আপনাদের সাথে সংক্ষিপ্ত একটা ঘটনা শেয়ার করি, আজ আমি বাসায় আসার সময় ভাবলাম একটা রিকশাওয়ালা মামার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা যাক।
তারপর আমি বললাম মামা যাবেন?আমি যেখানে ছিলাম ওই জায়গা থেকে আমার বাসায় যেতে সাধারণত রিক্সা ভাড়া ৪০/৫০ টাকা..
আমি চিন্তা করলাম যে কত কমে যাওয়া যায়। প্রথমে এক রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম যাবেন..? বললো হ্যাঁ যাবো। পরবর্তীতে আমি বললাম মামা কত টাকা? তিনি আমাকে বললো ৪০ টাকা। অনেক বলার পরে মামা 30 টাকায় যেতে রাজি হলো।
তারপর রিকশায় থাকা অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ মামার সাথে কথা হলো। কথা বলে জানতে পারলাম মামার বাসা রাজবাড়ী। দুইটা ছেলে একটা মেয়ে,, একটা ছেলে একটা মেয়ে কলেজে পড়ে,,একটা ছেলে স্কুলে পড়ে। আমি মামাকে বললাম তহলে তো মামা অনেক টাকা খরচ হয় প্রতিমাসে, তাই না?
মামা আমাকে বললো তা তো অবশ্যই। প্রতিদিন যা ইনকাম হয় তার পুরোটাই বিকাশে পাঠিয়ে দিই বাড়িতে। জানতে পারলাম মামার দৈনিক ইনকাম ৭০০/৮০০ টাকা।মামার বয়স হয়েছে। তাই চাইলেও বেশি ইনকাম করতে পারে না।
মামা নিজে কোন সময় খাওয়া দাওয়া করে কোন সময় খাওয়া দাওয়া করে না। কিন্তু দিন শেষে তিনি নিজের ছেলেমেয়েদের কে কষ্ট দিতে চাইনা। সবাই চায় নিজের ছেলেমেয়েগুলো ভালো থাকুক। তেমনি রিক্সাওয়ালা মামা টাও নিজে কষ্ট করে নিজের ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা করাচ্ছে,,তাদেরকে ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
হঠাৎ আমি মামাকে বললাম চলেন মামা আমরা আজ রাতে খাওয়া দাওয়া করি। পাশে কাচ্চির দোকানটার সামনে দাড়াতে বললাম।তারপর মামাকে বললাম মামা চলেন আজকে আমরা খাচ্ছি খেয়ে আসি। অনেকক্ষণ বললাম, তাও মামা যেতে চায়না।
মামা আমাকে বলছে আপনি যান,,আপনি খেয়ে আসেন।আমি খাবো না।আপনি আমাকে বলেছেন এতেই আমি খুশি। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকছি আপনার জন্য।আপনি যেয়ে খেয়ে আসেন। তারপর আমি মামাকে বললাম পার্সেল করে দিই? তাও সে রাজি হলো না।
আমার হাত ধরে টেনে আবার রিকশায় উঠিয়ে দিলো।বলল মামা চলেন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসে। ইতিমধ্যে আশেপাশের মানুষগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কারণ আমি মামাকে এত জোর করছি মামা শুনে না আমার কথা।
সে খাওয়া-দাওয়া করবে না। তারপরে আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলো। এরপরে আমি যা করলাম,, আমার কাছে খুচরো 30 টাকা থাকা সত্ত্বেও আমি মামাকে বললাম মামা আমার কাছে তো খুচরা টাকা নাই। 500 টাকার একটা নোট আছে।
৫০০ টাকায় নিয়ে যান।মামা আমাকে বলল আপনার মানি ব্যাগ টা দেখান তো আমাকে,, আমি জানি আপনার কাছে খুচরা টাকা আছে। আপনি আমাকে 500 টাকা দিবেন বলে মানিব্যাগটা দেখাচ্ছেন না।
তারপরে সেই খুচরো ৪০ টাকা বের করে দিলাম।তারপরও সেই রিকশাওয়ালা মামা আমাকে 10 টাকা ফেরত দিতে যাচ্ছে ।কারণ আমাদের ভাড়া ঠিক করা হয়েছিলো 30 টাকা। পরে জোর করে কিছু টাকা বেশি দিয়েছিলাম।
মনে মনে চিন্তা করলাম যে এমন মানুষও কি বর্তমান সময়ে পাওয়া যায়...??? মানুষের মন মানসিকতা এতোটা ভালো কিভাবে হয় .? তারপরও আমরা কিছু মানুষ নিয়মিত তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি,, যেটা খুবই কষ্টকর।
তবে রিকশাওয়ালা মামা যাওয়ার সময় কিছু কথা বললো যেই গুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে৷
কথাগুলো এইরকম ছিল যে,
❝ আসলে মানুষের ব্যাবহার টাই অনেক। আজ আপনি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছেন এতেই আমি খুশি। আপনি আমাকে বিরিয়ানি খাওয়াতে চেয়েছেন,, 500 টাকার নোট দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি চিন্তা করলাম আপনি আমার থেকে অনেক ছোট।
আপনি ইনকাম করেন কিছুটা, যার জন্য আমার কিছুটা উপকার করতে চেয়েছেন। আপনার মনমানসিকতা আসলে অনেক ভালো। কারন অনেক মানুষের সাথেই তো প্রতিনিয়তই দেখা হয়,,অনেকে দশ বিশ টাকার জন্য অনেক খারাপ ব্যবহার করে, গালিগালাজ করে,
অনেক ছোট করে দেখে। আবার অনেক সময় রাস্তাঘাটে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি গায়েও হাত তোলে।কিন্তু আমরা কিছুই বলতে পারিনা। তুমি যে বাবা আমায় এতোটা সাহায্য করার চেষ্টা করেছো,
এতেই আমি অনেক খুশি। আর রিজিকের মালিক সৃষ্টিকর্তা। তিনি যথেষ্ট ভালো রেখেছে আমাকে। আমার আর কিছু লাগবে না।ভালো থাকবা,তোমার জন্য দোয়া রইল, জীবনে অনেক বড় হও। ❞
তারপর তিনি চলে গেলেন। চেষ্টা করলাম মানুষকে সাহায্য করার,, কিন্তু দিন শেষে এত সুন্দর একটা শিক্ষা পাবো এটা কোন দিনও কল্পনা করতে পারি নাই। ভালো থাকুক এই মানুষগুলো। আসুন আমরা চেষ্টা করি এই মানুষগুলোর সাথে খারাপ ব্যবহার না করার।
You must be logged in to post a comment.