কেয়ারটেকার
পর্বঃ ০১
মোহাম্মদ শামীওম বাছির
চারদিকে হাহাকার, অরাজকতা,বেহায়াপনা আমাদের সমাজটাকে খুঁড়ে খুড়ে খাচ্ছে। না আছে মুরুব্বিদের প্রতি সম্মান। না আছে ছোটদের প্রতি সম্মানবোধ।আফসোস করে বলছেন আব্দুল্লাহ। হঠাৎ এধরণের কথা বলার পেছনে একটা ঘটনা রয়েছে। আব্দুল্লাহ, তামিম, বাছির এরা তিনজনে আজ একত্রিত হয়েছে।
মোহাম্মদপুর গলিতে তারা হাটছিলো।প্রতিমধ্য ছোট্ট একটা বাচ্চা মুরুব্বিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।মুরুব্বিটা ও তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে চড় থাপ্পড় দিয়েছে। হুলস্থুল একটা কান্ড। মানুষের জমাট বাধতে শুরু করেছে।কেউ এগিয়ে এসে মীমাংসা করছে না।মোবাইলে ভিডিও করতে ব্যস্ত।
এর মধ্যে বাছির ও ভিডিও করতে ব্যস্ত। তার ও যে একটা ফেইসবুক পেইজ,ইউটিউব চ্যানেল আছে।ভাইরাল রোগে আক্রান্ত।আব্দুল্লাহ এবং তামিম এগিয়ে গেলো।
তামিম মুরুব্বিকে চাচা সম্বোধন করে বলেন চাচা শান্ত হোন।আর আব্দুল্লাহ ছোট্ট ছেলেটিকে ছোট ভাই তোমার সমস্যা কী? ছোট্ট ছেলেটি বললো আমি আমার টাকায় সিগারেট খাচ্ছি। এই মুরুব্বি এসে আমাকে নিষেধ করেছে। আমি কি ওর বাপের টাকায় খাই?আমাকে নিষেধ করার কে?
এবার মুরুব্বি চাচা বললো আমি ওরে বলেছি বাবা এই বয়সে তোমার সিগারেট খাওয়ার সময় না।তোমার পড়ার বয়স।সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে উঠেছে।
আমিও সহ্য করতে না পেরে চড় থাপ্পড় মেরেছি। এর মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে পড়েছে। চাচা গ্রাম থেকে এসেছে।শহরের পরিবেশ সম্বন্ধে ধারনা কম।
আব্দুল্লাহ ভাই উপস্থিত জনতার সামনে বক্তব্য শুরু করেছেন হে বীর মুসলমান জাতি তোমাদের কি হলো?
তোমাদের সন্তানদের অধঃপতন হচ্ছে। তোমাদের পিতৃতুল্য লোকেরা লান্চিত হচ্ছে। আর তোমরা ভিডিও ধারনে ব্যস্ত।
বাছির লজ্জিত হলো।আব্দুল্লাহ তার বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছে তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট কি জবাব দিবেন?তোমাদের মুখের ভাষা এমন হলো কেন?তোমরা কি তোমাদের কুরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছো?অথচ তোমাদের আল্লাহ বলছে কিভাবে কথা বলতে হবে?
কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। (নূর, ৬১)
অথচ মুসলমানদের সন্তান সালাম তো দূরের কথা। কথা শুরু করে গালি দিয়ে।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
সতর্কতার সাথে কথা বলা (কেননা প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়) (ক্বফ, ১৮)
অথচ তোমরা কথা বলো বেফাঁসভাবে।কথার কোন লাগাম নাই।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা। (বাক্বারাহ, ৮৩)
তোমরা কথা বলো কর্কস ভাষায়।তোমরা কথা বলো মানুষকে অসম্মান করে।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
অনর্থক ও বাজে কথা পরিহার করা। (আরাফ, ৩৩)
অথচ তোমরা বাজে কথাকে অভ্যাসে পরিণত করেছো।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
কন্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা। (লুকমান, ১৯ ও হুজুরাত, ২ - ৩)
অথচ তোমরা কথা বলো উচ্চ গলায়।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
বুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলা। (নাহল, ১২৫)
আর তোমরা কথা বলো মন যা চায়
তোমাদের আল্লাহ বলছে
সঠিক কথা বলা ও পাপ মোচনের দ্বার উন্মুক্ত করা। (আহযাব, ৭১ - ৭২)
তোমরা কি কখন
সঠিক কথা বলেছো?
তোমাদের আল্লাহ বলছে
গাধার মত কর্কশ স্বরে কথা না বলা। (লুকমান, ১৯)
তোমরা কথা বলো গাধার মতো।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
উত্তম কথা বলে শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করা। (হা- মীম সাজদাহ, ৩৪)
আর তোমরা ষড়যন্ত্র করছো।
তোমাদের আল্লাহ বলছে
উত্তম কথায় দা'ওয়াত দেয়া। (হা- মীম সাজদাহ, ৩৪)
এই চাচা তো সেই কাজটাই করেছেন।চাচা দুঃখ করবেন না রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও দাওয়াত দিতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন।তবে আপনার উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক হয় নাই।
আল্লাহ বলছেন
ঈমানদারদের কথা ও কাজ এক হওয়া।(ছফ-২)
এই বার চাচা তার ভুল বুজতে পেরে বললো বাবা আমি সৎ কাজের আদেশ দিতে গিয়ে উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক হয় নাই। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আব্দুল্লাহ ভাই এবার নজর দিলেন ছেলেটির দিকে।
ছেলেটি অজোরে কান্না করছেন।ছেলেটা বলে উঠলো আমাকে এভাবে কেউ সুন্দর ভাবে বলে নাই। আমি কখনো ধর্মীয় শিক্ষা পাই নি।আমার বাবা মা দু'জনে চাকুরী নিয়ে ব্যস্ত।বাবা মায়ের আদর যত্ন তেমন পাইনি।আমার জীবন বিশৃঙ্খল।
আপনারা আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমি সবার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।আমাকে ক্ষমা করে দিন।মুরুব্বি চাচার হাত ধরে ক্ষমা চাইল।মুরুব্বি বুকে জড়িয়ে নেন।
well
You must be logged in to post a comment.