প্রসঙ্গ ' মানুষ, চরিত্র ও আদর্শ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং প্রানী আর এই শ্রেষ্ঠত্ব তার জ্ঞান বিজ্ঞান বিবেক এবং চারিত্রিক আদর্শের জন্য।
মানুষ সৃষ্টি করে যুগে যুগে স্রষ্টা তার দূত পাঠিয়ে এই কথাই বুঝিয়েছেন এবং ভাল পথে চলতে সংবিধান পাঠিয়েছেন,পুরস্কার তিরস্কার ও সাজার ঘোষনা দিয়েছেন যাতে আমরা আমাদের সীমা লঙ্ঘন করে বিপথগামী হতে না পারি।
উত্তম মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে তার উত্তম চরিত্র ও আদর্শের মাধ্যমে আর উত্তম চরিত্র ও আদর্শ দ্বারাই উত্তম সমাজ গঠন সম্ভব।
আসুন কিছু চরিত্র ও আদর্শের কথা জেনে নেই। প্রথমে আসি চরিত্র ও আদর্শ বিষয়ে।
চরিত্র কি?
চরিত্র হলো মানুষের ভিতর ও বাহিরের আচরনের রুপ, যা তার গুনাগুন বিচারে ভাল মন্দ এবং ব্যক্তিত্ব নির্ধারন করা হয়।
আদর্শ হলো একটা সর্বোচ্ছ মাত্রার ভাল আচরন বা ব্যক্তিত্ব যা গুন বিচারে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে কাল হতে মহাকাল অবধি আর ইতিহাসে সেই আদর্শ অম্লান হয়ে তা অনুসরন করতে অন্যদের উপযোগীতা বুঝায়।
উত্তম চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে উত্তম আদর্শ বা method অনুসরণ করা অনস্বীকার্য।
আসুন বস্তু বিশেষে কিছু আদর্শ বিষয়ে আলোচনা করি।আমরা সবাই কিছু কিনতে গেলে, নিতে গেলে,পেতে গেলে ভাল জিনিসটাই নির্বাচন করি, উপকারীতা হলো সেই বস্তুর চরিত্র আর তা গুনেমানে অনন্য হলে তা ভাল এবং আদর্শ পন্য বা বস্তু হিসেবে সমাদৃত।
যেমন, আমরা গাড়ি জুয়েলারী জামা জুতা থেকে শুরু করে ব্যবহার্য অনেক জিনিস কিনতে "ব্রান্ড" বাছাই করি আর এর অন্যতম কারন হলো ; আমরা হয়তো জেনেছি অথবা প্রামান্য তথ্য হতে নিশ্চিত হয়েছি যে ' অমুক ব্রান্ডের জিনিস ভাল কারন ব্রান্ডটা আদর্শিক'।
আমাদের দেশে আর এফ এল অনেক জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে, কারন হলো তাদের কোম্পানীর পন্য দ্বারা অঙ্গিকার মোতাবেক সেবা দেয় ভোক্তাদের তাই ধোকায় পড়ার সুযোগ নাই দেখে আমাদের কাছে আজ আর এফ এল যেন এক জনপ্রিয় আদর্শ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান। এভাবেই মানসম্মত পন্যের মাধ্যমেই তারা তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
অপরদিকে হোন্ডা,টয়োটা এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের পন্য দিয়ে গাড়ির জগতে তারা ভোক্তার আস্থা অর্জন করে একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে আর এভাবেই গুনগত মান বিবেচনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভোক্তার মন জয় করে তাদের আদর্শ প্রচার করতে পেরেছে।অন্যান্য প্রাণী বা বস্তুগুলোও একই ভাবেই তাদের চারিত্রিক গুনাবলী অর্জন করে আদর্শ বা method দ্বারাই।
এখন আসা যাক সৃষ্টির শ্রেষ্ট প্রানী মানুষের চরিত্র ও আদর্শের বিষয়ে। যে মানুষের চরিত্র ভাল সে আদর্শবান আর যে আদর্শবান বা আদর্শবতী তার কদর সমাজে বা জাতিতে জ্ঞাতিতে সর্বোচ্ছ প্রাধান্য পায়।
মানুষ যখন আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি তখন বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি বিশেষে তাদের আদর্শ আলাদা। এখানে চরিত্রে থাকে মানুষ আর আদর্শে থাকে ব্যক্তি এবং এই দুইয়ের সমন্বয়েই একজন তার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্টা করতে পারে।
যেমন, ধরা যাক মানুষ যখন
১/ পিতা-
এখানে আদর্শ পিতার আর চরিত্র হলো একজন ভাল পুরুষ মানুষের।
২/মাতা-
এখানে আদর্শ মাতার আর চরিত্র একজন ভাল নারীর।
ঠিক তেমনি করেই--
ভাইয়ের আদর্শ
বোনের আদর্শ
এমন সম্পর্কিত প্রত্যেকের সে মোতাবেক আদর্শ
শিক্ষকের আদর্শ
ছাত্র ছাত্রীর আদর্শ
ওস্তাদের আদর্শ
শিষ্যের আদর্শ
শ্রমিকের আদর্শ
সিপাহীর আদর্শ
পুলিশের আদর্শ
পদবিশেষে কর্মচারীর আদর্শ,সরকারের আদর্শ এবং সাথে যোগ হয় তাদের চরিত্র।পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শও উল্লেখযোগ্য যেমন;
আদর্শ স্কুল
আদর্শ কলেজ
আদর্শ মাদ্রাসা
আদর্শ বিদ্যালয় ( তা যেকোন শাখার হোক)
এখন আসা যাক দায় দায়ীত্ব সম্পর্কে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তার চরিত্র ও আদর্শের উপর আর সে যে অবস্থানেই থাকুক তার উপর পারিবারিক সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় দায় দায়ীত্ব ও কর্তব্য বিদ্যমান কেবল উন্মাদ আর পাগল ছাড়া।
আদর্শ পিতা মাতা শিক্ষক বিদ্যালয় আর সংসার ছাড়া সমাজ ও দেশ অচল। ভাল উত্তম চরিত্র এবং আদর্শকে ধারন করতে হলে আদর্শ পরিবার এবং সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম, নইলে আদর্শ ব্যক্তিত্বের প্রসার অনিশ্চিত বটে।
আমি আপনি আমরা যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, আমাদের পদে পদে কিছু দায় দায়ীত্ব ও কর্তব্য পালন করতেই হয়। কর্তব্য হয়ত এড়িয়ে গেলেন কিন্তু দায়ীত্ব এড়ানো মুশকিল।
কর্তব্যহেলার কারনে আপনাকে হয়ত জবাবদিহি করতে হবেনা এখানে কিন্তু দায়ীত্বে অবহেলার কারনে জবাবদিহি অবশ্যই করতে হবে আর দায়ীত্বে হেলার কারনে তার দায়ও বহন করতে হবে ' তা পারিবারিক সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা রাষ্ট্রীয় যেকোন ভাবেই হোক।
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্টানে অথবা এখানে ওখানে বেশ কিছু পাপাচার দেখছি দ্রুত হারে বেড়ে গেছে, যেগুলো উদ্ভিগ্নের কারন বটে।
এগুলো ঘটছে আমরা দেখছি এবং প্রতিবাদ করছি কিন্তু কেন ঘটছে আর কেন বন্ধ হচ্ছে না তা কিন্তু খতিয়ে দেখছিনা।এর পেছনে কি কারন? কেন এমন হচ্ছে? কেন বন্ধ হচ্ছেনা এসব?
আমরা যদি ভাল করে বিষয়টারে পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা যা দেখতে পাই তা হলো আমাদের নৈতিকতার স্থলন আর এর ফলে আমাদের চরিত্রের স্থলন তথা আমাদের আদর্শের স্থলনও ঘটেছে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এবং এর ফলে পারিবারিক আদর্শ থেকে শুরু করে সামাজিক ও জাতিগত আদর্শেও ত্রুটি লেগে যাচ্ছে একের পর এক এবং বেড়ে চলেছে পাপাচার।
এগুলো কারা করছে? কেন করছে?
নিশ্চয়ই তারাও মানুষ এবং তাদেরও জন্মদাতা পিতামাতা ছিল কিংবা আছে আবার তারাও কোনদিন পিতামাতা হবে। তাহলে তারা সংসার থেকে কি শিখেছে আর এই সংসারে তাদের সন্তানদের তারা কি শিখাবে!
এই সমাজ যদি এভাবে ' ম্যানস রিয়া'য় আক্রান্ত হয়ে অপরাধী হয়,পশুত্বে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেয় আর সমাজ ও পরিবার ব্যর্থ হয় তাদের সংশোধনে তাহলে নিশ্চয়ই দেশীয় আইন আদালত তার ব্যবস্থা করবে এবং এর জন্য রয়েছে সরকার আর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
আইন হচ্ছে ' মানুষ ও জাতির আচরন নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট আচরনবিধি বা নীতিমালা ' যা একটি জাতি বা রাষ্ট্র তার জনতার উপর আরোপ করে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও আন্তর্জাতিক আইন আরোপ করা হয় জাতি সমস্টির আচরন নিয়ন্ত্রনের জন্য। আদেশ নিষেধ উপদেশ এই তিন্টার সমন্বয়ে তৈরি হয় আইন।
আসমানী কিতাব হলো স্রষ্টা প্রদত্ত আইন বা আচরনবিধি। মানুষের যাবতীয় কল্যানের জন্য জীবন পরিচালনার বিধান হলো এই কিতাব আর এটা প্রয়োগ হয়েছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদর্শ বা মেথডের দ্বারাই আর এই মেথডই ছিল উত্তম চরিত্রের রুপকার।
একটি সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় তার পরিবার অর্থাৎ সে যে পরিবারে জন্ম নেয় আর প্রথম ও প্রধান শিক্ষক হলেন বাবা'মা' যারা ভূমিষ্টের পর থেকেই ইশারায় আচার আচরনে কথাবার্তায় ব্যবহারে সন্তানকে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন,সুতরাং উত্তম সন্তান গঠনে উত্তম পিতামাতার দররকার আর উত্তম জাতি গঠনে উত্তম আদর্শের দরকার আর উত্তম আদর্শ গঠনে পরিবার হতে শুরু করে উত্তম প্রতিষ্ঠানের দরকার।
তা না হলে আদর্শ জাতি গঠন অসম্ভব। আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার উপর জোর না দিলে গুরুত্ব না দিলে একদিন এ জাতি আবার বুনো হয়ে যাবে আর তখন মানবিক আর মানষিক পতনে আমরা মানুষ জাতি পশুত্ব বরণ করে সমাজ ধ্বংস করে পতিত হব অন্ধকারে,
সুতরাং আমাদের প্রতিটা পরিবার ও প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে আদর্শ সন্তান ও আদর্শ নাগরিক গঠনের দরকার যাতে করে আদর্শ পিতামাতা তৈরি হয়,মানুষ গড়ার কারখানা তৈরি হয়।
🌸🌸🌸
You must be logged in to post a comment.