্থ, হিজল, তমাল, মেহেগুনি, শিরীষ, শিশু এরা যে পাতা নাড়িয়ে নাড়িয়ে আমার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেনি তা নয়।
কিন্তু আমি তাদেরকে একদমই পাত্তাই দিলাম না। যে দিকে পাখির কলরব শুনতে পেলাম, খুব সন্তর্পনে ছুটতে লাগলাম সেদিকে। দেখলাম লম্বা ইউক্যালিপটাস গাছটার চারপাশে কয়েকটা পাখি নিজেদের মধ্যে বকর বকর করছে। বুঝলাম কোন একটা বিষয় নিয়ে হয়তো ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু ওদের ঝগড়ার কারণ জানার কোন আগ্রহ হলো না আমার।
আমার মনে শুধু একটাই ভাবনা, কি করে একটাকে বাগে পাওয়া যায়। খুব সাবধানতার সাথে বন্দুক তাক করলাম। ওরা কিন্তু আগের মতোই নির্বিকার ঝগড়া করে চলেছে। আমি বন্দুক তাক করে ট্রিগারে হাত রাখলাম, বুঝতে পারলাম কোনো এক অজানা কারণে আমার হাতের উপর দিয়ে ভূমিকম্প বয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই থামাতে পারছিনা তাকে।
এই কাঁপুনির মধ্য দিয়েই কখন যে আমার হাত বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিয়ে বসেছে, বুঝতেই পারলাম না। বুঝতে পারলাম তখন, যখন দেখলাম ঝগড়া ভুলে গিয়ে সবাই প্রাণপনে ডানা ঝাপটে দিকবিদিক উড়ে যাচ্ছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। হেরে যাওয়ায় নিজের উপর খুব রাগ হতে লাগলো। হঠাৎ কোন এক অচেনা পাখির আর্তচিৎকারে ফিরে তাকালাম।
দেখলাম হলুদ রঙের একটা পাখি উড়তে চেষ্টা করছে, আবার পড়ে যাচ্ছে, আবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আমি তাকে ধরার জন্য অগ্রসর হলাম। সে ভয়ে একটা কাঁটাওয়ালা ঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়লো এবং সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেললো। আমি ঝোপের কাছে গিয়ে দেখলাম, আমার মতো পাখি শিকারি হায়েনার হাত থেকে অবলা, অসহায়, নিরীহ, বিপদে পড়া পাখিটাকে বাঁচাবার জন্যে ঝোপটা তার চারপাশে তীক্ষ্ণ ধারালো কাঁটাওয়ালা বেড়া দিয়ে রেখেছে।
কাঁটাওয়ালা ঝোপের আঘাত সহ্য করতে হবে জেনেও আমি কিন্তু পাখিটার দিকে হাত বাড়াতে পিছপা হলাম না। তার দিকে হাত বাড়াতেই দেখলাম, হলুদ রঙের শরীরটার মধ্যে কালো কুচকুচে চোখদুটি ভয়ে চুপসে গেছে। ততক্ষণে পাখিটি আমার হাতের মধ্যে চলে এসেছে। তার একটা ডানায় কিছুটা পুরোনো একটা ক্ষত দেখতে পেলাম। হয়তো আমার মতো কোনো শিকারির গুলিতে আহত হয়েছে সে। ঠিকমত উড়তে না পারার কারণটি ও এবার বুঝতে পারলাম।
পাখিটিকে বাড়িতে এনে রাখলাম। যত বার তার দিকে তাকিয়েছি, ততোবারই দেখেছি তার চোখে মুখে অজস্র মিনতি ও কাকুতি ঝরে পড়ছে। পাখিটাকে দেখে আমার খুব মায়া হল। শুধু তাই নয়, এটাও লক্ষ্য করলাম যে 'পাখিটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর!' হলুদ রঙের শরীরের মধ্যে কালো কুচকুচে চোখদুটি যেন আরও মানিয়েছে। বাংলার প্রকৃতি যেন তাকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছে।
আমি তার পিঠের উপর আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম, বোঝাতে চাইলাম "তোমার কোন ভয় নেই ছোট্ট সোনা পাখি!" আমার মনে হল, সে ও যেন বুঝতে পারল আমার মনের কথা। রাতের বেলা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগিয়ে দিলাম। খাবার ও খেতে দিলাম কিন্তু সে কিছুই খেল না। সকাল বেলায় দেখলাম ক্ষতটা কিছুটা সেরে উঠেছে। খাবার দিলাম সাথে আরেকবার ঔষধ ও লাগিয়ে দিলাম।
তাতে সে অনেকটা সেরে উঠেছে। আমি ওকে আমার হাতের উপর করে একটু একটু ওড়াতে লাগলাম। ক'দিন পর দেখলাম ঠিকমতো খাওয়ানো, চিকিৎসা, যত্ন, ও ভালোবাসা পেয়ে ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। মনের ভিতর থেকে একটা তৃপ্তি ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ইতিমধ্যেই পাখিটাকে আমি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। তাই ওকে ছাড়তে আমার একটু কষ্টই হচ্ছিল।
পরমুহূর্তে ভাবলাম, এখানে যত ভাল খাবারই দেই না কেন আটকা পড়ে থাকলে ওর খুব কষ্ট হবে। বনে-বাদাড়ে, গাছে গাছে ফিরতে পারলেই ভালো থাকবে ও। বিকেল বেলায় পাখিটাকে হাতে নিয়ে আবার ছুটে গেলাম বনের দিকে। তারপর বললাম, "যাও আমার ছোট্ট সোনা পাখিটি!" বাংলার গাছে গাছে, আকাশে, বাতাসে মনের সুখে উড়ে বেড়াও।
তারপর এক মুহুর্ত আমার দিকে তাকিয়ে রইল। সে চাহনিতে যেন কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করল ও। তারপর ডানা ঝাপটে খুশি মনে উড়ে গিয়ে বসল ইউক্যালিপটাস গাছটার উঁচু ডালে।
তারপরে যৌবনে অনেকবার বন্ধুদের সাথে পাখি শিকারে গিয়েছি, কিন্তু কোনদিনই একটা ও পাখি মারতে পারিনি। আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে টিটকিরি করে বলতো 'কি মহৎ পাখি শিকারি রে বাবা? জীবনে একটা পাখি ও মারতে পারলি না।আমিই কেবল মনে মনে জানতাম, আমি ইচ্ছে করেই কখনো ওদের গায়ে লাগাই না।
আসলে ওদের দেখতেই আমার খুব ভালো লাগে। ওদের কিচিরমিচির শব্দ, এ ডাল থেকে ও ডালে নাচানাচি, হরেক রকমের সৌন্দর্য, আর থেকে থেকে সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া আমাকে বিমোহিত করত। প্রকৃতির সাথে পাখিদের কি অসীম করুণ নিবিড় সম্পর্ক!
আমার লেখাতে কমেন্ট করে আমাকে লেখার আগ্রহ বাড়ীয়ে দিলে খুশি হব।
সত্যিই আপনার আর্টিকেল লেখাটি সুন্দর হয়েছে।
অনলাইলে হাজার হাজার টাকা আয় করতে দেখে আসুন https://blog.jit.com.bd/revenue-from-the-site-5227
অনলাইলে হাজার হাজার টাকা আয় করতে দেখে আসুন https://blog.jit.com.bd/revenue-from-the-site-5227
আপনার আর্টিকেলে ইনকাম বারাতে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে গ্রুপে জয়েন হন।
https://www.facebook.com/groups/4923657331062352/?ref=share
https://blog.jit.com.bd/ref/azad2021 এই সাইটে লগইন করে অনলাইনে টাকা আয় করুন।
https://blog.jit.com.bd/ref/azad2021 এই সাইটে লগইন করে অনলাইনে টাকা আয় করুন।
https://blog.jit.com.bd/ref/azad2021 দারুণ লিখা হয়েছে।
অনলাইনে টাকা আয় | রুমানার সফলতার গল্প লেখাটি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। ইচ্ছা করলে রুমানার মত যে কেউ অনলাইনে আয় করে নিজেকে স্বাবলম্বী করা সম্ভব।
সুন্দর লেখা।
এগিয়ে যান
You must be logged in to post a comment.