শাহাবুদ্দিন কেন্দুয়ার একটি ছোট্র গ্রামে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করত। সে প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগেই তার বন্ধু সাদেককে সাথে নিয়ে মাছ ধরার জন্য বিলে যেত।
একদিন প্রায় মাঝরাতে সাদেক এসে তাকে ডাকতে লাগলো, *শাহাবুদ্দিন আরে ওই শাহাবুদ্দিন, মাছ মারতে যাবি না?
শাহাবুদ্দিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো এবং মাছ ধরার জাল এবং থলিটা সাথে নিয়ে সাদিকের সঙ্গে বিলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
আফসোস সে বুঝতে পারেনি যে তখন মাঝরাত। অর্থাৎ সকাল হতে অনেকটাই দেরি। আমি আগেই বলেছি এই ঘটনাটি প্রায় 20 বছর আগের।
সেই সময় সবার ঘরে কিন্তু ঘড়ি ছিল না। স্বাভাবিকভাবে তাদের ঘরেও কোন ঘড়ি ছিল না। তাই সে বুঝতেও পারেনি এখন মাঝরাত। তারা দুজনেই মাছ ধরতে বিলে নেমে গেল।
তখন চারদিকটা ছিল অন্ধকার এবং পিনপতন নীরবতা। মাঝে মাঝে রেন্টি গাছ থেকে একটা পাখি কিরকম অদ্ভুত ভুতুড়ে স্বরে ডাকাডাকি করছিল।
শাহাবুদ্দিন মনের সুখে মাছ ধরতে ছিল। অদ্ভুত ব্যাপার হলো সে যতই গভীর যাচ্ছিল ততই মাছ উঠছিল এবং ঐদিন যে পরিমাণ মাছ জালে ধরা পড়েছিল এ জীবনে আর কোনদিন ধরতে পারেনি।
আরো গভীরে যেতে লাগলো একসময় তিনি তার থলের ভিতরে হাত দিলেন এবং অনুভব করলেন তার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিলেন না।
তিনি লক্ষ্য করলেন যে মাছ থলের ভেতরে রেখেছিলেন তার একটাও সেখানে নাই এবং থলেটা শুন্য দেখতে পেলেন।
অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই তিনি আশেপাশে কোথাও তার বন্ধু সাদেককে দেখতে পেলেন না। এরকম একটা সিচুয়েশনে পড়ে তিনি অনেকটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন।
কিন্তু হঠাৎ এমন একটি দৃশ্য দেখতে পেলেন তিনি যা দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল।
তিনি দেখলেন সাদেক ডঙ্গায় বসে দুই হাতের মুঠো ভরে মুখে মুখে মাছ বড়ছে এবং চপচপ করে মাছ গিলছে। এইরকম একটা দৃশ্য দেখে তার আর কিছুই বোঝার বাকি রইল না।
কিন্তু তিনি সেটা বুঝতে দেননি যে সব বুঝে গিয়েছেন তাই তিনি কৌশলে আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসতে লাগবে এবং ডাঙ্গার কাছে এসে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল, এই তিনি এক পাও এগোতে পারলেন না। সেখানেই আটকা পড়ে গেলেন।
তিনি এতটাই ভয় পেয়ে গেলেন যে আমার শরীর প্রচন্ড শীতেও তার সমস্ত শরীর ঘেমে ভিজে গিয়েছিল, তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল এবং দেহ থরথর করে কাঁপছিল।
এমন সময় তিনি কী করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
এমন সময় সেই ভুতটা একটা ভয়ঙ্কর এবং বিদঘুটে অট্টহাসি দিল, আর তার আসল রূপে ফিরে আসলো। এই ভূত দেখতে কতটা ভয়ংকর ছিলো তা বলে বোঝানো যাবে না।
তাঁর চোখ দু'টি থেকে আগুন জ্বলছিল এবং তার শরীরটা আগের থেকে ২গুন আকৃতির হয় গেলো।
এরকম একটা ভয়ানক ভূতকে দেখে শাহাবুদ্দিনের সেন্সলেস হয়ে গেল এবং সেখানেই পড়ে গেল।
এদিকে আসল সাদেক শাহাবুদ্দিনের বাড়ি গিয়ে তাকে ডাকতে থাকলো।
শাহাবুদ্দিনের বউ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ”আপনি তো অনেকক্ষণ আগে উনাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন মাছ ধরতে” এখন আবার এসব কি বলছেন?
আর উনাকে কোথায় রেখে এসেছেন এ কথা শুনে সাদেক অনেকটা অবাক হয়ে গেল ।
এবং সে বুঝতে পারল তার বন্ধুর শাহাবুদ্দিনের সাথে কিছু একটা হয়েছে। সে তাড়াতাড়ি গ্রামের সবাইকে নিয়ে বিলের দিকে রওনা দিলো।
তারা সেখানে পৌঁছে যা দেখল তা একদম মেনে নেয়ার মত না ।
তারা লক্ষ্য করলেন শাহাবুদ্দিনের গলাটা কালো বর্ণ হয়ে আছে এবং সে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।
তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, তাকে কেউ গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাছাড়া তার পুরোটা শরীর বড় বড় নখের আচরে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল।
গ্রামের সবাই সময়মতো এসেছিল বলে তাকে জীবিত পাওয়া গেল। আচ্ছা যদি তারা একটু দেরি করে আসতো জীবিত পাওয়া যেত কি?
নাকি তার জীবনটা ভয়ংকর একটা ভুতের কাছে প্রাণ দতে হতো?
You must be logged in to post a comment.