কেয়ারটেকার পর্বঃ০৫ মোহাম্মদ শামীওম বাছির
সোলায়মান সাহেবের আজ ঘুম ভালো হলো না।খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।কিছুক্ষণ পর সুমধুর কন্ঠে ভেসে আসে আজান।এতদিন যেটা বিষাদময় লাগছিলো।সেটা আজ সুমধুর লাগলো।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর সুর মনে হয় এই আজান।
সোলাইমান সাহেবের আজ এ প্রথমদিন এত ভোরে ঘুম থেকে উঠা। এতকাল সূর্য উদয় না হলে তার ঘুম শেষ হতো না।প্রতিদিন অফিসে দেরি করে যায়।
সোলায়মান সাহেব বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো।চোখ গেলো কেয়ারটেকার কামরুল এর বাসার দিকে। রুমের ভিতরে কান্ড দেখে সে হতবাক হয়ে গেলো।
রুমের ভিতরে কামরুল চাচা আর তার ছেলে সামি এক সাথে দাড়িয়ে ফজরের সালাত আদায় করছে। সোলাইমান সাহেব আজ আর রাগ হয় না।সন্দেহ হয় না।
সে মনযোগ দিয়ে নামাজ আদায় করছে।এই দৃশ্য তার মনোযোগ আকর্ষন করছে।কামরুল চাচা আর সামির জামায়াতে নামাজ শেষ হলো।সামির চোখ গেলো বাহিরের দিকে।
সে তার বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।এই বুজি কামরুল কাকার চাকুরী চলে যাবে।আবার জেলে দেওয়া হবে।সামি নিজ থেকে বলতে লাগলো বাবা কামরুল চাচার কোন দোষ নাই।
আমি নিজ ইচ্ছায় এখানে এসেছি।কামরুল চাচাকে জেলে দিবেন না দয়া করে।সোলায়মান সাহেব থামিয়ে দিয়ে কামরুল চাচাকে জিজ্ঞেস করেন আচ্ছা আপনারা যে এখন কিছু করছিলেন সেটা কী বলে?
কামরুল চাচা বললেন এটাকে নামাজ বলে।আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকি।
সোলাইমান সাহেব বললেন এটা কি সবাই পড়তে পারেন।
কামরুলঃ না এটা শুধু ঈমানদার মুসলমানরাই পড়তে পারে।
সোলাইমানঃ ঈমানদার মুসলমান হতে হলে কী করতে হবে?
কামরুলঃ মুসলমান হতে হলে প্রথমে আপনাকে কালেমায় বিশ্বাস করতে হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। যার মানে হলো আল্লাহ্র হুকুম , রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী আপনার জীবন পরিচালনা করতে প্রস্তুত তাহলে মুসলিম হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
যদি আপনাকে মুসলমান হতে হয় কিছু আনুষ্ঠানিকতা করতে হবে
আপনাকে পবিত্র হয়ে পূর্বের ভ্রান্ত বিশ্বাস, প্রথা এবং মূর্তিপূজা, বহু ঈশ্বরের বিশ্বাস ত্যাগ করে শাহাদাহ পাঠ করতে হবে আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা-ল্লাহু,ওয়া আশ –হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ।” অর্থাৎঃ “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবুদ ( ইবাদাতের যোগ্য)নাই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সা. আল্লাহ্র বান্দা ও রাসুল।”
এভাবে আপনি ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে হবে।আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারার ২ নম্বর আয়াতে বলেন
এবং যারা আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়......”
আপনি যখন শাহাদা পাঠ করবেন তখন আপনার পথ আলাদা হয়ে গেছে।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারায় বলেন,
নিশ্চয়ই হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে." (সূরা আল বাকারা-২৫৬)
তারপর যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে আপনার সব কিছু আল্লাহর দেখানো পথে করতে হবে যেমন আল্লাহ বলেন "বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে। (৬ঃ১৬২ আল কুরআন )
এবং আল্লাহর কাছে নতি স্বীকার করতে হবে তার আনুগত্য করতে হবে আল্লাহ সূরা আল বাকারার ১৭৭নম্বর আয়াতে বলেন “সৎ কর্ম এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে,
বরং বড় সৎ কাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রাসুলগণের উপর,আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন,
এতীম- মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে- শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।”
আমার আলোচনায় আল্লাহ এবং আল্লাহর বলা নবী রাসূলগনের এবং ফেরেশতা তাকদির এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করে তার দেখানো পথে চলতে প্রস্তুত থাকলেই আপনি মুসলমান হতে পারবেন।
সোলায়মানঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।
সামিঃ আচ্ছা বাবা আপনি কি আপনার বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে মুসলমান হবেন?
সোলাইমান সাহেব কোন কিছু না বলে নিমিষেই চলে গেলেন।
তার মনে এখন হাজারো প্রশ্ন। ইসলামকে জানার আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে।যেটা তার নীতিবিরোধী। সে নিজেকে স্থির করতে পারছেনা। সোলাইমান সাহেব কি তাহলে মুসলমান হবে?
You must be logged in to post a comment.