কানাডাতে উচ্চশিক্ষার (A-Z) গাইডলাইন (Higher Education In Canada)

প্রথমেই বলে রাখি অামি কোনো ভিসা অভিজ্ঞ নই। অামি ও একজন কানাডা ভিসা প্রত্যাশি।অনেকই ইনবক্সে এসে বিভিন্ন কিছু জানতে চায় তাই অাজকে ভাবলাম একটা অার্টিকেল লিখে ফেলি।কেউ যদি সামান্য পরিমাণে ও উপকৃত হয় অামার লেখাটা পড়ে তাহলেই স্বার্থক।কানাডার স্টাডি পারমিট নিয়ে মোটামুটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব! 

১- দেশ পরিচিতিঃ উত্তর অামেরিকার দেশ কানাডা।কানডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।টরেন্টো এবং  ভ্যানকুভার হচ্ছে কানাডার বৃহত্তম শহর। ইংরেজি ও ফ্রেন্জ যৌথভাবে কানাডার সরকারি ভাষা।তবে ইংরেজিই বেশি চলমান। কানাডা বিশ্বের ধনী ও শান্তিপূর্ণ দেশ গুলোর মধ্যে একটি। 

২- কেন যাবেন কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে ঃ কানাডার শিক্ষার মান অনেক উন্নত। কানাডার শিক্ষা ব্যাবস্থা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম।মেক্সিমাম স্টুডেন্টদের লক্ষ্য থাকে সেটেল্ড হওয়া। সেটেল্ড হওয়ার জন্য কানাডা উপযুক্ত দেশ বলে অামি মনে করি তাছাড়া কানাডায় পি অার পাওয়া তুলনামূলক সহজ অনান্য দেশ গুলো থেকে। 

৩- স্টাডি স্টাকচারঃ 

    i-  ফাউন্ডেশন কোর্স 

    ii- ব্যাচেলর ডিগ্রি 

    iii- মাস্টার্স ডিগ্রি 

    iv- পিএইচডি ডিগ্রি 

এখানে কি ধরনের প্রোফাইল দরকার হয় অবশ্যই লেটেস্ট তথ্যের জন্য ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট চেক করুন। তবে সাধারণত ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬০% মার্কস ও অাইএলটিএস ৫.৫+ থাকতে হবে। অার ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য উচ্চমাধ্যমিকে ৬০% মার্কস ও অাইএলটিএসে ৬+ থাকতে হবে। অার মাস্টার্স এর জন্য ব্যাচেলরে সিজিপিএ ৩+ ও অাইএলটিএসে ৬.৫+ থাকতে হবে। 

পিএইচডি হোল্ডাররা অবশ্যই ভালোভাবে রিসার্চ করবেন গবেষণা পত্র এবং মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে এবং ভালো একটা স্কলারশিপ এর খোজ নিবেন।

অাপনি অাইএলটিএস ছাড়া ও কিছু ইউনিভার্সিটি ইএসএলএ ভর্তি করতে পারে তবে অবশ্যই দেশে একটু কষ্ট করে অাইএলটিএস দিয়ে এপ্লাই করবেন।

 ----------------------------------------------------------------------

৪- সেমিস্টারঃ কানাডায় বছরে তিনটি সেমিস্টার অাছে। 

১- সেপ্টেম্বর - ডিসেম্বর 

২- জানুয়ারী - ফেব্রুয়ারী 

৩- মে - অগাস্ট 

বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বরে স্টুডেন্ট নিয়ে থাকে। 

এপ্লাই করার জন্য  ইউনিভার্সিটির  ওয়েবসাইটে ডেডলাইন চেক রাখবেন। অাগে থেকেই ৫-৬ টা ইউনিভার্সিটি লিস্ট করে রাখবেন। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন টিউশন ফি সাধ্যের মধ্যে কি না? 

খেয়াল রাখবেন ঐ ইউনিভার্সিটি তে অন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট কিরকম পড়তে অাসে?সবকিছু দেখে ৫-৬ টা ইউনিভার্সিটি চয়েস করে রাখুন। 

-----------------------------------------------------------------------

৫- কানাডায় উচ্চশিক্ষায় খরচ ঃ অঞ্চল ও ইউনিভার্সিটি ভেদে টিউশন ফি অালাদা হয়। তারপরও মোটামুটি অাইডিয়া দিয়ে রাখছি! ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য  মোটামুটি ১৮-২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হবে। মাস্টার্স ও পিএইচডি  ডিগ্রির জন্য ১৪-৩০ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হবে। 

পিএইচডি হোল্ডার রা ইউনিভার্সিটির সুনাম বয়ে অানবে বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে তাই পিএইচডি হোল্ডার রা একটু চেষ্টা করলে ভালো ফান্ড পেতে পারে। 

-----------------------------------------------------------------------

৬- জীবন যাত্রার ব্যায়- অামি যেহেতু কানাডায় থাকি না তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অাইডিয়া নেই। এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জানতে পারলাম অঞ্চল ভেদে থাকা খওয়ায় ৮০০-১২০০ ডলার খরচ হবে। 

-----------------------------------------------------------------------

৭- বিশ্ববিদ্যালয় - গুগলে সার্চ দিলে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর লিস্ট জানতে পারবেন। 

-----------------------------------------------------------------------

৮- কাজের সুযোগ ঃ স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় সপ্তাহে ২০ ঘন্টা জব করতে পারবেন। তবে এই টাকা দিয়ে থাকা খওয়া ম্যানেজ করতে পারবেন না। 

যদি স্কলারশিপ পান তাইলে অন্য কথা।

-----------------------------------------------------------------------

৯- স্কলারশিপ ঃ কানাডায়  মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। কিছু স্কলারশিপ ইউনিভার্সিটি থেকে দেওয়া হয় সেগুলো ভার্সিটির ওয়েবসাইটে চেক করে নিবেন। বেশিরভাগ স্কলারশিপ পিএইচডি হোল্ডার দের দিয়ে থাকে। কারণ তারাই সুন্দর বয়ে নিয়ে অাসবে ভার্সিটির। 

কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপ গুলো হলো- 

i- ভেনিয়ার কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ। 

ii- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোস্ট গ্যাজুয়েট স্কলারশিপ ও

iii-  রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম স্কলারশিপ। 

কীভাবে অাবেদন করবেন তা অবশ্যই ইন্টারনেট ঘেটে জেনে নিন। 

-----------------------------------------------------------------------

১০- ভিসার জন্য রিকুয়ারমেন্ট ঃ কানাডায় ভিসা অাবেদনের জন্য  Vfs- Canada  ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। 

তবে মৌলিক গুলো তুলে ধরছি! 

i- অফার লেটার 

ii- পাসপোর্ট

iii- অাইএলটিএস

iv- ব্যাংক স্টেটমেন্ট 

v- রেকমন্ডশন লেটার 

vi- স্টেটমেন্ট অব পারপাস 

vii- একাডেমিক সার্টিফিকেট

viii- জন্মনিবন্ধন ও এনঅাইডি  

১১- অফার লেটার ঃ প্রথমেই অাপনার ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করুন এবং ইউনিভার্সিটি রিকুয়ারমেন্ট পূরণ করুন এবং এপ্লাই করে অফার লেটার অানেন।

১২- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ঃ ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশী টাকায় মোটামুটি ৩০-৩৫ লাখ টাকা দেখানো লাগে। যে স্পন্সর হবে থাকে টাকার উৎস হিসেবে কিছু জিনিস দেখাতে হবে। 

যেমন- 

i- Explanation Letter of source of Fund. 

ii- Summary of financial planning 

iii- all paying Papers assets of sponsor 

iv- Salary certificate and noc from office 

v- copy of sponsor identity card

vi- Translation affidavit

অারও কিছু ইনফরমেশন লাগতে পারে সেক্ষেত্রে সেগুলো অাবেদনের সময় জেনে নিতে পারবেন। 

-----------------------------------------------------------------------

১৩- রেকমেন্ডশন লেটার ঃ বেশিরভাগ সময় ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় রেকমেন্ডশন লেটার পড়ে। রেকমেন্ডশন লেটার হচ্ছে অাপনার একাডেমিক এবং গবেষণা করার যোগ্যতা যা একজন প্রফেসর দিতে পারে।২-৩ টি রেকমেন্ডশন লেটার দরকার পরতে পারে।এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ফরম রয়েছে। 

-----------------------------------------------------------------------১৪- স্টেটমেন্ট অব পারপাস ঃ এপ্লিকেশনের অংশ হিসেবে অাপনাকে একটা রচনা লেখতে হবে। ভিসা পাওয়ার অনেক চান্স বাড়িয়ে দেয় এটা।এটাতে অাপনার সব প্ল্যান লেখবেন কীভাবে ঐ বিষয়ের উপর অাপনার অাগ্রহ তৈরি হলো সবকিছু। কেন বিদেশে পড়াশোনা করতে চান কেনই বা কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান ইত্যাদি। 

-----------------------------------------------------------------------

১৫- ফাইনালি ভিসার জন্য অাবেদন ঃ কানাডা ভিসা অাবেদনের জন্য অাপনি vfs- Canada তে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। স্টাডি পারমিটের পাশাপাশি টেম্পোরারি রেসিডেন্সির জন্য অাবেদন করতে হবে। অাপনার নিকটস্থ ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। 

ভিসা অাবেদনের সময় খুব সতর্ক থাকবেন।অাপনার সামান্য ভূল ও ভিসা রিজেক্টের কারণ হয়ে যেতে পারে। 

অনেকে অাবার এজেন্সির কাছে যায় এজেন্সি থেকে নিজে করাটাই নিরাপদ। তবে এজেন্সির কাছে গেলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

-----------------------------------------------------------------------

১৬- পড়াশোনা শেষে পি অার ঃ কানাডায় পড়াশোনা শেষে পি অার এর জন্য অাবেদন করতে পারবেন। পড়াশোনা শেষে প্রোগ্রাম ভেদে ১-২-৩ বছরের ওয়ার্ক পারমিট পাবেন এবং ওয়ার্ক পারমিট শেষে পি অার এর জন্য অাবেদন করতে পারবেন। 

----------------------------------------------------------------------

লেখাটি কপিরাইট করা থেকে বিরত থাকুন।

 লেখকঃ শাওন দাশ,  জেলা ঃ হবিগঞ্জ।  কলেজ ঃ শচীন্দ্র কলেজ। 

 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles