ফোনের অ্যালার্ম বেজে উঠায় ঘুম ভেঙে গেল। উঠে বিছানায় চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। চোখ মেলে তাকাতেই পারছিনা। মনে হচ্ছে হাজারো বছরের ঘুম দুচোখে এসে ভর করেছে। ইচ্ছে করছে আর একটু আরাম করে ঘুমায়।
কিন্তু না কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাকে কাজে জেতে হবে। আমার কোন ইচ্ছে করতে নেই। কারণ আমি যে কোম্পানির কাছে বিক্রিত।
আমার কোন ইচ্ছে বা স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। আমিতো প্রাচীন যুগের ক্রীতদাসের ন্যায়, কোম্পানির কাছে বিক্রিত,এক দাস বা দাসী।
আমার নাম প্রবাসী।
অনেক কষ্টে চোখ মেলে, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত 5:10 বেজে গেছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। ইস যদি আজকের দিন টা মোন ভরে গুমাতে পারতাম।
আর কিছুক্ষণ পরেই 5:30 মিনিট এর সময় লরি ছেরে যাবে, লরির ড্রাইভার এক মিনিটও কারোর জন্য ওয়েট করবে না।
উঠে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে তারা তারি তৈরি হয়ে, হাউজ এর নিচে পারকিং করে রাখা লরিতে গিয়ে বসলাম।
লরিতে ক্যাপাসিটর থেকে অধিক সংখ্যক লোক তলায় অনেকটা চাপা চাপি বা ঠাসা ঠাসি করে বসতে হয়।খুব জোরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর বৃষ্টির ছিটা এসে লরির মধ্যে পড়ছে।
যথা সময়ে লরি চলতে শুরু করল। দুই ঘন্টার পথ। লরিতে বসে ঝিমুতে থাকলাম। কিছুটা পথ জেতেয় বিষ্টি থেমে গেল। কিন্তু বৃষ্টির ছিটা লরির মধ্যে এসে পড়ায় লরির সবাই প্রায় ভিজে গেছি।
আধা ভেজা কাপুর, বাহিরের ঠান্ডা বাতাস গায়ে লেগে সমস্ত শরীর কাপ্তে থাকে। প্রায় দুই ঘন্টা মধ্যে গোন্তব্যে এসে লরি থামলো।
লম্বা সময় জর কুরো হয়ে বসে থাকাতে পাও অবস হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে লরি থেকে নেমে, খুরিয়ে খুরিয়ে রেস্ট এরিয়া গিয়ে বসলাম। সাথে বহন করা ব্যাগ থেকে শুকনো খাবার বের করে একটু খেয়ে পানি পান করলাম। কি খাবার? থাক সেটা না হয় নাই বললাম।
কাজ আরাম্ভো করলাম, কিছু ক্ষনের মধ্যে আগ্নি ঝরা রোদ শুরু হয়ে গেল। রোদের প্রখ্র উত্তাপে মাটি গরম হয়ে ভাব উঠতে শুরু করে দিল।
আকাশ থেকে অগ্নি ঝরা রোদ আর নিচে থেকে উঠা ভাবে শরীর সেদ্ধ হয়ে জাবার উপক্রম। সমস্ত শরীর ঘেমে জামা কাপড় ভিজে গেল। শরীরের গাম গিয়ে জমা হতে থাকলো, পায়ে পরিহিত সেফটি সু এর মধ্য। গরমে দম বন্দ হয়ে আসার উপক্রম।
ইচ্ছে করছে ছায়া গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আসি। কিন্তু ইচ্চে করলেই আমি রেস্ট নিতে পারি না। কোম্পানির নিয়ম এর মধ্যে আমাকে বেধে দেওয়া হয়েছে। আমাকে কোম্পানির দেওয়া নিয়ম নিতি ফলো করে চলতে হয়।
তা না হলে বেতন কাটা যাবে, সাথে আছে চাকুরি হারানোর ভয়।
আমার জন্য নিদিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ১ টা প্রজন্ত। ১ ঘন্টা লাঞ্চ বিরতি। এই সময়ে খাওয়া দাওয়া সেরে আমি একটু রেস্ট নিতে পারি।
১২ টা বাজলে তারা তারি সাথে নিয়ে আসা খাবার খেয়ে কখনো বা প্রচন্ড গরম এ নষ্ট হয়ে জাবার কারনে না খেয়ে, ক্লান্ত শরীর খানা এলিয়ে দিই। কখনো রেস্ট এরিয়ার বেঞ্চে, কখনো মেঝেতে, কখনো বা রাস্তা পাশে।
দুপুর ১ টা থেকে আবার শুরু হয় কাজ। রোদের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায় প্রচন্ড গরম সয্য করে চলতে থাকে কাজ।
সকাল গিয়ে দুপুর, দুপুর গরিয়ে বিকেল, বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে রাত প্রজন্ত চলতে থাকে কাজ। আমি জেন এক কাজের মেশিন জার নেই কোন ফিলিংস।
রোদে পুরে বিষ্টি তে ভিজে কাজ করতে হয়।
রাত ১০ টার সময় শেষ হয় কাজ।
কাজ শেষে লরিতে গিয়ে উঠে বসি। প্রায় ১২ টা অব্দি রুমে আসি।
অন্ধকারে কাযে যায় আবার অন্ধকারে ফিরে আসি, সারাদিন চলে অক্লান্ত পরিশ্রম, চলে কাজ নিয়ে রাগারাগি, রেষারেষি। কারন এখানে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জাতের আর ভিন্ন ভিন্ন দেশি।
আমরা প্রবাসী।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ফিরে শুরু হয় নতুন ডিউটি। রান্না বান্না আর খাচা খাচি। ইচ্ছে করে একটু বিশ্রাম নিতে কিন্তু কি আর করার হবেতো খেতে। না খেয়েতো আর থাকে জায় না।
তাই তারা হুরো করে এক ঘন্টায় রান্না সারি। সাদের কথা না হয় নাই বললাম, থাক।
কাপড় খেচে গোস্ল করে তারা হুরো করে খেয়ে রাত ১ টা ৩০ মিনিট এর মধ্যে শুয়ে পরি।
নিজের রান্না নিজে করি, নিজের কাপুর নিজে খাচি। বিষ্টিতে ভিজি, রোদে পুরি, রোগে ভুগি,শোকে কাদি।
মোম বাতির ন্যায় নিজেকে জালিয়ে পুরিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষয় করি , পরিবারের মানুষ গুলো মুখে রাখতে হাসি। আমার নেই কোন মান অভিমান, নে কোন ক্ষভ। সত ভেদনা, দুক্ষ, কষ্ট সয্য করে, বুকে ব্যাথার পাহার নিয়ে, মুখে ধরে রাখি হাসি। আমি এক প্রবাসী।
You must be logged in to post a comment.