সাইবার নিরাপত্তা হুমকিতে সারা বিশ্ব: বর্তমান সময় হলো প্রযুক্তি নির্ভর একটি যুগ যা ছাড়া এক মুহূর্ত চিন্তা করা যায়না বিশ্ব যখন প্রযুক্তির সর্বোচ্চ শিখরে তখন করোনা ছোবলে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয় সর্বক্ষেত্রে কিন্তু করোনার সময়ও সকল চ্যালেঞ্জের মুখে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে এই প্রযুক্তি।
আবার বর্তমান সময়ে এটাও বলা হচ্ছে করোনার পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ বর্তমান সময়ে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে নতুন করে প্রবাহিত করেছে এই প্রযুক্তি।
প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার সাথে সাথে হুমকিতে পড়ছে সাইবার নিরাপত্তা। অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যক্তি, জাতি কিংবা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে।
এটা শুধু নির্দিষ্ট কোন দেশে নয় বরং সারা বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইউরোপের অনেক দেশে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিষ্ট বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণার নিয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন তাতে উল্লেখ করেন বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোতে তুলনামূলক অপরাধ কম দেখা গেলেও সাইবার অপরাধ বেড়েছে ব্যাপকহারে।
এতে বুঝা যায় সাইবার অপরাধ বিশ্বের কতটা প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাজ্যের সংস্থা ইউকে ফাইন্যান্সের সূত্রমতে ২০২১ সালে কর সংগ্রহের কথা বলে ফোনের মাধ্যমে প্রতারণার হার দ্বিগুণ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই প্রতারণার হার নাটকীয় ভাবে বেড়ে চলেছে।যুক্তরাজ্যের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ক্রাইম সার্ভে অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের মতে ইউকে ২০১৯ সালে প্রায় ৩৭ লাখের মতো অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে যা দেশটির মোট অপরাধের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
একটি জরিপে দেখা যায় এই ঘটনার প্রায় ৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যারা ভুক্তভোগী তারা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের বেশি ৫০০ থেকে ১০০০ ডলারের বেশি অর্থ খুইয়েছে এটা শুধু ইউকে নয়, উন্নত দেশগুলোর পরিসংখ্যান কমবেশি প্রায় একই।
যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রতারণার শিকার হয়েছে প্রায় ৫৯%। ইন্টারনেটের প্রতারনায় ৪২১ কোটি লোকসান হয়েছে। ক্রাইম সার্ভে অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েল সংস্থাটি থেকে আরো যে সকল তথ্য পাওয়া যায় তা হলো নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা পুরানো অপরাধ নতুন করে করছে।
প্রযুক্তি তাদের কাছেই এতটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে মাদকের সাথে জড়িত মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে বিটকয়েনে লেনদেন করেছে।
এ ধরনের অপরাধীরা কিংবা এই চক্রের সদস্যরা একটি বিশেষ এনক্রিপটেড নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার ব্যবহার করে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে রামসমওয়্যার হ্যাকিং আক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
বর্তমানে এই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট ফাইল আটকে অর্থ দাবী করছে যা পূর্বে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে করা হতো।এই রামসমওয়্যার হ্যাকিং সফটওয়্যার এখন স্পাম ইমেইলের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ও চলে আসছে।
এতে সামান্য অর্থ দাবি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের উৎসাহী করে তোলে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০-২১ সালের রামসমের অর্থ পরিশোধ প্রায় বেড়েছে ৩১০ শতাংশ তবে এতে ভূক্তভোগী হলেন ব্যবসায়ীরা।
ইউকে এর ট্রাভেলেক্স নামক মুদ্রা লেনদেন কারী প্রতিষ্ঠান গত বছর ধসে পরে। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের সাইবার হামলার শিকার হয়।
এছাড়া ফ্লোরিডা ও মেরিল্যান্ডের বেশ কয়েকটি স্কুল সাইবার হামলার শিকার হয়। গত বছর ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে প্রায় ২৭ বার সাইবার হামলা শিকার হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় পূর্ব ইউরোপ এবং চীনের বিভিন্ন দূরবৃর্ত্তের কথা বেশি শোনা গেলেও এটি যেকোন দেশ থেকে হামলা চালাতে সক্ষম।
এই ধরনের হ্যাকিং থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তির নতুন নতুন উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান হ্যাকিংয়ের শিকার হলেও তা প্রকাশ করে না বরং তা রোধ করার চেষ্টা চালায়।
বর্তমানে এই রামসমওয়্যারকে প্রতিরোধ করার জন্য ' ফাইভ আইজ' নামক একটি জোট গঠন করা হয়েছে এ জোটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় বিশ্ব কতটা সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে আছে।
বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে
বাংলাদেশেও সমানতালে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। আমাদের দেশে ফেইসবুক, ইউটিউব, লাইকি, টিক টক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধের মাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভিন্ন যৌন হয়রানি ও পর্ণ- গ্রাফিক ভিডিওর মাধ্যমে দিনদিন অপরাধের মাত্রা অনেকাংশেই বেড়ে গেছে। এছাড়াও অনলাইন ব্যবসায়ও প্রতারণার বেড়েছে সমানতালে ।
সাইবার ক্রাইম ট্রেড ইন বাংলাদেশ ২০২০ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে এ ছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত সাইবার হামলার শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে কেউ প্রকাশ করে আবার কেউ করেনা।
দিন দিন এই হামলার পরিসংখ্যান বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে সর্বস্তরে মাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যদি এখনই এটির সঠিক ব্যবহার নীতিমালা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না হয় তবে দিনদিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে আমাদের এই দেশ।
You must be logged in to post a comment.