ভালোবাসার গল্প?

বিশাল এরিয়ার উপর প্রাসাদসম বাড়িটাকে ঠিক নতুন বউয়ের মত করে সাজানো হয়েছে।চারিদিকে আর্টিফিসিয়াল লাইটিং আর রং বেরঙের কাগজ,লাইট,

বেলুন,ফুল আর রঙিন ফিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে।কিছু্ক্ষণ আগেও লোকজনের কোলাহলে গম গম করছিল কিন্তু এখন সব একেবারে নিস্তব্ধ।হবে নাই বা কেন?

রাততো আর কম হল না,যে যার মত ঘুমিয়ে পড়েছে শুধুমাত্র দুজন ছাড়া।তাদের মধ্যে একজন হলাম আমি আর অন্যজন আমার বর… (ভালোবাসার হাতছানি)

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন এ বাড়িতে আজ একটা বিয়ে হয়েছে,আজ বললে হয়তো ভুলই হবে।আসলে বিয়েটা গতকালকেই হয়েছে,আজকে আমাদের বাসররাত।অবাক হচ্ছেন?

ভাবছেন বিয়ে কালকে হল অথচ বাসর আজকে!অবাক হবেন না,আসলে পরিস্থিতিটাই এমন ছিল যে এছাড়া আর কোন উপায়ই ছিল না…

আমাকে এখন যেই রুমটাতে রাখা হয়েছে সেটা নাকি উনার মানে আমার বরেরই রুম,বাসরঘর বলতে যেমন একটা ঘরকে একটা মেয়ে কল্পনায় ভাবে এই রুমটা ঠিক তেমনই।

কিন্তু আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ নেই,থাকবে কি করে এই মানুষটাকে যে আমি স্বপ্নেও আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে ভাবিনি!মাত্র একবারই তারসাথে আমার দেখা হয়েছে তাও আজ থেকে প্রায় মাস ছয়েক আগে…।

(ছয় মাস আগে)

-উফ! আম্মু আমরা ওখানে কেন যাচ্ছি বলতো,আমার কিন্তু প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে

-আমরা কেন যাচ্ছি তুই জানিস না?

-জানবো না কেন?কিন্তু আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝছি না তোমরা আপুর কথা শুনতে গেলে কেন?ওকে নিষেধ করতে পারলে না?

-মেনে কি আর সাধে নিয়েছি?তোর আপুকে চিনিস না?ওর কথা না শুনে উপায় আছে?

-সব হয়েছে ঐ বিদেশী চ্যানেলগুলোর জন্যে।Destination weeding বলে কোন জিনিস কি এখনও বাংলাদেশে সেভাবে চালু হয়েছে তোমারই বল,না হয়নি কিন্তু,

তোমাদের আদরের বড় মেয়ে কি বলল,”বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে Destination wedding ই করব আর সেটাও কোন একটা রয়্যাল প্যালেসে অথবা ভাল কোন ট্যুরিস্ট স্পটে!”পাগলামীর একটা লিমিটেশন আছে আম্মু…

-চুপ কর ও শুনতে পাবে তো… ভালোবাসার হাতছানি

-পেলে পাক তাতে আমার কি?ভাগ্যিস শহীদুল আঙ্কেল ছিল,নাহলে যে কি হত! নাহলে হয়তো তোমাদের ঐ পাগলী মেয়ে বিয়েটা না করেই…মা শোনো,এই তোমাদের জন্যই এসব হচ্ছে আমি বলে দিচ্ছি তোমরা দেখে নিও ও একদিন আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে…

-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ঠিক আছে,আমাদেরই সব দোষ এবার খুশিতো?

-হ্যাঁ তো তোমাদেরইতো দোষ,আদর দিয়ে দিয়ে তোমরা ওকে মাথায় তুলে ফেলেছো।ও যাই বলছে তোমরা লাফাতে লাফাতে তাই করছো,তোমাদের আস্কারা পেয়ে পেয়েই ও দিন দিন out of control হয়ে যাচ্ছে।এখনও সময় আছে সাবধান হও নাহলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে…

এতক্ষণ যাদের কথা শুনছিলেন তারা হচ্ছে আমার আম্মু আর ভাইয়া।ও আপনারা তো আমার পরিচয়টাই জানেন না,আচ্ছা ঠিক আছে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি…

সবার আগে….হ্যাঁ আমার আব্বু…  ভালোবাসার হাতছানি

আমার আব্বু-মি. ইকবাল খান,খান শিপিং এজেন্সির মালিক।চিটাগাং সি পোর্টের ৭০% চালানই আমাদের জাহাজ আর নৌকার মাধ্যমে হয়,দেশের খ্যাতনামা বিজনেসম্যানদের মধ্যে তিনিও একজন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে তিনি যতটা স্ট্রিক্ট,পারিবারিক ম্যাটারে ঠিক ততটায় সেনসিটিভ আর কেয়ারিং।আমাদের তিন ভাই-বোনের জন্য তিনি নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারেন তবে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আমাকে আর আমিও আব্বুকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।আর একটা গোপন কথা বলি,

কাউকে বলবেন না কিন্তু,আব্বু কিন্তু এখনও অনেক রোমান্টিক,আম্মুকে এখনও অনেক বেশি ভালোবাসেন,মাঝে মাঝেই আম্মুর জন্য উনার ফেভারিট শিউলি ফুলের মালা নিয়ে আসেন,

ব্যপারটা আর কেউ টের না পেলেও আমি কিন্তু বুঝে যাই কারণ আমারও শিউলি ফুল অনেক পছন্দ তাই গন্ধেই সবকিছু বুঝে যাই।

আমার কাছে উনাদের জুটিটা উত্তম-সুচিত্রা বা রাজ্জাক-শাবানার থেকে কোন অংশে কম লাগে না।মাঝে মাঝে আম্মুকে দেখে হিংসে হয় ইশ!এমন একটা রোমান্টিক বর যদি আমি পেতাম,যে রোজ রাতে আমার চুলের খোঁপায় শিউলিমালা পরিয়ে দেবে…

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles