শিক্ষার ক্ষেত্রটি সবসময় সম্প্রসারণশীল। শিক্ষার ক্ষেত্র কখনোই নির্দিষ্ট গন্দিতে সীমাবদ্ধ থাকেনা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহন দেশের অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন।দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকি।
কারণ, বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট নতুন এবং আমরা সেরকম দক্ষ মেন্টরও পাই না, যারা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন।তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সকল খুঁটিনাটি নিয়ে লেখা এই ব্লগটি তাদের জন্য, যারা এখন বিদেশে পড়তে যাবেন।
১.প্রথমেই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা
প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে ঠিক করতে হবে তিনি কোন দেশে পড়তে যেতে চান। কারণ একেকটি দেশের পড়াশোনা, খরচ, ভর্তি চাহিদা একেকরকম। দেশ বাছাইয়ের পরে ঠিক করতে হবে যে,আপনার বাজেট, আগ্রহ ও যোগ্যতার সাথে সবদিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সেটিকেই বেছে নিতে হবে আপনার।
তবে শিক্ষার গুণগত মান বিচারে যে দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আবার যদি এমন হয় যে আপনার বাছাইকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির টিউশন ফি অনেক বেশি, বৃত্তির সুযোগও তেমন নেই, তাহলেও তো বিপদ।
তাই শিক্ষার মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক র্যাংকিং, টিউশন ফি, বৃত্তি সুবিধা, আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি সকল বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই আপনাকে কোনো একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
২. আইইএলটিএস
নথিপত্র সব গোছানোর ফাঁকেই প্রস্তুতি নিয়ে এবার আইইএলটিএস (যদি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী অন্য কোনো ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা, যেমন জিআরই, জিম্যাট বা টোয়েফল দিতে চান, সেটাই দিন) পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলুন।তবে চীন, জাপান,ফ্রান্স এসব দেশে যেতে চাইলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে নেওয়া ভাল।একেকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসব চাহিদার পার্থক্য থাকতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা আবশ্যক। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টোফেল, স্যাট বা জিআরই দরকার হতে পারে।আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট বা জিআরই'তে নির্ধারিত স্কোর অর্জন করতে না পারলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার যাবতীয় স্বপ্নই যে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময়
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বৃত্তির সময়সীমা নির্দিষ্ট। সেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল আবেদন করে ফেলতে হবে। তাই সবসময়ই সিভি, স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লেটার, মোটিভেশন লেটার, রিকমেন্ডেশন লেটারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে।
৪.রেফারেন্স
এবার আসি ‘রেফারেন্স’–এর বিষয়ে। রেফারেন্স দুইভাবে হতে পারে।
এক, আপনি নিজে রেফারেন্স লেটার আপলোড করবেন অথবা দুই, বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কলারশিপ কমিটি নিজেরাই আপনার রেফারেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তাঁদের কাছে মতামত চাইবে। দুটোর জন্যই প্রস্তুত থাকবেন
৫. বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন
এসব কাজ ঠিকঠাক হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার আবেদন করা যেতে পারে। মনে রাখবেন, একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়ে সেশন, তাই তাদের ভর্তি শুরুর সময় মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটেও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বা সরকারি বৃত্তির নোটিশ পাওয়া যায়।
সেখান থেকে অনলাইনেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৃত্তির আবেদন করতে পারেন।আবেদন করার পর অপেক্ষা শুরু ফলাফলের। তবে এজন্য খুব বেশিদিন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্ত ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
৫.ভিসা আবেদনের প্রস্তুতি গ্রহণ
যদি আপনার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ।শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অফার লেটার সংযুক্ত করতে হবে। সেই সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি নিশ্চিত করা যে, ওই নির্দিষ্ট দেশে গিয়ে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যয়ভার করার সামর্থ্য আপনার রয়েছে কি না।
এজন্য আবেদনকারীর অভিভাবক বা কোনো নিকটাত্মীয়কে 'স্পন্সর' বা 'গ্যারান্টর' হিসেবে নির্বাচন করতে হবে, এবং দেখাতে হবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সত্যিই পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে।
সাধারণত দেশভেদে টিউশন ফি হিসাবে বছরে ১০-১২ লাখ থেকে শুরু করে ২০-২২ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। সেই পরিমাণ অর্থ অবশ্যই ব্যাংকে থাকতে হবে। তবে আপনি যদি বৃত্তি পান, বৃত্তির শতাংশ এ হিসাব থেকে বাদ রাখতে পারেন। সেই সাথে ওই দেশে গিয়ে যেসব খরচ রয়েছে, যেমন থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, পোশাক, হাতখরচ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্যও ব্যাংকে সন্তোষজনক অর্থ দেখাতে হবে।
৬. যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা প্রধান যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হলো পার্ট-টাইম চাকরি।তাই বিদেশে গিয়ে এ ধরনের কোনো সমস্যায় যেন পড়তে না হয়, সেজন্যও দেশে থাকতেই অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। বিশেষত বিদেশে গিয়ে আপনি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কী জাতীয় পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারেন, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকাটা দরকার।
এই সব গোছানো শেষ হয়ে গেলে সময় করে আবেদন করা শুরু করে দিন। তাই সাত-আট মাস সময় নিন প্রস্তুতির জন্য। সেশন ঠিক করুন, বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করুন, বিষয় ঠিক করুন, বৃত্তির জন্য আবেদন করুন। সব ঠিক থাকলে ফলাফল আপনার মনের মতোই হবে। আপনার জন্য শুভকামনা।
জে আই টি লেখক সমিতি গ্রুপ
বেশী ভিউ পাইতে জইন করুন
https://www.facebook.com/groups/356487609344988/?ref=share
Completed
You must be logged in to post a comment.